হে অতীত তুমি ভুবনে ভুবনে | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

হে অতীত তুমি ভুবনে ভুবনে | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা , ভাবসম্প্রসারণ মানুষ কখনো কখনো অল্প কথায় মনের ভাব প্রকাশ করে । এই ভাবকে ঠিক রেখেই এর সম্প্রসারণ করতে হয় । ভাবসম্প্রসারণ অনেকটা ভাবার্থের বিপরীত । কোনো পদ্যাংশ বা গদ্যাংশের ভেতর একটি গূঢ় তাৎপর্য অত্যন্ত স্বপ্নায়তনে থাকে ।

 

হে অতীত তুমি ভুবনে ভুবনে | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

 

হে অতীত তুমি ভুবনে ভুবনে / কাজ করে যাও গোপনে গোপনে

আজ যা বর্তমান কাল তা অতীত। অতীতের ওপরই দাঁড়িয়ে আছে বর্তমানের জীবন, সভ্যতা, সংস্কৃতি। আগামী দিনের জন্যেও অতীত অনন্ত প্রেরণার উৎস। তাই, অতীতকে ছোট করে দেখার বা অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। মানবজীবনে অতীতের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। মহাকাল অনাদি, অনন্ত এবং নিরবচ্ছিন্ন। তাকে ক্ষুদ্র বা খণ্ড করে দেখলে সত্য দর্শন হয় না। কিন্তু সাধারণ মানুষ মহাকালের নিরবচ্ছিন্ন গতি উপলব্ধি করতে সক্ষম নয় বিধায় অখণ্ড কালপ্রবাহকে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ- এ তিনটি ভাগে ভাগ করে দেখে। মানুষ বর্তমান কালের সাক্ষী, অনাগত ভবিষ্যৎ তার কাছে এক বিরাট প্রশ্নবোধক চিহ্ন।

 

হে অতীত তুমি ভুবনে ভুবনে | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

 

আবার যে কাল লোকচক্ষুর অন্তরালে বিলীন হয়ে গেছে সে সম্পর্কেও মানুষ নিষ্ক্রিয়। অতীত যেন ঘুমিয়ে থাকা শিশুটির মতো। জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধারাবাহিক অংশ যা একদিন বর্তমান ছিল, মহাকালের ঘূর্ণাবর্তে তা-ই অতীতে পরিণত হয়। এভাবেই চলেছে কালচক্রের বিবর্তন। জীবনপথে ফেলে আসা দিনগুলোই অতীত। সেখানে যা কিছু ঘটেছে তা আজ চোখের আড়ালে চলে গেছে। সেজন্যে অতীতকে অনেকে মৃত বলে বিবেচনা করে এবং বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আসলে অতীত ভুলে যাওয়ার নয়। কারণ অতীত থেকেই বর্তমানের সৃষ্টি। অতীত বিরাট মহিরুহের ন্যায় কর্ম, জ্ঞান ও কৃষ্টি নিয়ে মানুষের ওপর ধীর-মন্থর গতিতে তার কাজ করে যাচ্ছে।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

অতীতকে নির্ভর করেই গড়ে উঠছে বর্তমান সভ্যতা। ইতিহাসের শিক্ষা মানুষকে ঠিক পথে চলার নির্দেশনা দেয়। তাই বর্তমান সভ্যতা অতীতের উত্তরাধিকার। এ উত্তরাধিকার ভবিষ্যতের মধ্যে বর্তাবেই। অতীত হল নীরব কর্মী, বর্তমানের ন্যায় মুখর নয়। তার সাধনা নীরব । অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের জননী। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়েই মানবের অখণ্ড সাধনা। ভবিষ্যৎ জীবনকে সুন্দর ও সুখময় করার জন্যে বর্তমানের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতে হবে। এই বর্তমানই একসময় অতীত হয়ে জীবনের কর্মভাণ্ডারে সঞ্চিত হবে। আর অতীতের সঞ্চিত কর্মভাণ্ডারের ওপর নির্ভর করে রচিত হয় মানুষের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ।যার অতীত নেই সে মৃত। অতীত মানব-জীবনের অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। অতীত নীরবে মানুষের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের ওপর তার প্রভাব রাখে। তাই অতীতকে ভুললে চলবে না।

আরও দেখুন:

Leave a Comment