কোনো ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা | নির্মিতি | ভাষা ও শিক্ষা

কোনো ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা”র  “নির্মিতি” অংশের একটি পাঠ। প্রাত্যহিক ছক বাঁধা জীবন একঘেয়ে লাগছিল। মনে মনে হাঁফিয়ে উঠছিলাম। তাই এক ছুটির দিনে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম কোনো একটি ঐতিহাসিক স্থানে যাব। সবার এক কথা, একটি মাইক্রো ভাড়া নিয়ে যেতে হবে এবং দিনে দিনে ফিরে আসতে হবে। কোথায় যাব— সেই সিদ্ধান্ত নেবার জন্য এক বিকেলে সবাই একসাথে মিলিত হলাম। প্রায় একঘণ্টা শুধু চিৎকার চেঁচামেচিই হলো। সবশেষে জায়গা ঠিক হলো কুমিল্লা শালবন বিহার। আমাদের ঐতিহাসিক বন্ধু সাহেদের নেতৃত্বে সাত জনের একটি দল তৈরি হলাম। সাহেদকে ঐতিহাসিক বলা কারণ হলো— বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতা ও প্রত্ননিদর্শন সম্পর্কে তার চেয়ে বেশি কেউ জানে না।

কোনো ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

 

কোনো ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

 

এর সবকিছু সে তার বাবার কাছ থেকে জেনেছে। তিনি সরকারের প্রত্নতত্ত্ব-বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এ-ছাড়া সরকারি চাকরির বদৌলতে প্রায় সব জেলাতেই কম-বেশি থাকতে হয়েছে। সে যাক, যথারীতি আমরা সবাই মিলে নির্ধারিত দিনে যাত্রা শুরু করলাম শালবন বিহারের উদ্দেশ্যে। আমরা যখন শালবন বিহারে পৌঁছলাম তখন সকাল দশটা। আকাশে ছিল খণ্ড খণ্ড মেঘ। সূর্য কখনো মেঘের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে, কখনো তীব্র উত্তাপ ছড়াচ্ছে। জায়গাটা প্রথমে দেখতে ভাল লাগছিল না কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যে এখানকার পুরাকীর্তি ও সভ্যতা এবং জাদুঘর সম্পর্কে জানতে পেরে আনন্দে মনটা ভরে উঠল।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এখানে রয়েছে অনেক পুরোনো ঐতিহাসিক নিদর্শন, লালমাই, পাহাড়, শালবন বিহারসহ ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, বার্ডসহ আরো অনেক জানার ও দেখার জিনিস। সাহেদ আমাদের সঙ্গে নিয়ে সব কিছু দেখালো এবং প্রতিটি জিনিসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো। সত্য-মিথ্যা যা-ই হোক আমরা তার কোনো কথার প্রতিত্তোর না করে সুবোধ বালকের মতো শুনে গেলাম। তার গল্প-গাঁথা শুনে আমরা অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠলাম। বিশেষ করে আমার মনে হল আমি হাজার বছর আগে চলে গেছি। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি ধ্যানমগ্ন বৌদ্ধসাধকদের। এককালে এখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা লেখাপড়া ও ধর্মচর্চা করতেন।

সেই পুরোনো আমলের ধ্বংসাবশেষ দেখতে দেখতে গর্ব হল, শতশত বছর আগের ঐতিহ্য আমরা বয়ে চলেছি। এক সময় কত প্রাণচাঞ্চল্যই না ছিল এখানে। বিহারের ১১৫টা প্রকোষ্ঠে সাধনা করতেন বৌদ্ধ সাধকরা। আজ সব কালের সাক্ষী হয়ে পড়ে রয়েছে। মূল বিহারটি চারকোণা, প্রতি পাশে ৫৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের দেয়াল। প্রাচীন দেব রাজবংশের গড়ে তোলা সভ্যতা আজ ছিন্নভিন্ন, ছড়ানো-ছিটানো এক ধ্বংসস্তূপ। রকিবের হাতে ছিল ক্যামেরা। সে ঝটপট অনেকগুলো ছবি তুলে নিল। আমি ও টিংকু একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। বিহারের সাথেই রয়েছে জাদুঘরটি। ধ্বংসস্তূপ থেকে পাওয়া নানা নিদর্শন সাজানো রয়েছে।

 

কোনো ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

 

প্রাচীনকালের হাতিয়ার, তাম্রলিপি, মুদ্রা, অলঙ্কার, ব্রোঞ্জের মূর্তি, পোড়ামাটির চিত্রফলকসহ নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখে অবাক হলাম। শুনলাম, ব্রাহ্মণ্যধর্মের পুনর্জাগরণের ফলেই বৌদ্ধধর্ম রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা হারায়। ফলে এই সভ্যতা জনশূন্য হতে হতে একসময় ধ্বংস হয়ে যায়। সবকিছু দেখতে দেখতে ও জানতে জানতে প্রায় দুপুর গড়িয়ে গেল। সূর্য যখন পশ্চিমে ঢলে পড়লো তখন আমাদের ঘরে ফেরার পালা। আসার পথে আমরা সবাই যে হৈচৈ করেছিলাম, ফেরার পথে তেমন আর হৈচৈ হলো না। কিছুটা ক্লান্তি, কিছুটা এমন আনন্দঘন দিন ফেলে আসার কষ্ট— তাই সবাই একটু চুপচাপ। খুব অল্প সময়েই পথটুকু ফুরিয়ে গেল। ঐতিহাসিক শালবন বিহার ভ্রমণের স্মৃতি রইলো তাজা। শালবন বিহারের সেই জায়গা, নাম না জানা পাহাড় আর অপূর্ব সুন্দর দৃশ্যাবলি পড়ে রইলো পেছনে, স্মৃতিরা সঙ্গী হলো কেবল।

আরও দেখুন:

Leave a Comment