অনেক নদীর জল কবিতা | জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা | জীবনানন্দ দাশ

জীবনানন্দ দাশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা “অনেক নদীর জল” তাঁর কাব্যজগতে এক অনন্য সংযোজন। প্রকৃতি ও জীবনের প্রবাহকে কেন্দ্র করে রচিত এই কবিতায় তিনি মানবজীবনের ক্ষণস্থায়ীতা, স্মৃতির আবেশ এবং সময়ের অনিবার্য গতিকে নদীর জলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কবিতায় বারবার ফিরে আসে নদীর প্রতীক, যা জীবনের বহমান ধারা ও অন্তর্গত বেদনার ইঙ্গিত বহন করে। দার্শনিকতা ও আবেগের এক মিশ্র রূপ এখানে ফুটে উঠেছে, যেখানে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বৃহত্তর মানবজীবনের প্রতীক হয়ে ওঠে। বাংলা আধুনিক কবিতায় জীবনানন্দ দাশের স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর এই কবিতায় স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত, যা তাঁকে শুধু প্রকৃতির কবিই নয়, বরং সময় ও জীবনের গভীর অনুসন্ধানী কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

 

অনেক নদীর জল কবিতা – জীবনানন্দ দাশ

অনেক নদীর জল উবে গেছে —
ঘরবাড়ি সাকো ভেঙে গেল;
সে সব সময় ভেদ করে ফেলে আজ
কারা তবু কাছে চলে এল
যে সুর্য অয়নে নেই কোনো দিন,
— মনে তাকে দেকা যেত যদি —
যে নারী দেখে নি কেউ — ছ-সাতটি তারার তিমিরে
হৃদয়ে এসেছে সেই নদী।
তুমি কথা বল — আমি জীবন-মৃত্যুর শব্দ শুনি:
সকালে শিশির কণা যে-রকম ঘাসে
অচিরে মরণশীল হয়ে তবু সূর্যে আবার
মৃত্যু মুখে নিয়ে পরদিন ফিরে আসে।
জন্মতারকার ডাকে বার বার পৃথিবীতে ফিরে এসে আমি
দেখেছি তোমার চোখে একই ছায়া পড়ে:
সে কি প্রেম? অন্ধকার? — ঘাস ঘুম মৃত্যু প্রকৃতির
অন্ধ চলাচলের ভিতরে।
স্থির হয়ে আছে মন; মনে হয় তবু
সে ধ্রুব গতির বেগে চলে,
মহা-মহা রজনীর ব্রহ্মান্ডকে ধরে;
সৃষ্টির গভীর গভীর হংসী প্রেম
নেমেছে — এসেছে আজ রক্তের ভিতরে।

‘এখানে পৃথিবী আর নেই–‘
ব’লে তারা পৃথিবরি জনকল্যাণেই
বিদায় নিয়েছে হিংসা ক্লান্তির পানে;
কল্যাণ, কল্যাণ; এই রাত্রির গবীরতর মানে।
শান্তি এই আজ;
এইখানে স্মৃতি;
এখানে বিস্মৃতি তবু; প্রেম
ক্রমায়াত আঁধারকে আলোকিত করার প্রমিতি।

Leave a Comment