মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন – ভাব-সম্প্রসারণের একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আগ্রহীরা এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ভাষায় নিজস্ব ভাষণ তৈরি করবেন। কবি-সাহিত্যিকদের রচনায় অনেক সময় ভাব-সংহত বাক্য বা চরণ থাকে, যার মিত-অবয়বে লুক্কায়িত থাকে জীবন ও জগৎ সম্পর্কিত গূঢ় কথা, নিহিত থাকে ভূয়োদর্শনের শক্তি

মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন, বিলাস ধন নহে

ধনসম্পদের কল্যাণকর দিকটিই তার প্রকৃত পরিচয় বহন করে। ঐশ্বর্যের সমারোহের মধ্যে বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দিলে ঐশ্বর্যের প্রদর্শনী হয় বটে, কিন্তু তাতে ধনসম্পদের মর্যাদা প্রমাণিত হয় না। ধনসম্পদকে বিলাসিতায় অপব্যয় না করে, পরোপকারে নিয়োজিত করলে তার অর্জন ও ব্যয়ের সার্থকতা প্রমাণিত হয়।

মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন, বিলাস ধন নহে 

জগতের যাবতীয় কাজের নেপথ্যে রয়েছে অর্থ। অর্থ ছাড়া কোনো কাজই সম্পন্ন হয় না। মানবজীবনে সবসময় অর্থের প্রয়োজন একথা অনস্বীকার্য। ব্যক্তিজীবন, সমাজজীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে অর্থের দরকার। মানুষ এজন্য নানা শ্রম ও ক্লেশ সহ্য করে অর্থ সঞ্চয় করে, কেউ কেউ প্রচুর অর্থবিত্তের অধিকারী হয়। কিন্তু এ অর্জিত ধনসম্পদ চিরস্থায়ী হয় না কখনও। একদিন অর্থবিত্ত ফুরিয়ে যায়। আবার উপার্জিত অর্থ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে বিলাসবাসনে ভাসিয়ে দিলে সমাজ বা জগতের যেমন কল্যাণ সাধিত হয় না, তেমনি বিপুল অর্থের পাহাড় শুধু ধন-ভাণ্ডারে জমা রাখলেও সে অর্থ কারও কোনো কাজে আসে না। সে ধনের কোনো সার্থকতা নেই। ধন-সম্পদের প্রকৃত গুরুত্ব নির্ভর করে মানবকল্যাণে ও সামাজিক অগ্রগতিতে তা কাজে লাগানোর ওপর।

 

মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন, বিলাস ধন নহে 

 

সুতরাং বিশেষ বিবেচনা করে উপার্জিত অর্থ ব্যয় করা উচিত। সঞ্চয়, মিতব্যয়, কৃপণতা কোনোটার মাঝেই অর্থ বা ধনসম্পদের সার্থকতা লুক্কায়িত নেই, সদ্ব্যবহারের মাঝেই রয়েছে এর পরিপূর্ণ সার্থকতা। অপব্যয়ী ও বিলাসীরা ভুলে যায় যে, তারা যে বিত্ত-সম্পদের মালিক হয়েছে তাতে রয়েছে গরিবের হক। তাই বিলাসিতায় গা ভাসানোর আগে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কথা স্মরণ রাখতে হবে। যে ধনসম্পদ সমাজের সাধারণ মানুষের কোনো উপকারে আসে না, শুধু বিলাসিতায় ব্যয়িত হয় কিংবা কৃপণতার বশে ধনভাণ্ডারে জমা রাখা হয়— সে ধনসম্পদ নিতান্তই মূল্যহীন। মানবকল্যাণ ও সামাজিক-মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যেই ধনসম্পদ বা অর্থের জন্ম। কাজেই মানুষ ও সমাজের কল্যাণ সাধনের উদ্দেশে অর্জিত অর্থই সম্পদ।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

বিলাসিতা কিংবা অপব্যয়ের উদ্দেশে সঞ্চিত অর্থ প্রকৃতপক্ষে ধন হিসেবে বিবেচ্য নয়। মানবকল্যাণে ও সামাজিক অগ্রগতিতে ব্যয় করতে পারলেই ধন-সম্পদের প্রকৃত মূল্যায়ন হয়। হাজী মুহম্মদ মহসীন নিজের বিপুল ধনরাশি এদেশের মানুষের শিক্ষা ও দরিদ্রদের সহায়তায় ব্যয় করেছেন। নিজে জীবন-যাপন করেছেন অত্যন্ত সাধারণভাবে—দীনদরিদ্র বেশে। তাঁর ধন তিনি মানুষের মঙ্গলার্থে ব্যয় করেছেন, নিজের বিলাসবাসনের জন্য নয়। তাই তিনি এখনও স্মরণীয় হয়ে আছেন।

যে অর্থ মানুষের কল্যাণে ব্যয়িত হয় না, সে অর্থের কোনো সার্থকতা নেই। মানবকল্যাণে ব্যয়িত সম্পদই প্রকৃত ধন । তাই ধনসম্পদ নিজস্ব মর্যাদা তখনই পাবে, যখন তা মহৎ কাজে ব্যয়িত হবে। সে-ধনই প্রকৃত ধন যে-ধনের মধ্যে মানুষের মঙ্গল করবার ইচ্ছা সম্পৃক্ত থাকে।

আরও দেখুন:

Leave a Comment