পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না – ভাব-সম্প্রসারণের একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আগ্রহীরা এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ভাষায় নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করবেন। ভাব-সম্প্রসারণ হচ্ছে এভাবে সুসংগত সমর্থক প্রসারণ। ভাবের সংহতিকে উম্মোচিত, নির্ণীত করে একটি অতুলনীয় দৃষ্টান্ত বা প্রবাদ প্রবচন এর সাহায্যে সহজ ভাষায় বিস্তারিত তত্ত্বের প্রসারণ ঘটে তাকে মূলত ভাব-সম্প্রসারণ বলা হয়। ভাব সম্প্রসারণ সাধারণত কবিতা বা যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একটি চলন এর মাধ্যমে তা ভাবে পূর্ণ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না
পরার্থে জীবন উৎসর্গ করার মাধ্যমে মানবজীবন সার্থকতায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ফুলের মতোই মানুষের জীবন। ফুল ফোটে সুবাস ছড়ায়। তার সৌরভে চারদিক আমোদিত হয়। এভাবে সৌরভ ছড়ানোর মধ্যেই সে নিজের সার্থকতা খুঁজে পায়। তদ্রুপ, অপরের কল্যাণে নিজকে নিয়োজিত করতে পারলেই জীবন সুখময় ও আনন্দময় হয়ে ওঠে।
সমাজের কল্যাণে নিজেদের নিঃশেষে বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যে আছে পরম সুখ, অনির্বচনীয় আনন্দ ও অপরিসীম পরিতৃপ্তি। পুষ্প যেন মানবব্রতী জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। সে কখনো তার নিজের জন্য ফোটে না। সে তার সৌরভ ও সৌন্দর্যে সকলকে মোহিত করে। ফুলের এই সৌন্দর্য উপভোগ করে যেমন ভ্রমর, মৌমাছি, প্রজাপতি, তেমনি সৌন্দর্য- পিপাসু মানুষের মনও ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়। তার সৌরভে মন উদ্বেলিত হয়। মৌমাছি তার মধু পান করে পরিতৃপ্ত হয়। ফুল আবার কালক্রমে পরিণত হয় ফলে। সেই ফল আস্বাদন করে পরিতৃপ্ত হয় মানুষ। ক্ষুধা নিবৃত্তি করে বনের প্রাণিরা।
আবার, পবিত্রতার প্রতীক বলে ফুল দেবতার চরণে নিবেদিত হয় নৈবেদ্য হিসেবে। আমরা প্রিয়জনকে ফুল উপহার দিই, শ্রদ্ধা ও স্বাগত জানাতে শহীদমিনারে, স্মৃতিসৌধে ফুল দিই। ফুল দিয়ে কাউকে যেমন বরণ করি আবার বিদায় ও চিরবিদায়েও দিই ফুল। তাই দেখা যায় আমাদের জীবনের নানারূপ আবেগ-অনুভূতিতে ফুল জড়িয়ে আছে। এভাবে ফুলের সৌরভ ও সৌন্দর্য তার নিজের হলেও সকলের কাছে নিজেকে উজাড় করে দিয়েই সে তৃপ্ত। মানুষের জীবনও অনেকটা ফুলের মতো। মানুষের চারিত্রিক মাধুর্যও হওয়া উচিত ফুলের মতোই সুন্দর ও সুরভিত, পবিত্র ও নির্মল।

ফুলের মতোই তা নিবেদিত হওয়া উচিত পরের জন্যে, সমাজের স্বার্থে। মানুষ শুধু ভোগ-বিলাস ও স্বার্থের জন্যেই জন্মগ্রহণ করে নি। পরের কল্যাণে জীবনকে উৎসর্গ করার মাঝেই তার জীবনের চরম ও পরম সার্থকতা। পরের কল্যাণ সাধনই মহত্ত্বের লক্ষণ। জগতের সাধু ও মহৎ ব্যক্তিগণও তাই করেন। তাঁরা সর্বদা পরের হিত সাধনে ব্যাপৃত থাকেন এবং পরের তরে জীবন বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। কেননা ব্যক্তিস্বার্থ পরিহারের মাধ্যমেই সমাজ সুন্দর ও সার্থক হয়ে ওঠে। মহৎ ব্যক্তিগণ বিশ্বমানবের। তাঁরা সকলের প্রিয় এবং সকলের আপনজন। তাঁদের জীবন পুষ্পের ন্যায় পরার্থে উৎসর্গীকৃত। তাই মানুষকে ব্যক্তিস্বার্থের কথা না ভেবে সবার স্বার্থের কথা ভাবতে হবে। হৃদয়কে ফুলের মতো বিকশিত করতে হবে।
পুষ্পের এই যে আত্মোৎসর্গ, পরের জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেওয়া— এখান থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। এ শিক্ষা বিনয়ী হওয়ার, এ-শিক্ষা নিজের জীবন দিয়ে অন্যকে সুন্দর ও সুখী করার শিক্ষা। তবেই মানুষের জীবন হয়ে উঠবে আনন্দঘন ও কল্যাণময়।
আরও দেখুন: