একুশে ফেব্রুয়ারি উদ্যাপনের কথা জানিয়ে বন্ধুকে পত্র | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা , কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে মানব মনের কোনো ভাব, সংবাদ, তথ্য, আবেদন ইত্যাদি অপরের কাছে লিখিতভাবে জানানো হলে, তাকে সাধারণভাবে পত্র বা চিঠি বলে।
একুশে ফেব্রুয়ারি উদ্যাপনের কথা জানিয়ে বন্ধুকে পত্র
কলেজ ছাত্রাবাস, সিলেট ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০০০
সুপ্রিয় ‘ক’,
প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিও। অনেকদিন তোমাকে চিঠি লিখি নি বলে ক্ষোভ আর অভিমানভরা যে চিঠিটি তুমি লিখেছো, তা পেয়েছি। আর চিঠি পেয়েই তোমাকে লিখতে বসা। তুমি জানতে চেয়েছো আমি এমন কী নিয়ে ব্যস্ত যে তোমাকে চিঠি লেখার সময় হয় না। সত্যি সত্যিই ব্যস্ত ছিলাম কলেজের একুশে ফ্রেব্রুয়ারি উদযাপন অনুষ্ঠান নিয়ে। তোমাকে আজ কলেজে উদযাপিত একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানের একটু সংবাদ দিলে কেমন হয়! তবে আর দেরি নয়, শোন—
জাতীয় জীবনে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি যে চেতনার সঞ্চার করে তার প্রভাব বাঙালি জীবনের সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয়। আমাদের কলেজ কর্তৃপক্ষ এ দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্যে আগে থেকেই তৎপর ছিল। কলেজ- ছাত্রসংসদ সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে থাকলেও, কলেজ-শিক্ষকদের উদার মনোবৃত্তি সহযোগিতা এবং শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের কারণে, অমর একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটি স্বকীয়তায় সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
ভোর ছটায় প্রভাতফেরির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। শহরের বিভিন্নস্থান থেকে সেই কাকড়াকা ভোরে ছাত্রছাত্রী খালি পায়ে শহীদমিনারে ভাষা শহীদদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানানোর জন্যে আসতে থাকে। কণ্ঠে তাদের সেই অমর সঙ্গীত— ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি।’ কলেজের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান-এর নেতৃত্বে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। এরপর মাননীয় অধ্যক্ষ, শিক্ষকবৃন্দ ও ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে পুষ্প অর্পণ করা হয়। এ সময় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকে এবং কালো পতাকা উত্তোলিত হয়। এ সময় এক ভাবগম্ভীর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরে মহান ভাষা-আন্দোলনের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
সকাল দশটায় কলেজ অডিটোরিয়ামে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি বর্তমান প্রজন্মের কাছে এক অনুকরণীয় প্রত্যয়’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। জাতীয় জীবনে একুশের তাৎপর্য ও এর প্রভাব সম্পর্কে শ্রদ্ধেয় অধ্যাপকগণ নিজ নিজ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। শিক্ষার্থীরাও এতে অংশগ্রহণ করে। সবশেষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন মাননীয় অধ্যক্ষ। একুশের তাৎপর্যের প্রতি আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি বলেন- ‘মানুষের সবরকম ইচ্ছা, আবেগ, অনুভূতি, কল্পনা, ভাব, আদর্শ সবই রূপায়িত হয়ে ওঠে ভাষা তথা মাতৃভাষার মাধ্যমে। তাই একুশ আমাদের চেতনা, একুশ আমাদের গৌরব।
প্রতি বছর ভাষা আন্দোলনের বেদনা-বিধুর স্মৃতি ও সংগ্রামী চেতনার অমিয় ধারাকে বহন করে একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের দ্বারে ফিরে আসে। বাংলাদেশের মানুষের জাতীয়জীবনের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের একটি বড় অধ্যায় জুড়ে রয়েছে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। মায়ের মুখের ভাষার সতীত্ব রক্ষায় বাংলার নির্মম-মৃত্যু-ভয় নির্লিপ্ত দুর্জয় সন্তানেরা আপন বুকের রক্তে পিচ ঢালা কালো রাস্তাকে রঞ্জিত করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। এই ভাষা আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামের দুর্দমনীয় সংকল্পের গভীরে প্রোথিত শেকড়ে রস সঞ্চার করে, দেশকে তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের দিকে নিয়ে গেছে।

অমর একুশে তাই আমাদের জাতীয়জীবনে বেদনাবিজড়িত এক গৌরব গাথা।’ এ দিবস আজ ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’- এর স্বীকৃতি লাভ করেছে— অধ্যক্ষ মহোদয় একথাও স্মরণ করিয়ে দিলেন। তারপর একুশের গান, দেশাত্মবোধক গানের মধ্য দিয়ে দিবসটি যেমনি হয়ে উঠেছিল বেদনাবিধুর তেমনি তাৎপর্যমণ্ডিত। বেশ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে এবার আমাদের কলেজে একুশে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠানমালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ আর নয়। তুমি ভালো থেকো, সময় করে চিঠি লিখবে, খোদা হাফেজ।
ইতি গুণমুগ্ধ
আরও দেখুন: