সম্পদে যাঁদের ঠেকে না চরণ | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা , সংকেতময় বা তাৎপর্যপূর্ণ শব্দগুচ্ছের আবরণে প্রচ্ছন্ন থাকে । নানা দিক থেকে সেই ভাবটির ওপর আলোকপাত করে তার যরূপ তুলে ধরা হয় ভাবসম্প্রসারণে । ভাবটি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আমরা বুঝতে পারি , এ ধরনের গদ্য বা পদ্যাংশে সাধারণত মানবজীবনের কোনো মহৎ আদর্শ , মানবচরিত্রের কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্য , নৈতিকতা , প্রণোদনমূলক কোনো শক্তি , কল্যাণকর কোনো উক্তির অৎপর্যময় ব্যঞ্জনাকে ধারণ করে থাকে ।
সম্পদে যাঁদের ঠেকে না চরণ। / মাটির মালিক তাঁহারাই হন
প্রকৃতির রাজ্যে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। সৃষ্টিকর্তার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হল মানুষ। তাঁর সৃষ্টিতে নেই কোনো ভেদ-বৈষম্যের পার্থক্য-রেখা। তাই পার্থিব সম্পদে সবার সমান অধিকার। কিন্তু অর্থলিপ্সা সমাজ-জীবনে ব্যাপক হয়ে পড়ার অবশ্যম্ভাবী ফলস্বরূপ দেখা গেছে যে, একশ্রেণীর মানুষ বিত্তশালী হয়ে উঠেছে এবং অপর এক শ্রেণী ক্রমেই বিত্তহীন হয়ে পড়েছে। এবং শ্রম ও উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কহীন ব্যক্তিরাই ভূমির মালিক হয়েছে।
সব সমাজই পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনশীলতার মধ্যে সমাজের গতি ও দীপ্তি নিহিত। কোন এক সুদূর অতীতে যখন সমাজ গঠিত হয়েছিল, তখন সেখানে সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল বলবানের হাত থেকে আর্ত ও দুর্বলকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি। পরস্পরের সহযোগিতার মধ্য দিয়ে মানুষ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে। পরবর্তীকালে সমাজ ও সভ্যতা যতই অগ্রসর হয়েছে, ততই অর্থনীতির বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে এবং তার ফলে জীবনকে বাদ দিয়ে জীবিকা প্রধান হয়ে উঠেছে।
মানব-সমাজে সৃষ্টি হয়েছে শ্রেণীবিভাজন; সৃষ্টি হয়েছে ভূস্বামী ও ভূমিহীন, পুঁজিপতি- শ্রমিক শ্রেণীর। সম্পদ করায়ত্ত হয়েছে ভূস্বামী ও পুঁজিপতিদের হাতে। ফলে একদল হয়ে উঠেছে অপরিমেয় ঐশ্বর্যের অধিকারী; অপরদল হয়ে উঠেছে নিদারুণভাবে রিক্ত ও নিঃস্ব। অথচ এই রিক্ত ও নিঃস্ব মাটির মানুষেরাই মাটিতে ফসল ফলিয়েছে, কলে-কারখানায় উৎপাদন করেছে। কিন্তু ভূস্বামীরা শাসন ও শোষণের দ্বারা সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করে ভূমির মালিকানার জোরে, ক্ষমতার দাপটে সমস্ত মুনাফা তুলে নিয়েছে নিজের ঘরে। এভাবে প্রচুর অর্থ-বিত্তের জোরে তারা ভোগ-বিলাসিতায় জীবন কাটায়— গাড়িতে কিংবা প্লেনে চড়ে, বাস করে দালান-কোঠায়।

তাদের পা ক্বচিৎ-কদাচিৎ মাটিতে পড়ে। মাটির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক না থাকলেও মাটির মালিক তারাই। ভূমির সঙ্গে শ্রমের সম্পর্ক না রেখেও এরাই ভূস্বামী। অথচ মাটিতে তারা ফসল ফলায় তারা কখনোই মাটির মালিক হতে পারে না, যদিও এরাই সমাজ, দেশ ও জাতির মেরুদণ্ড।শ্রমিক শ্রেণীর সংকট মোচনই হবে জাতীয় জীবনের রক্ষাকবচ। জাতীয় জীবনের এ রক্ষাকবচকে সমুন্নত রাখতে না পারলে, একটি জাতির মেরুদণ্ড কখনোই সুদৃঢ় হতে পারে না।
আরও দেখুন: