বৈদ্যুতিক চিঠি ও খুদে বার্তা লিখন | ভাষা ও শিক্ষা , বৈদ্যুতিক চিঠির ইংরেজি পরিভাষা হচ্ছে Electronic Mail। তবে ই-মেইল শব্দটিই অধিক প্রচলিত। ইলেক্ট্রনিক মেইল বা ই-মেইল (e-mail) বলতে মূলত একটি চিঠি কিংবা কোনো কম্পোজড ডকুমেন্টকে (composed document) অর্থাৎ টাইপকৃত উপস্থাপনকে বোঝানো হয়ে থাকে যা প্রেরণ, গ্রহণ করার কাজগুলো কম্পিউটারের সাহায্যে করা যায়। এবং ইন্টারনেট নেটওয়ার্কি সিস্টেমের মাধ্যমে প্রাপক ও প্রেরকের মধ্যে চিঠি চালাচালি বা ভাবের আদান-প্রদান করা যায়। কম্পিউটার প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির ফলে এখন সাধারণ বার্তা, চিঠি, প্রতিবেদন, তথ্য-উপাত্ত, সারণি, চিত্র ইত্যাদি বৈদ্যুতিকভাবে এক কম্পিউটার বা মুঠোফোন থেকে অন্য কম্পিউটার বা মুঠোফোনে মুহূর্তেই পাঠানো সম্ভব হচ্ছে।
বৈদ্যুতিক চিঠি ও খুদে বার্তা লিখন | ভাষা ও শিক্ষা
সাধারণত চিঠিতে যেখানে হাতে লিখে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়, ই-মেইলে সেখানে কম্পিউটারে টাইপ করে বৈদ্যুতিক মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়। সাধারণ চিঠি পোস্ট করা হয় ডাকবাক্সে বা পোস্ট অফিসে, পক্ষান্তরে বৈদ্যুতিক চিঠি পোস্ট করা হয় কম্পিউটারের ডাকবাক্সে অর্থাৎ ই-মেইল অ্যাড্রেসে। সাধারণ খামে বা পোস্টকার্ডে লিখিত চিঠি প্রেরণের মাধ্যম হল হাতে হাতে বা পরিবহণের মাধ্যমে আর বৈদ্যুতিক চিঠি প্রেরণ করা হয় বৈদ্যুতিক মাধ্যমে; স্ব ফ ই-মেইল অ্যাড্রেসে। সাধারণ চিঠি ও বৈদ্যুতিক চিঠির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য এটুকুই।
তবে উপযোগিতা ও সুযোগ- সুবিধার ক্ষেত্রে উভয় মাধ্যমে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। বিশেষত ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সিস্টেমের কারণে বৈদ্যুতিক চিঠি মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের যে কোনো স্থানে প্রেরক ও প্রাপকের মধ্যে যোগাযোগ সম্ভব করে তোলে কিন্তু সাধারণ চিঠিতে সেটা কল্পনাও করা যায় না। তবে বৈদ্যুতিক চিঠির ক্ষেত্রে কম্পিউটারের সঙ্গে ইন্টারনেট লাইন থাকা জরুরি।

বৈদ্যুতিক চিঠি বা ই-মেইল বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে স্বল্পব্যয়ী এবং দ্রুততম ইলেকট্রনিক যোগাযোগ মাধ্যম। অন্যান্য যে কোনো মাধ্যমের চেয়ে তুলনামূলকভাবে ই-মেইল দ্রুতগামী এবং খরচ অনেক কম। এ কারণেই ই-মেইল বা বৈদ্যুতিক চিঠি আমাদের দেশে তথা সারা বিশ্বে এত দ্রুত জনপ্রিয়তার শীর্ষে এসেছে। আজকাল ই-মেইলের সঙ্গে ভয়েস অর্থাৎ কণ্ঠস্বর পাঠানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। ভয়েস রেকর্ডিং করে বৈদ্যুতিক চিঠির সঙ্গে সংযুক্ত করে দেয়া হয়। একে বলে ভয়েস মেইল।
ইন্টারনেট লাইন ও ই-মেইল বা বৈদ্যুতিক চিঠির ব্যবহার
কম্পিউটারের সঙ্গে অন্য নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাই ইন্টারনেটের কাজ। বিভিন্ন নেটওয়ার্ক একত্র হয়ে পৃথিবীব্যাপী যে নেটওয়ার্ক সিস্টেম তৈরি করে তাকেই ইন্টারনেট বলে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্তের কম্পিউটার থেকে অন্য প্রান্তের আর একটি কম্পিউটারে ছবিসহ যাবতীয় তথ্য দ্রুত সংগ্রহ ও প্রেরণ করা যায় ।
ইন্টারনেট সংযুক্তিকরণের জন্যে সর্বপ্রথম প্রয়োজন একটি কম্পিউটার। কম্পিউটারের সঙ্গে লাগবে একটি মডেম। আর লাগবে নিজস্ব টেলিফোন লাইন। ইন্টারনেট সার্ভিস দেয় এমন কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে নির্দিষ্ট মাসিক ফি-র বদলে সংযোগ নিতে হয়। আজকাল বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর ইন্টারনেট মডেম পাওয়া যায়। যেমন- গ্রামীণ, সিটিসেল, ওয়াইমেক্স ইত্যাদি। সহজেই এসব মডেম ব্যবহার করে ইন্টারনেটে ই-মেইল ব্যবহার করা যায়
ই-মেইল অ্যাড্রেস বা বৈদ্যুতিক চিঠির ঠিকানা ও ব্যবহার
ই-মেইল বা বৈদ্যুতিক চিঠির ক্ষেত্রে প্রাপক ও প্রেরকের কম্পিউটারে নির্দিষ্ট ই-মেইল অ্যাকাউন্ট বা ই-মেইল অ্যাড্রেস বা বৈদ্যুতিক চিঠির ঠিকানা থাকতে হবে। ইন্টারনেটে ই-মেইল আদান-প্রদান করার জন্য কোনো ব্যবহারকারীকে চিহ্নিত করার জন্য যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয় তাকে ই-মেইল অ্যাড্রেস বা বৈদ্যুতিক চিঠির ঠিকানা বলে। মেইল হেগারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ঠিকানা।
ই-মেইল ব্যবহারকারীদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব ঠিকানা থাকতে হবে। একই নামে একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থাকলেও বিশ্বে প্রতিটি মানুষের জন্য ই-মেইল ঠিকানা ভিন্ন ভিন্ন। আসলে প্রত্যেকটি ই-মেইল ঠিকানায় এমন একটি নাম বা নাম্বার থাকে যেটা অন্য কারও নেই এবং এই অদ্বিতীয় নাম বা নাম্বারের কারণে ব্যবহারকারীর মেইল নেটওয়ার্কের কম্পিউটার বা তার ডাক বাক্সকে চিনতে পারে। ই-মেইল অ্যাড্রেস একটি ইউনিক অ্যাড্রেস, যা পৃথিবীর আর কারও সঙ্গে মিলবে না। তাই ই-মেইল ঠিকানা লেখার সময় সতর্ক থাকতে হয় যাতে সামান্যতম ভুলও না হয়। নিচে নমুনা একটি ঠিকানা লেখা হল :
User ID Domain name
User ID : অংশটি ই-মেইল ব্যবহারকারীর নিজের পরিচয়।
@ (অ্যাট-সাইন) : কম্পিউটারের পরিভাষায় এটি যতি চিহ্নের মতো কাজ করে। সাধারণ ই-মেইল অ্যাড্রেসে দেখা যায় চিহ্নটি এবং এটি ব্যবহারকারির আইডি থেকে ডোমেইনের নামকে পৃথক বা আলাদা করতে লেখা হয়।
Domain Name : ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানকারীর পরিচিতি মূলক ID । ডোমেইন নেইম এর দুটি অংশ থাকে— প্রথম অংশ অর্থাৎ ডট ( . ) এর আগের অংশ হচ্ছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানকারীর পরিচিতিমূলক নিজস্ব নাম এবং ডট ( . ); এর পর থাকে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানকারীর প্রাতিষ্ঠানিক পরিচিতি অর্থাৎ সে কি ধরনের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদান করছে। যেমন : .com : ব্যবসায়িক ভিত্তিতে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। .org : অলাভজনক ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। .gov : সরকারি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রতিষ্ঠান। .edu : শিক্ষা সংক্রান্ত ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান .mil : সামরিক বাহিনীর ইন্টারনেট সার্ভিস .net : উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ ব্যতীত অন্যান্য ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
অনেক ই-মেইল অ্যাড্রেস-এ ডোমেইন নেইম এর পর আরেকটি কোড থাকে যা দ্বারা সহজেই বোঝা যায় ই-মেইল অ্যাড্রেসটি কোন দেশের অর্থাৎ একটি কান্ট্রি কোড থাকে। যেমন : সিঙ্গাপুরের জন্য – .sg ; জাপানের জন্য- .jp; অস্ট্রেলিয়ার জন্য— .au; কানাডার জন্য .ca; বাংলাদেশের জন্য .bd।
ফ্রি-ইমেইল : ইন্টারনেট বিশ্বকে এত ছোট করে দিয়েছে যে মানুষ আজ বিশ্বের যে প্রান্তেই খাকুক না কেন সে তার প্রয়োজনীয় তথ্য সবসময় তার হাতের কাছেই পায়। এটা সম্ভব হয়েছে Web ভিত্তিক ই-মেইল এর কারণে। এখন আর ই-মেইল ব্যবহারকারীদের ই-মেইল এর জন্য নির্দিষ্ট আই.এস.পি-এর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না। বিশ্বে অনেক ফ্রি ই-মেইল সার্ভিস প্রোভাইডার আছে যেখানে ইচ্ছে করলেই ফ্রি ই-মেইল অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। এবং বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে বসে ই-মেইল চেক করা যায়। এরকম কয়েকটি ফ্রি ই-মেইল অ্যাড্রেস হলো : www.yahoo//com; www.iname.com; www.hotmail.com; www.rocketmail.com
আরও দেখুন: