চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা , ভাব সম্প্রসারণ শব্দের অর্থ ভাবের সম্প্রসারণ অর্থাৎ বিস্তারিতভাবে প্রয়োজনীয় উপমা দৃষ্টান্তমূলক যুক্তিসহকারে সহজ উপায় এবং সরল ভাষায় উপস্থাপন করতে হয়। সম্প্রসারিত ভাব এর বিষয়বস্তু কি ছোট ছোট অনুচ্ছেদ আকারের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে। মূলভাবের উপমা, প্রতীক এবং রূপক এর আড়ালে কি বুঝাতে চেয়েছে তা ভালো করে বুঝে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। প্রাসঙ্গিক অংশে ঐতিহাসিক, বৈজ্ঞানিক এবং পৌরাণিক তথ্য উল্লেখ করেছে তা বুঝে সম্প্রসারণ করতে হবে। ভাব সম্প্রসারণ লেখার সময় এর ব্যাখ্যা মূলত নির্ভর করে মান নির্ধারণের নম্বর। ভাব সম্প্রসারণ করার সময় অবশ্যই মান নির্ধারণ অনুসারে ভাবের সম্প্রসারণ করতে হয়।
চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ
উত্তমচরিত্র মানবজীবনের মুকুট স্বরূপ। জীবনের সঙ্গে প্রাণের যে সম্পর্ক, মানুষের সঙ্গে চরিত্রের সে সম্পর্ক। চরিত্রের দিক বিবেচনা করেই মানবজীবনের উৎকর্ষ অপকর্মের বিচার হয়। উত্তমচরিত্রই মানুষকে মান- মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলে। পক্ষান্তরে চরিত্রহীনতা মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় এবং তার মধ্যে পশুবৃত্তি জাগ্রত করে।
মানুষের সর্বোৎকৃষ্ট গুণাবলির মধ্যে চরিত্র অন্যতম। এর মধ্যে মানুষের প্রকৃত পরিচয় নিহিত। চরিত্রই মনুষ্যত্বের পরিচায়ক। সৌন্দর্য ও সুরভির মধ্যে যেমন ফুলের সার্থকতা লুক্কায়িত, তেমনি উত্তম চরিত্রের মধ্যেও মানবের সার্থকতা নিহিত। তাই বিখ্যাত ইংরেজ লেখক স্যামুয়্যাল স্মাইল্স্ তাঁর ‘Character’ প্রবন্ধে বলেছেন- “The crown and glory of life is character.” বস্তুত সততা, সত্যনিষ্ঠা, প্রেম, পরোপকারিতা, দায়িত্ববোধ, শৃঙ্খলা এবং কর্তব্যপালন হল চরিত্রের মৌলিক উপাদান।
এগুলো মানুষ যখন সহজে নিজের মধ্যে বিকশিত করে তোলে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার প্রতিটি কথা ও কাজের মাধ্যমে তা ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়, তখন উত্তমচরিত্র তার স্বভাবের সঙ্গে সমীভূত হয়ে যায়।ফলে, দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক আচরণেও উত্তমচরিত্রের বৈশিষ্ট্যাবলি প্রকাশ পেতে থাকে।
আর এ-পর্যায়ে গিয়ে ব্যক্তি তার চরিত্রকে একটি সম্পদ হিসেবে আবিষ্কার করে। স্বাস্থ্য, অর্থ এবং বিদ্যাকে আমরা মানবজীবনের অপরিহার্য উপাদান হিসেবে বিবেচনা করি। কিন্তু জীবনক্ষেত্রে এগুলোর যতই অবদান থাক না কেন, এককভাবে এগুলোর কোনোটিই মানুষকে সর্বোত্তম মানুষে পরিণত করতে সক্ষম নয়, যদি না সে চরিত্রবান হয়। কারণ সমৃদ্ধিময় জীবনের জন্যে চরিত্র প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। চরিত্রের মাধ্যমেই ঘোষিত হয় জীবনের গৌরব। চরিত্র দিয়ে জীবনের যে গৌরবময় বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় তা আর কিছুতেই সম্ভব নয় বলে সবার ওপরে চরিত্রের সুমহান মর্যাদা স্বীকৃত।

যার পরশে জীবন ঐশ্বর্যমণ্ডিত হয় এবং যার বদৌলতে মানুষ জনসমাজে শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র হিসেবে আদৃত হয়, তার মূলে রয়েছে উত্তম চরিত্র। স্পর্শমণির ছোয়ায় লোহা যেমন সোনা হয়ে ওঠে তেমনি সৎ চরিত্রের প্রভাবে মানুষের পশুপ্রবৃত্তি ঘুচে যায়, জন্ম নেয় সৎ, সুন্দর ও মহৎ জীবনের আকাঙ্ক্ষা। মানুষ তার দৈহিক সৌন্দর্য আরও আকর্ষণীয় ও মধুময় করতে সুন্দর সুন্দর পোশাক ও অলঙ্কার ব্যবহার করে এক অনুপম সৌন্দর্যের বিকাশ সাধন করে, কিন্তু সে যদি চরিত্রবান না হয় তা হলে এ-সবই অপ্রয়োজনীয়। হযরত মুহম্মদ (স), জিশু খ্রিস্ট, গৌতম বুদ্ধ প্রমুখ ধর্মবেত্তা, আব্রাহাম লিংকন, লেনিন প্রমুখ রাষ্ট্রনায়ক; সক্রেটিস, ঈশপ, বিদ্যাসাগরের মতো শিক্ষাগুরুর চরিত্রশক্তি তারই উজ্জ্বল প্রমাণ।
নামমাত্র নৈতিকতা বা ন্যায়নিষ্ঠাই চরিত্র নয়, চরিত্রের মধ্যে সমন্বয় ঘটবে মানুষের যাবতীয় মানবীয় গুণাবলি ও আদর্শের। চরিত্রবান ব্যক্তি জাগতিক মায়া-মোহ ও লোভ-লালসার বন্ধনকে ছিন্ন করে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠায় অবিচল থাকেন। তাই প্রতিটি মানুষের সাধনা হওয়া উচিত তার চরিত্র গঠনের সাধনা। চরিত্র গঠনের কাজ শিশুকাল থেকে মরণের আগ পর্যন্ত চলতে থাকে।
চরিত্রের শক্তিতেই মানুষ হয় মহৎ, অর্জন করে সত্যিকারের গৌরব ও মর্যাদা। চরিত্রের কাছে পার্থিব সম্পদ ও বিত্ত অতি নগণ্য। প্রাচুর্যের বিনিময়ে চরিত্রকে কেনা যায় না। মানবজীবনে চরিত্রের মতো বড় অলঙ্কার আর নেই। কোনো মূল্যেও এর পরিমাপ করা যায় না। এ প্রসঙ্গে ইংরেজি প্রবাদটি প্রণিধানযোগ্য, “When money is lost nothing is lost, When health is lost, something is lost, But when character is lost, everything is lost.”