আবার মিরেলি রচনা -দি মিস্ট্রি অফ ব্লু ট্রেন ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

আবার মিরেলি রচনা

Table of Contents

আবার মিরেলি রচনা -দি মিস্ট্রি অফ ব্লু ট্রেন ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

আবার মিরেলি -দি মিস্ট্রি অফ ব্লু ট্রেন ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

আবার মিরেলি

কোর্ট থেকে বেরিয়ে ক্যাথারিন সোজা গিয়ে হাজির হলো নেগ্রেসকোতে। এটা হলো রিভিয়ারার সবেচেয়ে দামি রেস্তোরাঁ। নেগ্রেসকোর সুস্বাদু খাদ্য আর উৎকৃষ্ট খাদ্য আর উৎকৃষ্ট ককটেলের জন্যে সব সময়ই লোকের ভিড় থাকে এখানে। লাঞ্চ পর্বটা সেরে নেবার জন্য এসেছিল।

সে একটা টেবিলে বসে এক পাত্র ককটেলের অর্ডার দিল। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে এসে গেল। ক্যাথারিন তা পান করতে করতে সমুদ্রের দিকে এবং পান-ভোজন রত নর-নারীর দিকে চোখ বুলোতে লাগল।

এই সময় মিরেলিকে সেখানে ঢুকতে দেখল সে। মিরেলিও তাকে লক্ষ্য করছিল। হাসিমুখে মিরেলি ক্যাথারিন-এর সামনে এলো। কি আশ্চর্য ড্রেক, তোমাকে যে এখানে পাব ভাবতেই পারিনি।

মিরেলি ক্যাথারিন-এর সামনের চেয়ারটায় বসল। তার দিকে তাকিয়ে ক্যাথারিন বলল, কবে এসেছ?

–দুদিন আগে।–এসে অবধি তোমার খোঁজ করছি।

–আমার খোঁজ কেন?

করব না! যে আমার জন্যে এতটা করেছে তার খোঁজ করব না।

–মানে?

–মানে কি তুমি বোঝো না? সত্যিই তুমি অসাধ্য সাধন করেছ, ড্রেক। তোমার এই সৎসাহসের জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। আমি তোমাকে বলেছিলাম যে দুর্ঘটনা যখন তখন ঘটতে পারে। কিন্তু তা যে এত তাড়াতাড়ি নাটকীয়ভাবে ঘটবে আমি তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। আচ্ছা, পুলিশ তোমাকে সন্দেহ করেনি তো?

দয়া করে থামবে কি?

–নিশ্চয়ই। এসব কথা এখানে আলোচনা করা ঠিক নয়। এখন আর দেনার দায়ে তোমাকে বিব্রত হতে হবে না। তুমি নিশ্চিন্ত হয়েছে। এখন আঃ….. আমাদের দুজনের সুখের দিন এসেছে। তুমি এখন ত্রিশ লাখ পাউণ্ডের মালিক, তাই না?

–এখনও হইনি। তবে শীগগির হব বলে মনে হচ্ছে।

–টাকার অঙ্কটা মোটেই খারাপ নয়, কি বল?

-কে বলেছে খারাপ। সমস্ত দেনা মেটানোর পরেও আমার হাতে বিশ লাখ পাউণ্ড থাকবে।

-ব্যস। ওতেই চলবে। হ্যাঁ, খুব ভালোভাবে চলবে আমাদের। আর তার পরেই তো তুমি লর্ড লুকোনবারী হয়ে যাবে। তখন আর পায় কে আমাদের।

-তুমি একটু চুপ করবে কি? দেখছ না অনেকেই আমাদের লক্ষ্য করছে। –

-ঠিক বলেছ। এবার তুমি লাঞ্চের অর্ডার দাও। দুজনে একসঙ্গেই লাঞ্চ খাব।

–আমি দুঃখিত। তোমার সঙ্গে আজ লাঞ্চ খেতে পারব না।

–কেন বলতো?

–আমি আজ আর একজনের সঙ্গে এনগেজড়। তাছাড়া….

–কি বলছিলে বল না? বলতে গিয়ে থেমে গেলে কেন?

-না, থেমে যাব কেন। বলছিলাম যে, তোমার সঙ্গে আমি আর কোনো সম্পর্ক রাখতে চাই না।

তার মানে? –

-মানে আর কিছু নেই। এরপর থেকে তোমার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক থাকবে না।

–তোমার কি হয়েছে বলতো? ঠাট্টা রাখ, এবার লাঞ্চের অর্ডার দাও, প্লিজ।

–বললাম তো, আমি আজ আর একজনের….

এমন সময় গ্রে ক্যাথারিন রেস্তোরাঁয় ঢুকতেই ড্রেক ক্যাথারিন তার দিকে এগিয়ে গেল।

ক্যাথারিন এভাবে চলে যাওয়ায় মিরেলি ভীষণ ক্রুদ্ধ হলো। তাছাড়া নিজেকে অপমানিতা বোধ করে অস্ফুট স্বরে বলল, আচ্ছা দেখা যাবে। মিরেলি অপমান হজম করার মেয়ে নয়। তোমার দুঃসাহসিকতার ফল তোমাকেই পেতে হবে।

ক্যাথারিন-এর কাছে গিয়ে ক্যাথারিন যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে বলল, গুড মর্নিং, মিস গ্রে।

আজ আপনি আমার সঙ্গে লাঞ্চ খেলে ভালো লাগত আমার। ক্যাথারিন-এর প্রস্তাবে ক্যাথারিন একটু বিস্মিত হয়ে পরক্ষণেই একটু ভেবে বলল, আমারও খারাপ লাগত না আপনার সঙ্গে লাঞ্চ খেতে।

-তাহলে আসুন নিরিবিলি দেখে একটা টেবিলে বসি।

–বেশ, চলুন।

দুজনে কোণের দিকে এগিয়ে গেল। ঠিক সেই সময় রেস্তোরাঁয় আর এককোণে একজোড়া জ্বলন্ত দৃষ্টি ওদের দুজনকে লক্ষ্য করছে।

.

১৭.

কাউন্টএর বাড়িতে

কাউন্ট সেদিন আর লাঞ্চ খেতে বাইরে যাননি। বাড়িতেই লাঞ্চ খাওয়ার পর চাকর হিপোলাইট কফি এনে দিল।

কফির পেয়ালায় এক চুমুক দিয়েই বললেন, শোন হিপো, এখন থেকে প্রায় রোজই কোনো না কোনো অচেনা লোক আমার খোঁজ নিতে আসবে। তাদের তুমি কোনো মতেই বাড়িতে ঢুকতে দেবে না।

ইতিমধ্যেই দু-চারজন এসেছিল। কেমন, তাই না?

–না, হুজুর। আজ পর্যন্ত তেমন কোনো লোক আসেনি।

–ঠিক বলছ তো?

–হ্যাঁ, ঠিকই বলছি?

–তুমি তো সব সময় বাড়িতে থাকো না, তাই তারা হয়তো তোমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে।

–আমার তা মনে হয় না, হুজুর। মেরী তাহলে নিশ্চয়ই আমাকে সে কথা বলত।

হিপোলাইট-এর কথা শুনে কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেও তার মনে হলো ইতিমধ্যে না এলেও অদূর ভবিষ্যতে তারা নিশ্চয়ই আসবে। তিনি তখন বললেন, শোন, তোমাকে শিখিয়ে রাখছি, যদি কোনো অচেনা লোক বা পুলিশ অফিসার তোমার কাছে জানতে চায় যে, গত চোদ্দ তারিখে আমি কোথায় ছিলাম, তুমি বলবে যে ওই তারিখে আমি বাড়িতে ছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠেই তুমি আমাকে দেখতে পেয়েছিলে।

 

আবার মিরেলি -দি মিস্ট্রি অফ ব্লু ট্রেন ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

-বেশ, সেই কথাই বলব।

–শুধু তাই নয়, তুমি বলবে যে, তার আগের দিন আমি বাড়িতে ছিলাম না। শেষ রাত্রে বাড়িতে এসে আমার অতিরিক্ত চাবি দিয়ে সদর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেছিলাম। মনে থাকবে তো?

নিশ্চয়ই। আমি এই কথাই বলব।

–শুধু তুমি বললেই চলবে না। মেরীও যেন বলে।

–তাই বলবে। আমি তাকে শিখিয়ে দেব।

–দেব নয়, এক্ষুনি বলে দাও তাকে।

হিপোলাইট যাবার জন্যে পা বাড়াতেই কাউন্ট আবার বলল, কি বলতে হবে, মনে আছে তো?

–আছে, হুজুর। চোদ্দ তারিখে সকালে উঠেই দেখি আপনি বাড়িতেই ফিরে এসেছেন।

–কখন ফিরলাম?

–বোধ হয় শেষ রাত্রে।

বোধ হয় বলবে কেন?

–বলব। তার কারণ হলো, আপনি ঠিক কখন ফিরে এসেছেন তা আমরা দেখিনি।

–বাড়িতে ঢুকলাম কেমন করে?

–আপনার কাছে সদর দরজার অতিরিক্ত একটা চাবি থাকে। তার সাহায্যে দরজা খুলে আপনি হয়তো ঢুকেছেন।

-হ্যাঁ, ঠিক হয়েছে। এই কথাগুলি তোমরা বলবে। মিনিট দুয়েক বাদেই হিপোলাইট কফির পেয়ালা আর পিরিচ রেখে ফিরে এলো।

-কি ব্যাপার? আবার ফিরে এলে যে? কাউন্ট বললেন।

–এক ভদ্রমহিলা আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান, হুজুর।

–আশ্চর্য! বয়স কত ভদ্রমহিলার? দেখতে কেমন?

–পঁচিশ-ছাব্বিশ বলে মনে হয়। দেখতে খুবই সুন্দর।

-বেশ, তাকে এখানেই নিয়ে এস।

হিপোলাইট মিনিট দুয়েকের মধ্যেই একজন অনিন্দ্য সুন্দরী যুবতাঁকে সঙ্গে নিয়ে এলো।

কাউন্ট দাঁড়িয়ে উঠে বিস্মিত স্বরে বললেন, কি আশ্চর্য! মাদমোয়াজেল মিরেলিকে যে আমার এই ক্ষুদ্র কুটিরে দেখতে পাব একথা আমি কোনোদিন ভাবিনি।

-আপনি আমাকে চেনেন দেখছি।

-নৃত্যশিল্পী মিরেলিকে চেনে না এমন হতভাগ্য কেউ আছে নাকি। আসন গ্রহণ করে আমাকে ধন্য করুন। কাউন্টের অনুরোধে মিরেলি আসন গ্রহণ করল।

–আর বলুন, আমি আপনার জন্যে কি করতে পারি?

–আমার জন্যে নয়, আমি আপনার জন্যেই এসেছি।

–আমার জন্যে এসেছেন। দয়া করে বিষয়টা একটু পরিষ্কার করলে বাধিত হব।

–হ্যাঁ, পরিষ্কার করেই বলছি। কোনো কোনো মহলে আলোচনা চলছে যে, আপনি নাকি মাদাম ক্যাথারিনকে হত্যা করেছেন।

-আমি! হত্যা করেছি মাদাম ক্যাথারিনকে! একি ভয়াবহ যন্ত্রণা?

–হ্যাঁ, এই কথাই লোকে বলাবলি করছে।

–লোকে যা বলুক। আমি তো আমাকে জানি। এরকম ঘৃণ্য কাজ আমার দ্বারা কখনও সম্ভব নয়।

–কথাটাকে উড়িয়ে দিয়ে লাভ নেই মঁসিয়ে। আমি জানি যে, পুলিশও তাই সন্দেহ করছে।

-বলেন কি মাদমোয়াজেল! আপনি এ খবর কোথায় পেলেন?

পেলাম পুলিশের কাছে। আমার কয়েকজন পুলিশ বন্ধু আছে। তাদের কাছেই শুনেছি যে পুলিশের প্রধানও সেই সন্দেহ করছেন।

–আপনি আমাকে ভাবিয়ে তুললেন মাদমোয়াজেল।

–ভাববার কিছু নেই, মঁসিয়ে। আমি আপনাকে রক্ষা করবার জন্যেই এসেছি। কারণ আমি জানি মাদাম ক্যাথারিন-এর হত্যাকারী আপনি নয়, অন্য কোনো ব্যক্তি।

–আপনি কি তাকে চেনেন না কি?

–হ্যাঁ, বিলক্ষণ চিনি।

–কে?

–তার নাম ড্রেক ক্যাথারিন—

–অর্থাৎ, মাদাম ক্যাথারিন-এর স্বামী!

–হ্যাঁ।

–কিন্তু…

–না, এর মধ্যে কিন্তু নয়। আমি জানি যে ড্রেক ক্যাথারিন তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে।

–কিছু মনে করবেন না মাদমোয়াজেল, আপনি একথা কেমন করে জানলেন।

-কেমন করে জানলাম?–উত্তেজিতভাবে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে উঠল মিরেলি, সে নিজের মুখে একথা আমাকে বলেছে। আমি যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি সেই দৃশ্যটা। ড্রেক ক্যাথারিন নিঃশব্দে ঢুকল কামরার ভেতর। বেচারা রুথ তখন অঘোরে ঘুমোচ্ছে। ও পকেট থেকে একগাছা কালো সিল্কের কর্ড বের করল, তারপর সেই কর্ডটা জড়িয়ে–উঃ! কী ভয়ংঙ্কর।

–এবং এসব কথা মিঃ ক্যাথারিন আপনাকে বললেন। আশ্চর্য ব্যাপার তো।

–না, এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। হত্যা করবার আগেই সে আমাকে এসব বলেছে।

–আরও আশ্চর্য! হত্যাকাণ্ডের আগেই হত্যা করার পরিকল্পনা আপনাকে জানালেন ভদ্রলোক!

–আপনি কি আমার কথাগুলো পাগলের প্রলাপ বলে মনে করছেন নাকি?

-না, তা করছি না। তবে কি না, লাজিকের দিক থেকে….

–চুলোয় যাক আপনার লজিক। ড্রেক নিজে আমাকে বলেছিল যে, তার স্ত্রী যদি কোনো কারণে মারা যায় তাহলে সে অনেক টাকা পেতে পারে। এবং সেই টাকায় সে দেনা মুক্ত হতে পারে।

–তাতেই কি প্রমাণিত হয় যে, তিনিই হত্যাকারী?

-না, তা হয় না। সে আমাকে আরও বলেছিল যে, ট্রেনে রিভিয়ারা যাবার পথে হয়তো এমন কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে যাতে সে মারা যেতে পারে।

–বেশ, মেনে নিলাম কথাটা। কিন্তু তাতেও তো প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

–কি প্রশ্ন?

–তিনি মাদামের রুবীটা চুরি করলেন কেন?

–কারণ, এই হত্যাকাণ্ডকে ট্রেন রবারদের কাজ বলে পুলিশের চোখে ধুলো দিতে চেয়েছিল সে।

এতক্ষণে কাউন্ট মিরেলির কথাগুলো হেঁয়ালি বলে মনে করলেন না। তিনি মৃদুস্বরে বললেন, এ ব্যাপারে আমার কি করণীয় থাকতে পারে, মাদমোয়াজেল?

–আপনি পুলিশের কাছে গিয়ে সব কথা জানিয়ে দিন, যে মাদাম ক্যাথারিন-এর হত্যাকারী তার স্বামী–আপনি নন।

–পুলিশ যদি আমার কাছে প্রমাণ চায়?

–তাহলে তাদের আমার কাছে পাঠিয়ে দেবেন। আমি তাদের কাছে প্রমাণ দেব। আর কিছু না বলে মিরেলি চলে গেল।

 

আবার মিরেলি -দি মিস্ট্রি অফ ব্লু ট্রেন ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

কাউন্ট এবার ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করতে লাগলেন। মেয়েটা দেখছি ভীষণ উত্তেজিত। কিন্তু সত্যি ঘটনাটি কি? সন্দেহ তো প্রমাণ নয়। ও তাহলে পুলিশের কাছে কি প্রমাণ দেবে। মিঃ ক্যাথারিন-এর উপর ভীষণ রাগ, নিশ্চয়ই ওকে অপমান করেছে। কিংবা ওকে ছেড়ে অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে জুটেছে। সেই কারণেই ওকে পিছে ফেলতে চায়। কিন্তু আমাকে খুব সাবধান হতে হবে। ওই সর্বনেশে চিঠিটা যদি রুথ-এর হ্যাণ্ডব্যাগে না পওয়া যেত তাহলে কেউই আমাকে সন্দেহ করতে পারত না। চিন্তা করতে করতে হঠাৎ ছুটে গেলেন শোবার ঘরে।

খাটের পাশে রাখা একটা ছোট টেবিল ও চেয়ার। তার গোপনীয় সব ঐ টেবিলের টানায় থাকত। তিনি টানাটা খুলে একটা চাবি নিয়ে একটা স্টীলের আলমারীর কাছে এগিয়ে গেলেন। আলমারী খুলে তার ভেতর থেকে একটা ভেলভেটের বাক্স বের করে আলমারিটা বন্ধ করে দিলেন।

ভেলভেটের বাক্সটা একবার খুলে দেখল কাউন্ট। তারপর সেটাকে বন্ধ করে কাগজ দিয়ে মুড়ে সুতো দিয়ে প্যাকেটের মতো করে বেঁধে ফেললেন।

প্যাকেটের ওপরে কি সব যেন লিখলেন। তারপর প্যাকেটটা কোটের পকেটে ঢুকিয়ে নিচে এলেন। নিচে নামতেই হিপোলাইটের সঙ্গে দেখা হলো। কাউন্ট বললেন, আমি নেগ্রেসকোতে যাচ্ছি ফিরতে দেরি হবে। কোনো অচেনা লোক খুঁজতে এলে কথাগুলো সেইভাবে বলবে। কথাগুলো মনে আছে তো?

–আছে, হুজুর।

কাউন্ট তাঁর দু-সীটার নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।

মন্টিকালোতে গিয়ে তিনি কয়েক পেগ হুইস্কি পান করে শরীরটাকে চাঙ্গা করে নিলেন। তিনি চললেন মেণ্টনের পথে। মেন্টনে যেতে একটা পাহাড় পার হয়ে যেতে হয়। পাহাড়ের কাছাকাছি আসতেই সে দেখল একখানা ধূসর রঙের গাড়ি তার গাড়িটাকে অনুসরণ করছে। কাউন্ট তখন যথাসম্ভব তার গাড়ির গতিবেগ বাড়িয়ে গাড়ি চালাতে লাগলেন।

এদিকে পেছনের বড় গাড়িটা অসমতল পাহাড়ী রাস্তায় ছোট গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছিল না। কিছুক্ষণ বাদে আর পিছনের গাড়িটা দেখা গেল না।

অবশেষে পাহাড় পার হয়ে সমতল রাস্তায় এসে কাউন্ট তাঁর গাড়ির গতিবেগ আরও বাড়িয়ে দিল। মাইল দুয়েক যাবার পরেই একটা পোস্ট অফিস। সেখানে গাড়ি থামিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে পোস্টঅফিসের বারান্দায় উঠে পকেট থেকে প্যাকেটটা বের করে লেটার বাক্সে ফেলে দিয়ে আবার ফিরে এলেন গাড়িতে।

গাড়ি ঘুরিয়ে আবার তিনি ফিরে চললেন মন্টিকালোর দিকে। একটু এগোতেই সেই ধূসর রঙের গাড়িটা তার গাড়িটাকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল।

কাফে দ্য প্যারীতে ডিনার খেয়ে রাত প্রায় সাড়ে দশটায় কাউন্ট বাড়ি ফিরলেন। হিপোলাইট সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সামনে এলো, তার মুখে দুশ্চিন্তার রেখা।

-কি হয়েছে হিপো, জিজ্ঞেস করলেন কাউন্ট।

-আপনি বাইরে যাবার ঘন্টাখানেক বাদে কে একজন টেলিফোনে আমাকে বলল যে, আপনি আমাকে নেগ্রেসকোতে দেখা করতে বলেছেন।

–অদ্ভুত কাণ্ড তো! তুমি কি সেখানে গিয়েছিলে না কি?

–হ্যাঁ, গিয়েছিলাম। আপনি যেতে বলেছেন শুনে কি না গিয়ে পারি?

–তারপর?

–সেখানে গিয়ে শুনলাম যে, আপনি সেখানে যাননি। কে টেলিফোন করেছে সে কথাও তারা বলতে পারল না।

-তুমি যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে তখন মেরী কোথায় ছিল?

–সে তখন বাজার করতে গিয়েছিল হুজুর। আমি ফিরে আসবার পরে সে বাড়িতে আসে।

-এটা বোধহয় কোনো দুষ্টু ছেলের কাজ। যাই হোক, এর জন্যে দুঃশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। তুমি তোমার কাজে যেতে পার।

কাউন্ট সোজা দোতলায় উঠে গিয়ে শোবার ঘরে ঢুকে দেখলেন যে, তাঁর অনুপস্থিতিতে কে বা কারা তার ঘরটা তল্লাসী করেছে।

কাউন্ট নিজের মনেই বললেন-পুলিশ এসেছিল দেখছি। মিরেলি তাহলে ঠিক কথাই বলেছে।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

.

১৮.

প্রেমঅভিসার

মার্গারেট ভিলার বাগানে বসে লেনক্স গল্প করছিল। লেনক্স বলছিল, তোমার বোধহয় এখানে ভালো লাগছে না। তাই না মাসী?

-খারাপও লাগছে না। তবে আমি কোনোদিনই হৈ-হল্লা পছন্দ করি না, তাই নিজেকে এখানে খাপ খাওয়াতে পারছি না।

-কিন্তু, এই হলো সোসাইটি। এখানে সবই গিল্টি করা অর্থাৎ বাইরের দিকটা চকচকে। এবং আমাদের এই গিল্টি করা সোসাইটিতে বাস করতে হয়। আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করব, মাসী?

-কি?

–মঁসিয়ে ক্যাথারিনকে তোমার কেমন লাগে?-

-কেমন লাগে মানে?

–মানে, তুমি কি ওকে পছন্দ করো?

–পছন্দ অপছন্দের কোনো কথাই ওঠে না। কারণ ওর সম্বন্ধে আমি কিছুই জানি না।

–যাই বল মাসী, ওঁর চেহারাটা কিন্তু ভারী সুন্দর।

–তা হবে হয়তো।

–তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে ওঁকে তুমি মোটেই পছন্দ কর না।

-আমার পছন্দ-অপছন্দের জন্যে তোমার দুশ্চিন্তা কেন?

-না, তা নয়। মানে…. আমার মনে হয়েছে যে, মিঃ ক্যাথারিন তোমাকে বিশেষ নজরে দেখেন। তাই জিজ্ঞেস করছিলাম।

লেনক্স-এর কথা শেষ হতে না হতেই একজন পরিচারিকা এসে ক্যাথারিনকে বলল, আপনার টেলিফোন এসেছে।

-কে ফোন করেছে জানো?

–হ্যাঁ। মঁসিয়ে পোয়ারো।

ক্যাথারিন কোনো কথা না বলে টেলিফোন ধরতে চলে গেল। রিসিভারটা কানে তুলে ক্যাথারিন সাড়া দিতেই ওধার থেকে মিঃ পোয়ারোর কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, সুপ্রভাত মাদমোয়াজেল। মঁসিয়ে ভ্যান আলডিন আপনার সঙ্গে কয়েকটা কথা বলতে চান। আপনি যদি দয়া করে নেগ্রেসকোতে তার স্যুইটে আসেন অথবা মার্গারেট ভিলাতেও যেতে পারেন উনি।

পোয়ারোকে একটু লজ্জা দেবার উদ্দেশ্যে ক্যাথারিন বলল, আপনি কি এখন মিঃ আলডিন-এর প্রাইভেট সেক্রেটারী।

খোঁচাটা হজম করে পোয়ারো হেসে বললেন, অনেকটা তাই। কারণ ওঁর মেয়ের হত্যাকাণ্ডের তদন্তের ভার যখন নিয়েছি। শুধু প্রাইভেট সেক্রেটারী কেন ভৃত্যের ভূমিকায় বা অন্য কোনো চেহারাতেও দেখতে পাবেন। যাক আপনি আসবেন, না আমাদেরই যেতে হবে?

-না। আপনাদের আসার দরকার নেই, আমিই যাব। কখন গেলে সুবিধে হয় আপনাদের?

–আমাদের কথা বাদ দিন। আপনি কখন আসবেন বলুন।

–এক ঘন্টা পরে যদি যাই?

-বেশ, সেই কথাই রইল। আপনাকে নিয়ে আসবার জন্যে যথা সময়ে গাড়ি নিয়ে মার্গারেট ভিলায় যাচ্ছি। আপনি দয়া করে তৈরি হয়ে থাকবেন।

তিন কোয়ার্টারের ভেতরেই মিঃ পোয়ারো এলেন মার্গারেট ভিলায়। ক্যাথারিন দেরি না করে তার গাড়িতে গিয়ে বসলেন। পোয়ারো গাড়ি চালিয়ে দিলেন।

গাড়ি চলতে শুরু করলে ক্যাথারিন বলল, তদন্তের কাজ কতটা এগিয়েছে মঁসিয়ে।

–পুলিশের বিশ্বাস, তারা প্রায় ফয়সালা করে এনেছে। এখন হত্যাকারীকে বিচারালয়ে তোলা বাকি।

–তার মানে! পুলিশ কি হত্যাকারীকে বের করেছে না কি?

–পুলিশ তো সেই কথাই বলছে। তাদের বিশ্বাস, কাউন্টই এই নাটকের নায়ক, অর্থাৎ সেই-ই হত্যাকারী।

বার বার পুলিশের কথা বলছেন কেন? আপনি কি ওকে হত্যাকারী মনে করেন না?

–আমি কিছুই মনে করি না; কারণ আমি কাউন্ট সম্বন্ধে এখনো বিশেষ কিছুই জানি না।

–হ্যাঁ, ভাল কথা, মিঃ ক্যাথারিন-এর খবর কি?

–আমিও তো তাই জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম আপনাকে। আপনার সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল?

-হ্যাঁ, হয়েছিল। একবার মার্গারেট ভিলায় আর একবার নেগ্রেসকোতে।

–ব্লু-ট্রেনে তাকে দেখেছিলেন কি?

–দেখেছিলাম।

–ডাইনিং কোচে?

–না। মাদাম ক্যাথারিন-এর কামরায় ওকে ঢুকতে দেখেছি। –ঠিক বলছেন?

–নিশ্চয়ই।

–আশ্চর্য ব্যাপার! আচ্ছা, কাউন্ট দ্য রোচিকে দেখতে পেয়েছিলেন কি?

–না। নয়েন স্টেশনে একজন যুবককে ট্রেন থেকে নামতে দেখেছিলাম বটে, কিন্তু আমার মনে হয়েছিল সে প্ল্যাটফর্মে পায়চারি করতে নামছে।

–যুবকটির চেহারা কিরকম?

–তার মুখটা আমি দেখতে পাইনি। গায়ে একটা ওভারকোট এবং মাথায় টুপি ছিল। ঐ যুবকটি ছাড়া আরও একজন লোককে দেখেছিলাম। বেশ মোটা, তাকে দেখে আমার ফরাসী বলে মনে হয়েছিল। সে তখন এক কাপ কফি পান করছিল প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে। ওরা দুজন ছাড়া আর সবাই ছিল রেল কর্মচারি।

 

আবার মিরেলি -দি মিস্ট্রি অফ ব্লু ট্রেন ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

–আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে কাউন্ট ট্রেনে ওঠেইনি। সে নিজেও এই কথাই বলেছিল। আমরা পৌঁছে গেছি।

ক্যাথারিন বাইরে দেখল নেগ্রেসকোর সামনে গাড়িটাকে পার্কিং-এর জন্যে নির্দিষ্ট স্থানে নিলেন পোয়ারো।

কয়েক মিনিটের মধ্যে ক্যাথারিনকে নিয়ে মিঃ আলডিনের স্যুইটে হাজির হলেন পোয়ারো। মিঃ আলডিন ক্যাথারিনকে দেখেই বললেন, তুমি আসাতে আমি খুবই খুশী হয়েছি। প্রথম যেদিন তোমার সঙ্গে আমার পরিচয় হয় সেদিন আমার পাশে রুথ ছিল। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন আলডিন। কিন্তু আজ সে কোথায়?

কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য দুজনের মনকেই ভারাক্রান্ত করে তুলল।

মিঃ আলডিন তাঁর একমাত্র সন্তানকে হারিয়েছেন। তার মানসিক অবস্থাটা ক্যাথারিন বুঝতে পারলো। রুথের কথা মনে পড়ায় তার অন্তরটাও কেঁদে উঠল।

ক্যাথারিনকে চুপ করে থাকতে দেখে আলডিন বললেন, ওসব কথা ভেবে মন খারাপ করে লাভ নেই। আমি তোমার কাছে কয়েকটা কথা জানবার জন্যে দেখা করতে চেয়েছি।

-কি জানতে চান, বলুন।

–ট্রেনে রুথ তোমাকে কিছু বলেছিল কি?

–হ্যাঁ, বলেছিলেন।

–সব কথা বলতে কোনো আপত্তি আছে?

–না। এখন আর আপত্তি নেই।

–মানে?

–কারণ, তিনি আমাকে এমন কয়েকটি কথা বলেছিলেন যে, তিনি বেঁচে থাকলে আমি কাউকেই বলতাম না। কিন্তু আজ উনি বেঁচে নেই তাই আমার কোনো আপত্তি নেই।

এই সময় মিঃ আলডিন বললেন, যদি কিছু মনে না করেন মিঃ পোয়ারো, দয়া করে একটু পাশের ঘরে গেলে ভালো হয়। মিস গ্রে-র সঙ্গে আমি গোপন কিছু আলোচনা করতে চাই। তুমিও যাও কিংটন।

পোয়ারো বললেন, এতে মনে করার কি আছে? আসুন কিংটন।

ওরা যাবার পর মিঃ আলডিন বললেন, এবার সব খুলে বল। কোনো কিছু গোপন করার, দরকার নেই।

রুথ-এর সঙ্গে তার যা কথা হয়েছিল সবই খুলে বলল ক্যাথারিন। রুথ-এর সঙ্গে কাউন্টের গোপন প্রেম করার কথা, ওর সঙ্গে মিলতে যাচ্ছিল সে কথা, এমনকি সে রুথকে যে উপদেশ দিয়েছিল এবং তার উপদেশ শুনে রুথ কি বলেছিল সব কথাই বলল ক্যাথারিন।

সব কথা শুনে মিঃ আলডিন বললেন, তুমি রুথকে সত্যিই সদুপদেশ দিয়েছিলে কিন্তু সে প্রথমে তোমার কথায় রাজী হয়েও পরে আবার মত পরিবর্তন করল কেন?

আমার মনে হয় গেয়ার দ্য নয়েন স্টেশনে পৌঁছবার পরই তিনি কোনো বিশেষ কারণে তার মত পরিবর্তন করেছিলেন। কেন করেছেন সেটা বলা আমার পক্ষে অসম্ভব।

কাউন্ট-এর সঙ্গে কোথায় দেখা করবে বলে সে স্থির করেছিল? প্যারীতে, না রিভিয়ারায়।

–সেকথা তিনি কিছুই বলেননি আমাকে।

–কিন্তু একথাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি সময় মত সবই জানা যাবে।

মিঃ আলডিন চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে উঠলেন। তারপর পাশের ঘরের দরজাটা খুলে পোয়ারোকে আসতে অনুরোধ করলেন। পোয়ারো এলে মিঃ আলডিন বললেন, আজ আমার এখানে আপনারা লাঞ্চ খেলে আমি খুবই খুশী হব।

ক্যাথারিন বিনীতভাবে তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল, আপনার কথাটা রাখতে পারছি না। বলে আমি খুবই দুঃখিত। দিদি আর লেনক্সের সঙ্গে লাঞ্চ খাব বলেই কথা আছে। ওঁরা আমার জন্যে অপেক্ষা করছেন। আমাকে এখুনি যেতে হবে।

ক্যাথারিন চলে যেতে চায় শুনে কিংটন বলল, তাহলে আপনাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আসি।

-চলুন।

ক্যাথারিন আর কিংটন ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ক্যাথারিনকে তুলে দিয়ে এসে দেখল মিঃ আলডিন পোয়ারোর সঙ্গে কথায় ব্যস্ত। মিঃ আলডিন বলছিলেন, রুথ-এর উদ্দেশ্যটা যদি জানা যেত ব্যাপারটা বোঝা যেত। মিস গ্রে-র কথাতে বোঝা গেল, হয়তো তার প্যারীতেই নামার কথা ছিল কিন্তু পরে মত বদল করেছে। আবার এও হতে পারে মিস গ্রে-কে সে তার সব কথা খুলে বলেনি। কিন্তু মিস ম্যাসন-এর কথায় মনে হচ্ছে শয়তান কাউন্ট রুথ-এর সঙ্গে ট্রেনে দেখা করেছিল। এখানেই জট পাকাচ্ছে। কি বল কিংটন?

–কি বলছেন স্যার? আমি ঠিকমত শুনতে পাইনি।

–তুমি কি জেগে স্বপ্ন দেখছ? তোমার এরকম অন্যমনস্কতা তো আগে দেখিনি। ও, তুমি এতক্ষণ ঐ মেয়েটির কথা চিন্তা করছিলে!

লজ্জায় মাথা নত করল কিংটন। তা দেখেই বোঝা গেল যে, ক্যাথারিনকে দেখে সে মজেছে।

.

১৯.

টেনিস কোর্টে

কয়েকদিন পরের কথা।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই ক্যাথারিন প্রাতঃভ্রমণ সেরে বাড়ি ফিরতেই লেনক্স বলল, তোমার নতুন বন্ধুটি ফোন করেছিল মাসী।

নতুন বন্ধু আবার কে?

–মিঃ আলডিন-এর সেক্রেটারী মিঃ কিংটনের কথা বলছি। বারো বছর আগে যুদ্ধক্ষেত্রে রাইফেলের বুলেটে একবার ঠ্যাং ভেঙেছিল, এবার দেখছি হৃদয় ভেঙেছে অন্য একটি বুলেটে।

-ঠ্যাং ভেঙেছিল মানে?

–উনি তখন সেনাবাহিনীতে চাকরী করতেন, সম্ভবতঃ মেজর ছিলেন। সেই সময় একবার গুরুতর আহত অবস্থায় মায়ের হাসপাতালে ছিলেন বেশ কিছুদিন।

-তোমার মা বুঝি হাসপাতাল খুলেছিলেন?

-হ্যাঁ। আহত সৈনিকদের জন্য একটা একজিলিয়ারী হাসপাতাল খুলেছিলেন মা। আমার তখন আট-নয় বছর হবে।

লেডী টাম্পলিন সেই সময় সেখানে এলেন, তাকে দেখে ক্যাথারিন বলল, মিঃ কিংটন ফোন করেছিলেন শুনলাম। কি বলছিলেন?

 

আবার মিরেলি -দি মিস্ট্রি অফ ব্লু ট্রেন ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

-বলছিলেন আজ বিকেলে তুমি টেনিস খেলতে রাজী আছ কি না। রাজী থাকলে তিনি তোমাকে নিয়ে যাবেন।

একথাও বললেন যে, মিঃ আলডিনের নির্দেশেই তিনি ফোন করেছেন।

মায়ের কথার জের টেনে লেনক্স বলল, তোমার তরফ থেকে আমরা কিন্তু আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছি। তাকে যথাসময়ে আসতে বলে দিয়েছি।

–সে কি! আমি যাব কিনা, তা না জেনেই বলে দিলে?

–হ্যাঁ, দিলাম। এটা যদি মিঃ কিংটন-এর ব্যক্তিগত নিমন্ত্রণ হতো তাহলে স্বতন্ত্র। নিমন্ত্রণটা মিঃ আলডিন-এর বলে না বলতে পারলাম না। বুড়োর সঙ্গে পরিচয় থাকাটা বিশেষ দরকার।

–আমার, না তোমার?

–উভয়েরই বলতে পার। তার সঙ্গে পরিচিত হতে আমি নিশ্চয়ই চাই।

এই প্রসঙ্গে লেডী টাম্পলিন বললেন, আমিও তো পরিচিত হতে চাই তার সঙ্গে। শুনেছি তিনি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনকুবের। এ রকম লোকের সঙ্গে পরিচয় থাকলে সম্মান বাড়ে।

–এমনিতেই কি তোমার সম্মান কম দিদি?

বলেই সে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে গিয়ে একটা মন্তব্য কানে গেল–”কিংটন-এর সঙ্গে ওকে সুন্দর মানাবে কিন্তু।

লাঞ্চের একটু পরেই কিংটন এসে গেল। গাড়ি থেকে নামতেই লেডী টাম্পলিন তাকে মৃদু হেসে অভ্যর্থনা করল। আসুন মিঃ কিংটন। ক্যাথারিন আপনার জন্যেই অপেক্ষা করছে।

-কোথায়?

–নিচের ড্রয়িংরুমে। আপনি আসুন।

ড্রয়িংরুমে ঢুকে কিংটন দেখল ক্যাথারিন ও লেনক্স গল্প করছে।

লেনক্স বলল, আসুন মঁসিয়ে, এই নিন আপনাদের শিকার।

তার মানে?–কিংটন-এর চোখে বিস্ময়।

–না না। আমি আপনাকে মিন করছি না। আপনাদের কথাটা কিন্তু বহুবচন। কথাটা আমি মিঃ আলডিনকে মিন করেছি।

–আপনি কিন্তু মিঃ আলডিনের ওপর অবিচার করেছেন। তিনি এখন ষাটের কাছাকাছি।

–তাতে কি হয়েছে? টাকার জোর থাকলে বুড়োও যুবক হয়ে যাবে।

-তা যা বলেছেন। মিঃ আলডিনকে দেখলে কেউ বলতে পারবে না যে, তার অত বয়স হয়েছে। দেখলে চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশের বেশি মনে হয় না।

–তাহলে তো বিপদের কথা।

–কি রকম?

–ধেড়ে রোগের লক্ষণ বলে মনে হচ্ছে। বুড়ো বয়সে ধেড়ে রোগ হয় জানেন তো?

-লেনা কি যা তা বলছ। এরকম একজন মানী লোকের সম্বন্ধে সমীহ করে কথা বলতে হয়।–বললেন টাম্পলিন।

-সমীহ করেই তো বলছি। তবে মাসীর ওপরে তার যে রকম টান দেখছি তাতে মনে হচ্ছে …..

-মিঃ আলডিন আমাকে ভালোবেসে ফেলেছেন তাই তো? হ্যাঁ, তিনি আমাকে ভালোবাসেন তার মেয়ের মতো। তাই না মিঃ কিংটন?

-ঠিক বলেছেন। এবার কিন্তু আমাদের বেরিয়ে পড়া দরকার। আর দেরি না করাই উচিত।

ক্যাথারিন বলল, আমি তৈরি হয়েই আছি, চলুন। গাড়িতে দুজনে পাশাপাশি বসল। কিংটন গাড়ি চালাতে চালাতে বলল, মিঃ পোয়ারোও আসছেন টেনিস লনে।

-তাই নাকি! তাহলে তো মনে হচ্ছে ওখানে টেনিস খেলা ছাড়া অন্য খেলাও চলবে।

-আমারও সেইরকম ধারণা। কারণ মিঃ পোয়ারো কখনও বাজে সময় নষ্ট করে না।

–উনি কি হত্যাকারীকে ধরতে পারবেন বলে মনে হয় আপনার?

–নিশ্চয়ই পারবেন। ওর কর্মদক্ষতার ওপর আমার যথেষ্ট আস্থা আছে। আমার তো মনে হয় উনি কাউন্টের জন্যেই টেনিস লনে আসছেন। কাউন্ট বুদ্ধিমান স্বীকার করলেন না। কিন্তু এবারে ওনার হাত থেকে পিছলে বার হওয়া কঠিন ব্যাপার।

–আপনার তাহলে ধারণা কাউন্টই মাদাম ক্যাথারিন-এর হত্যাকারী?

ধারণা নয় মিস গ্রে–আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, কাউন্টই মাদাম ক্যাথারিনকে হত্যা করেছেন। এবারে ওর হাতে কয়েকদিনের মধ্যেই হাতকড়া পড়বে।

তারা টেনিস লনে এসে পৌঁছল। গাড়ি থেকে নামতেই মিঃ পোয়ারোর সঙ্গে দেখা। তার বেশবাসের ঘটা দেখে ক্যাথারিন বলল, আপনাকে ভারী সুন্দর দেখাচ্ছে এই পোশাকে।

-তাই নাকি! কিন্তু সুন্দর দেখাবার বয়স তো অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছি।-হেসে বললেন পোয়ারো।

–মিঃ আলডিন কোথায় মঁসিয়ে?–কিংটন বলল।

–তিনি তার সীটেই আছেন। লনে ঢুকলেই দেখবে। এই সময় ড্রেক ক্যাথারিনকে আসতে দেখা গেল।

পোয়ারো বললেন, কি আশ্চর্য! মিঃ ক্যাথারিনও এসেছেন।

কিংটন এগিয়ে সাদর সম্ভাষণ জানাল তাকে। প্রতি সম্ভাষণ জানাল ক্যাথারিনও। মিঃ ক্যাথারিন বলল, মিস গ্রেও এসেছেন দেখছি। আপনার দিদিও এসেছেন নাকি?

-না।

–চলুন, মাঠে ঢোকা যাক।

মাঠে ঢুকে সবাই আসন গ্রহণ করল। মিঃ ক্যাথারিন আর মিস গ্রে পাশাপাশি বসল। তার পাশেই পোয়ারো এবং পোয়ারোর পাশে কিংটন বসল।

আসন গ্রহণ করবার পর মাঠের অপরদিকে মিঃ আলডিনকে দেখে কিংটন দেখা করতে চলে গেল।

মিঃ ক্যাথারিন-এর দিকে তাকিয়ে মিঃ পোয়ারো বললেন, লোকটা বেশ চৌকস, তাই না মঁসিয়ে?

–হ্যাঁ, সেই রকমই মনে হয়।

— পোয়ারো পকেট থেকে একটা সিগারেট কেস বার করে ক্যাথারিন-এর সামনে ধরলেন, দেখুন তো মাদমোয়াজেল, এটা আপনার সিগারেট কেস কিনা?

ক্যাথারিন দেখল কৌটোর ঢাকনির ওপরে Kঅক্ষরটি এমব্রস করা আছে।-না মঁসিয়ে, ওটা আমার জিনিস নয়।

–আমার কিন্তু মনে হয়েছিল আপনার নামের আদ্যক্ষর K বলেই এটা আপনার আর আপনি এটা ভুলে মাদাম ক্যাথারিন-এর কামরায় ফেলে এসেছিলেন।

পোয়ারো এবার মিঃ ক্যাথারিনকে বললেন, দেখুন তো মঁসিয়ে এটাকে আপনি চিনতে পারেন কিনা? হয়তো এটা মাদাম ক্যাথারিন-এর সিগারেট কেস।

মিঃ ক্যাথারিন ভালো করে দেখে বললেন, না মঁসিয়ে, এরকম কোনো সিগারেট কেস আমার স্ত্রীর ছিল না। তবে হয়তো তিনি সম্প্রতি কিনেছেন এটা।

–আপনার নয় তো?

–আমার নিশ্চয়ই না।

মিঃ ক্যাথারিন-এর কথার স্বরে বোঝা গেল সত্যিই। তবু আবার সন্দেহটা নিরসন করবার জন্য বললেন, ক্ষমা করবেন মঁসিয়ে। আমি ভেবেছিলাম এটা তাহলে আপনার হতেও পারে। কারণ সে রাত্রে আপনি তো মাদামের কামরায় গিয়েছিলেন।

 

আবার মিরেলি -দি মিস্ট্রি অফ ব্লু ট্রেন ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

–আমি গিয়েছিলাম, কে আপনাকে বলেছে? না, আমি কখনও সেখানে যাইনি।

–ক্ষমা করবেন মঁসিয়ে, আমি কথাটা মিস গ্রের কাছে শুনেছি।

কথাটা শুনে ক্যাথারিন বেশ বিব্রত বোধ করল। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে ক্যাথারিন-এর দিকে তাকিয়ে, ভুল করেছেন মিস গ্রে। হয়তো আমি রুথের পোষাকে কামরায় থাকায় আপনি ভুল দেখেছেন।

ইতিমধ্যেই মিঃ আলডিনকে আসতে দেখে মিঃ ক্যাথারিন বললেন, আমি এবার আপনাদের কাছে বিদায় নিতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ আমার শ্বশুরমশায়টিকে আমি একেবারেই সহ্য করতে পারি না।

মিঃ আলডিন এসে ক্যাথারিনকে দেখে বললেন, তুমি এসেছ দেখে আমি খুব খুশী হয়েছি। আরে মিঃ পোয়ারো যে, আপনি টেনিস খেলা দেখতে আসবেন আমি ভাবতেও পারিনি।

মিঃ আলডিনের খোঁচাটা বুঝতে পেরে পোয়ারো বললেন, ভাবতে না পারাটাই স্বাভাবিক, কারণ আমি ডিটেকটিভদের ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়েছি। খেলাধূলা-আমোদ-প্রমোেদ সব কিছু ছেড়ে দিনরাত কেবল মক্কেলদের কাজ করাই ডিটেকটিভদের ধর্ম। তাই না? উল্টো খোঁচা খেয়ে মিঃ আলডিন চুপ করলেন।

পোয়ারো কিন্তু তখনও বলে চলেছেন, আপনার কোনো চিন্তার কারণ নেই মিঃ আলডিন। আমি নিতান্ত অকারণে খেলা দেখতে আসিনি। আমাদের বিপরীত দিকে যে দাড়িওয়ালা ভদ্রলোকটি বসে আছেন, তার সঙ্গে দেখা করতেই আমাকে এখানে আসতে হয়েছে।

লোকটিকে একবার চকিতে দেখে নিয়ে মিঃ আলডিন বললেন, লোকটি কে?

–উনি হলে বিখ্যাত রত্ন ব্যবসায়ী মিঃ পপোপুলাস। ভদ্রলোক হঠাৎ প্যারী থেকে এখানে ছুটে এসেছেন দেখে মনে হচ্ছে উনি অকারণে আসেননি।

পোয়ারের কথায় মিঃ আলডিন খুব খুশী হলেন। তিনি এবার বেশ কুণ্ঠিত হয়ে বললেন, আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন মিঃ পোয়ারো। আপনার সম্বন্ধে আমি যে মন্তব্য করেছিলাম তার জন্যে আমি খুবই দুঃখিত।

দুঃখিত হবার কিছু নেই, কিন্তু এবার আরও কিছু নতুন সংবাদ শুনুন। ইতিমধ্যে কাউন্টের বাড়িটা সার্চ করেছে পুলিশ।

-সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেছে কি?

–না।

–কিছুই পাওয়া যায়নি?

–না। এ ছাড়াও কিছু আছে। কাউন্টের অনুসন্ধান করে একটা জিনিস পাওয়া গেছে।

পোয়ারো একবার চারিদিক দেখে নিলেন কেউ কিছু লক্ষ্য করছে কিনা। তারপরে তিনি পকেট থেকে একটা ভেলভেটের বাক্স বের করে আলডিন-এর হাতে দিলেন।

বললেন, এই জিনিসটা পাওয়া গেছে কাউন্টকে ফলো করে। দেখুন মঁসিয়ে।

বাক্সটার ভেতরের জিনিস সব ঠিক আছে দেখে অবাক হয়ে আলডিন বললেন, আশ্চর্য! এ যে হার্ট অফ ফায়ার, কিভাবে উদ্ধার করলেন।

-একটা লেটার বক্সের ভেতর থেকে। কাউন্ট মহোদয় এই প্যাকেটের উপরে যথারীতি প্রাপকের ঠিকানা লিখে পোস্টঅফিসের বক্সে ফেলে দিলেন।

কিন্তু প্রাপকের হাতে পৌঁছানোর আগেই আমার হাতে এলো। কাল দুপুরের পরে কাউন্টকে দুজন পুলিশ অফিসারকে নিয়ে আমি অনুসরণ করি। বলাবাহুল্য আমরা সবাই ছদ্মবেশে ছিলাম। আমাদের গাড়িটাকে পেছনে দেখে কাউন্ট তার টু-সীটারের স্পীড বাড়িয়ে দিলেন। আমরাও ইচ্ছে করে স্পীড কমিয়ে বিশেষ শক্তিশালী লেন্স-এর দূরবীনের সাহায্যে আমি বহুদূর থেকে তাকে লক্ষ্য করি। আমি স্পষ্ট দেখলাম একটা প্যাকেট পোস্টঅফিসের লেটার বক্সে ফেললেন। এরপর গাড়িতে উঠে মেন্টন-এর দিকে চলে গেলেন।

-তারপর?

-তারপর আমরা সদলবলে পোস্টঅফিসে গিয়ে পোস্টমাস্টারকে বলে লেটার বক্স খুলে এই প্যাকেটটা উদ্ধার করি।

প্যাকেটের ওপর প্রাপক হিসাবে যার নাম ঠিকানা ছিল তার ওপর নজর রাখা হচ্ছে। কি?

-না, কারণ প্রাক ছিল এমন একটা প্রতিষ্ঠান যাদের কাজ হলো চিঠিপত্র এবং পার্শেল নিজেদের কাছে রেখে পরবর্তী কালে কিছু কমিশন আদায় করে প্রেরকের কাছে চিঠি নিয়ে কোনো লোক এলে তাকে নির্দিষ্ট বস্তুটি দেওয়া। চিঠি বা পার্শেলের ভেতরে কি থাকে তা তারা জানতে চেষ্টা করে না। এই কারণেই সেখানে খোঁজখবর করিনি। এবার আমার কাজে যাচ্ছি মঁসিয়ে।

-আবার কবে দেখা হবে আপনার সঙ্গে?

-কাল এগারোটার সময়ে। আশা করি তখন আরও কিছু নতুন সংবাদ আপনাকে দিতে পারব। ওসব নিয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা করবেন না। চলি।

পোয়ারো যেতেই আলডিন, ক্যাথারিন এবং কিংটনকে দেখলেন তারা গল্পে মশগুল।

 

আবার মিরেলি -দি মিস্ট্রি অফ ব্লু ট্রেন ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

২০

মঁসিয়ে পোপুলাস

পূর্বোক্ত ঘটনার পরের দিনের কথা।

ব্রেকফাষ্ট করছিলেন পপোপুলাস, সামনের চেয়ারে মুখোমুখি বসেছিল তার মেয়ে জিয়া।

হোটেলের বয় এসে পপোপুলাসের হাতে একটা কার্ড দিল। কার্ডখানা দেখে পপোপুলাস বললেন, ভদ্রলোককে আসতে বলো।

বয় চলে গেলে তিনি জিয়াকে বললেন, টিকটিকি পোয়ারো আসছে রে, কি ব্যাপার! ও হঠাৎ আমার পেছনে লাগল কেন?

জিয়া বলল, গতকাল ওকে টেনিস লনে দেখেছিলাম। মনে হয় উনি কোনো খোঁজখবর পেয়েছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে উনি নাক গলাচ্ছেন কেন?

পপোপুলাস বললেন, আমার মনে হয় মিঃ আলডিন তাকে নিযুক্ত করবেন। রুথ এবং হার্ট অব ফায়ার দুটো হারিয়ে ভদ্রলোক একেবারে ক্ষেপে গেছেন।

পোয়ারো এসে হাজির হলেন সেখানে, সুপ্রভাত মিঃ পপোপুলাস। ভালো আছেন নিশ্চয়ই?

জিয়ার দিকে তাকিয়ে, আমাকে ভুলে যাননি তো মাদমোয়াজেল?

আপনাকে কেউ ভুলতে পারে? দয়া করে বসুন মঁসিয়ে। পোয়ারোর বসবার পর পপোপুলাস বললেন, কফি চলবে কি?

–না, এই মাত্র কফি খেয়ে আসছি।

–তা, এখানে কি মনে করে?

-কেন? পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে কি আসতে নেই? পপোপুলাস হেসে বললেন, পুরনো বন্ধুর জন্যে এমন টান যে প্যারী থেকে রিভিয়ারায় ছুটে এসেছেন, আমি তাহলে একজন কেউকেটা বলুন!

পোয়ারো হেসে বললেন, মাঁসয়ে পপোপুলাস কি নিজেকে এত অখ্যাত মনে করেন? আপনি যে একজন বিখ্যাত লোক, একথা কে না জানে।

–অন্য কেউ না জানলেও যে সব গোয়েন্দা আমার ওপর গোপনে নজর রাখেন তাদের চোখে আমি একদিক দিয়ে বিখ্যাত বৈকি। যা এবারে দয়া করে আসল কথাটা ব্যক্ত করুন পোয়ারো।

–আমি কোনো একটা ব্যাপারে আপনার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছি মিঃ পপোপুলাস।

-আশ্চর্য! আমি সাহায্য করব বিশ্ববিখ্যাত ডিটেকটিভ এরকুল পোয়ারোকে! এরকম অদ্ভুত কথা এর আগে কোনোদিন শুনেছি বলে মনে হয় না।

–না, ঠাট্টা নয় বন্ধু। সত্যিই আমি আপনার সাহয্যপ্রার্থী।

–বেশ, কি সাহায্য করতে হবে বলুন। ব্যাপারটা নিশ্চয়ই খুব গুরুতর তাই না?

–হ্যাঁ, ব্যাপারটা গুরুতরই বটে। মাদাম ক্যাথারিন-এর মৃত্যুর ব্যাপারে আমি তদন্ত করছি।

–কাগজে পড়েছি খবরটা। কে বা কারা তাকে ব্লু ট্রেনের কামরার ভেতরে হত্যা করেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি আপনাকে কি সাহায্য করতে পারি?

পকেট থেকে ভেলভেটের বাক্সটা বের করে পপোপুলাস-এর হাতে দিয়ে বললেন, দেখুন ত, রুবীগুলোর দাম কত হবে?

বাক্সটা খুলে রুবীগুলোর দিকে তাকিয়ে পপোপুলাস বললেন, আপনি কি সত্যিই এগুলোর দাম জানতে চান, না আপনার অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে?

–ঠিকই ধরেছেন। আমি জানি, এগুলোর দাম পাঁচ হাজার পাউণ্ডও হবে না।

-হা নকল হলেও এগুলো দেখতে আগের মতই। সাধারণ লোকে নকল বলে বুঝতেই পারবে না। কিন্তু এগুলো আপনার হাতে এলো কি করে? কার কাছে ছিল?

–ছিল কাউন্ট দ্য লা রোচির কাছে।

–আশ্চর্য ব্যাপার তো!

–হ্যাঁ, ব্যাপারটা একটু আশ্চর্য বটে। এবার শুনুন এগুলো বোঝা যাচ্ছে নকল। কিন্তু আসল রুবীগুলো মাদাম ক্যাথারিন-এর কামরা থেকে অপহৃত হয়েছে।

–কি বলছেন!

–শুনুন বন্ধু! চোরাই মাল উদ্ধার করার কাজ পুলিশের।

আমি শুধু হত্যাকারীকে বের করতে চাই। মিঃ আলডিন আমাকে এই কাজের জন্যেই নিযুক্ত করেছেন। তবে হত্যাকারীর সন্ধান করতে গেলেই রুবীগুলোর ব্যাপারও এসে যায়। কারণ মাদাম ক্যাথারিন-এর হত্যা আর রুবী অপহরণ দুটো ঘটনাই পরস্পর সংযুক্ত।

পপোপুলাস হেসে বললেন, তারপর?

–আমার ধারণা, রুবীগুলো শীঘ্রই হস্তান্তরিত হবে বা হয়ে গেছে এই শহরেই। এই কারণেই মনে হচ্ছে আমার–আপনি হয়তো আমাকে সাহায্য করতে পারবেন।

–কিভাবে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি বলুন।

–আপনার মতো বুদ্ধিমান লোককে কি খুলে বলতে হবে? রাশিয়ার কোনো ভূতপূর্ব গ্র্যাণ্ড ডিউক, অষ্ট্রেলিয়ার কোনো কোনো আর্কডাচস, কিংবা ভারতের কোনো মহারাজা যদি কোনো দামী রত্ন বিক্রি করতে চান তাহলে সেগুলো কোথায় এবং কার কাছে যায় সে খবর আপনার জানা আছে।

-হ্যাঁ, এ ধরনের গোপন লেনদেনের ব্যাপারে আমার কিছুটা সুনাম আছে বটে। কারণ আপনার মতো আমিও গোপনীয়তা রক্ষা করে থাকি।

–তাহলে বুঝতে পারছেন কেন আমি আপনার কাছে সাহায্য চাইছি। এর সঙ্গে পুলিশের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

পপোপুলাস বললেন, ধরুন এ ব্যাপারটা যদি আমার জানা থাকে, তবু সে কথা আপনাকে বলব কেন? পেশাগত গোপনীয়তা আমি জানাতে রাজী নই মিঃ পোয়ারো।

–কথাটা ঠিকই বলেছেন মঁসিয়ে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি আশা করি আমাকে অন্ততঃ বলবেন সেটা। কারণ সতের বছর আগে কোনো একজন নাম করা লোক তার দামী জিনিস আপনার কাছে জামিন হিসাবে গচ্ছিত রেখে ছিল এবং জিনিসটি আপনার হেফাজত থেকে চুরি হয়েছিল। সে সময় আমিও আপনাকে কোনো বিশেষ ব্যাপারে গোপন ভাবেই সাহায্য করেছিলাম।

পোয়ারো একবার জিয়ার দিকে দেখলেন সে অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে কথাগুলো শুনছে। পোয়ারো বলে চললেন, আমি তখন প্যারীতে। আপনি আমাকে সেখান থেকে এনে সেই চোরাই মাল উদ্ধারের কাজ আমার ওপরে ছেড়ে দিলেন। এবং আমি সেই জিনিস উদ্ধার করে আপনার হাতে তুলে দিয়েছিলাম।

–সে কথা আমি ভুলিনি মিঃ পোয়ারো। আমি এত অকৃতজ্ঞ নই।

–হ্যাঁ আপনাদের এই গুণটা আছে বটে।

–গ্রীক জাতির কথা বলছেন তো?

-না মঁসিয়ে, আমি ইহুদী জাতির কথা বলছি। পোয়ারোর কথায় বিস্মিত হলেন পপোপুলাস। তার ধারণা ছিল তার প্রকৃত পরিচয় কেউ জানে না। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। আমি ইহুদী।

-তাহলে আপনি আমাকে সাহায্য করছেন তো?

–আপনাকে সাহায্য করতে পারলে আমি খুবই খুশী হতাম, কিন্তু দুঃখের বিষয় এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তবে আপনি যদি চান তাহলে রেসের একটা টিপস দিতে পারি আপনাকে। রেসের মাঠে যান তো!

–তা যাই বৈকি!

-তাহলে শুনুন। আগামী রেসের দিন মাকুইন নামের ইংলিশ ঘোড়াটা বাজি মারবে বলে খবর পেয়েছি।

পপোপুলাসের কাছে রেসের টিপসটা পেয়ে খুশী খুশী মনে পোয়ারো পপোপুলাস এবং জিয়ার কাছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।

সেই দিন স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডের ইনসপেক্টর মিঃ জ্যাক-এর কাছে একখানা জরুরী চিঠি লিখলেন পোয়ারো। চিঠিতে তিনি মার্কুইস নামে পরিচিত একজন ক্রিমিন্যালের সম্বন্ধে সব কথা জানতে চাইলেন।

আবার মিরেলি -দি মিস্ট্রি অফ ব্লু ট্রেন ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

আমাদের আরও পোষ্ট দেখুনঃ

Bangla Gurukul Logo আবার মিরেলি রচনা -দি মিস্ট্রি অফ ব্লু ট্রেন ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

হোটেলের পথে চলতে চলতে -মার্ডার অন দ্য লিঙ্কস (১৯২৩) ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

লন্ডন এক্সপ্রেস -মার্ডার অন দ্য লিঙ্কস (১৯২৩) ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

তেল ইয়ারিমাহ -মার্ডার ইন মেসোপটেমিয়া ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

দ্য ইনক্রেডিবল থেফট -মার্ডার ইন দ্য মিউস (১৯৩৭) ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

আত্মহত্যা নাকি খুন -মার্ডার ইন মেসোপটেমিয়া ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

Leave a Comment