নগর উন্নয়ন বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা
Table of Contents
নগর উন্নয়ন বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা
প্রতিবেদনের প্রকৃতি : বিশেষ প্রতিবেদন / সংবাদ প্রতিবেদন
প্রতিবেদনের শিরোনাম : একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজন দ্রুত নগর উন্নয়ন
প্রতিবেদনের লক্ষ্য : তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিতকরণ, বিশ্লেষণ, লক্ষ স্থির করা, দিকনির্দেশনা (সুপারিশ) এবং সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের প্রস্তাবনা
প্রতিবেদন তৈরির সময় :…
তারিখ :…
সংযুক্তি : পরিকল্পিত নগরায়ণের গ্রাফ ও সারণি চিত্র ৪টি
একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজন দ্রুত নগর উন্নয়ন
সংবাদটি -আনন্দের যে, বর্তমান শতকের মাঝামাঝি সময়ের আগেই বাংলাদেশ একটি নগরায়িত দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ ঐ সময়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ নগর ও শহরে বসবাস করবে। আর এই নগরসমূহ পরিণত হবে যাবতীয় অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে। এই প্রেক্ষাপটে এখন থেকেই বাংলাদেশের সামগ্রিক নগর উন্নয়নের ধারা নির্দেশনা এবং শহর ও নগরসমূহকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন হবে একটি কার্যকর, স্বচ্ছ, জবাবদিহিতা ও অংশগ্রহণমূলক পরিচালন কাঠামো তৈরি করা। ০১. নগরখাতের প্রধান চ্যালেঞ্জসমূহ বাংলাদেশের নগরায়ণের মৌলিক সমস্যাসমূহ দু স্তরে বিবেচনা করা হয়েছে। প্রথমত, সামগ্রিকভাবে ভারসাম্যহীন নগরায়ণের সমস্যা আর দ্বিতীয়ত, নগরসমূহেরে অভ্যন্তরীণ সমস্যা।
০২. ভারসাম্যহীন নগরায়ণ
বাংলাদেশের নগরায়ণে ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ সুস্পষ্ট। কারণ স্বাধীণ-উত্তর নগরায়ণ ঘটেছে অত্যন্ত দ্রুত হারে। ১৯৭১ সালে দেশের নগর জনসংখ্যা ছিল ৫ মিলিয়ন আর ২০১০ সালে নগর জনসংখ্যা প্রায় ৫০ মিলিয়ন। অর্থাৎ প্রতি ১২ বছরে নগরের জনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুন হয়েছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নগর উন্নয়ন ঘটে নি। বরং পরিকল্পনার অভাবে বা এর দুর্বলতার কারণে অথবা সুচিন্তিতভাবে উন্নয়ন বিনিয়োগ ব্যবস্থা না হওয়ায় দেশে ভারসাম্যহীন নগরায়ণ ঘটছে। ফলশ্রুতিতে আমরা দেখি ঢাকা শহরে মাত্রাতিরিক্ত বিনিয়োগ আর ঢাকার বাইরে মাত্র গুটিকয়েক বড় শহরের নগর উন্নয়ন।

০৩. নগরভিত্তিক সমস্যা
নগর ভিত্তিক সমস্যাসমূহ মেগাসিটি ঢাকা থেকে শুরু করে যেকোনো ছোট শহর পর্যন্ত দৃশ্যমান। প্রতিটি সমস্যার সমাধান প্রচেষ্টাই এক একটি চ্যালেঞ্জ। এসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে :
৩.১. আইনশৃঙ্খলা সমস্যা, এর সাথে সংশ্লিষ্ট হচ্ছে সন্ত্রাস, অপরাধ প্রবণতা ও জনমনে নিরাপত্তার অভাব। এই নিরাপত্তাহীনতা দিন দিন বাড়ছে;
৩.২. পরিবহন ও বিভিন্ন সেবা পরিসেবার অপ্রতুলতা (পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালনি, টেলিফোন ও বর্জ্য অপসারণ), এমনকি সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও বৈষম্য বিরাজমান;
৩.৩. পরিবহন অপর্যাপ্ততা ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে সৃষ্টি হয়েছে পরিবহন ও যানজট সমস্যা, সড়ক দুর্ঘটনা ইত্যাদি।
৩.৪. শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিনোদন সেবার অপ্রতুলতা এবং বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা;
৩.৫. আবাসন সংকট, সংখ্যা এবং গুণগতমান উভয়দিক থেকে বিশেষ করে দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা। মারাত্মক পরিস্থিতির সম্মুখীন। ফলে বড় বড় শহরে বস্তির সৃষ্টি ও ব্যাপক হারে এর বিস্তার।
৩.৬. পরিবেশের বিপন্ন পরিস্থিতি। বাতাস, পানি, শব্দদূষণসহ অন্যান্য দূষণ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। পাশাপাশি উন্মুক্ত স্থান, পার্ক ও উদ্যান, লেক, নদী, জলাশয় ইত্যাদির অবৈধ দখল এবং পাহাড় ও বন-বনানী কর্তন ইত্যাদি কারণে পরিবেশের অবক্ষয়;
৩.৭. প্রায় সকল নগরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দুর্বল এবং রয়েছে ব্যাপক নগরীয় দরিদ্রতা।
৩.৮. প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত সমস্যা ও অগ্নিকাণ্ড। বাংলাদেশের অধিকাংশ শহর হয় বন্যা, নদীভাঙন, না হয় সাইক্লোন ইত্যাদি সমস্যা পীড়িত। কোনো কোনো শহরে ভূমিকম্পের আশংকা দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো শহরে পানিতে আর্সেনিক দূষণের মাত্রা ভয়াবহ নতুন সমস্যা ।
৩.৯. সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের সমস্যা রয়েছে; এবং
৩.১০. বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা, বিশেষ করে নারী ও শিশু নির্যাতন ইত্যাদি রয়েছে।
০৪. সমাস্যা সমাধানে কৌশল ও চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলা
৪.১. নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজন একটি জাতীয় নগরায়ণ নীতিমালা প্রণয়ণ। যার মূল লক্ষ্য হবে নগর-দারিদ্র্য দূরীকরণ ও নগর-দরিদ্রদের জীবন মান উন্নতকরণ।
৪.২. জাতীয় পর্যায়ে নগরায়ণ প্রশাসনের দায়িত্ব থাকবে এমন এক মন্ত্রণালয়ের ওপর যার নামের মধ্যেই ‘নগর’ এবং ‘উন্নয়ন’ কথাটি স্পষ্ট হবে। বর্তমানে নগর প্রশাসন বা নগর উন্নয়ন বিষয়টি কমপক্ষে দুটো মন্ত্রণালয়ের সরাসরি দায়িত্ব (যথা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও গৃহায়ণ ও পূর্ত মন্ত্রণালয়)। দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশসমূহের অনুরূপ ‘নগর উন্নয়ন ও গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়’ ধরনের নামকরণ করে একটি মন্ত্রণালয়কে এ দুটো খাতের প্রশাসনিক দায়দায়িত্ব দেয়া।
৪.৩. রাজধানী ঢাকা বন্দর নগর চট্টগ্রাম অভিমুখী জনস্রোত হ্রাস করার ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। এজন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুযোগসুবিধাসহ প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ নীতি গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে কৌশল হিসেবে থাকবে জেলা শহর, মাঝারি শহর, উপজেলা শহর, এমনকি ছোট শহরেও সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করা। ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা।
৪.৪. দক্ষতার সঙ্গে নগর পরিচালনা করা। নগর পরিচালনা বলতে বুঝায় একটি নগরের সামগ্রিক উন্নয়ন ও বিদ্যমান সমস্যাবলির সমাধানের জন্য সুচিন্তিত ও সুসমন্বিত ব্যবস্থাপনা। নগর পরিচালনের প্রধান দায়িত্ব স্থানীয় পৌর সরকার (পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন) এর উপরে বর্তায়।
বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন ও পৌলসভাসমূহের উন্নয়ন ও কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে যথেষ্ট স্বচ্ছতা নেই। এছাড়াও রয়েছে অনেক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। সম্প্রতি নগর উন্নয়ন ও নগরে সেবার মান উন্নত করার লক্ষে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে উত্তর ও দক্ষিণ দুটো ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পদক্ষেপটি নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী। পরিকল্পিতভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে পারলে নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। সর্বোপরি সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব, নান্দনিকতার অভাব, পরিবহন, আবাসন ও বস্তি পুনর্বাসন, পরিবেশ, অর্থায়ন, দুর্নীতি হ্রাস, প্রাতিষ্ঠানিক সংকট দূর করতে পারলে নগর উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
আরও দেখুন:
- এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন চেয়ে প্রতিবেদন | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা
- স্বরবর্ণের উচ্চারণের নিয়ম বা সূত্র | ভাষা ও শিক্ষা
- নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কে পত্রিকায় প্রকাশের জন্য প্রতিবেদন | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা
- ছাত্র রাজনীতির একাল ও সেকাল সেমিনারে মঞ্চ ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা