নীরার হাসি ও অশ্রু কবিতা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “নীরার হাসি ও অশ্রু” একটি অসাধারণ প্রেমনির্ভর কবিতা, যা কবির অন্যতম জনপ্রিয় ‘নীরা’ সিরিজের অন্তর্ভুক্ত। এই কবিতায় নীরার প্রতি কবির আবেগ, আকর্ষণ, বেদনা ও বিষণ্নতার অনুরণন এক অদ্ভুত কাব্যিক সৌন্দর্যে ফুটে উঠেছে। নীরার হাসি যেমন কবিকে মোহিত করে, তেমনি তার অশ্রু কবির মনে গভীর দাগ কেটে যায়।

সুনীলের কবিতায় প্রেম মানে কেবল আনন্দ নয়, বরং তীব্র আত্মসংবেদন, হাহাকার ও চিরন্তন খোঁজ — তার কবিতায় প্রেম মানে নিজেকে ধ্বংস করেও ভালোবাসা। “নীরার হাসি ও অশ্রু” সেই প্রেমেরই এক নিঃশব্দ, বেদনাভরা স্বীকারোক্তি, যেখানে কবির শব্দ হয়ে ওঠে হৃদয়ের অনুবাদ।

এই কবিতাটি বাংলা কাব্যধারায় আধুনিক প্রেমের এক অনন্য দলিল, যেখানে ব্যক্তি-ভাষা, স্মৃতি, ও অনুভূতির সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে এক অনবদ্য নীরার কাব্যজগৎ।

নীরার হাসি ও অশ্রু কবিতা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

নীরার চোখের জল অনেক চোখের অনেক
নীচে
টল্‌মল্‌
নীরার মুখের হাসি মুখের আড়াল থেকে
বুক, বাহু, আঙুলে
ছড়ায়
শাড়ির আঁচলে হাসি, ভিজে চুলে, হেলানো সন্ধ্যায় নীরা
আমাকে বাড়িয়ে দেয়, হাস্যময় হাত
আমার হাতের মধ্যে চৌরাস্তায় খেলা করে নীরার কৌতুক
তার ছদ্মবেশ থেকে ভেসে আসে সামুদ্রিক ঘ্রাণ
সে আমার দিকে চায়, নীরার গোধূলি মাখা ঠোঁট থেকে
ঝরে পড়ে লীলা লোধ্র
আমি তাকে প্রচ্ছন্ন আদর করি, গুপ্ত চোখে বলি :
নীরা, তুমি শান্ত হও
অমন মোহিনী হাস্যে আমার বিভ্রম হয় না, আমি সব জানি
পৃথিবী তোলপাড় করা প্লাবনের শব্দ শুনে টের পাই
তোমার মুখের পাশে উষ্ণ হাওয়া
নীরা, তুমি শান্ত হও!

নীরার সহাস্য বুকে আঁচলের পাখিগুলি
খেলা করে
কোমর ও শ্রোণী থেকে স্রোত উঠে ঘুরে যায় এক পলক
সংসারের সারাৎসার ঝলমলিয়ে সে তার দাঁতের আলো
সায়াহ্নের দিকে তুলে ধরে
নাগকেশরের মতো ওষ্ঠাধরে আঙুল ঠেকিয়ে বলে,
চুপ!
আমি জানি
নীরার চোখের জল চোখের অনেক নিচে টল্‌মল্‌।।

 

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আরও পড়ুন:

 

স্বপ্নের কবিতা | সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর কবিতা | সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

Leave a Comment