সাহিত্য ও সৌন্দর্য | ভাষা ও সাহিত্য | বাংলা রচনা সম্ভার , ভূমিকা : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় অন্তরের জিনিসকে বাহিরের, ভাবের জিনিসকে ভাষার, নিজের জিনিসকে বিশ্বমানবের ও ক্ষণকালের জিনিসকে চিরকালের করে তোলা সাহিত্যের কাজ।’ এর সাধারণ উদ্দেশ্য আনন্দদান। সাহিত্য জগৎ ও জীবনকে সুন্দর করে এবং কোনো কোনো সময় সত্যকে আমাদের কাছে গোচর বা প্রত্যক্ষ করে আনন্দ দান করে।
সাহিত্য ও সৌন্দর্য | ভাষা ও সাহিত্য | বাংলা রচনা সম্ভার
সাহিত্য ও সৌন্দর্য
মানবসভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই সাহিত্য সৌন্দর্য পরস্পরের পরিপূরক উপাদান হিসেবে বিরাজমান। সৌন্দর্য চেতনা মানুষের চিরন্তন ধর্ম। সাহিত্য আংশিকভাবে এ সৌন্দর্য চেতনাকেই ধারণ ও প্রকাশ করে। তাছাড়া সাহিত্যের অপর একটি উদ্দেশ্য ‘সত্য’ প্রকাশ করা। তাই, সাহিত্য ও সৌন্দর্য পরস্পরের সাথে সংশ্লিষ্ট দুটি উপাদান ।
সাহিত্য সম্পর্কিত ধারণা : অল্প কথায় সাহিত্যের সংজ্ঞা প্রদান করা অত্যন্ত কঠিন। মানুষের আশা- আকাঙ্ক্ষার অন্ত নেই। সে নিজেকে বাইরে দেখতে চায়। মানুষের মধ্যে, অপরের মধ্যে সে আপনাকে পেতে চায় এবং পেতে চায় বলেই সেও স্রষ্টার মতো নিজেকে প্রকাশ করতে চায়। স্রষ্টা বিচিত্ররূপে সৃষ্টির আনন্দে জগৎ সৃষ্টি করেছেন। মানুষ তেমনি নিজের ভাব-কল্পনাকে বহু রূপ পরিগ্রহ করিয়ে তার মাধুর্য উপভোগ করতে চায়। এভাবে আত্মপ্রকাশের জন্য মানুষের মনে তীব্র আকাঙ্ক্ষার জন্ম নেয়। মানুষের এ আত্মপ্রকাশের বাণীবদ্ধ রূপই হয়ে ওঠে সাহিত্য।
“Literature is the reflection of human mind.”—এ কারণেই বলা হয়, ‘সাহিত্য হচ্ছে মানব মনের প্রতিচ্ছবি’ । সাহিত্য হচ্ছে আলোর পৃথিবী, সেখানে যা আসে আলোকিত হয়ে আসে। কালো এসে এখানে নীল হয়ে যায়, অসুন্দর হয়ে যায় সুন্দর শিল্পকলা ।
আত্মপ্রকাশের বাসনা, পারিপার্শ্বিকের সাথে সংযোগ কামনা, কল্পজগতের প্রয়োজনীয়তা এবং রূপপ্রিয়তা এসব সাহিত্য সৃষ্টির উৎস। সুতরাং সাহিত্য বলতে সাহিত্যিকের মন, বস্তু জগৎ ও প্রকাশভঙ্গি এ তিনের সমন্বয়কে বোঝায়। সর্বকালের সহৃদয়জনের হৃদয়ভেদ্য ভাবকে আত্মগত করে আবার তাকে পরের করে প্রকাশই সাহিত্য। মোটকথা বিশ্বপ্রকৃতি, স্রষ্টা, মানব ও জীবজগৎ সকলই সাহিত্যের সামগ্রী। আর এ সামগ্রী যখন সাহিত্যিকের কল্পনারঞ্জিত হয়ে ভাবনয়রূপে আত্মপ্রকাশ করে তখনই তা সাহিত্য।
সৌন্দর্যের স্বরূপ: বস্তুজগতের সকল বস্তু সুন্দর অথবা অসুন্দর এ দু শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। তবে শিল্পের ক্ষেত্রে কোনো বস্তুর সৌন্দর্য নির্ভর করে তা প্রকাশের ধরনের ওপর। এই প্রকাশের ধরন কী হবে সে বিষয়েও আরোপিত কোনো নিয়ম নেই। সুন্দরের বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে— জাগতিক নিয়মের নির্যাসরূপে এবং নৈতিকতার স্ফুরণ, ঈশ্বরের ছটা, অন্তরের প্রকাশ, অভিজ্ঞতার ব্যক্ত রূপ ইত্যাদি রূপে।
সৌন্দর্য জিজ্ঞাসার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো হচ্ছে— ক. বস্তুজগৎ, খ. শিল্পী ও শিল্পীর আরাধ্য বস্তু, গ. শিল্পীরসিক এবং সহৃদয়, ঘ. সৌন্দর্যময় বস্তু, ঙ. রস সৃষ্টি ও আনন্দ । ভারতীয় বেদ-উপনিষদের আলোচনায় প্রতীয়মান হয়, সত্যের সঙ্গে সুন্দর-সৌন্দর্যের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে কবি জন কিটসের বক্তব্য। তিনি বলেন, Truth is beauty and beauty is truth.’ ভারতীয় আলঙ্কারিক দণ্ডী, আনন্দবর্ধন মনে করেন, কবির জগৎ আদর্শ জগৎ, কবি রসের আস্বাদ দেন তার রচনার মাধ্যমে। অর্থাৎ রসতত্ত্ব এবং অলঙ্কারশাস্ত্রের সঙ্গে সৌন্দর্যের সম্পর্ক অবিচ্ছিন্ন।
ভারতীয় অলঙ্কারশাস্ত্রে কোনো কোনো আলঙ্কারিক কাব্যের রসবাদকে আর কেউ কেউ কাব্যের রীতিবাদকে প্রাধান্য ও গুরুত্ব দিয়েছেন। অর্থাৎ একদল মনে করেন, কাব্যের বক্তব্য-বিষয়ের ওপর নির্ভর করে তার সৌন্দর্য আর অন্যদলের নিকট বক্তব্য-বিষয় কিভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে সেটাই প্রধান বিবেচ্য বিষয়। তবে বিশ্বনাথ কবিরাজ ভারতীয় সৌন্দর্যতত্ত্বের একটি সামগ্রিক ব্যাখ্যা তার ‘সাহিত্য দর্পণ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তিনি মনে করেন, ‘রসাত্মকং বাক্যং কাব্যম’। অর্থাৎ রসময় বাক্যই কাব্য । এখানেও উপস্থাপন রীতির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তবে বক্তব্য বিষয় এবং উপস্থাপনা রীতি উভয়ের সমন্বয়েই সামগ্রিক সৌন্দর্যের চেতনা বিকশিত হয়।
মানবচেতনায় সাহিত্য ও সৌন্দর্যের সংশ্লিষ্টতা : সাহিত্য ও সৌন্দর্য সম্বন্ধে সভ্যতার আদিকাল থেকে মানুষের ধারণা অনবরত পরিবর্তিত হয়েছে, সে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে এদের সম্পর্কের প্রকৃতি সম্বন্ধীয় ধারণা। তবে আদিকাল থেকেই সাহিত্যের সাথে সৌন্দর্যের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। সৌন্দর্য মানবপ্রকৃতির এক মূলগত ব্যাপার – বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মানুষ তার প্রকাশ ঘটিয়ে থাকে। সাহিত্য সেই বৈচিত্র্যময় কর্মকাণ্ডের একটি রূপ। অন্যান্য শিল্পমাধ্যম; যেমন— সঙ্গীত, চিত্রকলা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষ তার সৌন্দর্যচেতনারই প্রকাশ ঘটায়।
সাহিত্য ও সৌন্দর্যের সম্পর্ক : সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়েছে। সে অনুযায়ী সাহিত্যের সাথে তার সম্পর্কের প্রকৃতিও রূপ বদল করেছে। ইংরেজ রোমান্টিক কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলি, কিটস প্রমুখের কবিতায় সৌন্দর্য সৃষ্টিই সাহিত্যকর্মের মূল উদ্দেশ্য এবং সে সৌন্দর্য প্রাকৃতিক কল্পনা ও অপার্থিব জগতের জন্য আকুলতা রোমান্টিক সাহিত্যের প্রধান লক্ষণ।
তাই রোমান্টিক যুগের কবিতায় সৌন্দর্যের মধ্যে এক অলৌকিকতার আরোপ দেখতে পাওয়া যায়। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, এমনকি আধুনিক কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কবিতাতেও সে অলৌকিক সৌন্দর্যের জন্য আকুলতা দেখি। বাংলা বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যে রূপের মধ্য দিয়ে রূপাতীতের সন্ধান লক্ষ্য করা যায়।
ইউরোপীয় সাহিত্যে আধুনিকতার সূত্রপাত করেন ফরাসি শার্ল বোদলেয়ার। তার কবিতায় আপাত অসুন্দর ও কুৎসিত বস্তু বিষয় হিসেবে মর্যাদা পেল। তিনি কুকুরের মৃতদেহ, গণিকা, ভিখারিণী প্রভৃতি নিয়ে কবিতা রচনা করলেন। তার স্বপ্নের প্যারিস হলো এক ধাতুময় প্রকৃতিহীন শহর। সব প্রাকৃতিকতাকে তিনি সৌন্দর্যের বিরোধী হিসেবে দেখলেন। তার কাছে সৌন্দর্য হলো মানুষের চেতনা সম্ভূত এক কৃত্রিম রূপ, যা বাস্তবতার কাছে দায়বদ্ধ।
বোদলেয়ারের সৌন্দর্যভাবনা সমগ্র বিশ্ব সাহিত্যে প্রভাব ফেলে। সৌন্দর্যের সংজ্ঞা এবং সাহিত্যের সাথে তার সম্পর্ক পরিবর্তিত হয়। উনিশ শতকে রুশ সাহিত্যে নিকোলাই গোগোলের হাতে আমরা বিচারমূলক বাস্তবতার প্রতি সৌন্দর্যের আনুগত্য লক্ষ্য করা যায়। পরবর্তীকালে ইভান তুর্গেনেভ, দিন টলস্টয়, আন্তন চেখত প্রমুখ মহান রুশ সাহিত্যিকদের উপন্যাস ও গল্পে এ বাস্তবতাবাদী সৌন্দর্যত বিশ্বদর্শনের অন্যতম প্রকাশ রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়।
রোমান্টিক সাহিত্যে অধিবিদ্যক বিশ্বাস তথা মিষ্টিকতা বহুল পরিমাণে বিদ্যমান। এ কারণেই বাস্তব অবস্থা ও অস্তিত্বসমূহের বাইরেও এক অতিলৌকিক জগৎ ও সত্তার জন্য সেখানে আকুলতা প্রকাশ পায়। রোমান্টিক বিশ্বাসে মানুষ সে অলৌকিক সত্তার প্রতিনিধি, সে সুন্দর ও সুষমামণ্ডিত।
উনিশ শতক বিশ শতকের দর্শন, মনস্তত্ত্ব ও আবিষ্কার সে ধারণা ভেঙে দিয়েছে। বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে প্রথম মহাযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এর অভিঘাতে বিশ্বের মানবসমাজে অনেক পরিবর্তন সধিত হয়। যুদ্ধে মানুষের বিরুদ্ধে মানুষেরই নিষ্ঠুরতা ও পাশবিক আচরণ নাহিত্যিকদের মর্মাহত ও প্রভাবিত করে। যুদ্ধের অনিবার্য ফলশ্রুতি হিসেবে দুর্ভিক্ষ, বেকারত্ব, গৃহহীনতা নিয়ে এলো বিশ্বাসহীনতা, হতাশা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়। এসব কারণে সৌন্দর্য এবং সাহিত্যের দায়িত্ব সম্পর্কে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়।
মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড তার নতুন তত্ত্বে দেখালেন, মানুষ অলৌকিক সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছায়া নয়, সভ্যতার আবরণে সে এক সাধারণ পশুমাত্র। সমাজবিজ্ঞানী, দার্শনিক ও অর্থনীতিবিদ কার্ল মার্কস মানুষের মধ্যকার বিভেদের মূলভিত্তি হিসেবে অর্থনীতিকে চিহ্নিত করলেন।
মানুষের সব কর্মকাণ্ডের মূল নিহিত তার যৌনচেতনার মধ্যে এবং এ যৌনচেতনার অবস্থান অবচেতনে ফ্রয়েডের এ তত্ত্ব পরবর্তীকালের সাহিত্যে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়। ‘সুররিয়ালিজম’ বা ‘পরাবাস্তববাদী সাহিত্য আন্দোলন’ মানুষের রোমান্টিক সৌন্দর্যচেতনাকে অস্বীকার করল। এ সাহিত্য দেখালো যে, ব্যক্তির অভ্যন্তরে আছে পাশবিকতা ও তার অবদমন, সে অবদমনের মোক্ষণের জন্যই তার সৌন্দর্যসৃষ্টি বা সাহিত্য সৃষ্টি ।
সাহিত্যের দায় ও তাতে সৌন্দর্যের সংশ্লিষ্টতা: বুদ্ধদেব বসুর মতে মানুষ প্রকৃতির সাথে অবিরাম যুদ্ধ করেই গড়ে তোলে তার সভ্যতা। প্রকৃতিও সৌন্দর্য সম্বন্ধে রোমান্টিক ধারণার বিরোধিতা করে এই ফ্রয়েড প্রভাবিত উক্তি। তাহলে প্রশ্ন ওঠে সাহিত্যের করণীয় কি? সাহিত্য শুধু সৌন্দর্য সৃষ্টির জন্যই, নাকি তার অন্য দায়িত্বও আছে? এর উত্তর হিসেবে বলা যায়, সাহিত্যের কাজ উক্ত দুই ক্ষেত্রেই বিরাজমান। শুধুমাত্র বাস্তব চিত্র তুলে ধরাই সাহিত্যের একমাত্র কাজ যেমন হতে পারে না, তেমনি তা বায়বীয় সৌন্দর্যের অর্থহীন প্রলাপও হতে পারে না।
কার্ল মার্কসের সমাজতন্ত্রী মতবাদ সাহিত্যের মাধ্যমে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক শোষণ, মানবিক অবক্ষয় ইত্যাদির প্রতিবাদ করার কথা বলে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, সাহিত্য ঐ কাজগুলো করবে তার নিজস্ব ধর্মকে বাদ দিয়ে বা ক্ষতিগ্রস্ত করে । বরং সাহিত্য এ দুয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করবে। এ সামঞ্জস্যের মধ্য দিয়েই উদ্ভূত হবে সৌন্দর্য বা সুষমা, যা এক কাঠামোগত সৌন্দর্যের ধারণাকে তুলে ধরে ।
সাহিত্য বাস্তবতার কাছে দায়বদ্ধ’ এ কথা বলে তাকে সংবাদপত্রের রিপোর্টের সাথে অভিন্ন করে দেখা হয় না। সাহিত্য ব্যক্তি ও সমাজ এবং তাদের মধ্যকার সম্পর্কের বিচিত্র ও জটিল রূপকে পর্যবেক্ষণ ও প্রকাশ করবে, সে সাথে তার প্রকাশভঙ্গীতে থাকবে কারুকর্ম। এ সবকিছুর বিন্যাসে সৃষ্টি হবে এক সৌন্দর্য যাকে বলা হয় শিল্পসৌন্দর্য। বস্তুত সাহিত্যের সৌন্দর্য বলতে শিল্প সৌন্দর্যেরই একটি বিশেষ ক্ষেত্রকে বোঝায়।
সাহিত্যের কাঠামোগত কারুকর্ম ও সৌন্দর্য: বিষয় ও কাঠামোর যথাযথ মেলবন্ধনেই মহৎ সাহিত্য সৃষ্টি হয়। তবে শিল্প-সাহিত্যের কাঠামো বা ফর্মের একটি বিশেষ মূল্য রয়েছে। বলা হয় পৃথিবীতে বিষয় সীমাবদ্ধ । প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত মানুষের সব চিন্তা-ভাবনা মানুষ, প্রকৃতি আর অজানাকে নিয়েই আবর্তিত। বিষয়গত সম্প্রসারণ বিশাল এ কালপরিধিতে বিশেষ ঘটেনি। তবে পরিবর্তন ঘটেছে প্রকাশভঙ্গীতে। তাতে বিপুল বৈচিত্র্য। কারণ, মানুষ সৃষ্টিশীল প্রাণী হিসেবে একজন অন্যজন থেকে স্বতন্ত্র । এ স্বাতন্ত্র্য যার যার প্রকাশভঙ্গীতে। এ স্বাতন্ত্র্য সাহিত্যেও প্রভাব ফেলে।
এ কারণেই বলা হয় ‘Style is the man’ প্রকাশভঙ্গীই একজন ব্যক্তিকে স্বতন্ত্ররূপে চিনিয়ে দেয়। সাহিত্যে বিভিন্ন কালে বিভিন্ন প্রকাশভঙ্গীর আবির্ভাব ঘটেছে এবং সাহিত্যিকদের মধ্যেও এতে রয়েছে বৈচিত্র্য। আবার সাহিত্যতাত্ত্বিকেরা সাহিত্যের দায় ও সৌন্দর্যের সংজ্ঞা সম্বন্ধে ধারণার ভেদে সাহিত্যের বিভিন্ন আঙ্গিকের প্রস্তাবনা করেছেন।
এ কারণেই সাহিত্যের ইতিহাসে আবির্ভাব ঘটেছে ‘কাঠামোবাদ’ (Formalism), ‘পরাবাস্তববাদ’ (Surrealism), ‘বাস্তববাদ’ (Realism), উত্তর-কাঠামোবাদ” (Post-structuralism), ‘আধুনিকতাবাদ’ (Modernism), উত্তর-আধুনিকতাবাদ (Post- modernism) প্রভৃতি বিভিন্ন মতবাদের আবির্ভাব ঘটেছে। আর একই কারণে সাহিত্যতত্ত্বের পরিপূরক শাস্ত্রের নাম সৌন্দর্যতত্ত্ব বা নন্দনতত্ত্ব (Aesthetics)।

উপসংহার : যে কোনো সৌন্দর্যই হলো এক সামঞ্জস্য ও সম্পূর্ণতার ধারক। সাহিত্য সে অর্থেই সৌন্দর্য চর্চার মাধ্যম। কারণ, সাহিত্য একটি নির্মাণকর্ম, যাতে শৈল্পিক সামঞ্জস্য ও সুষমা অপরিহার্য। একটি আপাত কুৎসিত বস্তু সেই সামঞ্জস্যের গুণেই সৌন্দর্যময় হয়ে ওঠে।
তাই আধুনিক ধারণায়, যে কোনো বস্তুই সাহিত্যের বিষয় হিসেবে গৃহীত হতে পারে। মোটকথা, সাহিত্য ও সৌন্দর্য তাদের বিভিন্ন মাত্রা ও ঐতিহাসিক পরিবর্তনসহ পরস্পরের পরিপূরক। আর মানুষের সৃষ্টিশীলতার স্মারক হিসেবে এবং মানবজীবনকে উন্নত করার জন্য মানব ইতিহাসে এদের গুরুত্ব সীমাহীন।