মাদকাসক্তির কুফল জানিয়ে ছোট ভাইকে উপদেশমূলক পত্র | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা , অযক্তিগত, কূটনৈতিক বা বাণিজ্যিক- সবরকম চিঠিই পরবর্তীকালে ঐতিহাসিকগণ প্রাথমিক উৎস হিসেবে ব্যবহার করেন। কখনোবা চিঠি এতো শৈল্পিক রূপ পায় যে তা সাহিত্যের একটি বর্গ হয়ে ওঠে, যেমন বাইজেন্টাইনে এপিস্টোলোগ্রাফি বা সাহিত্যের পত্র উপন্যাস।
মাদকাসক্তির কুফল জানিয়ে ছোট ভাইকে উপদেশমূলক পত্র
কাহালু, বগুড়া ১০ মার্চ, ২০০০
স্নেহের ‘ক’,
আশীর্বাদ নিও। গতদিন মায়ের হাতে লেখা একটা চিঠি পেয়ে খুবই উদ্বিগ্ন হলাম। তুমি এমন হতে পার কোনোদিন ভাবি নি। তোমাকে নিয়েই আমাদের পরিবারের আশা-ভরসা। আমার এই পত্র পেয়ে আশা করি সংযত হয়ে চলবে এবং রীতিমতো পড়াশোনা করবে। মায়ের চিঠিতে জানতে পারলাম, তোমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু অতুল মাদকাসক্ত। তুমিও আগের মতো নিয়মিত পড়াশোনা করছ না, তোমার বন্ধু অতুলের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করে মূল্যবান সময় নষ্ট করছ। ইদানীং পরীক্ষার ফলাফলও আশানুরূপ হচ্ছে না। এ-সব কিছুর পেছনে তোমার বন্ধু অতুলকেই বেশি দায়ি মনে হচ্ছে। তোমার উচিত দ্রুত তার সঙ্গ পরিহার করা।
মা আমার কাছে জানতে চেয়েছেন— তুমি মাদকাসক্তির এ মরণ নেশায় আক্রান্ত হয়েছ কিনা? যদিও মাকে আমি আশ্বস্ত করেছি যে, তোমার পক্ষে এ কাজ করা কোনোদিনই সম্ভব নয়। তদুপরি সঙ্গদোষে অনেকসময় মহাসর্বনাশ ঘটে। তুমি বুদ্ধিমান ছেলে। তোমার প্রতি আমার দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে যে, এ বিষয়ে তুমি বেশ সচেতন। তবু তোমাকে মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।
যে কেউ মাদকাসক্ত বন্ধু বা সঙ্গীদের প্রভাবে নিজের অজান্তেই মাদকদ্রব্য সেবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। তাই এ ধরনের বন্ধু-বান্ধবের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকাই উত্তম। মাদকাসক্তিকে বলা হয় মরণ নেশা। মৃত্যুই এর অনিবার্য পরিণতি। এই নেশা ধীরে ধীরে স্নায়ুকে দুর্বল করে দেয়। শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নিঃশেষ করে দেয়। ক্রমশ ভোঁতা, অসাড় হয় এদের মননশক্তি। এদের খিদে পায় না, ঘুম হয় না, সময়ের বোধ কমে যায়, হাসিকান্নার বোধ থাকে না। ওজন কমে যায়। ধীরে ধীরে এক অস্বাভাবিক জীবনস্মৃত অবস্থায় পৌঁছে যায়।
সর্বোপরি মাদকাসক্তির কুফল অতি মারাত্মক বলে বিবেচনা করা হয়, বিশেষত এ কারণে যে মাদকাসক্ত দেহে ক্ষতির কাজটি চলে ধীরগতিতে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির পক্ষে এর প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়ে ওঠে না, ফলে ধীরে ধীরে সে এগিয়ে যায় মৃত্যুর দিকে। তুমি তোমার বন্ধুদেরও এ-বিষয়ে সচেতন করে তুলবে বলে আশা করি। এর বেশি কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কখনো বৃথা সময় নষ্ট করো না।

তোমার সামনে জটিল পথ, তা তোমাকে পাড়ি দিতে হবে। আমরা তোমার সে পথ চলার সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। যে কোনো সুবিধা-অসুবিধায় আমাকে চিঠি লিখবে। তোমার ফাইনাল পরীক্ষার তো আর মাত্র দু-চার মাস বাকি। তাই পড়া জমিয়ে না রেখে প্রতিদিন নিয়মিত পড়াশোনা কর। তোমার জন্যে স্নেহ রইল। আজ এখানেই শেষ করছি।
ইতি
তোমার বড় ভাই
আরও দেখুন: