সৈয়দ মুজতবা আলী | বাঙালি সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা

সৈয়দ মুজতবা আলী একজন বিংশ শতকী বাঙালি সাহিত্যিক। তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা। তিনি তার ভ্রমণকাহিনীর জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়। বহুভাষাবিদ মুজতবা আলীর রচনা একই সঙ্গে পাণ্ডিত্য এবং রম্যবোধে পরিপুষ্ট। মুজতবা আলীর জন্ম ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯০৪। তিনি ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪ মৃত্যুবরণ করেন।

সৈয়দ মুজতবা আলী Syed Mujtaba Ali 2 সৈয়দ মুজতবা আলী | বাঙালি সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা

সৈয়দ মুজতবা আলী

সৈয়দ মুজতবা আলীর জন্ম:

মুজতবা আলী ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতে আসামের অন্তর্ভুক্ত সিলেটের করিমগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা খান বাহাদুর সৈয়দ সিকান্দার আলী সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন। তার পৈতৃক ভিটা মৌলভীবাজার, পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার উত্তরসূর গ্রামে।

সৈয়দ মুজতবা আলী Syed Mujtaba Ali 4 সৈয়দ মুজতবা আলী | বাঙালি সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা

মুজতবা আলীর শিক্ষাজীবন:

মুজতবা আলী সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। পিতার বদলির চাকরি হওয়ায় মুজতবা আলীর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন কাটে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ১৯২১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রথমদিকের ছাত্র। এখান থেকে সংস্কৃত, ইংরেজি, আরবি, উর্দু, ফার্সি, হিন্দি, গুজরাটি, ফরাসি, জার্মান ও ইতালীয়সহ পনেরোটি ভাষাশিক্ষা লাভ করে ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন।

এরপর তিনি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। অতঃপর দর্শনশাস্ত্র পড়ার জন্য বৃত্তি নিয়ে জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে গবেষণার জন্য তিনি ডি.ফিল লাভ করেন ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৩৪-১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মিশরে কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

সৈয়দ মুজতবা আলী Syed Mujtaba Ali 1 সৈয়দ মুজতবা আলী | বাঙালি সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা

মুজতবা আলীর কর্মজীবন:

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে ১৯২৭ থেকে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মুজতবা আলী কাবুলের শিক্ষা দপ্তরে অধ্যাপনা করেন। সেখানে তিনি ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার শিক্ষক ছিলেন। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে বরোদার মহারাজার আমন্ত্রণে তিনি বরোদা কলেজে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এখানে তিনি আট বছর কাটান। এরপর দিল্লির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের খণ্ডকালীন প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করেন।

মুজতবা আলী পঞ্চাশের দশকে কিছুদিন আকাশবাণীর স্টেশন ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন পাটনা, কটক, কলকাতা এবং দিল্লিতে। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শান্তিনিকেতনে প্রত্যাবর্তন করেন। বিশ্বভারতীর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রিডার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অবসরগ্রহণ করেন। তাদের পরিবারের পরিচয় তুলে ধরতে মৌলভীবাজারে তার ও তার পিতার নামে দুটি সড়কের নাম রাখা হয়েছে। যার একটি সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী সড়ক এবং আরেকটি খান বাহাদুর সৈয়দ সিকন্দর আলী সড়ক। এছাড়াও তার স্মৃতি ধরে রাখতে তার লেখা বইয়ের নামে গ্রন্থাগারের নাম রাখা হয়েছে ‘দেশে বিদেশে’।

মুজতবা আলীর লেখালেখি:

শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় সেখানের বিশ্বভারতী নামের হস্তলিখিত ম্যাগাজিনে মুজতবা আলী লিখতেন। পরবর্তীতে তিনি ‘সত্যপীর’, ‘ওমর খৈয়াম’, ‘টেকচাঁদ’, ‘প্রিয়দর্শী’ প্রভৃতি ছদ্মনামে বিভিন্ন পত্রিকায়, যেমন: দেশ, আনন্দবাজার, বসুমতী, সত্যযুগ, মোহাম্মদী প্রভৃতিতে কলাম লিখেন। তার বহু দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন ভ্রমণলিপি।

এছাড়াও লিখেছেন ছোটগল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা। বিবিধ ভাষা থেকে শ্লোক ও রূপকের যথার্থ ব্যবহার, হাস্যরস সৃষ্টিতে পারদর্শিতা এবং এর মধ্য দিয়ে গভীর জীবনবোধ ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা তাঁকে বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। অনেকের মতে, ১৯৫০-৬০ দশকে মুজতবা আলী ছিলেন বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। তার একটি বিখ্যাত উক্তি হলো:

“ বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। ”

তুলনাত্মক ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক মুজতবার ধর্মদর্শন নিয়ে বড় ভাই সৈয়দ মুর্তাজা আলী মন্তব্য করেন:

মুজতবা আলীর সাহিত্যে বিন্দুমাত্র ধর্মীয় সংকীর্ণতা ছিল না। কিন্তু তার এই উদারতার জন্য গোঁড়া স্বধর্মীরা তাঁকে কোনোদিন ক্ষমা করেননি।

সৈয়দ মুজতবা আলী Syed Mujtaba Ali 13 সৈয়দ মুজতবা আলী | বাঙালি সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা

মুজতবা আলীর রচনাদি:

মুজতবা আলীর রচনা সমগ্র:

 

প্রকাশনা

উপন্যাস

  • অবিশ্বাস্য (১৯৫৪)
  • শবনম (১৯৬০)
  • শহর-ইয়ার (১৯৬৯)
  • ভ্রমণকাহিনী
  • দেশে বিদেশে (১৯৪৯)
  • জলে ডাঙ্গায় (১৯৬০)

ছোটগল্প

  • চাচা কাহিনী (১৯৫২)
  • টুনি মেম (১৯৬৪)
  • পঞ্চতন্ত্র (১৯৫২)
  • ময়ূরকণ্ঠী (১৯৫৭)

রম্যরচনা

  • পঞ্চতন্ত্র (১৯৫২)
  • ময়ূরকন্ঠী (১৯৫৭)

গল্পমালা

  • রাজা উজির
  • ধূপছায়া
  • বেঁচে থাক সর্দি-কাশি
  • পুনশ্চ
  • পাদটীকা
  • তীর্থহীনা
  • কর্ণেল
  • রাক্ষসী
  • বিধবা বিবাহ
  • ক্যাফে-দে-জেনি
  • মা জননী
  • বেল তুলে দু-দু’বার
  • স্বয়ংবরা
  • শবনম
  • রস-গোল্লা (ইংরেজি)
  • হিটলার

পুরস্কার

  • নরসিংহ দাস পুরস্কার (১৯৪৯)
  • আনন্দ পুরস্কার (১৯৬১)।
  • একুশে পদক (মরণোত্তর)

আরও দেখুন:

 

এ্যলবাম:

Leave a Comment