গঠন অনুসারে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ | বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা , গঠনগত দিক দিয়ে বাক্য প্রধানত তিন প্রকার। যেমন : ১. সরল বাক্য ২. জটিল বাক্য ৩. যৌগিক বাক্য । ১. সরল বাক্য (simple sentence ) : যে বাক্যে একটি মাত্র কর্তা বা উদ্দেশ্য এবং একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া বা বিধেয় থাকে তাকে সরল বাক্য বলে।
গঠন অনুসারে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ | বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা
যেমন : ক. নিপা স্কুলে যায়। খ. পাখিরা আকাশে ওড়ে। গ. নিয়মমত পড়লে পরীক্ষায় পাশ করা যায়। ঘ. সে ছাত্র। এখানে ক. ‘লিপা’, খ. ‘পাখিরা’গ. ‘নিয়মমত পড়লে’ এবং ঘ. ‘সে’ যথাক্রমে বাক্য চারটির উদ্দেশ্য এবং ক. ‘যায়’, খ. ‘ওড়ে’ ও গ. ‘পাশ করা যায়’-যথাক্রমে সমাপিকা ক্রিয়া, আর ঘ. ‘ছাত্র’ বিধেয়। লক্ষ কর : সমাপিকা ক্রিয়া থাকলে বাক্যে এক বা একাধিক কর্মপদ (বিশেষ্য) থাকতে পারে। সমাপিকা ক্রিয়াটা অকর্মক ক্রিয়া হলে কোনো কর্মপদ থাকে না, ক্রিয়া-বিশেষণ থাকতে পারে। যেমন : শিশুটা হাসছে। (অকর্মক ক্রিয়া) শিশুটা ধীরে ধীরে হাঁটছে। (ক্রিয়াবিশেষণ + অকর্মক ক্রিয়া) সে ভাত খাচ্ছে। (কর্মপদ + সমাপিকা ক্রিয়া) সে আমাকে একটা ছবি দেখাবে।
(কর্মপদ + কর্মপদ + দ্বিকর্মক ক্রিয়া) একটা সরল বাক্যে এক বা একাধিক অসমাপিকা ক্রিয়া থাকতে পারে। যেমন : এটি আমি তাকে দেখতে চাই।— এখানে ‘দেখতে’ হল অসমাপিকা ক্রিয়া। ‘চাই’ হল সমাপিকা ক্রিয়া। যেহেতু সমাপিকা ক্রিয়া মাত্র একটা, সেহেতু বাক্যটা সরল । ২. জটিল বাক্য (complex sentence ) : যে বাক্যে প্রধান খণ্ডবাক্যের অধীন এক বা একের বেশি অপ্রধান খণ্ডবাক্য থাকে বা একটি প্রধান খণ্ডবাক্যের এক বা একাধিক আশ্রিত বাক্য পরস্পর সাপেক্ষভাবে ব্যবহৃত হয়, তাকে জটিল বাক্য বলে। যেমন : যিনি পরের উপকার করেন, তাঁকে সবাই শ্রদ্ধা করে।
আশ্রিত বাক্য প্রধান খণ্ডবাক্য জটিল বাক্যে- ক. বিশেষ্য স্থানীয়, খ. বিশেষণ স্থানীয়, গ. ক্রিয়াবিশেষণ ও বিশেষণীয় বিশেষণস্থানীয় আশ্রিত বাক্য বসে। ক. বিশেষ্য স্থানীয় ( খণ্ডবাক্য ) আশ্রিতবাক্য : যেমন— সে যে উপস্থিত, তা সবাই দেখেছে। রোদে যে বাইরের আকাশ পুড়ছে, তা আমাদের অজানা নয় । তুমি যা বলেছিলে, সবই খেটে গেছে। এখানে মোটা অক্ষরের বাক্যগুলো প্রধান বাক্যের ‘বিশেষ্যস্থানীয় আশ্রিত বাক্য’। না মা নেই, যিনি সন্ত འ খ. বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত (খণ্ড) বাক্য : যেমন : এমন কোনো মা নেই, যিনি সন্তানকে স্নেহ করেন না। এখানে-‘যিনি সন্তানকে স্নেহ করেন না’ অংশ আশ্রিত (খণ্ড) বাক্যের ‘মা’ বিশেষ্য পদকে বিশেষিত করেছে।
অতএব ‘এমন কোন মা’ অংশটি বিশেষণস্থানীয় আশ্রিত (খণ্ড) বাক্য শ গ. ক্রিয়াবিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত (খণ্ড) বাক্য : যেমন— যতই করিবে দান, তত যাবে বেড়ে যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ। যদিও সে গরিব, তবু সে সৎ। উল্লেখ্য যে, জটিল বাক্যে সাপেক্ষ সর্বনাম ও নিত্যসম্বন্ধীয় অব্যয় যোগে প্রধান খণ্ডবাক্যের সঙ্গে অপ্রধান খণ্ড বাক্যকে যুক্ত করা হয়। সাপেক্ষ সর্বনাম : যে … সে, যা … তা, যিনি … তিনি, যাঁরা তাঁরা ইত্যাদি। নিত্যসম্বন্ধীয় অব্যয় : যখন তখন, যেমন তেমন, বরং … তবু, যেইনা … অমনি, যেহেতু … সেজন্যে । সেহেতু ইত্যাদি। [খণ্ডবাক্য সম্পর্কে নিচে আরও বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে।
জ্ঞাতব্য : জটিলবাক্যকে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মিশ্রবাক্য বলেছেন। জটিল বাক্য বোঝাতে এ কথাটির না করাই ভাল, কারণ মিশ্র আর যৌগিক সাধারণত সমার্থক। তাই মিশ্র বললে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে। ব্যবহার ৩. যৌগিক বাক্য (compound sentence) : পরস্পর নিরপেক্ষ দুই বা ততোধিক সরল বা জটিল বাক্য সংযোজক, সংকোচক, বিয়োজক, ব্যতিরেকাত্মক প্রভৃতি অব্যয় দ্বারা যুক্ত হয়ে যখন একটিমাত্র বাক্য গঠন করে তখন তাকে ‘যৌগিক বাক্য’ বলে।
যেমন : ক. তুমি আস, তবে আমি যাব। (সংযোজক) খ. তুমি ঘুমোবে, না পড়বে? ( বিয়োজক) গ. তারা দুজনে আড়ি পেতে ছিল, নইলে চোর ধরা পড়তো না। (ব্যতিরেকাত্মক) ⇒ স্মরণ রাখতে হবে যৌগিক বাক্যে কমপক্ষে দুটো খণ্ডবাক্য থাকবে । খণ্ডবাক্যগুলো পরস্পর নিরপেক্ষ বা স্বাধীন, একে অপরের উপর নির্ভরশীল নয়। খণ্ডবাক্যগুলো বিভিন্ন অব্যয়যোগে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। কখনও কখনও এগুলো উহাও থাকতে পারে।