অর্ধ স্বরধ্বনি

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যয়নে ধ্বনিতত্ত্ব একটি মৌলিক অধ্যায়। ধ্বনিতত্ত্বের আলোচনায় স্বরধ্বনি, ব্যঞ্জনধ্বনি ছাড়াও একটি বিশেষ শ্রেণি হলো অর্ধ স্বরধ্বনি (Semi-vowel)। এগুলি পূর্ণ স্বরের মতো সম্পূর্ণ উচ্চারিত হয় না, তবে শব্দগঠন ও সিলেবল নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

অর্ধ স্বরধ্বনির সংজ্ঞা

যে স্বরধ্বনি নিজে পূর্ণ সিলেবল গঠন করতে পারে না, কিন্তু অন্য স্বরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সিলেবল গঠনে সহায়তা করে, তাকে অর্ধ স্বরধ্বনি বলা হয়।

  • এরা মূলত অসম্পূর্ণ স্বরধ্বনি, যাদের উচ্চারণ পূর্ণ স্বরের তুলনায় হালকা ও অনির্দিষ্ট।
  • ইংরেজি ভাষার semi-vowel ধারণার সঙ্গেই এর মিল রয়েছে।

 

বাংলা ভাষায় অর্ধ স্বরধ্বনির সংখ্যা

বাংলা ভাষায় মোট চারটি অর্ধ স্বরধ্বনি রয়েছে।

  1. (যেমন: বই)
  2. (যেমন: ঢেউ)
  3. য় [= য/স্বরবর্ণীয় রূপ] (যেমন: যায়)
  4. (যেমন: যাও)

 

উচ্চারণের বৈশিষ্ট্য

  • অর্ধ স্বরধ্বনি পূর্ণ স্বরের মতো স্পষ্ট উচ্চারিত হয় না
  • এরা সাধারণত হলন্ত অবস্থায় ব্যবহৃত হয়।

উদাহরণ বিশ্লেষণ:

  • বই → ‘ব’ পূর্ণ উচ্চারিত, কিন্তু ‘ই’ হলন্ত।
  • ঢেউ → ‘এ’ পূর্ণ উচ্চারিত, কিন্তু ‘উ’ হলন্ত।
  • যায় → ‘আ’ পূর্ণ উচ্চারিত, কিন্তু ‘য়’ হলন্ত।
  • যাও → ‘আ’ পূর্ণ উচ্চারিত, কিন্তু ‘ও’ হলন্ত।

 

স্বরধ্বনির সঙ্গে মিল

অর্ধ স্বরধ্বনি আসলে পূর্ণ স্বরের কাছাকাছি বৈশিষ্ট্য বহন করে।

  • ≈ সম্মুখ, প্রসৃত, উচ্চ স্বর
  • ≈ পশ্চাৎ, বৃত্তাকার, উচ্চ স্বর
  • ≈ সম্মুখ, প্রসৃত, উচ্চ-মধ্য স্বর
  • ≈ পশ্চাৎ, বৃত্তাকার, উচ্চ-মধ্য স্বর

তবে নিম্নমধ্য (অ্যা), নিম্ন (অ, আ) স্বরের কোনো অর্ধ স্বর নেই।

 

অর্ধ স্বরধ্বনির গুরুত্ব

  1. শব্দগঠন: শব্দের ছন্দ ও ধ্বনিগত সৌন্দর্য গঠনে সাহায্য করে।
  2. সিলেবল নির্মাণ: পূর্ণ স্বরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন সিলেবল তৈরি করে।
  3. ভাষার বৈশিষ্ট্য: বাংলা ভাষাকে অন্যান্য ভাষা থেকে আলাদা ও স্বতন্ত্র করে।
  4. স্বরব্যঞ্জনের সেতুবন্ধন: স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনির মাঝে ধ্বনিগত সংযোগ তৈরি করে।

 

সারাংশ

  • বাংলা ভাষায় মোট চারটি অর্ধ স্বরধ্বনি রয়েছে: ই, উ, য়, ও।
  • এরা পূর্ণ স্বরের মতো স্পষ্ট নয়, বরং শব্দের ভেতরে হালকা ধ্বনি হিসেবে যুক্ত থাকে।
  • ধ্বনিতত্ত্বে অর্ধ স্বরধ্বনি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা শব্দগঠন ও ছন্দে অনন্য ভূমিকা পালন করে।

Leave a Comment