স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্যে প্রতিবেদন লেখন আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা” বিষয়ের ” প্রতিবেদন রচনা” পাঠের আংশ।
স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্যে প্রতিবেদন
গত ২৬ মার্চ ২০০৮ যথাযোগ্য মর্যাদায় রাজশাহী কলেজের আয়োজনে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপিত হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ কমিটি এই অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন। কলেজ সংলগ্ন প্যারেড ময়দানে উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। তিনটি পর্বে অনুষ্ঠান সম্পাদিত হয়।
সকাল ৯টায় সম্মানিত উপাধ্যক্ষ, শিক্ষমন্ডলী ও বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতিতে কলেজের অধ্যক্ষ জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এর পর শান্তিকামী মানুষদের পক্ষে উপাধ্যক্ষ শান্তির প্রতীক সাদা কবুতর মুক্ত আকাশে উড়িয়ে দেন। পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কলেজের ভবনসহ অন্যান্য এলাকা বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়েছিল। ছাত্রসংসদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছিল অত্যন্ত সুচারুরূপে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কারুকাজ করা নিশান এবং রঙ-বেরঙের কাগজ এবং ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটি।
ছাত্র-ছাত্রীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সকাল থেকেই কলেজ প্রাঙ্গণ ছিল আনন্দ-মুখর। স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধাদের সমাবেশ অনুষ্ঠানে যোগ করেছিল ভিন্নমাত্রা। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণে নতুন প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীরা মুক্তিযোদ্ধের নানা ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হয়ে বিশেষ উপকৃত হয়। কলেজের পক্ষ থেকে মাননীয় অধ্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের ধন্যবাদজ্ঞাপন করেন। তিনি বক্তব্যে বলেন, ‘শুধু স্বাধীনতা অর্জিত হলেই সংগ্রাম শেষ হয়ে যায় না; তখন বিজয়ী-জাতির সামনে আসে স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম। এ সংগ্রামে আরো বেশি ত্যাগ-তিতিক্ষা ও শক্তি-সামর্থ্যের প্রয়োজন হয়। কেননা স্বাধীন দেশের ভেতরে ও বাইরে শত্রুর অভাব নেই।
এরা সুযোগের সন্ধানে সর্বক্ষণ তৎপর থাকে। যে কোনো সময় সুযোগ পেলেই হিংসাত্মক কার্যকলাপের মাধ্যমে স্বাধীনতাকে ধ্বংস করে দিতে পারে। সুতরাং এ সমস্ত প্রতিক্রিয়াশীল মীরজাফরদের হিংসাত্মক দৃষ্টি থেকে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্যে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। আজকের এ দিনে সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমাদের শপথ নিতে হবে জাতীয় ঐতিহ্যকে ধারণ ও দেশের সমৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে আমরা সকলেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’

আলোচনা ও স্মৃতিচারণমূলক পর্বে কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ড. মো. সুলতান আলী এক হৃদয়গ্রাহী বক্তৃতা প্রদান করেন, যা উপস্থিত শ্রোতৃবৃন্দের কাছে বাড়তি পাওনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। আলোচনা শেষে কলেজের সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কবিতার আবৃত্তির মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ পর্বের। পরবর্তী সময়ে দেশাত্মবোধক গান, গানের তালে তালে নৃত্য এবং সবশেষে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত হুমায়ূন আহমদের ১৯৭১ নাটকটি মঞ্চায়ন হয়। ভাবগম্ভীর পরিবেশে উদ্যাপিত মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানমালায় শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে অংশগ্রহণ করে। মহান স্বাধীনতা দিবসের লক্ষ্য ও তাৎপর্য বর্তমান প্রজন্মের কাছে প্রেরণার উৎস হিসেবে ধরা দেয় এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
আরও দেখুন: