চিকিৎসা ও বিজ্ঞান | বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক | বাংলা রচনা সম্ভার

চিকিৎসা ও বিজ্ঞান | বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক | বাংলা রচনা সম্ভার ,  ভূমিকা : মানব জন্মের সূচনালগ্নে মানুষ বনে বাদাড়ে বসবাস করে মানবেতর জীবন যাপন করেছে। ধীরে ধীরে মানুষের বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা, উপর্যুপরি চেষ্টা ও শ্রমের মধ্যে দিয়ে মানুষ সভ্য জীবন পেয়েছে। মানুষের দীর্ঘ জীবনের সুকঠিন ভাবনা গবেষণা মানুষকে উন্নত জীবনব্যবস্থা দিয়েছে। সভ্যতার ক্রমবিকাশে বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও অবদান অনস্বীকার্য। মানুষের সর্বৈব কল্যাণে বিজ্ঞান সহায়তা করেছে । মানব সভ্যতাকে নব সম্ভাবনার দ্বারে পৌঁছে দিয়েছে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার।

চিকিৎসা ও বিজ্ঞান | বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক | বাংলা রচনা সম্ভার

চিকিৎসা ও বিজ্ঞান

বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির সাহায্যে চিকিৎসাপদ্ধতিতে আজ এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। বিজ্ঞান চিকিৎসাক্ষেত্রে নব আশীর্বাদরূপে আবির্ভূত হয়েছে। স্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য চাই উন্নততর চিকিৎসাব্যবস্থা। তাই চিকিৎসাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে বিজ্ঞান মানুষের স্বাস্থ্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। মানুষ দুরারোগ্য ও জটিল সব রোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে বিজ্ঞানের আশীর্বাদে।

চিকিৎসা ও বিজ্ঞান | বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক | বাংলা রচনা সম্ভার

 

সনাতন চিকিৎসাব্যবস্থা : প্রাচীনকালে কোনো বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসাব্যবস্থা ছিল অকল্পনীয়। সে সময় মানুষ রোগমুক্তির জন্য বিভিন্ন ধরনের কবিরাজি ওষুধ, গাছ-গাছালি, দোয়া, তাবিজ-কবজ, পানিপড়া ইত্যাদির ওপর নির্ভর করত। ফলে বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসাব্যবস্থার অভাবে মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হতো। চিকিৎসাক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি না থাকায় এসব জটিল রোগ নির্ণয় করাও ছিল। দুঃসাধ্য। ফলে সুচিকিৎসার অভাবে মারা যেত অনেকে ।

আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার সূচনা : আধুনিক চিকিৎসার ধ্যান-ধারণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিজ্ঞান বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বিজ্ঞানের অবদানে আবিষ্কৃত হয় রোগ নির্ণয়ের নতুন নতুন যন্ত্রপাতি। এসব যন্ত্রের সাহায্যে জটিল সব রোগ নির্ণয় করা সম্ভবপর হয়েছে আধুনিক যুগে। বিজ্ঞানের অবদান আধুনিক যুগে কবিরাজি চিকিৎসার পরিবর্তে হোমিওপ্যাথিক, অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার প্রবর্তন হয়েছে। প্রাচীনকালের মতো মানুষ কবিরাজি ওষুধের ওপর নির্ভর না করে আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ফলে কঠিন সব রোগের হাত থেকে তারা মুক্তি পাচ্ছে। বিজ্ঞানের অবদানেই পেনিসিলিন, ক্লোরোমাইসিন, স্ট্রেপটোমাইসিন ইত্যাদি কঠিন ব্যাধির ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। তাই আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার সূচনায় বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য।

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সাফল্য : বিংশ শতাব্দীর পূর্বে চিকিৎসা পদ্ধতি ততটা উন্নত ছিল না। করাত জাতীয় ভারী বেসামাল অস্ত্রের সাহায্যে ক্ষতস্থান কেটে ফেলা, অপরীক্ষিত মোটা দাগের দু- চারটে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা চলতো। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বিশ্বের বুকে ফ্লুর মহামারী আকার ধারণ করে বিশ মিলিয়নের বেশি মানুষের জীবন কেড়ে নিলেও আজ উন্নত ধরনের ড্যাক্সিন, টিকা, এন্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধ ফ্লু মতো বহু শক্তিশালী রোগ নির্মূলে সক্ষম হয়েছে। কেবল চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির ফলেই আজ মানুষের গড় আয়ু ৫০ থেকে ৭০ বছরে এসে দাঁড়িয়েছে। তদুপরি চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রসারেই আজ রোগযন্ত্রণা হতে মানুষ অনেকটা পরিত্রাণ পেয়েছে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির পরিসংখ্যান নিলে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই যে, মানবসভ্যতার বিগত সাত-আট হাজার বছরের ইতিহাসে চিকিৎসা শাস্ত্রের যে উন্নতি সাধিত হয়েছে তার সিংহভাগই হয়েছে ১৯২০ থেকে আজকের মধ্যে। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের এ বৈপ্লবিক উন্নতি সাধিত হয়েছে মানবের রোগ-শোকে যারপরনাই ভোগান্তির ভিত্তি ভূমিতে। কেননা গত শতাব্দীতেও বসন্ত, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া প্রভৃতি রোগে বিশ্বের হাজার হাজার মানুষের জীবনাবসান ঘটেছে।

কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের আর আর শাখার মতো চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধিত হওয়ায় মানুষের শরীরে ক্ষতিকারক বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কারের সাথে সাথে এগুলো নিধনের জন্যও এন্টিবায়োটিক আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছে। মাত্র কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের মতো স্বল্পশিক্ষিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন দেশগুলোতে কলেরা ও বসন্ত রোগে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেত, কিন্তু চিকিৎসা শাস্ত্রের অবদানে এগুলো এখন নিয়ন্ত্রিত ও পর্যুদস্ত।

বিশ শতক ও চিকিৎসা বিজ্ঞান : বিশ শতক হচ্ছে বিজ্ঞান প্রসারের ও সাফল্যের শতক। মানব জীবন উন্নয়নে এমনকি মানুষের স্বপ্নের এমন কোনো রাজ্য নেই এ শতাব্দীতে বিজ্ঞান তাকে সফল করেনি। বিজ্ঞানে এই সর্বৈব সাফল্যের গোড়াতেই রয়েছে চিকিৎসা ক্ষেত্রের সাফল্য। কেননা চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস নিয়ন্ত্রিত হওয়াতে মানুষ সুস্থ ও সবল শরীর মন নিয়ে এগিয়ে চলেছে বিশ্বের আর আর বিষয় উন্নয়নে ।

বিশ শতকে কালাজ্বরের জীবাণু আবিষ্কার (১৯০০), সহযোগী হৃৎপিণ্ড আবিষ্কার (১৯০৮), ১৯১২ সালে কোলেস্টেরল, ১৯২৮ সালে পেনিসিলিনের মতো যুগান্তকারী ওষুধ, কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস, ইলেকট্রন মাইক্রোস্কাপ আবিষ্কার, রক্তরস আবিষ্কার (১৯৪০), কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন (১৯৪৩), বংশগতির ধারা বিষয়ক ডিএনএ (১৯৫৩), হার্টের পেসমেকার  (১৯৫৩), ওপেনহার্ট সার্জারি ও হার্টের বাইপাস সার্জারিতে প্রয়োজনীয় হার্টলাং মেশিন তৈরি, যে আলট্রাসনিক স্ক্যানিং-এর মাধ্যমে শরীরের ভেতরের যকৃত, পিত্তথলি, কিডনি ইত্যাদির অবস্থা নির্ণয় করা যায় তা আবিষ্কার এ শতাব্দীর চিকিৎসা বিষয়ক বিজ্ঞানের উন্নতির এক চরম সাফল্য।

অপারেশন দ্রুত করার জন্য লেজার সার্জারি আবিষ্কার, তাছাড়া সিটি স্ক্যান আবিষ্কারের কারণে রোগীর শরীরে সরু রশ্মি প্রবেশ করিয়ে, টিস্যুর ঘনত্ব নির্ণয় করার রোগ নির্ণয়ে সহায়ক হয়। এন্ডোস্কোপ (১৯৬৫) আবিষ্কারের ফলে পাকস্থলীর মধ্যে নল ঢুকিয়ে চিকিৎসা করা যায়। আধুনিক কনটাক্ট লেগ (১৯৫৬), ঘাতক ব্যাধি এইডসের জীবাণু আবিষ্কার (১৯৮৪) তাছাড়া ১৯৭৮ সালে প্রথম টেস্টটিউব লুইস ব্রাউন নামক শিশুর জন্য, ১৯৯৭ সালে পূর্ণাঙ্গ ভেড়ার দেহকোষ থেকে ডলির জন্মগ্রহণ নিঃসন্দেহে গত শতাব্দীর চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্নয়নের অনবদ্য সাফল্যের স্বাক্ষর।

রোগ নির্ণয়ে বিজ্ঞান : রোগ নিরাময়ের পূর্বশর্ত রোগ নির্ণয়। সঠিক রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমেই রোগের সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করা সম্ভব। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় না করতে পারলে সুচিকিৎসা করা সম্ভব নয়। তাই রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসাক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছে বিজ্ঞান। অধ্যাপক রঞ্জনের আবিষ্কৃত রঞ্জন রশ্মি, এক্সরে, ইসিজি, সিটি স্ক্যান, মাইক্রোস্কোপ, আলট্রাসনোগ্রাফি, এমআরআই ইত্যাদি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে শরীরে পরীক্ষা চালিয়ে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে। আর এসবই বিজ্ঞানের অবদান।

রোগ প্রতিরোধে বিজ্ঞান রোগ নিরাময়ের চেয়ে রোগ প্রতিরোধই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রোগে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই তা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হলে রোগের অতিরিক্ত ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বিজ্ঞান এ অসাধ্যকে সাধন করেছে। বিজ্ঞানের আবির্ভাবে রোগ-প্রতিরোধের জন্য নানা ধরনের পন্থা আবিষ্কৃত হয়েছে। হাম, যক্ষ্মা, হুপিং কাশি, ধনুষ্টংকার, বসন্ত, ডিপথেরিয়া ইত্যাদি জটিল রোগগুলো প্রতিরোধের জন্য প্রতিষেধক টিকার ব্যবস্থা হয়েছে। বিজ্ঞানের বদৌলতেই এসব সম্ভব হয়েছে।

চিকিৎসা ও বিজ্ঞান | বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক | বাংলা রচনা সম্ভার

 

রোগ নিরাময়ে বিজ্ঞান : আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা বিজ্ঞানের আশির্বাদেই সম্ভব হয়েছে। রোগ নিরাময়ের আধুনিক সব ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতির ফলেই পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, ক্লোরোমাইসিন ইত্যাদি মহৌষধের আবিষ্কার হয়েছে। এছাড়াও সর্দিজ্বর, কাশি, মাথাব্যথা, জন্ডিস, পেপটিক আলসার ইত্যাদি ছোট খাটো যেসব রোগ যা প্রতিনিয়তই মানুষের জীবনে লেগে আছে তারও অনেক প্রকার ওষুধ বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে। তবে দুরারোগ্য ব্যাধি এইডস, ক্যান্সার, এসএআরএস প্রভৃতি রোগের ওষুধ বিজ্ঞান এখন পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারেনি।

তবে কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সার রোগ নিরাময় সম্ভব হচ্ছে। এসব রোগের ওষুধ আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা চালিয়ে যাচ্ছে গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ভবিষ্যতে এসব রোগ নিরাময়ের ঔষধও বিজ্ঞান মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে দেবে। হেনরি ডেভিডের মতে, ‘বিজ্ঞান বিশ্বসভ্যতায় অনেক বিস্ময়কর উপহার দিয়েছে। এ বিস্ময়ের অন্যতম হলো আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা।’

জটিল রোগ চিকিৎসা : চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সংযোজনের ফলে অনেক দুরারোগ্য রোগের ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে। ফলে মানুষ জটিল সব রোগ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে পেয়েছে। কঠিন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিও আজ রোগমুক্তি লাভের আশার আলো দেখেছে। অধ্যাপক কুরি ও মাদাম কুরির আবিষ্কৃত রেডিয়াম ব্যবহার করে দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগেরও চিকিৎসা করছেন চিকিৎসকরা। অনেক ক্ষেত্রেই এ ভ্যাঙ্কর ক্যান্সার রোগ থেকে মানুষ মুক্তি পাচ্ছে। ভ্যাক্সিন আবিষ্কারে এককালের মহামারী বসন্ত রোগের চিকিৎসা সহজতর হয়েছে।

বিজ্ঞানের আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে অপারেশন করা হচ্ছে বিজ্ঞানের কল্যাণেই। প্লাস্টিক সার্জারি করে মানুষের শরীরে আকৃতি বা চেহারা পরিবর্তনের মতো দুঃসাধ্য কাজও সম্ভব হচ্ছে বিজ্ঞানের আশীর্বাদে। মানবদেহের কোনো অঙ্গের হানি ঘটলে (যেমন- হাত, পা, আঙুল ইত্যাদি) যন্ত্রপাতি দিয়ে নতুন হাত, পা, তৈরি করে মানবদেহে সংযোজন করা সম্ভব হচ্ছে । অতএব দেখা যাচ্ছে চিকিৎসার প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিজ্ঞান অবদান রাখছে।

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সর্বশেষ অগ্রগতি : সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞানীরা নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কিছু আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি অর্জন করেছে। এ সাফল্য জনস্বাস্থ্য রক্ষায় যুগান্তকারী ফলাফল বয়ে আনবে বলে আশা করা যায়। জেনেটিক টেকনোলজির রহস্য উদঘাটনের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি শনাক্ত ও চিকিৎসা আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। ক্লোনিং পদ্ধতিও চিকিৎসাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম রক্ত, প্রোটিন প্রভৃতি আবিষ্কারেরও চেষ্টা চালাচ্ছে। টেস্ট টিউব শিশুর জন্মদানে বাংলাদেশেও প্রচলিত হয়েছে। মোটকথা, চিকিৎসাবিজ্ঞানে অসম্ভব বলে আর কিছু থাকছে না।

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের গুরুত্ব চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। অনেক অসাধ্য ও দুঃসাধ্য রোগ নির্ণয় ও তার চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কার করেছে বিজ্ঞান। মানুষের জন্যই বিশ্ব। সুস্থ-সবল মানুষই জাতিকে উন্নতির দিকে ধাবিত করে। বিজ্ঞান যদি চিকিৎসা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন না আনত তাহলে কঠিন সব রোগ-ব্যাধি থেকে মানুষ মুক্তি পেত না। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত অসংখ্য মানুষ। অসুস্থ, অথর্ব মানুষ নিয়ে বিশ্ব হয়ে পড়ত অচল।

কিন্তু বিজ্ঞান মানুষকে সচল রাখছে। মানুষের জীবনে সুখ-শান্তি বয়ে আনছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান বিশ্বসভ্যতার জন্য একাধারে আশীর্বাদ এবং অভিশাপও। কিন্তু চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান শুধু আশীর্বাদই বহন করেছে। জীবজন্তু এবং মানুষ সবক্ষেত্রেই চিকিৎসাবিজ্ঞান আশীর্বাদ। এ প্রসঙ্গে কিপলিং বলেন, বিজ্ঞানের আশীর্বাদে বিশ্বমানবতা কখনও উল্লসিত হয়, আবার অনেক সময় তার বিভীষিকাময় রূপে বিশ্বসভ্যতা থমকে দাঁড়ায়। কিন্তু চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান এনেছে শুধু আশীর্বাদ আর আশীর্বাদ।’

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যর্থতা : চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের যে বিস্ময়কর অগ্রগতি হয়েছে, তা মানবসমাজের জন্য রীতিমতো আশীর্বাদ। তবে এ কথা সত্য, বিজ্ঞান ও যন্ত্র সভ্যতার অবাধ বিকাশের কারণে অনেক জটিল রোগের জন্ম হয়েছে, যা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এইডস বর্তমান মানবসভ্যতার জন্য এক বিরাট হুমকি হলেও এ রোগের চিকিৎসা আবিষ্কারে বিজ্ঞান ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা সহসা এ রোগ নিরাময় দানের আশ্বাসও দিচ্ছে না। সাম্প্রতিককালে সার্স ভাইরাসও বিজ্ঞানকে ফাঁকি দিয়ে মানুষকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

উপসংহার : মানুষ বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয়েছে। যে জীবন ধারণের জন্য মানুষের এত চেষ্টা, যে জীবনকে উন্নত করতে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার, সে জীবনকে রোগ-শোক, ব্যাধি-জরা থেকে রক্ষা করতে বিজ্ঞানের চেষ্টার অন্ত নেই। জীবন যেমন বিজ্ঞানের অবদানের মধ্য দিয়ে প্রকৃতিকে আয়ত্ত করতে সচেষ্ট, তেমনি প্রকৃতি থেকে সৃষ্ট ব্যধি জীবনকে বিপর্যস্ত করতে সচেষ্ট। নতুন নতুন রোগ যেমন মানুষকে আক্রমণ করছে, তেমনি এসব রোগ থেকে পরিত্রাণের উপায় আবিষ্কারেও মানুষ সদা সচেষ্ট। বিজ্ঞানীরা গবেষণার পর গবেষণা করে নতুন ওষুধ আবিষ্কার করছে, চিকিৎসা পদ্ধতিকে করে তুলছে আধুনিক থেকে আধুনিকতর। বিজ্ঞানের অবদানে আমরা পতিত রোগ নিরাময়ে সক্ষম হচ্ছি।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment