বিরচন, ভাব সম্প্রসারণ সূচি : খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ তাদের মনের ভাব ইঙ্গিতময়তা ব্যঞ্জনাময় সুন্দরভাবে প্রকাশ করে অর্থবহ বক্তব্যকে সহজে সঠিকভাবে বুঝার জন্য বিস্তৃত বর্ণনা দেয়াকেই ভাব-সম্প্রসারণ করা বলে।
Table of Contents
ভাব সম্প্রসারণ সূচি [বিরচন]
ভাব-সম্প্রসারণ করার নিয়ম :
- একটি বাক্য বা অনুচ্ছেদে দেয়া অংশের মূলভাব তাৎপর্য দেয়া।
- দেয়া অংশের দৃষ্টান্ত, উপমা, রূপক ইত্যাদিকে সার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলে বক্তব্য স্পষ্ট করা। গূঢ় লক্ষ্যার্থে বা মুলভাবকে বিশ্লেষন করে বুঝিয়ে দেয়া।
- মূলভাবকে সহজে বুঝানোর জন্য সম্ভবক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ দেয়া।
- সর্বশেষে একটি বাক্যে আমাদের লক্ষনীয় বা করণীয় দিকের ইংগিত দেয়া।
ভাব সম্প্রসারণ করার সময় যা করণীয় :
- প্রতিটি বক্তব্যের জন্য আলাদা অনুচ্ছেদ করা।
- নিজের ভাষায় লেখা।
- আয়তনের থেকে সারাংশের মত ক্ষুদ্র প্রবন্ধের মত দীর্ঘ না করা।
ভাব-সম্প্রসারণ করার সময় যা করণীয় নয়:
- কবি প্রার্থনা করেছেন বা বলছেন বা আমরা বুঝতে পারি ইত্যাদি ধরনের কথা দেয়া।
- মূল ভাবের সহায়ক নয় এ রকম অবান্তর ও অপ্রাসঙ্গীক ভাব বা দৃষ্টান্ত দেয়া।
- একই কথা বা ভাবের পুনরাবৃত্তি করা।
- প্রবন্ধের মত দীর্ঘ বা ভাবার্থের মত ক্ষুদ্র আয়তনের মধ্যে লেখা।
- শব্দ চয়নে বাক্য গঠনের অযথা পাণ্ডিত্যের পরিচয় দেয়।
জীবে দয়া করে যেই জন, সেইজন সেবিছে ইশ্বর।
মূলভাব : স্রষ্টার সন্তুষ্টি বিধানের একমাত্র পথ হচ্ছে তাঁর জীবকে ভালবাসা।
সম্প্রসারিত ভাব:
সৃষ্টির সেবার দিয়ে স্রষ্টার সেবা হয়। কেননা স্রষ্টা নিজেকে তার সৃষ্টির নিয়ে প্রকাশ করেছেন। স্রষ্টাকে পেতে হলে সেবা করতে হবে, সৃষ্টিকে ভালবাসতে হবে। স্রষ্টা কখনও কাছে সেবা লাভ জন্য আগমন করেন না, কিন্তু সৃষ্ট পৃথিবীর অসংখ্য দীন-দরিদ্র মানুষ ঐশ্বর্যশালী মানুষের প্রত্যাশা করে। এসব মানুষের প্রতি ধনীরা দয়া-দাক্ষিণ্য প্রদর্শন করুক-এটাই স্রষ্টার প্রত্যাশা। তাই দরিদ্রের সহানুভূতি দেখালে এবং তাদের সাহায্য করলে স্রষ্টার সন্তুষ্টি লাভ যায়। পৃথিবীতে দুস্থ, অসহায় নিরন্ন মানুষের অনেক। এদের প্রতি সহানুভূতির হাত প্রসারিত করলে এদের দুঃখের সীমা থাকবে না। নিষ্ঠুরতা দয়াহীনতা পথ নয়। আর্তমানবকে নয়, পশু-পাখির মত অসহায় প্রাণীকেও ভালবাসতে হবে। আর এতেই সন্তুষ্ট
মন্তব্য: সৃষ্টির দিয়েই স্রষ্টার প্রকাশ। তাই সৃষ্ট জীবকে সেবা করলে প্রকারান্তরে স্রষ্টাকেই সেবা করা।
যত বড় হোক ইন্দ্ৰধনু সে সুদূর আকাশে আঁকা, আমি ভালবাসি মোর ধরণীর প্রজাপতিটির পাখা।
ভাব-সম্প্রসারণ : ভাব-সম্প্রসারণ ও সুদূরের অতুলনীয় সৌন্দর্যের চেয়ে জীবনের খুব কাছাকাছি সহজ উপভোগ্য সাধারণ সৌন্দর্যের মূল্য যে বেশি তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। কাছের জিনিসকে যত আপন বলে গ্রহণ করা যায়, সুদূরের বস্তুকে সেভাবে কাছে টানা যায় না।
দূরের আকাশে অপূর্ব বর্ণের বিচিত্র ছটায় রংধনু দেখা দেয়। তার সৌন্দর্য মানুষের দৃষ্টিকে আকর্ষণ করে। স্বাভাবিতভাবে এই সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের মন আকৃষ্ট হয়। কিন্তু এই আকর্ষণ পরিপূর্ণ উপভোগ্য বলে বিবেচিত হয় না। কারণ তা অনেক দূরের বস্তু। দূরের আকাশে ইন্দ্রধনুর অবস্থান। তাকে কোনভাবেই কাছে আপন করে পাওয়া যায় না। অপরদিকে ছোট প্রজাপতি তার বিচিত্র রঙের পাখা নিয়ে মানুষের খুব কাছে উড়ে বেড়ায়। মানুষ কাছ থেকে তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।
প্রজাপতি আকারে ছোট হলেও তার আছে রূপবৈচিত্র্য। কাছে থেকে দেখলে তাকে অপরূপ বলে মনে হয়। আর কাছে কার জন্য তা সহজে উপভোগ্য হয়ে ওঠে। দূরের রংধনুর সৌন্দর্যের চেয়ে প্রজাপতির মত ছোট প্রাণীর সৌন্দর্য বেশি আকর্ষণীয় বিবেচিত হয়। তাই মানুষ দূরের রংধনুর চেয়ে কাছের প্রজাপতিকে বেশি ভালবাসে। বস্তুত, দূরের মধুর স্বপ্নের চেয়ে কাছের তুচ্ছ বাস্তব অনেক বেশি আকর্ষণীয়।
ভোগে নয়, ত্যাগেই মনুষ্যত্বের বিকাশ।
ভাব-সম্প্রসারণ : মনুষ্যত্বই মানুষের পরিচায়ক। আর ত্যাগের মহিমাই পারে মানুষের এ মনুষ্যত্বের উৎকর্ষ ও বিকাশ ঘটাতে।
জগৎ সংসারে ভোগ ও ত্যাগ দুটি বিপরীতমুখী দিক। ভোগ ও ত্যাগের দরজা সবার জন্যই উন্মুক্ত। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব বলার কারণ হচ্ছে তার মনুষ্যত্ব। মনুষ্যত্বের কল্যাণেই মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা এবং শ্রেষ্ঠ মানুষ জন্মগতভাবেই মনুষ্যত্ব লাভ করে। তবে মানুষকে তার দ্বীয় চেষ্টায় এ মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে হ মুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানোর মধ্যেই মানব জীবনের সার্থকতা নিহিত। ভোগের মাধ্যমে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে না। ভোগ মানুষকে জড়িয়ে ফেলে পঙ্কিলতা, গ্লানি ও কালিমার সাথে।
এটি শারীরিক বৃদ্ধি ঘটাতে পারে কিন্তু মানসিক উৎকর্ষ তথা মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে পারে না। পক্ষান্তরে, ত্যাগের দ্বারাই মনুষ্যত্ব বিকশিত ও উৎকর্ষিত । ত্যাগ মানুষকে নিয়ে যায় মনুষ্যত্বের স্বর্ণ শিখরে। যারা ভোগের মধ্যে নিজেদের ব্যস্ত রাখে পৃথিবীতে তাদের কোন সম্মান নেই। কিন্তু যারা ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর মানুষ তাঁদেরকে মৃত্যুর পরেও ভুলে না। অর্থাৎ তারা অমরত্ব লাভ করেন। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মদ (স)-এর চরিত্র ত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ত্যাগের মাধ্যমেই তাঁর পূর্ণ মনুষ্যত্ব তথা মানবিক গুণাবলি ফুটে উঠেছে।
মন্তব্য : ত্যাগের মধ্যেই মানব জীবনের সার্থকতা। তাই ত্যাগই হওয়া উচিত মানুষের প্রধান আদর্শ।
পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি।
মূলভাব : পরিশ্রম ব্যতীত কোন জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না।
সম্প্রসারিত ভাব : প্রসূতি যেমন গর্ভে সন্তান ধারণ করে তাকে প্রসব করেন এবং তাকে মায়ের গভীর স্নেহ দিয়ে মানুষ করে তোলেন, তেমনি পরিশ্রমও প্রসূতির মতই সৌভাগ্য লাভের জন্যে তৈরি করে চারণভূমি। কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য, অধ্যবসায় ও নিষ্ঠা সাফল্যের দ্বার উন্মোচন করে। বলতে গেলে পরিশ্রম ও সৌভাগ্যের সম্পর্ক একজন মা ও তার সন্তানের সম্পর্কের সাথে তুলনা করা চলে। মাঝে যেমন- কঠোর কষ্ট সাধনের মধ্য দিয়ে সন্তান লাভ করতে হয়, তেমনি মানুষের জীবনে সৌভাগ্যও হঠাৎ করেই এসে তার ডালি নিয়ে বরণ করে না। পরিশ্রমের দ্বারা তিল তিল করে মানুষ তার সাফল্যের পথে এগিয়ে যায়।
তাই জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়ার জন্য মানুষকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে তার কর্ম-সমুদ্রে। কারণ একমাত্র কঠোর পরিশ্রমের দ্বারাই তার পক্ষে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। কবি বলেছেন, ‘কেন পান্থ ক্ষান্ত হও হেরি দীর্ঘপথ। উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ। উদাম এবং পরিশ্রম ছাড়া জীবনের মনোবাঞ্ছা কখনও পূর্ণ হয় না। একমাত্র কঠোর পরিশ্রমের দ্বারাই মানুষ সৌভাগ্যের দোরগোড়ায় উপনীত হতে পারে।
মন্তব্য : মানুষের যাবতীয় সৌভাগ্যের মূলে রয়েছে তার পারিশ্রম। পরিশ্রমী ব্যক্তি যথার্থই ভাগ্যবান।
কীর্তিমানের মৃত্যু নাই। অথবা মানুষ বাঁচে তাহার কর্মের মধ্যে বয়সের মধ্যে নহে।
মূলভাব : কেবল দীর্ঘ জীবনের মধ্যেই মানুষ অমরত্ব লাভ করতে পারে না, বরং মহৎ কার্যাবলির জন্যেই সে জগতে চির অমর হয়।
সম্প্রসারিত ভাব: একমাত্র কর্ম সাধনার গুণেই মানুষ তার আপন শ্রেষ্ঠত্ব অন্যের নিকট তুলে ধরতে পারে। বয়সে প্রবীণ হলেই মর্যাদা বাড়ে না, সমাজের মহৎ কাজগুলো সম্পাদন করতে পারলেই শুধু মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় ।
মানব জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষী বিভিন্ন মত পোষণ করেন। তাঁদের কারোর মতে, মানব জীবন পরন সম্পদ, কারোর মতে, অসার ও অস্থির। তবে যিনি যাই বলুন, জীবনের মূল্য নিরূপিত হয় কর্মের দ্বারাই। কবি বলেছেন, “সেই ধন্য নৱতুলে গোকে যারে নাহি ভোলে, মনের মন্দিরে সদা সেবে সর্বজন।” তবে অত্যাচারী দুরাচারের নামও লোকে ভোলে না। প্রচণ্ড ঘৃণা ও প্রথর নিন্দার সঙ্গেই এজিল; মারোয়ান, হিটলার, মুসোলিনী, মীর জাফর, ইসলিং-এর নাম আজও লোকে স্মরণ করে। কাজেই দীর্ঘায় বৃদ্ধের জীবন বিস্ময়কর ইতিহাসের জীবন্ত দলিল হলেও কর্ম সাফল্য বা কীর্তিই তার অমরতার মাপকাঠি।
কীতিহীন বাৰ্ধকা দুর্বহ বোঝা, ঘুণিত লোকের দীর্ঘায়ু অভিশাপ ভিন্ন কিছুই নয়। অথচ, একজন মহাপুরুষ স্বল্পায়ু হয়েও যে সব মহৎ কার্য সমাধান করে যান তা সাধারণ লোক শতবর্ষ আয়ু লাভ করেও সমাধা করতে অক্ষম। তাই দেখি, আয়ুর পরিসর নয় বরং মানব জীবনের প্রকৃতিই মানুষকে মহান ও গৌরবময় করে রাখে। বিশ্ব মানবের মুক্তি কামনায় অক্লান্ত জীবন সাধনা একেকজন মনীষীকে দান করেছে মহিমানীপ্ত অমরতা। এ জগতে কীর্তিমানের মৃত্যু নেই, কাজেই মানুষের মত বাঁচা এবং গভীর ও বিরাট মহিমার সঙ্গে জীবন ধারণ করার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা লুকিয়ে আছে।
মন্তব্য: মহৎ কর্ম মানুষকে অমর করে রাখে। সুতরাং আমাদের এমন কিছু কাজ করা প্রয়োজন যাতে মানুষ আমাদের স্মরণ করে।
শিক্ষাই জাতির উন্নতির পূর্বশর্ত।
মূলভাব : মানবদেহে মেরুদণ্ড যেমন অপরিহার্য তেমনি জাতির জীবনে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাও অপরিসীম।
সম্প্রসারিত ভাব : মেরুদণ্ডী প্রাণীর মেরুদণ্ডই সবচেয়ে বড় শক্তি। মেরুদণ্ডের ওপরেই তারা দাঁড়িয়ে থাকে এবং চলাচল নির্ভর করে। মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেলে তার আর কোন চলৎ শক্তি থাকে না; ধীরে ধীরে প্রাণ শক্তিও নিঃশেষ হয়ে যায়। শিক্ষা-শক্তিকে জাতীয় জীবনের মেরুদণ্ডের সাথে তুলনা করা যায়। মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেলে সে প্রাণীর যেমন কোন প্রকার শক্তিই থাকে না, তেমনি শিক্ষাহীন জাতির উন্নতির কোন উপায়ই থাকে না। বরং নানা দিক থেকে অন্ধ কুসংস্কার জীবনের সমস্ত দিককে অক্টোপাসের মত বেষ্টন করে নেয়। শিক্ষা ছাড়া জাতির কোন চলৎ শক্তিই থাকে না।
কোন ব্যক্তি যদি ধর্ম বিশ্বাসী হয় কিন্তু তার যদি শিক্ষা না থাকে, তাহলে সে ধর্মের অনুশাসনের নামে অন্ধ সংস্কারে আবদ্ধ হয়ে পড়বে। তাছাড়া সাধারণ সংসার জীবনের নিত্যকর্ম সম্পাদনের জন্যেও শিক্ষার প্রয়োজন। মাঠে ফসল ফলাতে হলেও শিক্ষা আবশ্যক। কলকারখানায় উৎপাদন বাড়াতে হলে, জাতিকে সুস্থ রাখতে হলে কারিগরিবিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যা জানা দরকার। এছাড়াও মানুষের সঙ্গে মানুষের সুন্দর সম্পর্ক রক্ষা করার জন্যে, পরস্পরের মধ্যে প্রীতির সম্পর্ক সৃষ্টির জন্যে, আচরণগত যে উৎকর্ষতার প্রয়োজন তার জন্যেও শিক্ষা অপরিহার্য। এ সম্পর্ক কেবল নিকট ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক নয় বহির্বিশ্বের সঙ্গে
স্বদেশের সম্পর্কও এমনি বন্ধু সুলভ রাখতে হলে শিক্ষার প্রয়োজন। শিক্ষার আলো ছাড়া কোন জাতি আধুনিক বিশ্বকে যেমনি জানতে পারে না, তেমনি প্রগতিশীল জীবন ভাবনায় বিশ্বাসও করতে পারে না। মীর্ণ সংস্কারগুলো তার জীবনের চতুর্দিক অন্ধকার করে রাখে। শিক্ষার এ বিপুল শক্তির কথা স্মরণ করেই শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ডের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
মন্তব্য : কোন জাতি উন্নত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন শিক্ষার।
অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।
মূলভাব : অন্যায়কারী ও অন্যায় সহাকারী উভয়েই সমান অপরাধে অপরাধী।
সম্প্রসারিত ভাব : ন্যায়-নীতির বিধান যারা লঙ্ঘন করে সমাজে নিঃসন্দেহে ভাতা ঘুণার পাত্র। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আইন তাদেরকে অপরাধী বলে গণ্য করে। কিন্তু যারা শুভবুদ্ধির মানুষ, তারা অন্যায় হতে সর্বদাই দূরে থাকে, অন্যান্যকারীর সান্নিধ্য তারা সবসময় এড়িয়ে চলে। কিন্তু এটুকুতেই আমাদের কর্তব্য শেষ হয়েছে বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। শুধু ব্যক্তিগতভাবে অন্যায় থেকে বিরত থাকলেই যথেষ্ট নয়, অপরের দ্রুত অন্যাকে প্রতিরোধ দোও আমাদের কর্তব্য।
কারণ অন্যায়কে প্রতিহত না করে ভাল মানুষের মত নীরবে সহ্য করে গেলে তা কখনও হত ফল বয়ে। আনতে পারে না। কেননা উপযুক্ত প্রতিবোধের অভাবে অন্যায়কারীর স্পর্ধা বেড়ে যায় এবং সমাজের বুকে সমূহ অকল্যান ঘনিয়ে আসে। আর এই অকল্যাণের দায়িত্ব অন্যায় সহাকারী কখনও অঙ্গীকার করতে পারে না। কেননা রা অন্যায়কারীদের প্রতিরোধ না করে তাদের দুঃসাহসী করে তুলেছে।
অন্যায়কে দমন না করার অর্থই হচ্ছে তাকে প্রশ্রয় দেওয়া। তাই অন্যায়কারীর মধ্যে যেমন হীনতা আছে, বিনাবাকো অন্যায় সহ্য করার মাঝেও তদ্রূপ হানতা বিদ্যমান। অতএব, অন্যায়কারী এবং অন্যায় সহাকারী উভয়েই নিন্দার পাত্র এবং সৃষ্টিকর্তাও উভয়ের প্রতি সমানভাবে তাঁর মৃণা বর্ষণ করেন।
মন্তব্য: অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা আমাদের সকলের কর্তব্য।
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।
মূলভাব : যে কোন জাতির জীবনে স্বাধীনতা সূর্যকে ছিনিয়ে আনা কষ্টকর এবং তার চেয়েও কষ্টকর ঐ স্বাধীনতা রক্ষা করা।
সম্প্রসারিত ভাব : স্বাধীনতা প্রতিটি জাতিরই কাম্য। স্বাধীনতাহীনতায় কেউ বাঁচতে চায় না। দাসত্বের শৃঙ্খল কেউ পায়ে পরতে চায় না। কিন্তু শক্তিমানেরা স্বেচ্ছাচারিতায় জাতির কাঁধে চাপিয়ে দেয় পরাধীনতার গ্লানি। যুগে যুগে, দেশে দেশে দেশী-বিদেশীরা শক্তির দাপটে পরদেশকে পদানত করেছে। শাসনে-শোষণে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পরাধীন জাতি দাসত্বের শৃঙ্খল ছেঁড়ার জন্য সংগ্রাম করেছে এবং এক সময় স্বাধীনতা অর্জন করে আপন দেশ ও জাতির মুক্তি সাধন করেছে। তাই বলা যায়, স্বাধীনতা অর্জন সহজ ব্যাপার নয়।
অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অনেক রক্তের বিনিময়েই তা অর্জিত হয়। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে তা রক্ষা করা আরও কঠিন। কারণ একটি জাতির জীবনে স্বাধীনতা অমূলা ধনস্বরূপ। শুধু অস্ত্র শক্তির বলে তা রক্ষা করা যায় না। তাকে রক্ষা করতে হলে জ্ঞান, বুদ্ধি ও জাতীয় ঐক্যের বিশেষ প্রয়োজন। প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্বের। অন্যথায় দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়, অর্থনৈতিক মুক্তি আসে না এবং জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধি সাধিত হয় না। কাজেই স্বাধীনতা শুধু অর্জন করলেই চলবে না। তা টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন সৎ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের।
মন্তব্য: স্বাধীনতা রক্ষা করা স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে কঠিন দুরূহ বিধায় সকলেরই উচিত স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করা।
দুর্জন বিশ্বান হলেও পরিত্যাজ্য।
মূলভাব : বিধান ব্যক্তি সর্বত্র সম্মানিত। কিন্তু দুর্জন বা খারাপ প্রকৃতির লোক বিশ্বান হলেও সে সমাজের দুশমন, সকলেই তাকে ঘৃণা করে।
সম্প্রসারিত ভাব : বিদ্যা অমূল্য ধন, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু চরিত্র তদপেক্ষাও মূল্যবান। চরিত্রহান লোক যত বড় বিধানই হোক না কেন সে কখনোই লোক সমাজের প্রশংসা পায় না। সমাজের সবাই তাকে ঘৃণার চোখে দেখে, তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। বিষধর সাপের মাথায় মহামূল্যবান মণি থাকলেও যেমন বুদ্ধিমান লোকেরা জীবন নাশের সম্ভাবনা থাকে বলে সাপের সাহচর্য লাভ করতে চায় না, তেমনি চরিত্রহীন লোক মহাবিধান হলেও তার সাহচর্য কেউ পছন্দ করে না; কারণ তার সাহচর্য কখনও মঙ্গলজনক হতে পারে না।
দুজনের সাহচর্যে মানুষের চরিত্র নষ্ট হয়। কথায় আছে সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। আর একবার কারও চরিত্র নষ্ট হলে তার পুনরুদ্ধার একান্তই কঠিন হয়ে পড়ে। চরিত্র নষ্ট হলে মানুষ আর মানুষ থাকে না- সে তখন পড়তে পরিণত হয়। চরিত্রহীন ব্যক্তি মানব জাতির শত্রু। তার বি বুদ্ধি, ধন দৌলত যাই থাকুক না কেন, তার দ্বারা মানব সমাজের কোন কল্যাণ হয় না এবং সে তার অনুচরদের সর্বনাশের দিকে ঠেলে দেয়। অতএব, চরিত্রহীন ব্যক্তি যত বিধানই হোক না কেন তার সঙ্গ ত্যাগ করা প্রতিটি লোকের একান্ত কর্তব্য।
মন্তব্য: দুর্জন বিজ্ঞান বিষধর সম্পর্তুলা | তার সংস্পর্শ সর্ব অবস্থায় পরিত্যাজ্য।
বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।
মূলভাব : সৌন্দর্য সর্বত্র বিকশিত হয় না। প্রাকৃতিক নিয়মে যার যেথা স্থান সেখানেই তার সৌন্দর্য।
সম্প্রসারিত ভাব : বন্য প্রাণীর প্রকৃত আবাস বনে। সেখানে তার স্বাধীন বিচরণ, তার স্বভাবের স্ফূর্তত প্রকাশ পায়। সে-আনণান্ত পরিবেশে হিংস্রত তার গৌরব, তার সৌন্দর্য। ঠিক তেমনি মাতৃক্রোড়ে শিশুর সৌন্দর্য ফুটে ওঠে তার অসহায় জীবন কেবল অন্যের সেবা ও অশ্রুমায় বিকাশ লাভ করে। বন্য পশু যেমন লোকালয়ে বাসের জন্য বেমানান, তেমনি শিশুরা মাতৃক্রোড় ছেড়ে স্বনির্ভর সংসারে সে অযোগ্য।
আমাদের সামাজিক জীবনে যেমনি বিচিত্র সমাজ ব্যবস্থা আছে, তেমনি আছে বিচিত্র স্বভাবের মানুষ। মানুষের এ স্বভাবও এক সমাজ থেকে অন্য সমাজে বেমানান। শহরের এক মানুষের আচরণ গ্রাম্য জীবনে গ্রামের মানুষের কাছে দারুণ সমালোচনার বিষয়। মেয়েদের চলাফেরা থেকে শুরু করে তাদের কথাবার্তা সমস্ত তাদের কাছে অর্দ্রতা। তেমনি গ্রামের একজন মানুষ শহর জীবনে সম্পূর্ণ বেমানান। তার কথাবার্তা, তার চলাফেরা, তার সমস্ত স্বাভাবিক আচরণ শহরের মানুষের কাছে অমার্জিত, অশালীন। অথচ ওই আচরণেই তার নিজের পরিবেশে সে একজন সুন্দর সামাজিক মানুষ ছিল।
রবীন্দ্রনাথের ফটিক এর যথার্থ উদাহরণ। ফটিক গ্রামে ছিল ছেলেদের নেতা। তার দক্ষতা, তার যোগ্যতা তাকে নেতার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিল। কিন্তু সেই ফটিক কলকাতায় এসে তার মামাত ভাইদের সাথে মেশার অযোগ্য হয়ে দাড়ালো। ধীরে ধীরে। সেখানকার লাঞ্ছনা ও ধিক্কারে সে অতিষ্ঠ হয়ে প্রাণ নিয়ে প্রত্যাগমন করলো এবং শেষ পর্যন্ত নিয়মে সে যেখানে সুন্দর তাকে সেখানেই থাকতে দেয়া উচিত।
মন্তব্য : প্রতিটি সৌন্দর্যেরই একটা নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে। সেই নির্দিষ্ট স্থানেই সে যথার্থ বিকাশ লাভ করে, অন্যত্র নয়।
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড।
মূলভাব : মানবদেহে মেরুলও যেমন অপরিহার্য তেমনি জাতির জীবনে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাও অপরিসীম।
সম্প্রসারিত ভাব : মেরুদণ্ডী প্রাণীর মেরুদণ্ডই সবচেয়ে বড় শক্তি। মেরুদণ্ডের ওপরেই তারা দাঁড়িয়ে থাকে এবং চলাচল করে। মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেলে তার আর কোন চলৎ শক্তি থাকে না। ধীরে ধীরে প্রাণ শক্তিও নিঃশেষ হয়ে যায়। শিক্ষা-শক্তিকে জাতীয় জীবনের মেরুদণ্ডের সাথে তুলনা করা যায়। মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেলে সে প্রাণীর যেমন কোন প্রকার শক্তিই থাকে না, তেমনি শিক্ষাহীন জাতির উন্নতির কোন উপায়ই থাকে না। বরং নানা দিক থেকে অন্ধ কুসংস্কার জীবনের সমস্ত দিককে অক্টোপাসের মত বেষ্টন করে নেয়।
শিক্ষা ছাড়া জাতির কোন চলৎ শক্তিই থাকে না। কোন ব্যক্তি যদি ধর্ম বিশ্বাসী হয় কিন্তু তার যদি শিক্ষা না থাকে, তাহলে সে ধর্মের অনুশাসনের নামে অন্ধ সংস্কারে আবদ্ধ হয়ে পড়বে। তাছাড়া সাধারণ সংসার জীবনের নিত্যকর্ম সম্পাদনের জন্যেও শিক্ষার প্রয়োজন। মাঠে ফসল ফলাতে হলেও শিক্ষা আবশ্যক। কল কারখানায় উৎপাদন বাড়াতে হলে, জাতিকে সুস্থ রাখতে হলে কারিগরিবিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যা জানা দরকার। এছাড়াও মানুষের সঙ্গে মানুষের সুন্দর সম্পর্ক করার জন্যে, পরস্পরের মধ্যে প্রীতির সম্পর্ক সৃষ্টির জন্যে, আচরণগত যে উৎকর্ষতার প্রয়োজন তার জন্যেও শিক্ষা অপরিহার্য।
এ সম্পর্ক কেবল নিকট ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক নয় বহির্বিশ্বের সঙ্গে স্বদেশের সম্পর্কও এমনি বন্ধু সুলত রাখতে হলে শিক্ষার প্রয়োজন। শিক্ষার আলো ছাড়া কোন জাতি আধুনিক বিশ্বকে যেমনি জানতে পারে না। তেমনি প্রগতিশীল জীবন ভাবনায় বিশ্বাস ও করতে পারে না। জীর্ণ সংস্কারগুলো তার জীবনের চতুর্দিক অন্ধকার করে রাখে। শিক্ষার এ বিপুল শক্তির কথা স্মরণ করেই শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ডের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
মন্তব্য : কোন জাতি উন্নত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন শিক্ষার।

চকচক করলেই সোনা হয় না।
মূলভাব : বাইরের চাকচিকাকে দেখে কোন কিছুকে খাঁটি জিনিস ভেবে নেওয়ার কোন মানে নেই।
সম্প্রসারিত ভাব : আসল আর নকলে এই পৃথিবী পরিপূর্ণ। তাই আসল নকল চেনা বড় দায়। আসলে সর্বদাই গুণগত এবং মানগত মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকে। অনেক সময় আসল জিনিসের চাকচিক্য থাকে না। অন্যদিকে নকল জিনিসের কোন গুণগত মান থাকে না, ভেতরে থাকে ফাঁপা। এই অসারতা ঢাকার জন্য নকল জিনিস সবসময় বাইরে একটা ছদ্মবেশে আবরণ জড়িয়ে যাবে।
স্বর্ণ মহামূল্যবান সম্পদ। এর নিরেটত্ব অনেক। তাই স্বর্ণের মহিমা প্রকাশ করার কোন দরকার হয় না। কিন্তু তামা, পিতল স্বর্ণের মত মূল্যবান নয়। অথচ ঘসে মেজে নিলে এদের স্বর্ণের মতই মূল্যবান দেখায়। আমাদের সমাজেও সোনার মত খাঁটি মানুষেরা তাঁদের মহিমা প্রচার করার জন্য আগ্রহ দেখায় না। কিন্তু নকল মানুষেরা ছদ্মবেশ ধারণ করে, মুখোশ পরে নিজের অসারতা ঢেকে রাখতে চায়। বাইরে দেখায় তাদের চাকচিক্যময় আড়ম্বরপূর্ণ চেহারা। বস্তুত বাইরের চাকচিক্য দেখে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। ভিতরের আসল পরিচয় কি তা জানতে হবে। অন্যথায় আসল নকলের ফাঁদে পড়ে যাবার সম্ভাবনা।
মন্তব্য: ধূর্ত লোকদের চাকচিক্যে বিভ্রান্ত হলে অবশ্যই ঠকতে হবে। সুতরাং চচক করলেই তা ভাল বলে মনে করা বুদ্ধিমানের পরিচয় নয়।
দশের লাঠি একের বোঝা।
মূলভাব : একতাই শক্তি, একতাই বল
সম্প্রসারিত ভাব : কোন কাজ একার পক্ষে জটিল এবং সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে। তখনও তার কাছে সে কাজটি পর্বত প্রমাণ বোঝা হয়ে হাজির হয়। কোন ক্রমেই সে কাজটি তার দ্বারা করা আর সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু সে কাজটি যদি সকলে মিলে করে তবে আর তেমন কঠিন মনে হয় না। অতি সহজে এবং সহজ পদ্ধতিতে সে কাজটি সুসম্পন্ন হয়ে থাকে। এই একতাবদ্ধতার মাঝে মানব সমাজ অগ্রগতির দিকে নিজেদেরকে অগ্রসর করে নিয়ে যেতে পারে।
একারণেই গুহাবাসী মানুষেরা একতাবদ্ধভাবে কিংবা যুক্তবদ্ধভাবে জীবনযাপন করে এসেছে এবং জন্ম দিয়েছে নব নব সভ্যতা। একতাবদ্ধতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সমবায় সমিতি। এই সমবায় সমিতির মাধ্যমে যে কাজ একার পক্ষে সম্ভব নয় সে কাজ সহজেই সবায় মিলে সম্পন্ন করতে পারে। যদি কোন জাতি কিংবা দেশ সকল ব্যাপারে এক থাকে, একজোটে দেশের উন্নতি এবং অনগ্রগতির জন্য কাজ করে, তবে তাদের সার্থকতা অনিবার্য। আর তা না করে সবাই যদি বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে, তবে তাদের অগ্রগতি তো হবেই না, বরং সব ব্যাপারই বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। আসলে একতাই সকল উন্নতির সোপান।
মন্তব্য: যে কোন কঠিন কাজ সম্মিলিতভাবে করলে সহজেই সম্পাদন করা যায়। সুতরাং একতাই হচ্ছে উন্নতির চাবিকাঠি।
অর্থই অনর্থের মূল।
মূলভাব : যে অর্থ মানব জীবনে কল্যাণ ডেকে আনে সে অর্থই আবার কোন কোন ক্ষেত্রে অকল্যাণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সম্প্রসারিত ভাব : আধুনিক জীবনযাত্রায় অর্থের ভূমিকা অপরিসীম। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সমাজ জীবনে বাঁচতে হলে অর্থের বিকল্প নেই। তাই অর্থ উপার্জনের পিছনে মানুষ পাগলের মত দৌড়াচ্ছে। অর্থের লোভে পড়ে মানুষ অমানুষও হয়ে যাচ্ছে। অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে অনেকেই আবার দুর্নীতির আশ্রয় নিতেও দ্বিধাবোধ করে না। অর্থের লোভে পড়ে সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে অশান্তি নেমে আসতেও দেখা যায়। অর্থের জন্য পিতা-পুত্রে বিবাদ, স্বামী-স্ত্রীতে কলহ, ভাইয়ে ভাইয়ে মনোমালিন্য, রাজায় রাজায় যুদ্ধ, জাতিতে জাতিতে বৈষম্য।
অর্থের কারণেই বন্ধু বন্ধুকে ঠকায়, স্বামী স্ত্রীকে খুন করে। মোটকথা, শুধু অর্থের জন্যই এ সমাজে খুন, রাহাজানি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই প্রতিনিয়ত লেগেই আছে। অর্থই মানুষের বিবেক বুদ্ধি ধ্বংস করে দিচ্ছে। জগতে অর্থের প্রয়োজন এত প্রবল না থাকলে কোন বিবাদ বিসংবাদ থাকত না। এ জন্যই বলা হয়, অর্থই সকল অনর্থের মূল।
মন্তব্য: অর্থের মোহে পড়ে কখনো নীতি, বিবেক ও চরিত্র বিসর্জন দিতে নেই।
এ জগতে, হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
ভাব সম্প্রসারণ : মানুষ স্বভাবতই যত পায়, তত চায়। তার চাওয়ার শেষ নেই। এ জগতে যার যত বেশি আছে, সে তত আরও বেশি চায়। যে লাখ টাকার মালিক, সে কোটিপতি হতে চায়। যার কোটি টাকা আছে, সে হাজার কোটি টাকা পেতে চায়। রাজার বিপুল সম্পদ আছে। তবুও তার নতুন রাজ্য জয়ের প্রবল আকাঙ্ক্ষা। তার আরও সম্পদ চাই। আরও ভোগ, আরও বিলাসিতা প্রয়োজন তার। এই আরও পাওয়ার ইচ্ছা মানুষকে অমানুষ করে তোলে।
নিজের মানবতাকে বিসর্জন দিয়ে, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তারা গরিবের সর্বস্ব কেড়ে নেয়। তারা তাদের ভোগ-লালসা মেটাতে গরিবের সামান্য সম্পদ আত্মসাৎ করে নিজেরা ফুলে-ফেঁপে ওঠে। ধনীদের এই লোভে সমাজের সাধারণ মানুষগুলো প্রতিনিয়ত হচ্ছে প্রতারিত; সহায়-সম্বলহীন পথের ফকির। এতে ধনীদের মনে সামান্যতম করুণাও হয় না।
করিতে পারি না কাজ
সদা ভয়, সদা লাজ
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে
পাছে লোকে কিছু বলে।
ভাব সম্প্রসারণ : মানুষের জীবন কর্মমুখর। কাজের মাধ্যমেই মানবজীবনের সফলতা আসে। কাজ করতে গেলে ভুল হয় এবং ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে মানুষ তার জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু এ পৃথিবীতে সবাই কর্মী নয়। কিছু অলস-অকর্মণ্য মানুষ আছে, যারা সব সময় অন্যের পেছনে লেগে থাকে। তাদের কাজের খুঁত ধরে, অন্যায় সমালোচনা করে। ফলে অনেক সময় কোনো কাজ করতে গেলে কেউ কেউ দ্বিধাগ্রস্ত হয়।
কে কী মনে করবে, কে কী সমালোচনা করবে এই সব ভেবে তারা বসে থাকে। যার জন্য কাজ এগোয় না। তাই যারা সমাজে অবদান রাখতে চায় তাদের দ্বিধা করলে চলবে না। দৃঢ় মনোবল নিয়ে লোকলজ্জা ও সমালোচককে উপেক্ষা করতে হবে। মানুষের কল্যাণে মহৎ কাজ করতে হলে ভয়ভীতি সংকোচকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
ভাব সম্প্রসারণ : মানব-সভ্যতা বিকাশে নারী ও পুরুষের সমান অবদান রয়েছে। নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই গড়ে উঠেছে আমাদের সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতি। সৃষ্টিকর্তা নারী ও পুরুষকে সৃষ্টি করেছেন একে অপরের পরিপূরক হিসেবে। তাই নারী ও পুরুষ চিরকালের সার্থক সঙ্গী। একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। সৃষ্টির আদিকাল থেকে নারী পুরুষকে জুগিয়েছে প্রেরণা, শক্তি ও সাহস। আর পুরুষ বীরের মতো সব কাজে অর্জন করেছে সাফল্য। আজ পর্যন্ত বিশ্বে যত অভিযান সংঘটিত হয়েছে, তার অন্তরালে নারীর ভূমিকাই মুখ্য ।
সঙ্গত কারণেই নারী ও পুরুষের কার্যক্ষেত্রে ভিন্নতা আছে। তবুও নারী যেমন পুরুষের ওপর নির্ভরশীল, পুরুষও তেমনি নারীর মুখাপেক্ষী। নারীকে বাদ দিয়ে পুরুষের জীবন অসম্পূর্ণ, অর্থহীন। নারী ও পুরুষের পারস্পারিক সহযোগিতার মধ্যেই রয়েছে জগতের সমস্ত কল্যাণ। উভয়ের দানে পুষ্ট হয়েছে আমাদের পৃথিবী।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।
ভাব সম্প্রসারণ : পৃথিবীর সকল দেশেরই জাতীয় জীবনে এমন দু-একটি দিন আসে যা স্বমহিমায় উজ্জ্বল। আমাদের জাতীয় জীবনে এমনি স্মৃতি-বিজড়িত মহিমা-উজ্জ্বল একটি দিন একুশে ফেব্রুয়ারি। সারা বিশ্বের বাংলা ভাষীদের কাছে এ দিনটি চির-স্মরণীয়। একুশে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস একদিকে আনন্দের, অন্যদিকে বেদনার। পাকিস্তানি স্বৈর-শাসকরা বাঙালির মুখ থেকে বাংলা ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল ১৯৪৮ সালে। বাংলার মানুষ সে অন্যায় মেনে নেয় নি। বাংলার দামাল ছেলেরা তুমুল বিরোধিতা করে রাজপথে নেমে আসে।
‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দাবিতে বাংলার আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তোলে। স্বৈরাচারী পাক-সরকার আন্দোলন দমনের জন্য শুরু করে গ্রেফতার, জুলুম, নির্যাতন। এতেও বাংলার দুরন্ত ছেলেদের দমাতে না পেরে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি তাদের মিছিলে নির্মমভাবে গুলিবর্ষণ করে। রফিক, শফিক, বরকত, জব্বার, সালামের রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়। বাংলা পায় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। আর সমগ্র বাঙালির চেতনায় চিরস্মরণীয় ও বরণীয় থাকে ভাষা শহিদদের নাম। তাঁদের অবদান আমরা কোনো দিন ভুলব না ।
জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে
চিরস্থির কবে নীর হয় রে জীবন নদে?
ভাব সম্প্রসারণ : মানুষ মরণশীল। মানুষ অমর নয়। একদিন সবাইকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মৃত্যুই জীবনের অনিবার্য পরিণতি। মৃত্যুকে ঠেকানোর ক্ষমতা কোনো মানুষের নেই। মানবজীবন নদীর জলের মতো প্রবহমান। নদীর জোয়ার-ভাটার মতো মানুষের জীবনেও সুখ-দুঃখ, উত্থান-পতন আছে। জাগতিক নিয়মেই জীবন চলে। এটাই প্রকৃতির বিধান। তাই মৃত্যুকে অযথা ভয় পাবার কিছু নেই। বরং এই সত্যকে মেনে নিয়ে মানবজীবনকে সার্থক করে তুলতে হবে।
কর্মগুণে সমাজ-সভ্যতায় নিজের কীর্তির চিহ্ন রেখে যেতে হবে। নিষ্ফল জীবনের অধিকারী মানুষকে কেউ মনে রাখে না। কিন্তু কৃতী লোকের গৌরব জীবনের সীমা অতিক্রম করে অমরতা ঘোষণা করে। মানুষেরও শারীরিক মৃত্যু হয়। কিন্তু তার জীবনের পুণ্যকর্ম পৃথিবীতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। নশ্বর মৃত্যুও মানুষের জীবনে তখন অবিনশ্বর হয়ে ওঠে।
বাংলার ইতিহাস এ দেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।
ভাব সম্প্রসারণ : বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবের ইতিহাস অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ইতিহাস। বাঙালি জাতি কারও অধীনতা কোনোদিন মেনে নেয় নি। অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির অবস্থান চিরকালই ছিল বজ্রকঠিন। তাই এখানে বারবার বিদ্রোহের আগুন জ্বলেছে। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের জাঁতাকলে প্রায় দুশো বছর ধরে নিষ্পেষিত হয়েছে এ জাতি। ১৯৪৭-এ সেই জাঁতাকল থেকে এ উপমহাদেশের মানুষ মুক্তি পেলেও বাঙালির মুক্তি মেলে নি। এ বন্ধন বাঙালি মেনেও নেয় নি।
১৯৫২ সালের রক্তঝরা ভাষা-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় মুক্তি-সংগ্রামের দিকে। ১৯৫৮ ও ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানি সামরিক শাসক বাংলার দামাল ছেলেদের ওপর গুলি চালায়। গুলি করে ১৯৬৯-এর গণ- অভ্যুত্থানেও। বারবার বাঙালির বুকের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। তবুও তাদের স্বাধীনতার দাবিকে ঠেকাতে ব্যর্থ হয় পাকিস্তানি জান্তা-বাহিনী। তাই তারা ১৯৭১-এ বাঙালির ওপর চূড়ান্ত আঘাত হানে। তখন বাংলার মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তি-সংগ্রামে। লক্ষ লক্ষ মানুষের বুকের রক্তে বাংলার মাটি লাল হয়। অবশেষে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ।
সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে।
ভাব সম্প্রসারণ : প্রত্যেক মানুষই তার জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন সত্তা বহন করে। সে একাই তার বিবেককে নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এক্ষেত্রে তার সঙ্গের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ভবিষ্যতের সুন্দর বা খারাপের বিষয়টি নির্ভর করে ব্যক্তির ইচ্ছা বা সঙ্গ নির্বাচনের ওপর। যেসব মানুষ উন্নত চরিত্র বা সৎ-স্বভাবের লোকের সঙ্গে মেলামেশা করে, তাদের স্বভাব-চরিত্রও সুন্দর ও বিকশিত হয়ে ওঠে। অন্যদিকে যারা কুসঙ্গে বা কুসংসর্গে থেকে নিজেদের চরিত্রের অধঃপতন ঘটিয়েছে, সমাজে তাদের বিপর্যয় অনিবার্য। তাই মানবজীবনে সঙ্গ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
প্রকৃতিতেও যেসব বস্তু সুন্দর ও রমণীয়, সেগুলোর সংস্পর্শে যেসব বস্তু থাকে তারাও সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। খারাপ বস্তুটি সুন্দর বস্তুটির গুণ নিজের মধ্যে ধারণ করে অন্যের কাছে নিজেকে মর্যাদাবান ও গ্রহণযোগ্য করে তোলে। প্রকৃতপক্ষে, সঙ্গই সৃষ্টিকে মহিমান্বিত করে তোলে। আর এজন্য সঙ্গই হলো সবকিছুর সাফল্য ও বিফলতার চাবিকাঠি।
লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।
ভাব সম্প্রসারণ : লোভ মানুষের পরম শত্রু। লোভ মানুষকে অন্ধ করে; তার বিবেক বিসর্জন দিয়ে তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। লোভের বশবর্তী হয়েই মানুষ জীবনের সর্বনাশ ডেকে আনে। মানুষ নিজের ভোগের জন্য যখন কোনো কিছু পাওয়ার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করে তাকে লোভ বলে। তখন যা নিজের নয়, যা পাওয়ার অধিকার তার নেই, তা পাওয়ার জন্য মানুষ লোভী হয়ে ওঠে। সে তার ইচ্ছাকে সার্থক করে তুলতে চায়। লোভের মোহে সে সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ সব বিসর্জন দেয়। তার ন্যায়-অন্যায় বোধ লোপ পায়। সে পাপের পথে ধাবিত হয়। নিজের স্বার্থের জন্য অন্যের সর্বনাশ করে। এভাবে লোভ মানুষকে পশুতে পরিণত করে। ডেকে আনে মৃত্যুর মতো ভয়াবহ পরিণাম। জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তোলার জন্য লোভ বর্জন করা উচিত।
জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান ।
ভাব সম্প্রসারণ : সৃষ্টির অন্যান্য প্রাণির থেকে মানুষকে আলাদা করেছে তার বিবেক বা জ্ঞান, যা অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে নেই। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই জ্ঞান বা বিবেক সুপ্ত অবস্থায় থাকে। অনুশীলনের মাধ্যমে তাকে জাগিয়ে তুলতে হয়। জ্ঞান মানুষকে যোগ্যতা দান করে। নানা বিদ্যায় পারদর্শী করে তোলে। জ্ঞানের আলোকেই মানুষের জীবন বিকশিত হয়ে ওঠে। তাই মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব লাভের জন্য জ্ঞানের সহায়তা অপরিহার্য।
অন্য প্রাণীর সঙ্গে মানুষের পার্থক্য এখানেই। জ্ঞানবান মানুষ কখনো খারাপ কাজ করতে পারে না ৷ তার বিবেক তাকে খারাপ আচরণ করতে বাধা দেয়। অপরদিকে জ্ঞানহীন মানুষ পশুর মতো নির্বোধ। পশুর যেমন জ্ঞান নেই। সে ন্যায়-অন্যায় বোঝে না। আপন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে না। জ্ঞানহীন ব্যক্তিরও তেমনি কোনো বিবেক নেই। জ্ঞানের অভাবে তারা আধুনিক জীবনের সম্পূর্ণ স্বাদ উপভোগ করতে পারে না ।
তাদের জীবনের সঙ্গে পশুর জীবনের কোনো পার্থক্য নেই। জ্ঞানই মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্যের সীমারেখা টেনে দেয়। তাই মানুষকে সব সময় জ্ঞানসাধনায় নিয়োজিত থাকা দরকার।
একতাই বল ।
ভাব সম্প্রসারণ : মানুষ সামাজিক জীব। পরিবারের প্রত্যেকে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। এই পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে গড়ে উঠেছে মানবসমাজ, মানুষের একতাবোধ। তাই মানবজীবনের অস্তিত্বের সঙ্গে একতার গভীর সম্পর্ক।
মানুষকে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও জীবনযাপন করতে হয়। প্রতিকূল পরিবেশে শত্রুর মোকাবেলা করার জন্য মানুষের দরকার সংঘবদ্ধ শক্তির । একতাবদ্ধ জীবনে আছে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। ঐক্যবদ্ধ জাতিকে কোনো শক্তিই পদানত করতে পারে না। একতার কল্যাণ প্রতিফলিত হয় ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনেও। একজনে যে কাজ করতে পারে, দশজনে তার বহুগুণ কাজ করা সম্ভব। এভাবে জাতি একতার গুণে বড় হয় ।
আজকের বিশ্বে যারা উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে পরিচিত তারা নিজেদের মধ্যে সব ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় ঐক্যে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। যে জাতি ঐক্যবদ্ধ নয়, সে জাতির উন্নতি অসম্ভব। ব্যক্তির ক্ষেত্রে বন্ধুবান্ধবহীন নিঃসঙ্গ জীবন যেমন বিভ্রান্তিকর, তেমনি একতাহীন জাতির ধ্বংস অনিবার্য। ব্যক্তিজীবনের স্বার্থে, জাতীয় জীবনের কল্যাণে এবং মানবজাতির মঙ্গলের জন্য মানুষের একতাবদ্ধ থাকা একান্তই অপরিহার্য।
আও দেখুন: