সর্বজনীন শিক্ষা সম্পর্কে ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা

সর্বজনীন শিক্ষা সম্পর্কে ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা , সর্বজনীন শিক্ষা সম্পর্কে একটি ভাষণ তৈরি কর।

সর্বজনীন শিক্ষা সম্পর্কে ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা

প্রথমেই ছোট্ট একটি স্লোগান দিয়ে শুরু করছি— ‘চলো সবাই পড়তে যাই, শিক্ষা ছাড়া উপায় নাই। ’-‘উপায় নেই” এ জন্যে যে, আমরা সবাই জানি — শিক্ষাই উন্নতির চাবিকাঠি। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি উন্নতির শিখরে আরোহণ করতে পারে না। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ তারা যদি শিক্ষায় অনগ্রসর থাকে, তাহলে জাতি তার গতি হারিয়ে ফেলবে। তাই বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আবুল ফজল বলেছেন- ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতির শিক্ষিত জনশক্তি তৈরির কারখানা আর রাষ্ট্র ও সমাজদেহের সব চাহিদার সরবরাহ কেন্দ্র। এখানে ত্রুটি ঘটলে জাতীকে দুর্বল আর পঙ্গু না করে ছাড়বে না।

 

সর্বজনীন শিক্ষা সম্পর্কে ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা

 

সুধী, আপনারা অবগত যে, আমাদের দেশে ৫ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত আছে। কিন্তু এ শিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণ না ঘটায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশে প্রায় ৪৯ হাজার সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এতে মাত্র ১ কোটি শিশু শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। এর বাইরেও ৩০-৪০ লক্ষ শিশু প্রাথমিক শিক্ষার আলো থেকে হচ্ছে বঞ্চিত। সুধীবৃন্দ, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজন যে কতটুকু তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে প্রয়োজন বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা।

দেশের সার্বিক উন্নয়ন, গণতন্ত্রকে সুসংহতকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুখী-সমৃদ্ধ জীবনের নিশ্চয়তা বিধান এ শিক্ষা প্রবর্তনের লক্ষ্য। এ শিক্ষা শিশুর দৈহিক, মানসিক, নৈতিক, সামাজিক বিকাশ এবং ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন ঘটায়। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, দেশপ্রেম, ধর্মীয় মূল্যবোধ, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার, শ্রমের মর্যাদা এবং বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্যে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ইতোমধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ফ্রান্স, রাশিয়া, আমেরিকা, ডেনমার্ক প্রভৃতি দেশের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে।

 

সর্বজনীন শিক্ষা সম্পর্কে ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা

 

প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। অতিরিক্ত ৩০-৪০ লক্ষ শিশুকে স্থান দেয়ার মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিদ্যালয় আমাদের দেশে নেই। বিভিন্ন এলাকায় যেসব বিদ্যালয় রয়েছে তাতে অতিরিক্ত কক্ষ সংযোজনের ব্যবস্থা না হলে সবাইকে স্থান দেয়া সম্ভব হবে না। বিদ্যালয়সমূহে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাছাড়া সব শিশুকে পাঠদানের জন্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষকের অভাব বিদ্যমান। পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হলেও যথাসময়ে এবং সকলে পুস্তক পায় না।

তাছাড়া, গতানুগতিক শিক্ষা, দারিদ্র্য, অল্পবয়সি শিশুকে কাজে লাগানোর প্রবণতা, নিরক্ষরতা এবং কুসংস্কার প্রাথমিক শিক্ষার অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। হে বন্ধুগণ, আজ, ঠিক এ মুহূর্তে একবার ভেবে দেখুন, একটু আদরের অভাবে, একটু স্নেহের অভাবে, দু’মুঠো খাদ্যের অভাবে আমাদের অনেক শিশুই অকালে ঝরে যাচ্ছে। সমাজের এহেন চরিত্রের অধিকারী মানুষগুলো কিন্তু শিশুরা নয়, বরং আমরা। আমরাই তাদের নানাভাবে শিশু-অধিকার থেকে বঞ্চিত করছি। তাই আজ তাদের কণ্ঠে যে স্লোগান- ‘সুযোগ চাই, মানুষ হব’- শিশুদের এই সুযোগ করে দেয়ার দায়িত্ব আমার, আপনার, সবার।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ি বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা সফল করতে হলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। শিশুকে বিদ্যালয়ে আসার জন্যে নানাভাবে উৎসাহিত করতে হবে। উপযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা আরো অনেক বেশি নিয়োগ করতে হবে। ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শিক্ষার উপযোগী উপকরণ বিতরণ করতে হবে। শিক্ষাদানে নিয়োজিত কর্মীদেরও আর্থিক নিশ্চয়তা দিতে হবে। সর্বোপরি সরকার, শিক্ষিত ও সচেতন জনগণ সমতালে এগিয়ে এলে এ শিক্ষা সফল হবে। ধন্যবাদ সবাইকে।

আরও দেখুন:

Leave a Comment