কলেজে তোমার শেষ দিনে মনের অবস্থা বর্ণনা করে চিঠি | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা

কলেজে তোমার শেষ দিনে মনের অবস্থা বর্ণনা করে চিঠি | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা ,  বাইবেলের বেশ কয়েকটি পরিচ্ছেদ চিঠিতে লেখা। অযক্তিগত, কূটনৈতিক বা বাণিজ্যিক- সবরকম চিঠিই পরবর্তীকালে ঐতিহাসিকগণ প্রাথমিক উৎস হিসেবে ব্যবহার করেন। কখনোবা চিঠি এতো শৈল্পিক রূপ পায় যে তা সাহিত্যের একটি বর্গ হয়ে ওঠে, যেমন বাইজেন্টাইনে এপিস্টোলোগ্রাফি বা সাহিত্যের পত্র উপন্যাস।

কলেজে তোমার শেষ দিনে মনের অবস্থা বর্ণনা করে চিঠি

অভয়নগর; যশোর ১৫ মার্চ, ২০০০

প্রিয় ‘ক’,

দু-ঘণ্টা হল কলেজ থেকে ফিরেছি। পেটে খিদে আছে, অথচ হৃদয়-মন দুঃখে ভারাক্রান্ত হওয়ায় খেতে ইচ্ছে করছে না। আমার মনে হল তোমার কাছে দু-কলম লিখতে পারলে আমার বেদনাহত হৃদয় কিছুটা হলেও শীতল হবে। তুমি তো জান আজ আমাদের কলেজ-জীবনের শেষ দিন, বিদায়ের দিন। গতদিনই আমাদের ফরম পূরণের শেষদিন অতিবাহিত হয়েছে।

 

কলেজে তোমার শেষ দিনে মনের অবস্থা বর্ণনা করে চিঠি

 

আজ আমাদের বিদায়ের দিন। কলেজের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়সংবর্ধনা দেয়া হবে। আমরা যারা পরীক্ষার্থী ছিলাম সবাই অন্যদিনের চেয়ে দু-ঘণ্টা আগেই কলেজে এসে হাজির হয়েছি। কিন্তু এ কী কাণ্ড! আজ আর কারো মনে কোনো আনন্দ নেই, নেই কোনো চঞ্চলতা, সবার চোখেমুখে একটা বিষণ্নতার ছাপ। চারদিকে যেন বিদায়ের সকরুণ ঘণ্টা বাজছে, গির্জার ঘণ্টাধ্বনির মতো সে- ধ্বনি আকাশে-বাতাসে প্রতিফলিত হয়ে আমার হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করতে লাগল। মনে হল সবচেয়ে বেশি কষ্ট বোধহয় আমিই পাচ্ছি। আসলে এ-কষ্ট এবং দুঃখ কাউকে বোঝানো কিংবা বলা যায় না বলেই এর তীব্রতা ও দহন এত বেশি।

 

কলেজে তোমার শেষ দিনে মনের অবস্থা বর্ণনা করে চিঠি

 

সে যাক, যথাসময়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল। অনুষ্ঠানের শুরুতেই কলেজের প্রথম বর্ষের কৃতী ছাত্রী বৃষ্টি আমাদের সবাইকে ফুলের মালা পরিয়ে দিল। সূচনা হল বিদায়ের! ছাত্রসংসদের সম্পাদক লিয়ন সূচনা-ভাষণ দিলেন। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অনেকে বক্তব্য রেখে আমাদের প্রতি তাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করল। কলেজের শ্রেষ্ঠছাত্র হিসেবে আমাকে যখন বক্তব্য উপস্থাপনের জন্যে বলা হল, তখন আমি ভেবেই পাচ্ছিলাম না কীভাবে কথা বলব। বন্ধু, তুমি তো জান— স্বভাবতই আমি একটু বেশি আবেগপ্রবণ, তার ওপর বিদায়ের এই দিনে কিছু বলা আমার জন্যে যে একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু অধ্যক্ষের আদেশ বলে তা প্রত্যাখ্যান করা আদৌ সম্ভব নয়, শেষ পর্যন্ত বক্তব্যের জন্যে দাঁড়ালাম— ‘এত আশা ভালবাসা, এতই নিরাশা, এত দুঃখ কেন?’

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

—যেতে নাহি মন চায় … —এতটুকু বলার পর আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। আমি জানি আমার মুখ দিয়ে আর একটি অক্ষর বের হলে তা গগনবিদারী চিৎকার হয়ে বের হতো। দু-চোখের জল বাধা মানল না। দীর্ঘ পনেরো সেকেন্ড পর অতি কষ্টে উচ্চারণ করলাম আমাদের জন্যে দোয়া করবেন। এই বলে আমার বক্তব্য শেষ করতে হল। সভাপতির ভাষণে বক্তব্য রাখলেন আমাদের পরম শ্রদ্ধাভাজন অধ্যক্ষ। তিনি আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে চলার পথের পাথেয় সম্পর্কে নানা উপদেশ দিলেন। সবশেষে আমাদের সবাইকে উপহার হিসেবে একটি করে বই দেয়া হল। এরপর সঙ্গীতানুষ্ঠান। বিদায়ের গানে বেদনার সুর বেজে উঠতেই আমাদের কলেজজীবনের শেষ দিনের মুহূর্তগুলো হৃদয়পটে ছবির মতো আটকে গেল। এ-স্মৃতি কখনোই ভোলার নয়। আজ আর নয়। আমার জন্যে দোয়া করবে। বাসার সবার প্রতি শ্রেণিভেদে স্নেহ ও সালাম রইল।

ইতি

প্রীতিমুগ্ধ

আরও দেখুন:

Leave a Comment