অস্বস্তিতে পড়লাম রচনা
Table of Contents
অস্বস্তিতে পড়লাম রচনা -দি মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার্স অ্যাট স্টাইলস ( এরকুল পোয়া-রো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
পোয়া-রোর চোখে মুখে উচ্ছ্বাস দেখলাম। মেরী ক্যাভেণ্ডিসকে দেখে ও যেন খুশীতে ফেটে পড়ল। সে মেরীর ঘরে একটা সভার আয়োজন করার অনুমতি চাইল। তাতে সকলের উপস্থিতি একান্ত কাম্য বলে জানাল।
মেরী ক্যাভেণ্ডিস বিষণ্ণ হাসি হেসে বললেন তিনি তো পোয়া-রোকে সব ক্ষমতাই দিয়েছেন।
পোয়া-রো খুশী মনে আমাদের সকলকে বসার ঘরে নিয়ে চেয়ারগুলো ঠিক করে রাখতে লাগলো। এক একটা চেয়ার দেখিয়ে পোয়া-রো বলতে লাগল এখানে মিস হাওয়ার্ড বসবেন, এখানে সিনথিয়া, তার পাশে মাসিয়ে লরেন্স বসবেন। আর দুটো চেয়ার দেখিয়ে বলল সেখানে ডরকাস আর অ্যানী বসবে। পোয়া-রো বলল শুধু মিঃ ইঙ্গলথর্প আসবেন কিনা সেটাই ব্যাপার।
মিস হাওয়ার্ড কথাটা শুনে লাফিয়ে উঠে বললেন মিঃ ইঙ্গলথর্প এখানে এলে তিনি চলে যাবেন। পোয়া-রো তাড়াতাড়ি মিস ওয়ার্ডের কানে কানে কিছু বলতেই উনি চুপ করে গেলেন।
একটু পরেই মিঃ ইঙ্গলথর্প এসে গেলেন।
সবাই আসন গ্রহণ করতেই একজন কৌশলী বক্তার মত পোয়া-রো তার বক্তৃতা শুরু করল, বলতে লাগল–এই রহস্যের তদন্তের ভার জন ক্যাভেণ্ডিস তার ওপর দিয়েছিলেন। তদন্তের শুরুতে পোয়া-রো মৃতা মিসেস ইঙ্গলথর্পের শোবার ঘর পরীক্ষা করে। ঘরটা ডাক্তার দুজনের পরামর্শমত বন্ধ রাখা ছিল, ফলে দুর্ঘটনার পর থেকে ঐ ঘরটা সেইভাবেই ছিল। পোয়া-রো জানাল অনুসন্ধান চালিয়ে সে ঘর থেকে তিনটে জিনিস পেয়েছে, প্রথমতঃ এক টুকরো সবুজ সুতো দ্বিতীয়তঃ জানলার কাছে কার্পেটের ওপর কিছু ভিজে দাগ আর তৃতীয়তঃ একটা ব্রোমাইডের গুঁড়োর খালি বাক্স।
পোয়া-রো বলল ঐ সবুজ সুতোর টুকরোটা সে মিসেস ইঙ্গলথর্প আর সিনথিয়ার ঘরের মাঝখানের দরজার তালার ফাঁকে পেয়েছে। এটা আসলে সবুজ রঙের একটা তাগাড় ছেঁড়া টুকরো ছিল।
এই কথাটা শুনে সকলের মধ্যেই একটু উত্তেজনা দেখা দিল। পোয়া-রো বলল, স্টাইলসের বাড়িতে একমাত্র মিসেস ক্যাভেণ্ডিসই এটা ব্যবহার করেন। তাহলে নিশ্চিতভাবে মিসেস ক্যাভেণ্ডিস ঐ মাঝখানের দরজা দিয়ে সিনথিয়ার ঘরে ঢুকেছিলেন।
আমি বললাম দরজাটা তো ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। পোয়া-রো বলল এই কথাটা মিসেস ক্যাভেণ্ডিস বলেছিলেন। তবে গোলমালের সময় দরজাটা বন্ধ করে দেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন।
এরপর পোয়া-রো বলল তদন্তের সময় মিসেস ক্যাভেণ্ডিস বলেছিলেন মিসেস ইঙ্গলথর্পের ঘরে টেবিল পড়ে যাওয়ার শব্দ তিনি শুনতে পেয়েছিলেন নিজের ঘর থেকে। কিন্তু কথাটা সত্য নয়। কারণ পোয়া-রো বলল এটা সে যাচাই করে দেখেছে আমাকে মিসেস ক্যাভেণ্ডিসের ঘরের দরজার কাছে দাঁড় করিয়ে। পোয়া-রো জানাল পুলিশ দুজনের সঙ্গে সে তখন মৃতার ঘরে ছিল। সেই সময় সে নিজে ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দিয়ে টেবিলটা ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু সেই শব্দ মিসেস ক্যাভেণ্ডিসের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আমি শুনতে পাইনি। সুতরাং মিসেস ক্যাভেণ্ডিস যে মিথ্যা কথা বলছে একথা প্রমাণিত।
মিসেস ক্যাভেণ্ডিসের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর ম্লান মুখেও হাসি ফুটে রয়েছে।
পোয়া-রো আবার বলতে শুরু করল। মিসেস ক্যাভেণ্ডিস তার শাশুড়ীর ঘরে কিছু খুঁজছিলেন কিন্তু সেটা খুঁজে পাননি। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই মিসেস ইঙ্গলথর্প জেগে ওঠেন–অসহ্য যন্ত্রণায় তিনি চিৎকার করতে থাকেন। তার হাত লেগে টেবিলটা উল্টে পড়ে যায়। ঐ অবস্থাতেই তিনি ঘন্টি বাজান। মেরীও এই অদ্ভুত পরিস্থিতিতে হকচকিয়ে গেলেন। তার হাত থেকে মোমবাতিটা পড়ে গিয়ে কার্পেটের ওপর মোম ছড়িয়ে পড়ল। বাতিটা তুলে নিয়ে তাড়াতাড়ি তিনি সিনথিয়ার ঘরে ঢুকে পড়ে দরজাটা ভেজিয়ে দিলেন। সেখান থেকে তিনি চাকরবাকরদের নজরে পড়ার ভয়ে বারান্দায় ছুটে গেলেন। কি করবেন বুঝতে না পেরে তিনি দিশেহারা হয়ে গেলেন। তাড়াতাড়ি আবার সিনথিয়ার ঘরে ঢুকে তাকে ধাক্কা মেরে তোলার চেষ্টা করতে লাগলেন, যেন সবাই মনে করে যে তিনি মাত্র ঐ ঘরে এসেছেন। বাড়ির সকলে তখন তাড়াতাড়ি দৌড়ে এসে মিসেস ইঙ্গলথর্পের দরজায় ধাক্কা মারছে। কিন্তু কারও মাথায় আসেনি যে মিসেস ক্যাভেণ্ডিস সকলের সঙ্গে ছিলেন না।
পোয়া-রো মিসেস ক্যাভেণ্ডিসের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল সে ঠিক বলছে কিনা। মেরী মাথা নেড়ে সায় দিলেন।
হঠাৎ লরেন্স চেঁচিয়ে মেরীকে জিজ্ঞাসা করল তাহলে সে উইলটা পুড়িয়েছে কিনা। মেরী মাথা নাড়লেন। পোয়া-রো মাথা ঝাঁকিয়ে বলল শুধুমাত্র একজনের পক্ষেই উইলটা নষ্ট করা সম্ভব। তিনি হলেন স্বয়ং মিসেস ইঙ্গলথর্প।
আমি বলে উঠলাম তা কি করে সম্ভব, তিনি তো সেদিন বিকালেই উইলটা করেছিলেন।
পোয়া-রো বলল আসল ব্যাপার হল মিসেস ইঙ্গলথর্প উইলটা নষ্ট করেছিলেন। ঐদিন তাপমাত্রা প্রায় ৮০ ডিগ্রী ছিল। তা সত্ত্বেও মিসেস ইঙ্গলথর্প তাপচুল্লীর আগুন জ্বালাতে বললেন কেন। নিশ্চয়ই উনি কিছু নষ্ট করার কথা ভেবেছিলেন। কারণ স্টাইলসে কোনো বাজে কাগজপত্র নষ্ট করা হয় না। সুতরাং উইলের মত মোটা কাগজ নষ্ট করার এ ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। তাই তাপচুল্লীর মধ্যে পোড়া কাগজের টুকরো পেয়ে পোয়া-রো এতটুকু অবাক হয়নি বলে জানাল।
এরপর পোয়া-রো বলল সে সমস্যাটাকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করেছে। সেদিন বেলা চারটের সময় ডরকাস কতগুলো টুকরো কথা শুনেছিল-মিসেস ইঙ্গলথর্প রাগত স্বরে বলছিলেন : ভেবো না, স্বামী-স্ত্রীর কলঙ্কের কথা ভেবে আমি চুপ করে থাকবো। এই কথাগুলো নিয়ে পোয়ারো অনেক চিন্তা-ভাবনা করে শেষ পর্যন্ত বুঝেছে কথাগুলো মিসেস ইঙ্গলথর্প তার স্বামীকে বলেননি, বলেছিলেন জন ক্যাভেণ্ডিসকে।
আবার বিকেল প্রায় পাঁচটা নাগাদ একই রকম আরেকটা কথা ডরকাসকে বলেছিলেন কি করবো বুঝতে পারছি না…স্বামী-স্ত্রীর কলঙ্ক বড় মারাত্মক। চারটের সময় তিনি খুবই রেগে ছিলেন, কিন্তু পাঁচটার সময় দারুণ চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন।
পোয়ারো এবার সম্পূর্ণ ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করে বলল, চারটের সময় মিসেস ইঙ্গলথর্পের সঙ্গে ওঁর ছেলে জন ক্যাভেণ্ডিসের ঝগড়া হলে তিনি পুত্রবধূর কাছে সব বলে দেবেন বললেন–এইসব কথাবার্তা আবার মিসেস ক্যাভেণ্ডিস শুনে ফেলেন। সাড়ে চারটে নাগাদ মিসেস ইঙ্গলথর্প স্বামীর অনুকূলে একটা উইল করলে মালী দুজন তাতে সাক্ষর করল। এরপর পাঁচটার সময় ডরকাস মিসেস ইঙ্গলথর্পপকে খুব উত্তেজিত দেখেছিল। আর সেই সময়ই উনি আগুন জ্বালাবার কথা বলেন। এর থেকেই বোঝা যায় সাড়ে চারটে থেকে পাঁচটার মধ্যে এমন কিছু ঘটেছিল যাতে ওঁর মনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। না হলে উইলটা করেও সঙ্গে সঙ্গে সেটা নষ্ট করতে চাইবেন কেন।
পোয়ারো বলে যেতে লাগল, ঐ আধ ঘণ্টার সময় তিনি একাই ছিলেন। কেউ তখন ওঘরে ঢোকেনি। তাহলে তার মনে কি ভাবনা এসেছিল তা শুধুমাত্র অনুমান সাপেক্ষ।
পোয়ারো তার ধারণা কি তা বলল–মিসেস ইঙ্গলথর্পের কাছে কোনো ডাকটিকিট ছিল না। তাই তিনি ডরকাসকে কিছু টিকিট এনে রাখতে বলেছিলেন। একথা জানা গেছে। ডরকাসের কাছ থেকে। ডাকটিকিট পাবার আশায় মিসেস ইঙ্গলথর্প তার স্বামীর ডেস্কের সামনে যান। সেটা তালাবন্ধ থাকায় তিনি চাবি দিয়ে ডেস্কটা খুললেন। টিকিট খুঁজতে গিয়ে উনি হঠাৎ কতকগুলো কাগজের টুকরো পেলেন। ডরকাস এই টুকরোগুলোই তার হাতে দেখেছিল।
![অস্বস্তিতে পড়লাম রচনা -দি মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার্স অ্যাট স্টাইলস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ] 2 অস্বস্তিতে পড়লাম -দি মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার্স অ্যাট স্টাইলস ( এরকুল পোয়া-রো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/05/odnb-9780198614128-e-1012602-graphic-1-full-237x300.jpeg)
মজার ব্যাপার মিসেস ক্যাভেণ্ডিস ভেবেছিলেন ঐ কাগজের টুকরোগুলোতে তার স্বামীর কলঙ্কের প্রমাণ রয়েছে। মেরী তার শাশুড়ীর কাছে ওগুলো দেখতে চাইলে তিনি সত্যি কথাই বলেন যে এর সঙ্গে মেরীর কোনো সম্বন্ধ নেই। মিসেস ক্যাভেণ্ডিস এই কথাটা বিশ্বাস করলেন, মনে মনে ভাবলেন তার শাশুড়ী ছেলের দোষ ঢাকতে চাইছেন। তাই মেরী যেন তেন প্রকারে কাগজের টুকরোগুলো পেতে মনস্থ করলেন। হঠাৎ সেই সুযোগ তিনি পেয়েও গেলেন। মিসেস ইঙ্গলথর্পের হারিয়ে যাওয়া নথী ব্যাগের চাবিটা তিনি খুঁজে পেলেন। উনি জানতেন যে ওর শাশুড়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাগেই রাখেন।
মিসেস ক্যাভেণ্ডিস সন্ধ্যাবেলায় সময় করে সিনথিয়ার ঘরে ঢোকার দরজার তালাটা খুলে রাখলেন। তিনি উদ্দেশ্য সিদ্ধ করার জন্য ভোরবেলাটা বেছে নিয়েছিলেন। মেরী প্রস্তুত হয়ে সিনথিয়ার ঘরের মধ্য দিয়ে তার শাশুড়ীর ঘরে ঢুকলেন।
সিনথিয়া বাধা দিয়ে বলল তার ঘরে কেউ ঢুকলে তো তার ঘুম ভেঙে যেত।
পোয়ারো বলল, ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হলে ঘুম ভাঙা অত সহজ নয়। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ঘুমের ওষুধ!
পোয়ারো এবার সকলের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল, অত চেঁচামেচির মধ্যেও সিনথিয়ার ঘুম ভাঙেনি। এর দুটো কারণ থাকতে পারে–প্রথমতঃ হয়ত সিনথিয়া ঘুমের ভান করেছিলেন। না হয় তাকে ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল। প্রথম সম্ভাবনার কথাটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাই পোয়ারো জানাল যে সব কফির কাপগুলো বিশেষভাবে পরীক্ষা করে। পোয়ারো বলল সে শুনেছিল মিসেস ক্যাভেণ্ডিসই সিনথিয়ার কফিটা এনে দিয়েছিলেন। প্রত্যেক কাপের তলানি সংগ্রহ করে সে বিশ্লেষণের ব্যবস্থা করে, কিন্তু কোনো কাপের কফিতেই কিছু পাওয়া গেল না।
পোয়ারা জানাল আরো একটা ব্যাপারে তার ভুল ভেঙে গেল-কফি আনানো হয়েছিল সাত জনের জন্য, কারণ ঐ সন্ধ্যায় ডঃ বরস্টিনও এসেছিলেন। অ্যানী সাত কাপ কফি এনেছিল, কারণ সে জানত না যে ডাঃ বরস্টিন কফি খান না। অন্যদিকে ডরকাস পাঁচটা কফির কাপ ধুয়েছিল, আরেকটা কাপ মিসেস ইঙ্গলথর্পের ঘরে গুঁড়ো হয়ে পড়েছিল। তাহলে সাত নম্বর কাপটা কোথায় গেল এটাই প্রশ্ন।
পোয়ারো বলল এর থেকে সে নিশ্চিত হল যে সিনথিয়ার কাপটাই পাওয়া যাচ্ছে না। একথা মনে হওয়ার কারণ, প্রতিটা কাপের কফিতেই চিনি ছিল, কিন্তু সিনথিয়া চিনি খান না। আবার অ্যানীর একটা কথা পোয়ারোর মনে সন্দেহের সৃষ্টি করেছিল। সে বলেছিল কোকোর ট্রেতে ও কিছু নুন দেখেছিল। পোয়ারো জানাল সে কোকোর কিছু অংশ রাসায়নিক পরীক্ষা করতে পাঠায়।
লরেন্স বলে উঠল, এই পরীক্ষা তো ডাঃ বরস্টিন আগেই করেছিলেন।
পোয়ারো বলল, ডাঃ বরস্টিন ওতে স্ত্রিকনিন আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করেছিলেন, ঘুমের ওষুধ আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে বলেননি।
পোয়ারো এবার পরীক্ষার ফল দেখাল, বলল মিসেস ক্যাভেণ্ডিস সিনথিয়া ও মিসেস ইঙ্গলথর্প দুজনের কফির কাপেই একটা নিরাপদ ঘুমের ওষুধ মিশিয়েছিলেন। এরপর যখন উনি দেখলেন তার শাশুড়ী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন এবং তার কারণ বিষক্রিয়া তখন তার মনের অবস্থা কি হয়েছিল তা বলার নয়। মেরী একসময় খুব ভয় পেয়ে গেছিলেন, নিজেকে শাশুড়ীর মৃত্যুর জন্য দায়ী মনে করছিলেন। সেজন্য তিনি সিনথিয়ার কফির কাপ আর পিরীচটা নিচে একটা বড় পেতলের ফুলদানীর মধ্যে ফেলে দেন। এগুলো পরে লরেন্স খুঁজে পান। মেরী কোকোটা আর স্পর্শ করেননি। এই ভেবে যে কেউ যদি ওকে সন্দেহ করে। শেষ পর্যন্ত মেরী যখন জানলেন তার শাশুড়ীর মৃত্যুর কারণ স্ত্রিকনিন তখন, খুনটাতে তার কোনো দায়িত্ব নেই ভেবে নিশ্চিন্ত হলেন।
![অস্বস্তিতে পড়লাম রচনা -দি মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার্স অ্যাট স্টাইলস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ] 3 অস্বস্তিতে পড়লাম -দি মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার্স অ্যাট স্টাইলস ( এরকুল পোয়া-রো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/05/agatha-christie.jpeg)
পোয়ারো জানাল একটা রহস্যের জট সে খুলতে পেরেছে। সেটা হল বিষের ক্রিয়া অত দেরিতে প্রকাশ পাওয়ার কারণ। ঘুমের ওষুধ খাওয়ার ফলেই লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে অত দেরি হয়েছিল।
লরেন্স বলল, তাহলে তো এখন সব ব্যাপারই পরিষ্কার হয়ে গেল। ওষুধ মেশানো কোকোটা খাওয়ার জন্যই কফিতে মেশানো বিষের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে অত দেরি হয়।
পোয়ারো বলল, একথা ঠিক তবে এখন দেখতে হবে কফিতে আদৌ বিষ ছিল কি না। কারণ মিসেস ইঙ্গলথর্প আদৌ ঐ কফি পান করেননি।
কথাটা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেল। পোয়ারো মনে করিয়ে দিল যে সে আমাদের মিসেস ইঙ্গলথর্পের ঘরের কার্পেটে খানিকটা ভিজে দাগের কথা বলেছিল, সে এবার ঐ দাগটা সম্বন্ধে বলতে লাগল। সে নিচু হয়ে ঝুঁকে দেখেছে যে ওতে তখনও কফির গন্ধ ছিল, পাশে কার্পেটে ভাঙা চিনেমাটির কিছু টুকরো গেঁথে ছিল। আসল ব্যাপারটা হল টেবিলটা একটু নড়েবড়ে ছিল কারণ পোয়ারো তার হাতব্যাগটা টেবিলের ওপর রাখতেই সেটা উল্টে গিয়েছিল। মিসেস ইঙ্গলথর্পের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল। তিনি তার কাপটা টেবিলের ওপর রাখতেই উল্টে মাটিতে পড়ে গিয়েছিল, তাই তিনি কফিটা আর পান করতে পারেননি।
![অস্বস্তিতে পড়লাম রচনা -দি মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার্স অ্যাট স্টাইলস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ] 4 অস্বস্তিতে পড়লাম -দি মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার্স অ্যাট স্টাইলস ( এরকুল পোয়া-রো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/05/images-1.jpeg)
এরপরের ঘটনাগুলো সহজ। মিসেস ইঙ্গলথর্প ভাঙা কাপের টুকরোগুলো টেবিলে তুলে রেখে গরম কিছু পান করবেন বলে কোকোটা গরম করে খেয়ে ফেলেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে মিসেস ইঙ্গলথর্প কফিটা পান করেননি, আর কোকোতে আদৌ স্ট্রিকনিন ছিল না। কিন্তু এটাও ঠিক যে সন্ধ্যা সাতটা থেকে নটার মধ্যে তার দেহে স্ত্রিকনিন প্রবেশ করেছিল। তাহলে কিভাবে এটা সম্ভবপর হয়েছিল।
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। পোয়ারো কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, মিসেস ইঙ্গলথর্পের ওষুধের মধ্য দিয়ে তার শরীরে স্ট্রিকনিন প্রবেশ করেছিল।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কেউ ওর ওষুধে স্ট্রিকনিন মিশিয়ে দিয়েছে তাহলে?
পোয়ারো জানাল মেশানোর দরকার হয়নি। সে ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করল। ট্যাডমিনস্টারের রেডক্রশ হাসপাতালের ডাক্তারখানার একটা ওষুধ তৈরির বই থেকে কিছুটা অংশ পড়ে শোনাল-১ গ্রেন স্ট্রিকনিন সালফেট, ১.৫ গ্রেন পটাশিয়াম ব্রোমাইড এবং পরিমাণমত জল নিয়ে মেশান হলে এই দ্রাবকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্ত্রিকনিন ব্রোমাইডের স্ফটিক জমা হয়ে যায়। স্ট্রিকনিন ব্রোমাইডের দানাগুলো জলে দ্রবণীয় নয়। ইংল্যাণ্ডের জনৈকা মহিলা ঠিক এরূপ দ্রাবকের শেষ দাগটি গ্রহণ করে মারা গেছিলেন কারণ ওষুধের শেষ দাগটিতেই একসঙ্গে সব স্ট্রিকনিন জমা হয়েছিল।
পোয়ারো মনে করল সে একটা খালি, ব্রোমাইডের গুঁডোের বাক্সের কথা উল্লেখ করেছিল। ঐরকম একটা বা দুটো ব্রোমাইডের গুঁড়োর পুরিয়া ওষুধে ঢেলে দিলে স্বাভাবিকভাবেই ওর তলায় স্ট্রিকনিন ব্রোমাইডের স্বচ্ছ দানা জমা হবে এবং রোগী ঐ মারাত্মক ওষুধ খেতে বাধ্য হবে একমাত্র শেষ দাগটিতে। মিসেস ইঙ্গলথর্পের ওষুধ দেওয়ার ভার যার ওপর ছিল সে কখনও শিশিটা ঝাঁকাতো না। যার ফলস্বরূপ স্ট্রিকনিনের দানা শিশির নিচেই জমা হয়ে যেত।
সুতরাং দুর্ঘটনাটা ঘটার কথা সোমবার সন্ধ্যায়। কারণ ঐ দিনই মিসেস ইঙ্গলথর্পের বাজানোর ঘন্টাটা সুন্দরভাবে কেটে রাখা হয়েছিল আর সিনথিয়া তো বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে রাত কাটাচ্ছিলেন। সুতরাং প্রয়োজন হলে মিসেস ইঙ্গলথর্প যাতে কারও সাহায্য না পান সেই ব্যবস্থাই হয়েছিল। সুতরাং ডাক্তার ডাকার আগেই তিনি মারা যেতেন।
![অস্বস্তিতে পড়লাম রচনা -দি মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার্স অ্যাট স্টাইলস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ] 5 আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2023/01/google-news-300x225.jpg)
কিন্তু ঘটনা ঘটল উল্টো। মিসেস ইঙ্গলথর্প গ্রামের উৎসবে পৌঁছবার তাড়ায় ওষুধ খেতে ভুলে গেছিলেন। পরের দিনও তিনি দুপুরবেলা বাইরে নিমন্ত্রণে গেলেন। সুতরাং শেষের সেই ওষুধের দাগটা তিনি গ্রহণ করেন সেদিন রাতে অর্থাৎ হত্যাকারী যে সময় ভেবে রেখেছিল তার ঠিক চব্বিশ ঘণ্টা পরে। পোয়ারো বলল, এই দেরিটা হয়েছে বলেই সেই মারাত্মক সূত্রটা তার হাতে এসে গেছে।
সকলের তীব্র উত্তেজনার মধ্যে পোয়ারো তিন টুকরো পাতলা কাগজের ফালি তুলে দেখালো। পোয়ারো আমাদের দিকে ওগুলো দেখিয়ে বলল, হত্যাকারীর নিজের হাতের লেখা আছে ঐ কাগজে। পোয়ারো কাগজের টুকরোগুলোকে পাশাপাশি রেখে গলা পরিষ্কার করতে করতে পড়তে শুরু করল।
প্রিয়তমা ইভিলিন,
কোনো সংবাদ না পেয়ে বোধ হয় আশ্চর্য হয়ে গেছে। সব কিছুই ঠিক আছে, শুধু গত রাত্রের পরিবর্তে আজ রাত্রেই ঘটনাটা ঘটবে। বুড়ী মারা গেলে সত্যিই আমাদের সুদিন ফিরে আসবে। খুনের দায় কেউ আমার উপর চাপাতে পারবে না। তোমার ঐ ব্রোমাইডের ব্যাপারটা বেশ চমৎকার। তবে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। একটু ভুল হওয়া মানেই–।
চিঠিটা এখানেই শেষ হয়ে গেছে। সম্ভবতঃ চিঠির লেখক কোনো কারণে বাধা পেয়েছিল। তবে লেখকের পরিচয় আর গোপন নেই, হাতের লেখাটা খুবই পরিচিত।
একটা ভয়ানক চিৎকারে ঘরের নিস্তব্ধতা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
একটা চেয়ার কারও ধাক্কায় উল্টে গেল। পোয়ারো তাড়াতাড়ি একপাশে সরে দাঁড়াল। আক্রমণকারী লোকটা পোয়ারোকে শয়তান বলে গালাগাল করতে লাগল, তারপর ভারসাম্য রাখতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল।
পোয়ারো এবার অদ্ভুত কায়দা করে বলল সে আমাদের সাথে হত্যাকারীর পরিচয় করিয়ে দিতে চায়–ইনি আর কেউ নন–মিঃ অ্যালফ্রেড ইঙ্গলথর্প।
![অস্বস্তিতে পড়লাম রচনা -দি মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার্স অ্যাট স্টাইলস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ] 6 অস্বস্তিতে পড়লাম -দি মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার্স অ্যাট স্টাইলস ( এরকুল পোয়া-রো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/05/images-2-1.jpeg)