স্বরধ্বনির উচ্চারণ

স্বরধ্বনির উচ্চারণ – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি আমাদের “ভাষা ও শিক্ষা” সিরিজের, ধ্বনিতত্ত্ব বিভাগের, ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ।

স্বরধ্বনির উচ্চারণ

 স্বরধ্বনির উচ্চারণ

স্বরধ্বনি উচ্চারণে তিনটি বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হল :

(১) জিভের অবস্থান (tongue position);

(২) জিভের উচ্চতা (tongue height)

(৩) ঠোঁটের আকৃতি (lip-rounding)।

এছাড়া আরও একটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হয়, তা হলো কোমল তালুর অবস্থান।

কোমল তালুর অবস্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনিগুলোকে মৌখিক ও অনুনাসিক স্বর হিসেবে নির্দেশ করা হয়।

 

১। জিভের অবস্থা অনুযায়ী বাংলা স্বরধ্বনি:

স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভের যে অংশ সক্রিয় থাকে, সেই অংশের ভূমিকা অনুযায়ী স্বরধ্বনি বিচার করা হয়। সে অনুযায়ী স্বরধ্বনিগুলো:

(ক) সম্মুখ (front)

(খ) মধ্য (central)

(গ) পশ্চাৎ (back) ধ্বনি হিসেবে গণ্য হয়।

[৩.৬-৭] স্বরধ্বনির উচ্চারণ | ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব | অধ্যায় ৩ | ভাষা ও শিক্ষা

ক. সম্মুখ স্বরধ্বনি :

জিভের সামনের অংশটি এগিয়ে আসায় যে স্বরধ্বনিগুলো উচ্চারিত হয়, সেগুলো সম্মুখ স্বরধ্বনি। বাংলা ‘ই, এ, অ্যা’ এ-জাতীয় স্বরধ্বনি।

খ. মধ্য স্বরধ্বনি :

জিভ সামনে বা পেছনে না সরে অর্থাৎ স্বাভাবিক অবস্থায় থেকে যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয়, সেগুলো হল মধ্য স্বরধ্বনি। বাংলা ‘আ’ ধ্বনি এ শ্রেণির।

Capture 6 স্বরধ্বনির উচ্চারণ

গ. পশ্চাৎ স্বরধ্বনি :

পশ্চাৎ স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভ পিছিয়ে যায় অর্থাৎ পশ্চাৎ অংশ সক্রিয় হয়। এ জাতীয় স্বরধ্বনিগুলো হল- অ, ও, উ।

 

২। জিভের উচ্চতা অনুযায়ী বাংলা স্বরধ্বনি:

জিভের উচ্চতা অনুযায়ী স্বরধ্বনিগুলোকে (ক) উচ্চ (high), (খ) নিম্ন (low), (গ) উচ্চ-মধ্য ( high-mid), (ঘ) নিম্ন-মধ্য (low-mid) স্বরধ্বনি হিসেবে নির্দেশ করা হয়।

[৩.৬-৭] স্বরধ্বনির উচ্চারণ | ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব | অধ্যায় ৩ | ভাষা ও শিক্ষা

ক. উচ্চ-স্বরধ্বনি :

যেমন— ই, উ। এ শ্রেণির স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ সবচেয়ে উপরে ওঠে।

খ. নিম্ন-স্বরধ্বনি :

যেমন— আ, এ। এ শ্রেণির স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ সবচেয়ে নিচে নামে।

Capture 7 স্বরধ্বনির উচ্চারণ

গ. উচ্চ-মধ্য স্বরধ্বনি :

যেমন- এ, ও। এ জাতীয় স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ নিম্ন স্বরধ্বনির তুলনায় উপরে এবং উচ্চ স্বরধ্বনির তুলনায় নিচে থাকে ।

ঘ. নিম্ন-মধ্য স্বরধ্বনি:

যেমন- অ্যা, ও। এ জাতীয় স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ উচ্চ-মধ্য স্বরধ্বনির তুলনায় নিচে এবং নিম্ন স্বরধ্বনি থেকে উপরে ওঠে। [আ] চিত্র : জিভের উচ্চতা অনুযায়ী স্বরধ্বনির উচ্চারণ।

 

৩। ঠোঁটের আকৃতি অনুযায়ী বাংলা স্বরধ্বনি

স্বরধ্বনি উচ্চারণে ওষ্ঠ বা ঠোঁটের অবস্থা অনুযায়ী স্বরধ্বনিকে বর্তুল (round) ও প্রসূত (spread) স্বর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেসব স্বরধ্বনির উচ্চারণে ঠোঁট গোল হয় সেসব স্বরধ্বনিকে বলা হয় বর্তুল স্বর। যেমন— অ, ও উ। অপরদিকে যেসব স্বরধ্বনির উচ্চারণে ঠোঁট গোল না হয়ে প্রসৃত বা বিস্তৃত হয় সেসব স্বরধ্বনিকে বলা হয় প্রসৃত স্বর। যেমন— ই, এ, অ্যা।

Capture 10 স্বরধ্বনির উচ্চারণ

এছাড়া ঠোঁটের উন্মুক্তি অর্থাৎ স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে আমরা কী পরিমাণ হাঁ করছি তা নির্ধারণ করে স্বরধ্বনিকে নিম্নলিখিত চার ভাগে ভাগ করা হয়:

ক. বিবৃত (open) স্বরধ্বনি :

এ স্বরধ্বনির উচ্চারণে ঠোঁট সবচেয়ে বেশি খোলা থাকে। বাংলা ভাষায় এ-জাতীয় স্বর মাত্র একটি— আ।

খ. অর্ধবিবৃত (half-open) স্বরধ্বনি :

বিবৃত স্বরধ্বনির তুলনায় : ঠোঁট কম খোলা রেখে উচ্চারিত স্বরধ্বনিগুলোকে এভাবে দেখানো হয়। যেমন— অ্যা, অ।

Capture 8 স্বরধ্বনির উচ্চারণ

গ. অর্ধসংবৃত (half-close) স্বরধ্বনি :

সংবৃত স্বরধ্বনির তুলনায় ঠোট বেশি খোলা কিন্তু অর্ধ-বিবৃত স্বরধ্বনির তুলনায় কম খোলা থেকে অর্ধ-সংবৃত স্বরধ্বনিগুলো উচ্চারিত হয়। যেমন : এ, ও।

ঘ. সংবৃত (close) স্বরধ্বনি :

ঠোঁট সবচেয়ে কম খোলা থেকে উচ্চারিত স্বরধ্বনিগুলো এ জাতীয়। যেমন— ই, উ ।

 

Capture 9 স্বরধ্বনির উচ্চারণ

 

স্বরধ্বনি উচ্চারণে আলজিভ ও কোমল তালুর ভূমিকা :

স্বরধ্বনি উচ্চারণে কোমল তালুর ভূমিকা অনুসারে স্বরধ্বনিগুলোকে মৌখিক ও অনুনাসিক এই দু ভাগে ভাগ করা হয়। এ-সম্পর্কে আমরা পূর্ববর্তী আলোচনায় জেনেছি। এ-পর্যায়ে শুধু কোমল তালুর ভূমিকা উল্লেখ করা হল। মৌখিক স্বরধ্বনি উচ্চারণে আলজিভ এবং কোমল তালু নিচে নেমে যায় এবং বাতাস মুখ ও নাক দিয়ে একই সঙ্গে বেরিয়ে যায়।

[৩.৬-৭] স্বরধ্বনির উচ্চারণ | ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব | অধ্যায় ৩ | ভাষা ও শিক্ষা

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment