বরেণ্য মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা উপলক্ষে অভিনন্দন পত্র | অভিনন্দন পত্র | ভাষা ও শিক্ষা , আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে বরণ বা বিদায় জানানাের জন্যে যে সম্মাননাপত্র রচনা করা হয়, তাকে মানপত্র বলে। মানপত্র সাধারণত সামাজিক, আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রচুর দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতিতে পাঠ করে সংবধেয় ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হয়। মানপত্রের ভাষা পরিশীলিত ও সমৃদ্ধ হতে হয়। এতে সংবর্ধেয় ব্যক্তির কর্মকৃতি, ব্যক্তিত্ব, ব্যবহারিক বৈশিষ্ট্য, পাণ্ডিত্য, শিক্ষা ও দক্ষতা ইত্যাদির উল্লেখ থাকে। তাই বিভিন্ন উপশিরোনাম দিয়ে তাঁর বৈশিষ্ট্য, অবদান প্রভৃতিকে নানা বিশেষণে অভিষিক্ত করতে হয়। মানপত্র সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখে বা ছাপিয়ে, অলংকৃত এবং বাঁধাই করে দেওয়াই নিয়ম।
বরেণ্য মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা উপলক্ষে অভিনন্দন পত্র
দেশ বরেণ্য মুক্তিযোদ্ধাদের … আগমন উপলক্ষে অভিনন্দন
হে দেশের সূর্যসন্তান, বীর সেনানীরা,
বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের কিংবদন্তির মহানায়ক আপনারা। আপনাদের কীর্তি কখনো ভোলার নয়। এদেশবাসী সোনার হরফে লিখে রাখবে আপনাদের নাম। আপনাদের আগমনে এই এলাকার সর্বত্র জেগেছে নব প্রাণের স্পন্দন। আজ আমাদের এই ক্ষুদ্র আয়তনে গভীর আনন্দে আমরা আপনাদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
হে মুক্তপ্রাণ, বিশ্ব প্রেমিকেরা,
আপনাদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই আমরা পেয়েছি লাল-সবুজের পতাকা, হয়েছি স্বাধীন দেশের নাগরিক। আপনাদের সুদক্ষ রণকৌশল, সাহসী ভূমিকা, বলিষ্ঠ পদক্ষেপ ও নেতৃত্ব জাতিকে দিয়েছে মুক্তির স্বাদ। বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আপনাদের ঋণ এদেশবাসী কোনোদিনও শোধ করতে পারবে না। আপনাদের এই আত্মত্যাগ গৌরবোজ্জ্বল মহিমায় ভাস্বর।
হে মহান দেশ প্রেমিকেরা, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আপনারা সেদিন রাজপথে ঢেলে দিয়েছন বুকের তাজা রক্ত, অকাতরে দিয়েছেন প্রাণ বিসর্জন। লক্ষ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই আজ আমাদের মাতৃভূমির প্রাণ প্রতিষ্ঠিত। তাই দেশ ও জাতি আপনাদের কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে। আজ আমাদের মাঝে আপনাদের মতো দেশপ্রেমিকদের পেয়ে নিজেদের সৌভাগ্যবান ও গৌরবান্বিত মনে করছি। সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতা সংগ্রামে আপনাদের যে আত্মত্যাগ ছিল, সমগ্র জাতি একতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যে জীবন উৎসর্গ করেছিল, তা আবার পুনরায় আপনাদের কাছে পেয়ে উপলব্ধি করতে পারলাম।

হে মৃত্যুঞ্জয়ী বীরেরা,
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, তা আপনাদের আগমনে প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। যে স্বপ্ন বা আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে আপনারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, সে স্বপ্ন নানা কারণেই গত সাইত্রিশ বছরেও সাফল্যের লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারে নি। প্রতিটি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সভা সমিতি, বিবৃতিতে বারবার যে কথাটি সবচেয়ে বেশি উচ্চারণ করেছে তা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার কথা। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কার্যকলাপ বারবার সংঘটিত হয়েছে প্রশাসনের ভেতরে এবং বাইরে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রাপ্য সম্মান এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন গত সাইত্রিশ বছরে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
হে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা
আপনাদের সংবর্ধনা জানাতে আমরা তেমন কিছু আয়োজন করতে পারি নি। আর আপনাদের অসীম সাহসিকতা বিশ্লেষণ করবার মতো বিশেষণও খুঁজে পাচ্ছি না। শুধু জানি, আপনারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। আপনারা এদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমরা আপনাদের চিরদিন স্মরণ রাখবো। আমাদের জন্য এই দোয়াটুকু করবেন যাতে আপনাদের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা যেন আমরা রক্ষা করতে পারি। আপনাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা সম্পূর্ণরূপে
বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে যেন আপনাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারি। পরিশেষে পরম করুণাময় মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আপনাদের স্বাস্থ্য, শতায়ু ও সুখকর জীবন কামনা করি। আপনাদের জীবন হোক সুন্দর, আগমন হোক সার্থক। বিদায় নেয়ার আগে কবিকণ্ঠের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই—
তোমরা এসেছ ভেঙ্গেছ অন্ধকার
তোমরা এসেছ ভয় করি
নাকো আর পায়ের স্পর্শে মেঘ
কেটে যাবে রোদ্দুর
ছড়িয়ে পড়বে বহুদূর বহুদূর।’
বিনয়াবনত …এলাকার সর্বস্তরের জনতা
বরিশাল
২০ ডিসেম্বর, ২০০০
আরও দেখুন: