সড়ক দুর্ঘটনা সমস্যা ও তার প্রতিকার | বিচিত্র বিষয়াবলী | বাংলা রচনা সম্ভার , ভূমিকা : সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন হাজারো মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মাঝ থেকে, ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে হাজারো স্বপ্ন। পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে দুর্ঘটনার খবর। এ সড়ক দুর্ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ আমাদের নিরাপত্তার প্রধান হুমকি। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। কিন্তু অব্যাহত সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় বহু মূল্যবান জীবন বিনষ্ট হচ্ছে। অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করে পরিবার ও সমাজের বোঝা হয়ে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছে।
সড়ক দুর্ঘটনা সমস্যা ও তার প্রতিকার | বিচিত্র বিষয়াবলী | বাংলা রচনা সম্ভার
সড়ক দুর্ঘটনা সমস্যা ও তার প্রতিকার
দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটছে। কিন্তু কমছে না সড়ক দুর্ঘটনা। সড়ক পথ হয়ে উঠছে বিপজ্জনক। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই, অদক্ষ চালক, অপ্রশস্ত রাস্তা বাস চালনায় প্রতিযোগিতা, ত্রুটিযুক্ত যান মূলত এগুলোই সড়ক দুর্ঘটনার কারণ। অথচ একটু সচেতন হলেই অনেক ক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
সড়ক দুর্ঘটনার ধরন : সংবাদপত্রে যে খবরটি প্রতিদিনের অনিবার্য বিষয়, তা হলো সড়ক দুর্ঘটনা । সড়ক দুর্ঘটনাগুলো ঘটে বিভিন্নভাবে। যেমন বাস ও মিনিবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে অথবা বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে, ট্রাক অথবা বাস-মিনিবাসের সাথে বেবি-টেম্পুর ধাক্কায়, বাস-মিনিবাস ও ট্রাক পিছন দিক থেকে রিকশাকে ধাক্কা দিয়ে, গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে; এমনকি পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হবার সময়ও অনেক পথচারী দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায় না। এসব দুর্ঘটনা দেখে মনে হয় মৃত্যু যেন ওঁত পেতে বসে আছে রাস্তার অলিতে-গলিতে ।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ : সড়ক দুর্ঘটনার কারণ একটা নয়, একাধিক। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের উপস্থাপিত তথ্য মতে, আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো হলো-
বেপরোয়া গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালকের প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব, গাড়ির যান্ত্রিক ত্রুটি, হেলমেটবিহীন অবস্থায় মোটর সাইকেল চালানো, জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চ হার, নতুন নতুন সেতু ও সড়ক নির্মাণ, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, ট্রাফিক আইন অমান্য, মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অনুমোদনবিহীন স্পিড ব্রেকার, জনগণের উদাসীনতা ও অসচেতনতা ইত্যাদি। এ ছাড়া মহাসড়কের ওপর হাটবাজার, রাস্তায় বিপজ্জনক মোড় এবং পথচারীর পথ চলা ও রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে অসচেতনতা সড়ক দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। নিচে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কয়েকটি কারণ আলোচনা করা হলো :
অতিরিক্ত গতি এবং শুভারটেকিং : সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হচ্ছে গাড়িগুলোর গতিসীমা। অসাবধানতার সঙ্গে অতিরিক্ত গতিতে অন্য একটি চলমান গাড়িকে ওভারটেকের চেষ্টাই সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ। পুলিশ রিপোর্টেও বেশির ভাগ দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে অতিরিক্ত গতি এবং চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো। দূরপথে যাত্রার আগে গাড়ি চালকরা কিছু উত্তেজনাপূর্ণ পানীয় গ্রহণ করে স্টিয়ারিং ধরেন এবং গতিবেগ বাড়িয়ে অন্য গাড়িকে টপকে যেতেই তারা আনন্দ পান। ট্রাকে কোচে পাল্লা দিয়ে সংঘর্ষ এবং দ্রুত বেগে পুলে উঠার সময়েই দুর্ঘটনা ঘটার নিদর্শন রয়েছে বেশ কয়েকটি । পুলিশ বিভাগ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে যানবাহনের বেপরোয়া গতি অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী।
অপ্রশস্ত পথ : আমাদের দেশের অপ্রশস্ত পথ ব্যবস্থাও অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। ঢাকা থেকে যাতায়াতের সবচেয়ে ব্যস্ত পথ ঢাকা-আরিচা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রশস্ত না হওয়াতে এ দুটি পথেই দুর্ঘটনা এবং হতাহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঘটে। ট্রাক বাস, মিনিবাস, টেম্পো সবরকম দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে পদচালিত ভ্যান, রিকশা ঠেলাগাড়ি সবই চলাচল করে এই পথে। ফলে দেখা যায় স্বল্প পরিসর পথে দ্রুতি গতিসম্পন্ন গাড়ির সঙ্গে মন্থর গতির গাড়ির একত্রে চলাচলের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে ।
ওভারলোডিং : ‘ওভারলোড’ মানে পরিমিতির বেশি মাল বহন করা। বেশি ওজনের মালামাল বহন করে গতি সীমা ছাড়িয়ে প্রতিটি ট্রাকই এক একটি যন্ত্রদানব হয়ে উঠে। এর ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চালকরা প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটায়।
আইন অমান্য : সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ আইন অমান্য করে গাড়ি চালানো। এক জরিপে দেখা গেছে, ৯১ শতাংশ চালক জেব্রা ক্রসিংয়ে অবস্থানরত পথচারীদের অধিকার আমলই দেয় না। পাশাপাশি ৮৪ ভাগ পথচারী নিয়ম ভেঙ্গে রাস্তা পার হয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে শতকরা ৯৪ জন রিকশাচালক ট্রাফিক আইন ও নিয়মের প্রাথমিক বিষয়গুলোও জানে না। তারা জানে না ডানে বা বাঁয়ে যেতে হলে কি সংকেত দিতে হবে। কোথায় কিভাবে মোড় নিতে হবে। যারা তা জানে, তাদের অধিকাংশই ইচ্ছাকৃতভাবে সিগন্যাল অমান্য করে, দ্রুত এবং দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে গাড়ি চালায় । ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ।
জনসংখ্যার চাপ ও অপ্রতুল পরিবহন ব্যবস্থা : দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহন। এক হিসাবে দেখা গেছে। রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে প্রতি কিলোমিটারে ২৪৭টির মতো গাড়ি চলে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার আওতাধীন মোট ২২৩১.৩০ কিলোমিটার সড়কে আনুমানিক গাড়ি চলাচল করে ৫ লাখ ৫০ হাজার। শুধু ঢাকা শহরেই নয়, সমগ্র বাংলাদেশেই গাড়ি ও জনসংখ্যা বাড়ছে দ্রুত হারে । ফলে বেড়ে যাচ্ছে দুর্ঘটনার হারও।
ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা : বাংলাদেশে সড়ক পথের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ হাজার কিলোমিটার। এসব সড়ক ও মহাসড়কে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল করছে। কেবল রাজধানী ঢাকায় বাস মিনিবাস, প্রাইভেটকার, জিপ, পিকআপ, ট্রাক, অটোরিকশা ও মটর সাইকেল মিলিয়ে কয়েক লক্ষ যানবাহন চলাচল করে। এছাড়াও বৈধ-অবৈধ রিকশার সংখ্যা কয় লক্ষ তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয় । কিন্তু এই বিশাল যানবাহন বাহিনীকে সুশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে আনার মতো ট্রাফিক ব্যবস্থা এদেশে আজও গড়ে উঠেনি ।
অস্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালনা, ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা না করা। অতিরিক্ত যাত্রী বা মালামাল পরিবহন, চলাচলের অনুপযোগী যানবাহন চালানো, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, চলন্ত গাড়িতে উঠাসহ জনগণের অসচেতনতা, উদাসীনতা এবং ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা সমগ্র ট্রাফিক ব্যবস্থাকেই যেন পঙ্গু করে রেখেছে। ১৯৯৯ সালে এক সেমিনারে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, সড়ক’ দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা প্রতি ১০ হাজার যানবাহনে বার্ষিক ৫৮ জন, যা উন্নত দেশগুলোর তুলনায় ২৫ গুণ বেশি।
সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি : সড়ক দুর্ঘটনার ফলাফল কেবল মানুষের মৃত্যুর ক্ষতি নয়, অপূরণীয় আরো অনেক ক্ষতির বোঝা চাপিয়ে দেয় সাধারণের জীবনে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অনেক মানুষ প্রাণে বেঁচে থাকে বটে, কিন্তু জীবনের স্বাভাবিক গতি তারা হারিয়ে ফেলে চিরকালের মতো । পঙ্গুত্ব, শারীরিক বৈকল্য আর যন্ত্রণা ও বেদনার ভার বহন করে বেঁচে থাকা সেই সব মানুষের সংখ্যা আমাদের দেশে কম নয় । নিচে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতির কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো :
বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, পৃথিবীতে প্রতিদিন ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়। এর মধ্যে ৬ হাজার লোকের মৃত্যু হয় এবং প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পঙ্গত্ব বরণ করে। গত ২০০০ সালে সারা পৃথিবীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ লাখ ১৮ হাজার মানুষ নিহত হয়। ২ কোটিরও অধিক মানুষ আহত হয় এবং প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে যা খুবই মর্মান্তিক ও অপ্রত্যাশিত। আর এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০০২ সালে বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের হার ছিল প্রতি লাখে ১৯ জন।
উন্নত দেশে এই হার ছিল প্রতি লাখে ১২.৬ জন এবং অনুচ্যুত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ছিল প্রতি লাখে ২০.৩ জন । সড়ক দুর্ঘটনার বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে ২০২০ সালে সড়ক’ দুর্ঘটনায় হতাহতের হার বর্তমানের তুলনায় ৬০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ ১০টি প্রধানতম স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা তৃতীয় স্থানে উপনীত হবে। ১৯৯০ সালে এটা ছিল নবম স্থানে।
বাংলাদেশ : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর ৪ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে। ৫২ হাজার মানুষ মারাত্মকভাবে আহত হয় । এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয় । প্রতি ১০ হাজার যানবাহনে বার্ধিক ৫৮ জন সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত হয়, যা উন্নত দেশগুলোর তুলনায় ২৫ গুণ বেশি। সম্প্রতি এক জরিপ থেকে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৫% থেকে ৩০% শয্যায় দুর্ঘটনা কবলিত রোগীদের ভর্তি করতে হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সৃষ্টি করছে অপ্রত্যাশিত চাপ। এর ফলে স্বাস্থ্যখাতের সীমিত সম্পদের অনেকখানিই চলে যায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের সেবায়।
সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুদের ক্ষয়ক্ষতি : সড়ক দুর্ঘটনায় বয়স্কদের পাশাপাশি শিশুদের ক্ষয়ক্ষতির হারও অত্যন্ত ব্যাপক ও ভয়াবহ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ৮০ হাজার শিশু মারা যায়। আহত হয় হাজার হাজার শিশু যাদের বয়স ১৫ বছরের নিচে। ২০০২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৯৬ শতাংশ শিশুই অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সাধারণত বস্তিতে বসবাসকারী ও এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ানো শিশুরাই দুর্ঘটনার শিকার হয় বেশি। দুর্ঘটনায় আহত অভিভাবকহীন অনেক শিশুই সময় মতো চিকিৎসা সুবিধা পায় না। এদের অনেকেই ভুগে ভুগে মৃত্যুবরণ করে। আবার অনেকেই পঙ্গু হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিকে জীবিকার একমাত্র উপায় হিসেবে বেছে নেয়।
সড়ক দুর্ঘটনার অর্থনৈতিক ক্ষতি : বাংলাদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যক্তি, যানবাহন ও সমাজের যে সুদূরপ্রসারী ক্ষতি হয় তার অর্থনৈতিক হিসাব দাঁড়ায় বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে আন্তর্জাতিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৫২০ বিলিয়ন ডলার। উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশে এর পরিমাণ ৬৫ বিলিয়ন ডলার । এই পুরো টাকাটাই দেশের উন্নয়ন বাজেট থেকে মেটানো হয়। ফলে চাপ পড়ে জাতীয় অর্থনীতিতে। মৃত্যু, পঙ্গুত্ব, আর্থিক ক্ষতি বাধাগ্রস্ত করে জাতীয় উন্নয়নের ধারাকে। দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কারণে কোনো কোনো পরিবারের আয়ের উৎস একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। পঙ্গুত্ববরণকারী মানুষ জীবন ও অর্থনীতির প্রান্তিকসীমায় বোঝা হয়ে দুঃসহ ও নিষ্ক্রিয় অবস্থায় টিকে থাকে। দেশের অর্থনীতির ওপর এ অবস্থা অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে ।
সড়ক দুর্ঘটনার পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষতি : সড়ক দুর্ঘটনার মৃত্যু অস্বাভাবিক মৃত্যু। এ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অকালে অনেকের জীবন ঝরে যায়। সেই শোক গোটা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের বুকে শেলের মত বিধে থাকে। দুর্ঘটনায় নিহত, আহত বা পঙ্গু ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী, সহকর্মী সকলেই আর্থ-সামাজিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হঠাৎ করেই এসব পরিবারের আয় কমে যায়। ফলে বিপর্যস্ত হয় পুরো পরিবার।
অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সমাজ ও দেশ হারায় তার কৃতি সন্তানকে। এই দুর্ঘটনা আবার অনেককে চিরদিনের মত পঙ্গু করে দেয়। আর পঙ্গুত্বের যন্ত্রণা নিয়ে আহত ব্যক্তিকে পরিবারের বোঝা হয়ে আজীবন বেঁচে থাকতে হয়। অনেক সময় বাকি জীবন ভিক্ষা করে খেতে হয়। আবার কখনো কখনো দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তির পরিবারকে থানা, পুলিশ, কোর্ট ইত্যাদি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে হয় যা মোটেই কাম্য নয়।

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের উপায় : নিঃশব্দ আততায়ীর মতো প্রতিবছর সড়ক’ দুর্ঘটনা আমাদের চার হাজার স্বজনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু এ মৃত্যুকে তো আমরা ঠেকাতে পারি। এড়াতে পারি পঙ্গুত্বকে। এজন্য প্রয়োজন একটু সচেতনতা, ধৈর্য, সতর্কতা আর ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ । যেসব কারণে সড়ক’ দুর্ঘটনা ঘটে তার প্রত্যেকটি কারণই প্রতিরোধযোগ্য। তাই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য করণীয় হলো-
বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণ করা : আমাদের দেশে সড়ক’ দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হলো গাড়িগুলোর বেপরোয়া গতি এবং ওভারটেকিং করার প্রবণতা। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর প্রবণতা বেশি দেখা যায় ট্রাক, মিনিবাস আর দূরপাল্লার বাস চালকদের মধ্যে। দ্রুততার সাথে গন্তব্যে পৌছার তাগিদে এসব চালকগণ বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। অনেক সময় পাশাপাশি দুটি বাস বা ট্রাক নিজেদের মধ্যে পাল্লা দেয় কে কার আগে যেতে পারে। বিপজ্জনকভাবে ওভারটেক করার প্রবণতা আর অধৈর্য মনোভাব বয়ে আনে মারাত্মক ঝুঁকি।
এসব গাড়ির চালকগণ ভুলে যায় বেশ কিছু মানুষের জীবন কিছু সময়ের জন্য তাদের জিম্মাদারীতে রয়েছে। চালকগণ একটু সহনশীল হলে, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোজনিত সড়ক’ দুর্ঘটনা সহজেই প্রতিরাধ করা যায়। তাই সড়ক’ দুর্ঘটনা হ্রাসের জন্য দেশের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে ওভারটেকিং নিষিদ্ধকরণ এবং গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেয়া উচিত এবং এটা কার্যকর করার জন্য ভ্রাম্যমান ট্রাফিক পুলিশ দেয়া উচিত।
ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করা আমাদের দেশে যে ট্রাফিক আইন আছে তা যদি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয় এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে যদি কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাহলে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ অনেক কমে যাবে বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। কেননা, ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করলে চালকদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হবে এবং চালকরা গাড়ি চালানোর সময় সাবধানতা অবলম্বন করবে।
লাইসেন্স প্রদানে জালিয়াতি প্রতিরোধ করা : দেশের সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করার জন্য গাড়ির লাইসেন্স ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের জালিয়াতি প্রতিরোধ করতে হবে। বর্তমানে দেখা যায় লাইসেন্স প্রদানে জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ অনভিজ্ঞ ড্রাইভারদের হাতে ছেড়ে দেন নিরীহ যাত্রীদের ভাগা। তাই গাড়িচালক ও গাড়ির লাইসেন্স প্রদানে সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করে তা কার্যকর করতে হবে।
ফিটনেস সার্টিফিকেটবিহীন গাড়ি প্রতিরোধ করা : এক সমীক্ষায় দেখা যায় দেশের বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারী গাড়ির মধ্যে অর্ধেকের বেশি গাড়ির লাইসেন্স নেই। আবার লাইসেন্সবিহীন গাড়ির মধ্যে অধিকাংশেরই রাস্তায় চলাচলের উপযোগী ফিটনেস নেই। যার ফলে ঘটে দুর্ঘটনা। আবার যেসব গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট আছে তার মধ্যেও রয়েছে অনেক গাড়ি যেগুলো চলাচলের উপযোগী নয় । এগুলোর ফিটনেস সার্টিফিকেট সপ্তাহ করা হয়েছে জালিয়াতির মাধ্যমে। এসব গাড়িগুলো দূরপথে যাতায়াত করার সময় নানাবিধ দুর্ঘটনার শিকার হয়। সুতরাং সড়ক’ দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য অবৈধ উপায়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান করা বন্ধ করে ফিটনেসবিহীন গাড়ির চলাচল কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে ।
পথচারীকে সতর্ক হতে হবে : সড়ক দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য পথচারীদের পথ চলার নিয়ম সম্পর্কে অবহিত হতে হবে । পথচারীরা অনেক সময় প্রচলিত আইন অমান্য করে রাস্তা দিয়ে হাঁটেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওভার ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও তারা তা খুব কমই ব্যবহার করেন। তাছাড়া অনেক সময় পথচারীরা অসতর্কতার সাথে রাস্তা পার হন যার দরুন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। সুতরাং রাস্তায় চলাচলের সময় পথচারীদের আরও সতর্ক ও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। রাস্তা পারাপারের সময় প্রথমে ডানে, পরে বামে এবং আবার ডানে তাকিয়ে রাস্তা পার হতে হবে। বিদ্যুৎ সংকেত, যানবাহন নিয়ন্ত্রণকারী পুলিশের সংকেত অনুসরণ করে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হতে হবে।
আরো যা যা করতে হবে : সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য আরো যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করা দরকার তা হলো-
মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত অনুমোদনবিহীন গতিরোধক ভেঙ্গে ফেলা। মহাসড়কের উভয় পাশের হাট-বাজার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা । নির্ধারিত গন্তব্যে পৌছানোর আগে রাস্তায় গাড়ি বিকল হলে জরিমানার ব্যবস্থা করা । অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন বন্ধ করা। দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পৃথক আইন প্রণয়নসহ আদালত স্থাপন করা।
পৃথক প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক পরিবহনের চলাচলের জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা করা। প্রতিমাসে মহাসড়কে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যানবাহনের ত্রুটি-বিচ্যুতি পরীক্ষা করা। প্রশস্ত রাস্তাঘাট তৈরি এবং পুরনো রাস্তাঘাট মেরাতম করা। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানসমূহ চিহ্নিত করে তা সংস্কারের ব্যবস্থা নেয়া । পথচারীদের চলাচলের জন্য প্রতিটি সড়কের পাশ দিয়ে ফুটপাত নির্মাণ করা।
ভবিষ্যৎ প্রজন্যকে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জ্ঞান প্রদানের জন্য স্কুল, কলেজের পাঠ্যসূচিতে ট্রাফিক আইন সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় যানবাহন চালনা ও পথচারীদের যথানিয়মে সড়ক পারাপারে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য প্রচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা। সর্বোপরি সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি পরিবহন মালিক সমিতি, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, গাড়ি চালক সমিতি এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব। তাই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেষ্ট ও সচেতন হতে হবে।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধের জন্য গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ : সড়ক’ দুর্ঘটনার আর্থ-সামাজিক ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ অপরিসীম । তাই সরকার সড়ক’ দুর্ঘটনা রোধের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেমন— সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও তার প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে গবেষণা করার লক্ষ্যে সরকার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করেছে । সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশব্যাপী সড়ক, মহাসড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট, ফ্লাইওভার ও বাইপাস সড়ক নির্মাণের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। সড়ক প্রশস্তকরণ এবং রোড ডিভাইডার নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলছে ।
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পরিকল্পনা ও নীতিমালা তৈরির জন্য ১৯৯৫ সালে গঠন করা হয়েছিল ন্যাশনাল রোড সেফটি কাউন্সিল। সম্প্রতি এ কাউন্সিলকে সক্রিয় করা হয়েছে। ন্যাশনাল রোড সেফটি এ্যাকশন প্ল্যান ২০০২-২০০৪ তৈরি করে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দূষণ ও যানজট কমানো সড়ক নিরাপত্তার জন্য টু-স্ট্রোক অটোরিকশা ঢাকার রাস্তা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে । ত্রুটিপূর্ণ বাস, ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন তুলে দেয়ার কার্যক্রম চলছে।
সড়ক ও মহাসড়ক থেকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত হাটবাজার অপসারণের কাজ চলছে। অতিরিক্ত মালামাল ও যাত্রী পরিবহন প্রতিরোধে সড়ক পথে ওয়েটিং ব্রিজ স্থাপন করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে যানবাহনের ফিটনেস যাচাইয়ের জন্য স্থাপিত কম্পিউটারাইজ ভেহিকেল ইন্সপেকশন সেন্টারকে কার্যকর করা হয়েছে।
অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সড়ক নিরাপত্তা সেল গঠনসহ হাইওয়ে পুলিশ ইউনিটকে অধিকতর শক্তিশালী করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই শিশু কিশোরেরা যেন সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন হয়ে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের শিক্ষা নিতে পারে সে লক্ষ্যে স্কুলের পাঠ্যক্রমে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি সংযোজনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনা কবলিত যাত্রী ও পথচারীদের ফাস্ট এইড দেয়ার জন্য হাইওয়ের পেট্রোল পাম্প কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সকল জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ। দুর্ঘটনা কবলিত রোগীদের পরিচর্যা ও উন্নত সেবাদানের জন্য ইতোমধ্যেই ৬০০ শয্যা বিশিষ্ট অর্থোপেডিক হাসপাতালকে নিটোর হিসেবে জাতীয় ইনস্টিটিউটে উন্নীত করা হয়েছে। এর ফলে এ প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসক, প্যারামেডিক ও নার্সরা দুর্ঘটনাজনিত রোগীদের সেবা প্রদানের জন্য বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।
দেশের প্রতিটি জেলা হাসপাতালে অর্থোপেডিক চিকিৎসার পরিপূর্ণ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার । প্রয়োজনে দুর্ঘটনাস্থলে দ্রুত সেবাদানের জন্য জরুরি টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সড়ক- দুর্ঘটনায় আঘাত প্রাপ্তদের দ্রুত চিকিৎসা সেবাদানের লক্ষ্যে ফেনী, দাউদকান্দি, ভালুকা, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর ও চট্টগ্রামে মহাসড়কের পাশে ৬টি ট্রমা সেন্টার স্থাপন করেছে সরকার। ইতোমধ্যে ৫টি ট্রমা সেন্টার কাজ শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি মহাসড়কের পাশেই ট্রমা সেন্টার স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
সমগ্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে কমিউনিটি বেজড এ্যাপ্রোচ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। এ প্রেক্ষিতে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের উদ্যোগে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের জন্য মানিকগঞ্জ জেলার বেভিলাতে একটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে উক্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা উক্ত কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিতকরণ, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যক্রম বিন্যাস, পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রস্তুতের ওপর এ কর্মসূচিতে জোর দেয়া হয়েছে।
গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে নিরাপদ রাস্তা চলাচল ও রাস্তা পারাপার বিষয়ক পোস্টার প্রদর্শন, নাটকের মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক সম্পর্কিত ধারণা ফুটিয়ে তোলা, জনগণের দোরগোড়ায় গিয়ে নিরাপদ সড়কের ধারণা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা ও উপলব্ধি সৃষ্টি, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে কাউন্সেলিং-এর আওতায় আনয়ন, সড়ক পারাপারের বিধিবিধান সম্পর্কিত বার্তা ব্যাপকভাবে জনগণের মাঝে পৌঁছে দেয়া এবং তা পরিপালনে তাদেরকে অভ্যস্থ করে তোলার প্রক্রিয়া অন্যতম । নিরাপদ সড়কের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এই কর্মসূচি ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
উপসংহার : প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে ঝরে যায় কত প্রাণ। কত ঘরে জমে বুক চাপা কান্না । কত পরিবারের বেঁচে থাকার আলো যায় নিতে। স্বপ্ন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়, কিন্তু তবুও মানুসকে পথ চলতে হয়। মানুষের পথ চলা যতদিন থাকবে দুর্ঘটনাও ততোদিন থাকবে। সড়ক’ দুর্ঘটনা প্রতিরোধের কার্যক্রম জোরদার না করলে এ নিঃশব্দ ঘাতকদের রোদ করা যাবে না। তাই বাড়াতে হবে জনসচেতনতা। সচেতন হতে হবে যানবাহন চালক, হেলপার, যানবাহন মালিক, যাত্রী, পথচারী, ট্রাফিক পুলিশ সবাইকে।
মনে রাখতে হবে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো যেমন যাবে না; তেমনি অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামালও গাড়িতে নেয়া যাবে না। রাস্তায় চলতে হলে গাড়ি ও চালকের ফিটনেস থাকতে হবে। চলন্ত গাড়িতে উঠানামা করা যাবে না। জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হবে। ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। তবেই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো সড়ক দুর্ঘটনায় পড়তে হবে না কাউকে ।
আরও দেখুন: