হেলাল হাফিজ । বিংশ শতাব্দীর শেষাংশের আধুনিক কবি

হেলাল হাফিজ বাংলাদেশের একজন আধুনিক কবি যিনি স্বল্পপ্রজ হলেও বিংশ শতাব্দীর শেষাংশে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার কবিতা সংকলন যে জলে আগুন জ্বলে ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর ৩৩টিরও বেশি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। ২৬ বছর পর ২০১২ সালে আসে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ কবিতা একাত্তর। তার অন্যতম জনপ্রিয় কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’;- এ কবিতার দুটি পঙ্‌ক্তি ‘‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’’ বাংলাদেশের কবিতামোদী ও সাধারণ পাঠকের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়ে থাকে। তিনি সাংবাদিক ও সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কাজ করেছেন। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। তার জন্ম ৭ অক্টোবর, ১৯৪৮।

কবি হেলাল হাফিজ এর জন্ম জয়ন্তীতে শ্রদ্ধা
কবি হেলাল হাফিজ এর জন্ম জয়ন্তীতে শ্রদ্ধা

জন্ম ও শিক্ষাজীবন:

১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোণায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম খোরশেদ আলী তালুকদার । আর মাতার নাম কোকিলা বেগম। ১৯৬৫ সালে নেত্রকোণা দত্ত হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৭ সালে নেত্রকোণা কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাস করেন। ওই বছরই কবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৭২ সালে তিনি তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক পূর্বদেশে সাংবাদিকতায় যোগদান করেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন দৈনিক পূর্বদেশের সাহিত্য সম্পাদক। ১৯৭৬ সালের শেষ দিকে তিনি দৈনিক দেশ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক পদে যোগদান করেন । সর্বশেষ তিনি দৈনিক যুগান্তরে কর্মরত ছিলেন।

হেলাল হাফিজ । বিংশ শতাব্দীর শেষাংশের আধুনিক কবি
হেলাল হাফিজ । বিংশ শতাব্দীর শেষাংশের আধুনিক কবি

মুক্তিযুদ্ধের সময়:

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের রাতে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান হেলাল হাফিজ। সে রাতে ফজলুল হক হলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় পড়ে সেখানেই থেকে যান। রাতে নিজের হল ইকবাল হলে (বর্তমানে জহুরুল হক) থাকার কথা ছিল। সেখানে থাকলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের শিকার হতেন। ২৭ মার্চ কারফিউ তুলে নেওয়ার পর ইকবাল হলে গিয়ে দেখেন চারদিকে ধ্বংসস্তূপ, লাশ আর লাশ। হলের গেট দিয়ে বেরুতেই কবি নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গে দেখা। তাকে জীবিত দেখে উচ্ছ্বসিত আবেগে বুকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকলেন নির্মলেন্দু গুণ। ক্র্যাকডাউনে হেলাল হাফিজের কী পরিণতি ঘটেছে তা জানবার জন্য সে দিন আজিমপুর থেকে ছুটে এসেছিলেন কবি গুণ। পরে নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জের দিকে আশ্রয়ের জন্য দুজনে বুড়িগঙ্গা পাড়ি দেন।

 

BanglaGOLN.com Logo 252x68 px White হেলাল হাফিজ । বিংশ শতাব্দীর শেষাংশের আধুনিক কবি

 

হেলাল হাফিজের সাহিত্য কর্ম ও পুরস্কার:

১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তার কবিতার বই ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশিত হয়। কবিতার জন্য পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জ বৈশাখী মেলা উদ্‌যাপন কমিটির কবি সংবর্ধনা (১৯৮৫), যশোহর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), নেত্রকোণা সাহিত্য সমাজ, কবি খালেদদাদ চৌধুরী সাহিত্য পদক সম্মাননা,বাসাসপ কাব্যরত্ন – ২০১৯ প্রভৃতি। কবিতায় তিনি ২০১৩ সালের বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

কবিতা:

  • নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়
  • নিরাশ্রয় পাঁচটি আঙুল
  • দুঃসময়ে আমার যৌবন
  • অস্ত্র সমর্পণ
  • অগ্নুৎসব
  • বেদনা বোনের মতো
  • ইচ্ছে ছিলো
  • প্রতিমা
  • অন্যরকম সংসার
  • নিখুঁত স্ট্রাটেজি
  • আমার সকল আয়োজন
  • হিরণবালা
  • দুঃখের আরেক নাম
  • প্রত্যাবর্তন
  • তীর্থ
  • অনির্ণীত নারী
  • অশ্লীল সভ্যতা
  • কবিতার কসম খেলাম
  • পরানের পাখি
  • বাম হাত তোমাকে দিলাম
  • উপসংহার
  • শামুক
  • আমার কী এসে যাবে
  • ইদানীং জীবন যাপন
  • পৃথক পাহাড়
  • অহংকার
  • কোমল কংক্রিট
  • নাম ভূমিকায়
  • সম্প্রদান
  • একটি পতাকা পেলে
  • মানবানল
  • যার যেখানে জায়গা
  • কবি ও কবিতা
  • ফেরিঅলা
  • উৎসর্গ
  • যেভাবে সে এলো
  • রাডার
  • যাতায়াত
  • যুগল জীবনী
  • লাবণ্যের লতা
  • তোমাকেই চাই
  • ভূমিহীন কৃষকের গান
  • কবুতর
  • নেত্রকোণা
  • তুমি ডাক দিলে
  • হিজলতলীর সুখ
  • রাখাল
  • ব্যবধান
  • কে
  • অমীমাংসিত
  • সন্ধি
  • ক্যাকটাস
  • তৃষ্ণা
  • হৃদয়ের ঋণ
  • প্রস্থান
  • ঘরোয়া
  • রাজনীতি
  • ডাকাত
  • ফেরিওয়ালা

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

কাব্যগ্রন্থ:

  • যে জলে আগুন জ্বলে (১৯৮৬)
  • কবিতা ৭১ (বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায়, একুশে বইমেলা ২০১২)
  • বেদনাকে বলেছি কেঁদোনা (২০১৯)

আরও দেখুন:

Leave a Comment