বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য [ Essay on The natural beauty of Bangladesh ] অথবা, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনার ভূমিকা:
বৈচিত্র্যময় বিশ্বের নানা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চিত্র ফুটে ওঠেছে নানা দেশে। প্রত্যেক দেশেরই আলাদা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মহিমা রয়েছে। প্রকৃতি তার মন উজাড় করে স্ব স্ব দেশকে পরিচিতি করার জন্য সাজিয়েছে নতুনভাবে। আমাদের বাংলাদেশেও প্রকৃতির দীলা নিকেতনে পরিপূর্ণ। নদী-নালা, খাল-বিল, ফুল-ফল, আর পশু-পাখির দেশ এ বাংলাদেশ। এদেশের সবুজ বন-বাদাড়, প্রকৃতির এক অপূর্ব শোভা বর্ধন করে আছে। ষড় ঋতুর প্রভাবে বাংলাদেশের প্রকৃতি নানা রঙে বর্ণীল শোভা ধারণ করে।

মূল বক্তব্য:
(ক) বৈচিত্র্যের প্রকৃতি:
বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বলা হয়েছে। প্রকৃতি এখানে যেন তার ভাতার উজাড় করে সৌন্দর্য ও মাধুর্য বিতরণ করেছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যই এ দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম কারণ।
ভূ-প্রকৃতি অনুসারে বাংলাদেশকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের উচ্চভূমি এবং পলিমাটি গঠিত সুবিস্তৃত সমভূমি। বান্দরবন ও খাগড়াছড়ির পর্বতরাজি, নিবিড় ঘন সবুজের বন বনানী, জলপ্রপাতের মনোরম দৃশ্যরাজি মনকে সহজেই মুগ্ধ করে। এখানে পাহাড়ি ঢাল বয়ে চলে গেছে আঁকাবাঁকা উঁচু নিচু পথ। পাহাড়েরর গায়ে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে চা বাগান ও জুম ক্ষেত। রাঙামাটি, কাপ্তাই হ্রদ পাহাড়ের বুকে সৃষ্টি করেছে অপার সৌন্দর্যের উৎস।
![বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রতিবেদন রচনা | Essay on The natural beauty of Bangladesh 3 রাতের কর্ণফুলি নদী [ Karnaphuli River at night ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/02/রাতের-কর্ণফুলি-নদী-300x200.jpg)
জাফলং এর অবাক করা সৌন্দর্য যেন আকাশ থেকে স্বর্গ লোকের সবুজ সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসেছে। এদেশের দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। এখানে বিশাল এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে সুন্দরবন। নানা ধরনের অগণিত বৃক্ষরাজিতে শোভিত সুন্দরবন চিরহরিৎ এলাকা। সুন্দর বন ছাড়াও এ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে শাল, সেগুন, গজারি, মেহগনী ও নানা রকম নাম না জানা বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ বন। এর মধ্যে ভাওয়াল ও মধুপুরের গড় অঞ্চল স্বতন্ত্র মহিমার অধিকারী।
বাংলাদেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল প্রধানত সমভূমি এলাকা। অগণিত নদ-নদী প্রবাহিত হয়েছে এ সকল এলাকার মধ্য নিয়ে। রূপালী নদীর তীরে বিস্তৃত সুবিশাল শসা ক্ষেত্র। তাঁচা শস্যের সবুজের সমারোহ আর সোনালি ধানশীর্ষের অতুলনীয় সৌন্দর্য সকলকে বিমুগ্ধ করে। আর মটরশুঁটির অপরূপ শোভা ও সরষে ফুলের গাঢ় হলুদ ক্ষেত্রের পাশে ছায়া ঢাকা ছোট ছোট গ্রাম সে স্বর্গীয় সৌন্দর্যকে বিকশিত করে তোলে। বাংলাদেশের সর্বত্র অসংখ্য নদী-নালা জালের মত ছড়িয়ে রয়েছে। নদীর বুকে পাল তুলে নৌকা চলে। মাঝি গলা ছেড়ে উদাস করা ভাটিয়ালি গান ধরে। গাঁয়ের বউ ঝিরা লম্বা ঘোমটা দিয়ে নদীর ঘাট থেকে জল ভরে গ্রামের মেঠো পথ ধরে হেঁটে যায়।

নদীর ধারে বটের ছায়ায় বসে ক্লান্ত রাখাল মনের আনন্দে বাঁশি বাজায় বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মোহনায় জেগে ওঠেছে বড় বড় অসংখ্য চর। কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপ, হাতিয়া ও সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশকে করেছে সীমাহীন সৌন্দর্যের অধিকারী। কক্সবাজার ও পতেঙ্গার রূপালী সৈকত আমাদের আবেগময় বিমুগ্ধতায় মোহিত করে। (খ) ঋতু বৈচিত্র্য: ঋতু পরিবর্তনের ধারা এদেশের প্রকৃতিকে করেছে আরো মনোহর, আরো অপরূপ। গ্রীষ্মের খররৌদে এখানকার শান্ত প্রকৃতি অশান্ত দুর্দম আবেগে ফেটে পড়তে চায়।
এদেশের কালবৈশাখী ঝড় প্রচণ্ড গতিতে সব লণ্ডভণ্ড করে দেয়। বর্ষার বারি বর্ষণ প্রকৃতির সবকিছুকে দেয় সজীবতা। চাষীর ও মাঝির মুখে আনে গান, শরৎ আসে শিশির আর সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে। হেমন্তের শান্ত ও স্নিগ্ধ পরিবেশ মনকে স্লিগ্ধ করে। শীতের শীতল হাওয়া প্রকৃতিতে করে দেয় বিনষ্ট । গাছের সমস্ত পাতা ঝরে প্রকৃতি এক বিরহ বিধুর রূপ ধারণ করে। আসে বসন্ত। গাছে গাছে নতুন পাড়া গজায়। আম, জাম, কাঁঠালগাছে আসে নতুন কুঁড়ি। গাছে গাছে মৌমাছি আর ভ্রমরের গুঞ্জন শোনা যায়। পাখি গান গায় তার আপন মনে।
উপসংহার : বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি মনোরম, অতি সুন্দর। তাই কবির কণ্ঠে আমরা নিত্যই শুনে
“আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি —–
আরও পড়ুন: