স্বার্থপরতা মানব জীবনের উন্নতির পথে | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

স্বার্থপরতা মানব জীবনের উন্নতির পথে | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা , ভাবসম্প্রসারণ অনেকটা ভাবার্থের বিপরীত । কোনো পদ্যাংশ বা গদ্যাংশের ভেতর একটি গূঢ় তাৎপর্য অত্যন্ত স্বপ্নায়তনে থাকে । তাকে বিস্তৃতভাবে প্রকাশ করার নামই ভাবসম্প্রসারণ। ইংরেজিতে এটিকে Amplification বা Explanation of idea বলে ।

স্বার্থপরতা মানব জীবনের উন্নতির পথে অন্যতম প্রতিবন্ধক

সকলের সঙ্গে মিলেমিশে জীবনধারণ এবং সুখে-দুঃখে একে অপরের পাশে এসে দাঁড়ানোর মধ্যেই জীবনের যথার্থ সার্থকতা নিহিত। নিজের স্বার্থের জন্যেই কেবল জীবন নয় বরং আত্মকেন্দ্রিকতার বলয় থেকে বেরিয়ে এসে বৃহত্তর মানবসমাজের সঙ্গে গভীর যোগসূত্র রচনাতেই মানব-জীবনের সার্থকতা।

 

স্বার্থপরতা মানব জীবনের উন্নতির পথে অন্যতম প্রতিবন্ধক

 

মানুষ সামাজিক জীব, সে কখনোই একা বাস করতে পারে না। সকলকে নিয়েই তার জীবন। কারণ মানুষ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। মানুষের যথার্থ পরিচয় সবার মধ্যে, সবার সঙ্গে বাঁচার মধ্যে। কেবল নেব, বিনিময়ে কিছু দেব না— এই সঙ্কীর্ণ স্বার্থবোধ সমাজস্বার্থবিরোধী, বৃহত্তর মানবগোষ্ঠীর পক্ষে অকল্যাণকর। ‘দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে’-এই বোধই মানুষের সমাজবন্ধনের মূলসূত্র। এ কারণে পরোপকারের মহান ব্রতে মানুষের মন উদ্দীপ্ত হয়। পরোপকারের মাধ্যমেই মানুষ আনন্দ লাভ করে। আর তখন সমাজজীবন হয়ে ওঠে সুন্দর।

কিন্তু সমাজে এক শ্রেণীর হীনম্মন্য মানুষ বাস করে যারা পরের উপকারের চেয়ে নিজের স্বার্থের ব্যাপারে বেশি তৎপর। তারা নিজের স্বার্থকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে এবং পরের কল্যাণ সাধনের ব্যাপারে বিমুখ। স্বার্থমগ্নতা মনুষ্যত্বের পরিপন্থী। স্বার্থপর ব্যক্তি বৃহত্তর জীবনাঙ্গন থেকে স্বেচ্ছানির্বাসিত। পৃথিবীর ভাল-মন্দ, সুখ-দুঃখ, মঙ্গল-অমঙ্গল তার হৃদয়মন স্পর্শ করে না। স্বার্থের সংকীর্ণ গণ্ডিতে আবদ্ধ হলে মানুষ অন্যের প্রতি স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার স্বাভাবিক হৃদয়-ধর্মও হারিয়ে ফেলে। মানবধর্মের অবমাননাকারী এসব ব্যক্তি পৃথিবীর জঞ্জাল। তারা কখনোই সুখকর জীবনযাপনের স্বাদ পায় না।

 

স্বার্থপরতা মানব জীবনের উন্নতির পথে অন্যতম প্রতিবন্ধক

 

এ-ধরনের স্বার্থপর মানুষ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং তারা সমাজের কোনো উপকারে আসে না। আর মানুষ যদি মানুষেরই উপকারে না আসে তবে তার জীবন ব্যর্থ। সে-জন্যে সত্যিকারের ভাল মানুষ বলতে তাকেই বোঝায় যে নিজের স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে পরোপকারে নিয়োজিত থাকে। সে জানে, স্বার্থসুখ সত্যিকারের সুখ নয়। জানে, পরের কারণে মরণেও সুখ। নিঃস্বার্থ মন নিয়ে পরের জন্যে জীবন উৎসর্গ করে সীমাহীন ভালোবাসায় তার বুক ভরে ওঠে। সেই মহৎ মানুষ নিজের জন্য নয়, সে বিশ্বমানবের জন্যে নিবেদিত।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

পরার্থে জীবন উৎসর্গ করার মাধ্যমে মানবজীবন সার্থকতায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। পরার্থে জীবন উৎসর্গ করাই তো জীবনের চরম তৃপ্তি। নিজের দুঃখকে তুচ্ছ মনে করে অপরের কল্যাণে নিজকে নিয়োজিত করতে পারলেই জীবন সুখময় ও আনন্দময় হয়ে ওঠে।

আরও দেখুন:

Leave a Comment