অসি অপেক্ষা মসি অধিকতর শক্তিমান – ভাব-সম্প্রসারণের একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আগ্রহীরা এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ভাষায় নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করবেন। ভাব সম্প্রসারণ এর সময় সেই চরণের মূল গভীর ভাবটুকু উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় যুক্তি, বিশ্লেষণ এবং উপমা ব্যবহার করে সেইসাথে প্রয়োজন অনুসারে উদাহরণের মাধ্যমে উপস্থাপন করার প্রক্রিয়া। কবি বা লেখকের যেখানে তার বক্তব্যকে ব্যঞ্জন এবং ইঙ্গিত ধর্মী করে প্রকাশ করেন সেগুলো কে আলোক ধর্মী হিসাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে ভাব সম্প্রসারণ করা হয়।
অসি অপেক্ষা মসি অধিকতর শক্তিমান
মানুষকে বিধাতা জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে শ্রেষ্ঠজীব হিসেবে সৃষ্টি করে এই সুন্দর পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। শারীরিক শক্তি বা বল প্রয়োগে এই পৃথিবীকে জয় করার জন্যে স্রষ্টা মানুষকে সৃষ্টি করেন নি, বরং সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রেখে পৃথিবীকে জয় করার জন্যে জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েছেন।
অসি অর্থাৎ তরবারি— যার ক্ষমতা বিশাল। এই মারণাস্ত্রের সাহায্যে শত্রু দমন হয়, মুহূর্তে লক্ষ লক্ষ প্রাণ বিনষ্ট হয়। এমনকী গোটা দেশও সমূল ধ্বংস হয়। আপাতদৃষ্টিতে অসি অপেক্ষা মসির ক্ষমতা নগণ্য মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা সত্য নয়। কারণ, অসির ক্ষমতা সাময়িক বা ক্ষণস্থায়ী। বিশ্বের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়— চেঙ্গিস খান, নাদির শাহ, হিটলার প্রমুখ তাদের মারণাস্ত্রের আঘাতে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়ে দিগ্বিজয়ী বীরের আখ্যায় আখ্যায়িত হলেও ইতিহাসে অক্ষয় আসন লাভ করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষণিকের জন্যে তারা প্রভাব বিস্তার করলেও, তাদের কার্যক্রম নৃশংস ও কলঙ্কিত হওয়ায় মৃত্যুর পর নিন্দিত হয়েছে, ধিকৃত হয়েছে এবং চিরতরে হারিয়ে গেছে বিস্মৃতির অতল অন্ধকারে।

পক্ষান্তরে, মসি বা লেখনীরূপী অস্ত্রের মাধ্যমে অনেক মনীষী তাঁদের জ্ঞানগর্ভ দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস, চিকিৎসাশাস্ত্র, রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে বিশ্ব-মানবতার কল্যাণে তাঁদের চিন্তাধারা লিপিবদ্ধ করে গেছেন, তাঁরা মানব-সভ্যতার ইতিহাসে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়েছেন। তাঁদের অবদানের কথা মানুষ চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। কাজেই তরবারি অপেক্ষা লেখনী অধিকতর শক্তিমান। আর এ জন্যই ইংরেজিতে বলা হয়— ‘Pen is mighter than the sword.’ পার্থিব জীবনে যা কিছু শক্তি বা বল দিয়ে জয় করা যায় না তা জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে খুব সহজেই জয় করা যায়।
আরও দেখুন: