মানব ক্লোনিং এক বিস্ময়ের নাম | বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক | বাংলা রচনা সম্ভার , ভূমিকা : প্রজনন বিজ্ঞানের বিস্ময়কর সাফল্য ক্লোনিং। গত কয়েক বছর ধরে ‘ক্লোন’ শব্দটি অতি পরিচিত একটি শব্দে পরিণত হয়েছে। এর আগে শব্দটি সীমিতভাবে ব্যবহৃত হতো গাছ-গাছালি কিংবা অণুজীবের ক্ষেত্রে। ১৯৯৬ সালে বিশ্বের প্রথম ক্লোন করা ভেড়া ডলির জন্মের পর স্বল্প ব্যবহৃত এই শব্দটির ব্যাপক প্রচলন ঘটে। এরপর আরো নানা প্রাণীর ক্লোন করা হলেও মানব ক্লোনিং বিষয়ে বিশ্বজুড়ে শুরু হয় সম্ভাবনা, বিতর্ক ও নৈতিকতার লড়াই। অনেক দেশে এ ব্যাপারে গবেষণাও রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। অবশেষে সব বিধি-নিষেধ, শঙ্কা ও উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে গত ২৭ ডিসেম্বর ২০০২ প্রথম ক্লোন মানব শিশু জন্ম নিয়েছে বলে দাবি করা হয়। অবশ্য মানব ক্লোনিংয়ের দাবির সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন একদল প্রজনন বিজ্ঞানী।
মানব ক্লোনিং এক বিস্ময়ের নাম | বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক | বাংলা রচনা সম্ভার
মানব ক্লোনিং এক বিস্ময়ের নাম
ক্লোনিং কি : ক্লোনিং (Cloning) হচ্ছে কোনো প্রাণীর জিন ব্যবহার করে হুবহু আরেকটি প্রাণী তৈরির অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। দেহকোষের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা জিনগুলো প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। কম্পিউটার প্রোগ্রামের মতো জিনের মধ্যে প্রাণীর আকার-আকৃতি, রোগবালাই থেকে সবকিছু কোড করা থাকে। ফলে একই জিনের দুটি প্রাণী হয় চেহারা-সুরতে হুবহু এক ।
ক্লোন পদ্ধতি : উন্নত বিশ্বে ক্লোনিং প্রযুক্তি খুব জটিল কিছু নয়। সেভাবে চিন্তা করলে আমেরিকার যে কোনো সাধারণ বায়োটেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষেও মানব ক্লোনিং করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ক্লোনিংয়ের পদ্ধতি তিন ধরনের । এন্ড্রোয়ো ক্লোনিং, রিপ্রোডাক্টিভ ক্লোনিং ও বায়োমেডিক্যাল ক্লোনিং।
ক. এন্থ্রায়ো ক্লোনিং : এর অর্থ ভ্রূণ নিয়ে ক্লোনিং। এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের এমন একটি পদ্ধতি, যে পদ্ধতিতে একটি নিষিক্ত ডিম্বকোষ থেকে অভিন্ন দুই বা তিনটি শিশু বা প্রাণীর জন্ম হতে পারে। এই পদ্ধতিতে প্রকৃতিগতভাবে কোনো যমজ শিশু কিংবা একসঙ্গে জন্ম নেয়া তিন শিশুর (ট্রিপলেট) ক্ষেত্রে যা ঘটে থাকে সেটাই ঘটানো হয় কৃত্রিমভাবে। এক্ষেত্রে নিষিক্ত কোনো ভ্রূণ থেকে এক বা একাধিক কোষ সরিয়ে এনে তা থেকে এক বা একাধিক অবিকল ভ্রূণ উদ্ভাবন করা হয়। এভাবে দুটি-তিনটি অভিন্ন ডিএনএ চিহ্নিত অবিকল শিশু বা প্রাণী জন্মায়। এই পদ্ধতিতে অনেক বছর ধরে নানা প্রজাতির প্রাণী নিয়ে গবেষণা হয়েছে। তবে মানুষ নিয়ে এই পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটেছে খুব কমই।
খ. রিপ্রোডাক্টিভ ক্লোনিং বা এডাল্ট ডিএনএ ক্লোনিং প্রাপ্তবয়স্ক ডিএনএ নির্ভর এই ক্লোনিংয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য পুনর্জন। জীবিত কোনো প্রাণীর অনুরূপ আরেকটি প্রাণী তৈরি এই পদ্ধতির লক্ষ্য। ভেড়াসহ অন্যান্য প্রাণী ক্লোনিংয়ের ক্ষেত্রে এতদিন এই পদ্ধতিই ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। এই পদ্ধতিতে স্ত্রী প্রজাতির কোনো প্রাণীর ওভাম বা ডিম্বকোষ বিশেষ উপায়ে সপ্তাহ করে অভি সুক্ষ্ম কৌশলে সেই ডিম্বকোষ থেকে ডিএনএ বের করে আনা হয়। অন্যদিকে একই সময়ে একই কৌশল অবলম্বন করে প্রাপ্তবয়স্ক একই গোত্রীয় কোনো প্রাণীর পুরুষ কিংবা স্ত্রী প্রজাতির দৈহিক কোষ সংগ্রহ করে সেই কোষের ডিএনএ সরিয়ে আনা হয়।
তারপর দৈহিক কোষ থেকে সংগৃহীত ডিএনএ ডিম্বকোষের অভ্যন্তরে প্রতিস্থাপন করা হয় অত্যন্ত সুকৌশলে। নিষিক্ত এই ডিম্বকোষকে একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের পর জরায়ুতে সংস্থাপন করা হয়। যেমনটি করা হয়ে থাকে টেস্ট টিউব বেবির ক্ষেত্রে। জরায়ুতে সংস্থাপনের পর অনুকূল পরিস্থিতিতে ভ্রূণের উৎপত্তি হয় এবং এক পর্যায়ে তা পূর্ণাঙ্গ গর্ভাবস্থার ধাপ পেরিয়ে প্রসবে সমাপ্তি টেনে নবজাত ক্লোন বেবি হিসেবে ভূমিষ্ঠ হয়। মানুষের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির প্রয়োগকে অমানবিক ও অনৈতিক বলে মনে করা হয় ।
গ. বায়োমেডিক্যাল ক্লোনিং বা থেরাপিউটিক ক্লোনিং : চিকিৎসার স্বার্থে এ ধরনের ক্লোনিং করা হয়ে থাকে। এই ক্লোনিং পদ্ধতির শুরুর পর্বটা অনেকটা এডাল্ট ডিএনএ ক্লোনিংয়ের মতোই। এক্ষেত্রে ভ্রূণের প্রাক-অবস্থায় সেখান থেকে স্টেম সেলকে সরিয়ে নেয়া হয়। এর অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে ডিএনএ দাতার কোনো অঙ্গ কিংবা অর্গান (যেমন লিভার, কিডনি, প্যানক্রিয়াস ইত্যাদি) দরকার পড়লে সেটির ক্লোনিংয়ের জন্য কোষ সরবরাহ করা।
অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে কোনো ব্যক্তির কোনো অঙ্গ কিংবা শারীরিক যন্ত্র সংযোজনের দরকার পড়লে ব্যক্তিটি তার দৈহিক ডিএনএ প্রদানের মাধ্যমে সেই অঙ্গটির ক্লোন করতে পারবেন। অঙ্গ সংযোজনের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটাবে বলে বিজ্ঞানীরা আশা করেছেন।
বিশ্বের প্রথম ক্লোন প্রাণী : ক্লোনিংয়ের ক্ষেত্রে প্রথম বিস্ময়কর সাফল্য এসেছে ডলিকে ঘিরে। ১৯৯৬ সালের ৫ জুলাই স্কটল্যান্ডের রোসলিন ইনস্টিটিউটের সামনে অবস্থিত একটি ছাউনিতে ডলি জন্য নেয়। কিন্তু জন্মের প্রায় সাত মাস পর ১৯৯৭ সালে ডলির জন্মের বিষয়টি ঘোষণা করা হয়। জন্মের সময় ডলির ওজন ছিলো ৬.৬ কেজি। ডলিকে ক্লোন করা হয়েছিল ৬ বছর বয়স্ক ভেড়া ইউইর স্তন থেকে নেয়া কোষ থেকে। ব্রোসলিন ইনস্টিটিউটের ভ্রুণতত্ত্ববিদ ড. আয়ান উইলমুট ২৩ বছর ধরে গবেষণার পর ডলিকে ক্লোন করেন।
ডলিকে ক্লোন করার জন্য ড. আয়ান ও তার সহযোগীরা ইউই নামক একটি স্ত্রী মেষের স্তন থেকে কিছু কোষ সংগ্রহ করে সেটিকে সংরক্ষণ করেন। একই সময় তারা অন্য একটি স্ত্রী মেষ থেকে সংগ্রহ করেন ওভাম বা ডিম্বকোষ। তারপর এই ডিম্বকোষ থেকে ডিএনএকে সরিয়ে নেয়া হয়। এরপর ইউইর কাছ থেকে সংগৃহীত কোষকে ডিএনএবিহীন ডিম্বকোষের মধ্যে সূক্ষ্ম যন্ত্রের সাহায্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এ সময় বিশেষ বৈদ্যুতিক প্রবাহের ফলে এই দুই কোষের সম্মিলন ঘটে এবং নিষিক্ত ডিম্বকোষ তৈরি হয়, যা এক পর্যায়ে ভ্রূণে পরিণত হয়। এই অণকে ১০টি ভেড়ার জরায়ুতে সংস্থাপন করা হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র একটি ভেড়া গর্ভধারণ করতে সক্ষম হয় এবং ডলির জন্ম হয় ।
প্রথম ক্লোন মানব : ক্লোন মানব শিশুর জন্ম বিশ্ব ইতিহাসের এক বিস্ময়কর ঘটনা । ২০০২ সালের ২৭ ডিসেম্বর রেলিয়ান নামক একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ড. ব্রিজিত বোইসেলিয়ার পৃথিবীর প্রথম ক্লোন মানব শিশু জন্মের ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের হলিউড থেকে এ ঘোষণা দেয়া হলেও কোথায় ক্লোন শিশুর জন্ম হয়েছে তা বলা হয়নি। যতদূর জানা যায়, ক্লোন শিশুটির জন্ম হয়েছে আমেরিকার বাইরে তৃতীয় বিশ্বের কোনো দেশে, যেখানে ক্লোনিং নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি। পৃথিবীর প্রথম ক্লোন মানবকন্যার নাম রাখা হয়েছে ইভ। ৭ পাউন্ড ওজনের এই কন্যাশিশুটি ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর সিজারিয়ান সেকশন অপারেশনের মাধ্যমে পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়। শিশুটির মা একজন আমেরিকান, বয়স ৩১।
ক্লোনাইড ও রেলিয়ান : প্রথম ক্লোন মানব শিশুর জন্মদাতা প্রতিষ্ঠানের নাম ক্লোনাইড। এর প্রধান নির্বাহী ফরাসি বংশোদ্ভূত ড. ব্রিজিত বোইসেলিয়ার। ক্লোনাইডের প্রতিষ্ঠাতা ধর্মীয় গোষ্ঠীটির নাম রেলিয়ান । ক্লোনাইড ১৯৯৭ সালে বাহামাতে প্রতিষ্ঠিত হয়। সাবেক ফরাসি সাংবাদিক রদ ভোরিল ক্লোনাইডের প্রতিষ্ঠাতা এবং এই ধর্মীয় গোষ্ঠীর নেতা। এই গোষ্ঠীটি মহাশূন্যে ভিনগ্রহ থেকে আসা অপরিচিত প্রাণীতে বিশ্বাস করে। রেলিয়ানরা যা বলছে, তাতে দেখা যায় এতদিনকার বিজ্ঞান গবেষণার সাফল্য সব ধুলোয় মিশে যাবে। ওরা বলছে, ২৫ হাজার বছর আগে ভিনগ্রহের প্রাণী এসে ক্লোনিংয়ের মাধ্যমেই এ গ্রহে মানুষ সৃষ্টি করে গেছে।
অর্থাৎ ওদের মতে মানুষ পৃথিবীতে মানুষ হিসেবেই জন্মেছে। ডারউইনের বিবর্তনবাদ ওরা মানছে না। অর্থাৎ অন্য কোনো প্রাণী থেকে হোমোস্যাপিয়েন্স হওয়ার বিবর্তনবাদী তত্ত্বকে ওরা পাত্তা দিচ্ছে না। রেলিয়ান গোষ্ঠীর ধর্মগুরু ক্লদ ডোরিল নাকি গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে ফ্রান্সে বেড়াতে গিয়ে সেই অ্যালিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীদের দেখা পেয়েছিলেন এবং ভারাই তাকে বলেছে ক্লোনিংয়ের মাধ্যমেই মানবজাতি তৈরি হয়েছে। এটা জানার পর থেকেই সাংবাদিক ডোরিল, নিজের নাম রাখলেন রেলিয়ান এবং সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে ঐ ‘অ্যালিয়েন মতবাদ’ প্রচার শুরু করলেন।
এখন তাদের ৫৫ হাজার অনুসারী আছে এবং সবাই ক্লোনিংকে ‘বৈধ’ এবং ‘সুখকর’ বলে মনে করে। কানাডার কুইবেক রাজ্যে রেলিয়ানদের মূল ঘাঁটি । কারণ হয়তো এই যে, ভোরিল ড. ব্রিজিত বোইসোলিয়ার এরা সবাই ফরাসি ভাষাভাষী এবং কানাডার কুইবেকেও ফরাসিভাষীদের প্রাধান্য রয়েছে। সেখানে রেলিয়ানদের অনুসারীরা একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে গেছে সেই নব্বইয়ের দশকেই।
ক্লোনিংয়ের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা : ক্লোনবিষয়ক গবেষণা শুরু হয় ১৯৫২ সালে। ব্যাঙের ডিম থেকে নিউক্লিয়াসকে পৃথক করে সেখানে ব্যাঙের ভ্রূণ থেকে সংগৃহীত কোষের নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপনের মাধ্যমেই ক্লোনিং গবেষণার সূচনা করেন বিজ্ঞানীরা। নিউক্লিয়াসের এই প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার সাফল্যই ক্লোনিংয়ের বিষয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহী করে তোলে। এই প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট ভ্রূণের ক্লোনকে বিজ্ঞানীরা অভিহিত করলেন টেডপোল নামে। দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৭৫ সালে পূর্ণতাপ্রাপ্ত ব্যাঙের কোষ থেকে সংগৃহীত নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপনের মাধ্যমেও টেডপোল লাভ করা সম্ভব হয়।
ক্লোনিংবিষয়ক গবেষণায় ব্যাপক সাফল্য আসে ১৯৯৬ সালে প্রথম স্তন্যপায়ী প্রাণী ভেড়া ডলির জন্মের মধ্য দিয়ে। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। গরু, ছাগল, ইঁদুর, শূকর, খরগোস, বিড়াল এবং পাউরয়ের (ষাঁড়ের মতো দেখতে) ক্লোনিং হয়েছে গত কয়েক বছরে। যে কোনো দিন মানব ক্লোনিং হয়ে যেতে পারে, এ আশঙ্কা ছিল । অবশেষে ২৬ ডিসেম্বর, ২০০২ মানব ক্লোনিংয়ে সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
ক্লোনিংয়ের ঐতিহাসিক ধারাক্রম
১৮৮৩ : ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস গ্যালটন নির্বাচিত প্রজনন পদ্ধতির কথা বলেন। মানুষের বংশগতির উন্নতির । তত্ত্বের তিনিই প্রথম প্রবক্তা।
১৯০৩ : জিন গবেষণার সূচনা হয়। প্রথম গবেষক জর্জ ওয়েলস।
১৯১০ : মার্কিন বিজ্ঞানী টমাস হান্ট মরগান গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, লিঙ্গবৈশিষ্ট জিন দ্বারা নির্ধারিত হয় । এছাড়া তিনি জিনের ক্ষেত্রে ক্রোমোজমের গুরুত্বও নির্ধারণ করেন।
১৯২৬ : আমেরিকান জীববিজ্ঞানী হেরমান মুলার আবিষ্কার করেন, রঞ্জনরশ্মি বা এক্স-রে দ্বারা ‘জেনেটিক মিউটেশন’ সম্ভব।
১৯২৮ : জার্মান বিজ্ঞানী হ্যানস স্পেম্যান প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে নিউক্লিয়াস ট্রান্সফার করেন।
১৯৩৮: হ্যানস স্পেম্যান ঘোষণা দেন তিনি সফলভাবে এক কোষের নিউক্লিয়াসকে ডিম্বাণুর মধ্যে ট্রান্সফার করতে সক্ষম হয়েছেন। ধারণা করা হয়, এটাই ছিল ক্লোনিংয়ের মূল ভিত্তি।
১৯৪০: জার্মানিতে অত্যন্ত গোপনে মাতৃগর্ভে শিশুর বংশবাহিত রোগ সারানোর গবেষণা শুরু হয় সরাসরি হিটলারের নির্দেশে। পরে গবেষণার নাম দেয়া হয় ইউজেনিক্স। ইউজেনিক্সের মাধ্যমে অতিমানব সৃষ্টির চেষ্টা চলেছিল ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর ইউজেনিক্স পরিত্যক্ত হয়।
১৯৪৪: বংশগতির ধারায় ডিএনএর কার্যকারিতা এবং বেশির ভাগ প্রাণী ও উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ডিএনএ যে প্রোটিন হিসেবে নয়, প্রধানত বংশধারা নির্ণয়ে ভূমিকা রাখতে পারে তা ১৯৪৪ সালে প্রমাণ করেন তিন বিজ্ঞানী অসওয়াল্ড অরভিন, কলিন ম্যাকলয়েড এবং ম্যাকালিন ম্যাকার্থি।
১৯৫০ : ডগলাস বেডিস নামের এক ব্রিটিশ চিকিৎসক শিশুদের আরএইচ ফ্যাক্টরের অসঙ্গতি নির্ণয়ে এমাইনে সিনথেসিস ব্যবহারের প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেন। এ থেকে বিভিন্ন ধরনের জিনের বিকৃতি নির্ণয়ের পন্থা পাওয়া যায়।
১৯৫২ : ব্যাঙাচির ক্লোন করা হয় ।
১৯৬০ : জেবিএস হ্যালডেন ক্লোনিংয়ের বিষয়বস্তুকে প্রথমবারের মতো ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করেন।
১৯৬২ : জন গার্ডেন প্রভেদকারী কোষ (ডিফারেনশিয়েটেড সেল) থেকে ব্যাঙের ক্লোন করেন।
১৯৬৬ : জেনেটিক কোড পরিপূর্ণভাবে সংস্থাপিত হয়।
১৯৬৯ : হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের একদল গবেষক জিন বিশ্লেষণে সমর্থ হন। ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএর শর্করা পরিমাপ প্রক্রিয়া থেকে এ বিশ্লেষণ ও বিযুক্তকরণ প্রক্রিয়া পাওয়া যায় ।
১৯৭৩ : মার্কিন বিজ্ঞানী স্ট্যানলি কোহেন ও হার্বার্ড বায়ার প্রথম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করেন। ১৯৭৬ : জেনেটিক নামে একটি গবেষণা সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে। এটিই বিশ্বের প্রথম জিন প্রকৌশল সংস্থা।
১৯৮০ : মার্টিন ক্লাইন নামের এক মার্কিন বিজ্ঞানী ইঁদুরের জিন প্রতিস্থাপনে সাফল্য লাভ করেন। ১৯৮২ : মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ প্রশাসন প্রথম জেনেটিক ওষুধ অনুমোদন করে।
১৯৮৩ : স্ক্রিনিং টেস্ট প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করা হয় । হান্টিংটন রোগের জিন শনাক্ত করতে গিয়ে কৌশলটা পাওয়া যায় ।
১৯৮৫ : অপরাধী শনাক্ত করতে প্রথম জেনেটিক ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রযুক্তি ব্যবহার হয়।
১৯৯০ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট চালু করে। ঐ বছর জিন প্রযুক্তিবিশারদ ডব্লিউএফ এন্ডারসন প্রথম জিন থেরাপি ব্যবহার করেন। এডিএ ডেফিশিয়েনসিতে ভোগা ১১ বছর বয়সী একটি মেয়ের দেহে প্রথম জিন থেরাপি করেন তিনি।

১৯৯৩ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা প্রথম মানুষের ভ্রণ ক্লোন করেন। তখনো চতুর্দিক থেকে প্রচণ্ড প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। প্যারিসের একদল বিজ্ঞানী মানুষের ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের সেটের খসড়া আবার তৈরি করেন।
১৯৯৪ : ভ্রূণ থেকে গরুর বাছুরের জেনেটিক কপি তৈরি করা হয়।
১৯৯৫ : আয়ান উইলমুট ভেড়ার কোষ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন।
১৯৯৬ : স্কটল্যান্ডের রোজলিন ইনস্টিটিউটের গবেষক আয়ান উইলমুট ক্লোন ভেড়া ডলির জন্ম দিতে সক্ষম হন।
১৯৯৮ : জাপানের কাংকি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ক্লোন গরুর জন্ম দিতে সক্ষম হন। পূর্ণবয়স্ক কোষ থেকে ৫০টি ক্লোন ইঁদুরের জন্য হয়।
২০০০ : ক্লোন শূকরছানার জন্ম।
২০০২ : ‘ইভ’ নামের একটি কন্যাশিশু ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে জন্ম হয়েছে বলে দাবি করে ক্লোনাইড নামের একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান ।
মানব ক্লোনিংয়ের পক্ষে যুক্তি বিজ্ঞানীরা গবেষণার নেশায় মানুষের ক্লোনিং নিয়ে ব্যস্ত হয়েছে। কিন্তু এর সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি। তবে এক্ষেত্রে তারা মানব ক্লোনিংয়ের পক্ষে বেশ কিছু যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন যা নিম্নরূপ :
১. এটা বিজ্ঞানের জগতে এক বড় আবিষ্কার যা বিজ্ঞানীদের জন্য সুনাম বয়ে আনবে।
২. এর মাধ্যমে বিভিন্ন মেধাবী মানুষ বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ক্লোন করে রাখা যাবে।
৩. এর মাধ্যমে জৈবপ্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার দ্বার খুলে যাবে।
৪. এর মাধ্যমে নিঃসন্তান মহিলাদের সন্তান উৎপাদন সম্ভব হবে।
৫. সহজে উন্নত মেধার মানুষ তৈরি করা যাবে।
৬. একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ক্লোন করে সহজে বিভিন্ন মানুষ বা একটি দেশকে বিভ্রান্ত করা যাবে যা একটি দেশের জন্য সুফল হবে এবং অন্য দেশের জন্য কুফল বয়ে আনবে।
৭. দেহকোষ থেকে ভ্রুণ তৈরি হওয়ার পর একে বিভক্ত করে একসাথে একাধিক মানুষ তৈরি করা যাবে ।
৮. ইচ্ছা করলে একজন পুরুষ বা মহিলা বিয়ে বা সহবাস না করে তার বংশ রক্ষা করে যেতে পারবে।
৯. মানুষ ইচ্ছা করলেই Bio-technology company এক বা একাধিক মানুষকে সংগ্রহ করতে পারবে, যারা হবে পিতৃ-মাতৃহীন ।
মানব ক্লোনিংয়ের বিপক্ষে যুক্তি : উপরোক্ত যুক্তি যেমন মানব ক্লোনিংয়ের ক্ষেত্রে রয়েছে তেমনি সভ্য পৃথিবীতে এর নৈতিক ভিত্তির বিপক্ষেও কিছু যুক্তি বিবেচনায় আসার দাবি রাখে। জীনতত্ত্বের বিজ্ঞানী William Muir Dr. Harry Griffin ও ভ্রুণতত্ত্ববিদ Richard Gardner-এর মতে, মানব ক্লোনিংয়ে বিভিন্ন সমস্যা বা অসুবিধা দেখা দিতে পারে। যেমন—
১. জিনে Mutation ঘটে বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ তৈরি হতে পারে।
২. প্রচ্ছন্ন জিনগুলো Dominate হয়ে ক্লোন মারা যেতে পারে।
৩. জন্মের পর পরিচয়ের অভাবে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪. ক্লোন শিশু ধারণকারী মায়ের গর্ভাশয়ে Chorio-carinoma ধরনের ক্যানসার রোগ হতে পারে, যা পরে গর্ভফুলে (Placenta) ছড়িয়ে যেতে পারে।
৫. ক্লোন করা মানুষটি তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যেতে পারে।
৬. গর্ভপাত নির্ধারিত সময়ের আগে হয়ে যেতে পারে, ফলে ক্লোন শিশুটি নষ্ট হয়ে যাবে।
৭. প্রযুক্তিটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবে, যা গরিব দেশের পক্ষে করা সম্ভব হবে না।
৮. মানব ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে একজন স্বৈর প্রেসিডেন্টের অনেক কপি করে দুনিয়ায় ছড়িয়ে নিলে মানুষ সমস্যায় পড়বে।
৯. ক্লোন মানুষটি যদি তার মাতা ও পিতা কিংবা স্বাভাবিক পরিচয় খুঁজে না পায় তাহলে সব ক্লোন মানুষের মধ্যে সন্ত্রাসী মনোভাব সৃষ্টি হবে।
মানব ক্লোনিয়ে বিভিন্ন মতামত : বর্তমান বিশ্বে মানব ক্লোনিং নিয়ে রীতিমতো ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কোনো বিজ্ঞানী একে স্বাগত জানাচ্ছেন, আবার কেউবা বিজ্ঞানের এই পদ্ধতিকে একেবারেই অনৈতিক বলে অভিহিত করেছেন। ক্লোনিং সম্পর্কে বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের মতামত সংক্ষেপে নিম্নরূপ—
১. মার্কিন রসায়নবিদ ড. ব্রিজিত বোইসেলিয়ার, ড. পানাইওটিস জার্ভোস ও ইতালির ভ্রূণ বিশেষজ্ঞ ড. সেভেরনিও আন্তিনোরি মানব ক্লোনিংকে স্বাগত জানিয়ে ঘোষণা করেন, যে কোনোভাবে তারা মানুষের ক্লোনিং করবেন। সেই কথামতো ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর ক্লোনেইডের প্রধান বোইসেলিয়ার তত্ত্ববধানে বিশ্বের প্রথম মানব ক্লোন শিশু ইভের জন্ম হয় ।
২. অপরদিকে রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য ড. ডেভ ওয়েলটনির মতে, মানবশিশুর ক্লোনিং পুরোপুরি অনৈতিক। তাছাড়া নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জন বার্নস বলেছেন, এ পদ্ধতিতে যে শিশুর জন্য হবে তা হবে অস্বাভাবিক।
৩. ড. এন্টিমরির মতে, মানব ক্লোনিংয়ের ব্যর্থতার শতকরা ৯৭% । কারণ এটি একটি বিকৃত জন্মদান । এটা বিপুল সংখ্যক ডিম্বাণু ও ভ্রূণের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। উইলিয়াম মুরি এবং ড. হ্যারি মনে করেন, মানব ক্লোনিং একটি আপত্তিকর বিষয়; কারণ যারা মানব ক্লোনিং করবেন, তারা জানে না একটি ক্লোন শিশুর পরিণতি কী? রিচার্ড গার্ডনার মন্তব্য করেন যে, ক্লোন শিশু ধারণকারী প্রতিটি মা Chorio- Carionoma নামক ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হবে যা সমগ্র গর্ভফুলে ছড়িয়ে পড়বে।
৪. প্রফেসর লর্ড রবার্ট-এর মতে, মানবদেহের বাইরে নিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে সন্তান উৎপাদন করা একটি ঘৃণ্য কাজ।
অপরদিকে ডেভিট স্টিভেন্স বলেন, মানবতা বিসর্জন দিয়ে কোন শিশু তৈরি করলে, তারা অবশ্যই বিপদে পড়বে। এসব কথা চিন্তা করে যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, সৌদি আরবসহ বিশ্বের ৪২টি দেশে ক্লোনিং নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের ভোটে সব ধরনের মানব ক্লোনিংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং যারা এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করবে তাদের জন্য ১০ বছরের কারাবাস এবং ১০ লক্ষ ডলার জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এটি এখনো আইনে পরিণত হয়নি। মানব ক্লোনিংয়ের পক্ষ বিপক্ষের যুক্তি উপেক্ষা করে ব্রিজিত বোইসেলিয়ার ইড নামক একটি মানব শিশুর জন্ম দিয়েছেন।
মানব ক্লোনিং নৈতিকতা বনাম বিজ্ঞানের অগ্রগতি মানব জন ক্লোনিং এমন একটি কাজ যা বিজ্ঞানীদের তো বটেই ধর্মগুরু এবং রাজনীতিবিদদের জন্যও বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বোঝাই যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তারা ভ্রুণ থেকে শিশু পরিপুষ্টকারিণী ধাত্রীদের ছড়িয়ে দিয়েছে। ফলে চারদিক থেকে একের পর এক ক্লোন মানবশিশু জন্মের খবর আসতে থাকলে নিশ্চয়ই কট্টর ক্লোনবিরোধীরা দিশেহারা হয়ে পড়বেন। কারণ নৈতিকতার কথা বললেও বিশ্বের কোথাও ক্লোন মানবশিশু জন্মের পক্ষে-বিপক্ষে তেমন কোনো আইন নেই।
কারণ বিষয়টি অভূতপূর্ব। যতই ক্লোন ভালো নয়, করাও উচিত নয়, মানবতা বিরোধী, অনৈতিক এ জাতীয় কথা বলা হোক না কেন, একবার জন্ম হয়ে গেলে ঐ শিশুদের কোন মানদণ্ডে মাপা হবে সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। যেখানে দ্বিতীয় ক্লোন শিশু জন্মের দাবি করছে ক্লোনইড সেখানে অর্থাৎ নেদারল্যান্ডসেও দেখা যাচ্ছে মানুষ ক্লোন করা নিষিদ্ধ, কিন্তু ক্লোন করা মানবশিশু জন্ম রহিত করার কোনো বিধান নেই। অন্য কোথাও ক্লোন করে ভ্রূণ নিষিক্ত করে ধাত্রী মাতা যদি নেদারল্যান্ডসের মাটিতে সন্তান প্রসব করে তাহলে সে সন্তান অন্যসব শিশুর মতোই অধিকার ভোগ করবে ।
ইতোমধ্যে মিয়ামিতে বার্নার্ড সিয়েজেল নামে এক আইনজীবী একটি মামলা দায়ের করেছেন যার পরিপ্রেক্ষিতে ২২ জানুয়ারি ২০০৫ ইভের মা-বাবাকে কোর্টে হাজির হতে বলা হয়। কিন্তু ব্রিজিত জানান ইভের মা-বাবা গোপনেই থাকতে চান, শিশুটিকে তারা কোনো পরীক্ষার সম্মুখীন হতে দিতে চান না। ওদিকে মামলা দায়েরকারী আইনজীবী বার্নার্ড আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ক্লোন বলে শিশুটি যাতে বঞ্চিত নিগৃহীত না হয় সে জন্যই তিনি আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি শঙ্কিত এই ভেবে যে, শিশুটি অন্য শিশুর মতো হয়নি।
সে মারাত্মক জেনেটিক সমস্যা নিয়ে জন্মেছে এবং শিশুটি অপরিণামদর্শীদের হাতে পরে নিগৃহীত হতে পারে। এর উত্তরে ব্রিজিত বলেন, এ শিশুটিও বিশ্বের অন্য শিশুদের মতো, বরং তিনি মার্কিন বিচার বিভাগের কাছে শিশুটির নিরাপত্তা দানের আহ্বান জানিয়েছেন।
বার্নার্ড সিয়েজেল যে শঙ্কার কথা বলছেন তা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ রেলিয়ানরা এটা প্রমাণ করেছে যে তারা স্বাভাবিক ধর্মে স্বাভাবিক জীবনযাপনে বিশ্বাসী নয়। অস্বাভাবিক বিশ্বাস থেকে তারা অনৈতিক অবৈধ কাজও করে যেতে পারে। বার্নার্ড সিয়েজেল মামলা করেছেন ঠিকই, কোর্টও সমন জারি করেছে কিন্তু ইভই বা কে, তার বাবা-মাই বা কোথায়? এটা বোঝা যাচ্ছে যে, বেয়লিয়ানরা ইভ বা তার বাবা-মাকে প্রকাশ্যে আনতে রাজি নয়। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে কিনা সেটাও পরিষ্কার নয়। কাজেই ঐ মামলায় তেমন কোনো সমস্যায় রেলিয়ানরা পড়বে বলে মনে হচ্ছে না।
নিভৃতে হলেও ক্লোনিং নিয়ে গবেষণা এগিয়ে চলছে। নৈতিকতা ও বিজ্ঞানের অগ্রগতির এ ক্ষেত্রে একটি বিতর্কও উঠেছে। কিন্তু নৈতিকতা আপেক্ষিক বিষয়, আর বিজ্ঞান যুক্তির প্রগতিমুখী বিকাশ। তাই মানব ক্লোনিংয়ের ব্যাপারে ইতিবাচক হওয়া ছাড়া উপায় নেই। আমেরিকাসহ বেশকিছু দেশের রক্ষণশীলরা ক্লোনিংয়ের বিরুদ্ধে থাকলেও আজ তারা চুপ করেছেন।
উপসংহার : ক্লোনিং বিরোধীরা ক্লোন শিশুদের যদি মানবশিশু হিসেবে মূল্যায়ন করতে না চান তাহলেও কিন্তু নৈতিকতার সমস্যা দেখা দিতে পারে, ওরা মানবশিশু কিনা? এ প্রশ্ন তোলা একদিকে যুক্তিসঙ্গত আর অন্যদিকে যুক্তিহীনও মনে হতে পারে। কেউ কি ক্লোন শিশুদের মেরে ফেলার বা ধ্বংস করার বিধান দেবেন? এসব কথা চিন্তা করেই সম্ভবত আগে থেকেই মানব ক্লোনকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছিল উন্নত বিশ্বে।
একদিকে বিজ্ঞানীরা বলছিলেন বিজ্ঞানের উন্নতির কথা, অন্যদিকে সমাজবিজ্ঞানী, আইন বিশেষজ্ঞ এবং ধর্মগুরুরা নৈতিকতা ও মূল্যবোধের বিপর্যস্ত হওয়ার ভয় দেখাচ্ছিলেন। একে অবশ্য শুধু মনের ভয় হিসেবে দেখা যাবে না। রেলিয়ানরা যতই প্রবোধ দিক না কেন কেউ তো জানে না ক্লোন করার সময় নৈতিকতা ও মানবীয় স্বাভাবিকত্বকে মানা হচ্ছে কিনা।
আরও দেখুন: