শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা বিষয়ে ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা , শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা বিষয়ে একটি ভাষণ তৈরি কর।
শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা বিষয়ে ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা
শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা বিষয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি, মাননীয় প্রধান অতিথি, উপস্থিত সুধীবৃন্দ— [রা. বো. ০১] আসসালামু আলাইকুম। আজ সময়োপযোগী একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। সুষ্ঠুভাবে প্রবহমান কোনো পার্থিব ঘটনাই নিয়মবহির্ভূত নয়। বিশ্বজগতের দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য সবকিছুই একটি বিশেষ সজ্জায় সাজানো, একটি বিশেষ শৃঙ্খলে বাঁধা। এই সজ্জা বা শৃঙ্খলাই নিয়ম। সুধীবৃন্দ, ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলার কোনো বিকল্প নেই। ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলার পূর্বশর্ত হল শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা। এমন একদিন ছিল যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছিল শৃঙ্খলা, ছিল নিয়মকানুন। অথচ আজকের দিনে প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই কম-বেশি উচ্ছৃঙ্খলতা লক্ষ করা যায়। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গড়ে উঠেছে উচ্ছৃঙ্খলতার রাজত্ব। আমরা যেন এ কথা ভুলেই গিয়েছি, একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার জন্যে শৃঙ্খলা জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
জীবনে শৃঙ্খলা না থাকলে এর পরিণতি কত ভয়াবহ হতে পারে এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ- আজকের দিনের ‘সন্ত্রাস’। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের মূল কারণ এই উচ্ছৃঙ্খলতা। সুধী, শিক্ষাঙ্গন একটি পবিত্র স্থান। ছাত্র-ছাত্রী জ্ঞান অর্জনের জন্যে এবং নিজেদের সুপ্ত চেতনা জাগ্রত করে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করার জন্যে শিক্ষাঙ্গনে পদার্পণ করে। কিন্তু বর্তমান সমাজব্যবস্থায় শিক্ষাঙ্গনে বিরাজ করছে উচ্ছৃঙ্খলতা, সন্ত্রাস। শিক্ষাঙ্গন আজ মাসের পর মাস বন্ধ থাকে। নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা হয় না। এতে একদিকে যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে, অন্যদিকে জাতিও মেধাশূন্যতায় ভুগছে।
প্রিয় সুধীসমাজ, এই উচ্ছৃঙ্খলতার জন্যে কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দায়ী? না শিক্ষার্থীরা দায়ী, না প্রশাসন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করারও আগে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা অতীব জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে। এর জন্যে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, প্রশাসন সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ভঙ্গের শাস্তি বিধানে কঠোর আইন ও নিয়ম করতে হবে। অন্যথায় দেশ ও জাতি অন্ধকারে তলিয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। সম্মানিত সুধীবৃন্দ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অন্যতম কারণ হল আমাদের দেশের অসুস্থ রাজনীতি।

তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি বন্ধ করে দিতে হবে এবং বিবেকহীন রাজনৈতিক দলগুলো যাতে রাজনৈতিক উদ্দেশে ছাত্রদের ব্যবহার করতে না পারে তার দিকে লক্ষ রাখতে হবে। শুধু ছাত্ররাজনীতি কেন, খুব লজ্জার বিষয় যে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আজকাল মুষ্টিমেয় কিছু শিক্ষকও তাঁদের আদর্শ উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে রাজনৈতিক দলের লেজুরবৃত্তি করছে। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ও অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। শৃঙ্খলাই জীবন। জীবনে সফলতা অর্জন করার জন্যে এর কোনো বিকল্প নেই। তাই বন্ধুগণ আসুন আজ আমরা প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্যে বদ্ধ পরিকর হই। সমবেত কণ্ঠে আজ উচ্চারণ করি— ‘শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা চাই’ বিদ্যাপীঠে উচ্ছৃঙ্খলতার স্থান নাই।’ ধন্যবাদ সবাইকে।
আরও দেখুন: