Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

স্বাধীনতা তুমি কবিতা – শামসুর রাহমান

স্বাধীনতা তুমি কবিতা – ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সবচেয়ে বেশি কবিতা লিখেছেন বোধয় প্রয়াত প্রধান কবি শামসুর রাহমান। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সময় তিনি ঢাকা এবং নিজগ্রাম নরসিংদীর মেঘনা নদীর পাড়ে পাড়াতলিতে বসে যুদ্ধগাঁথা ‘বন্দী শিবির থেকে’ কাব্যগ্রন্থটি লিখেছিলেন। সেই গ্রন্থের আলোকজ্জ্বোল ও সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতাটি হলো ‘স্বাধীনতা তুমি’। এই কবিতার প্রথম দু’চরণ ‘স্বাধীনতা তুমি/ রবি ঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান’।

স্বাধীনতা তুমি কবিতা – শামসুর রাহমান

রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।

স্বাধীনতা তুমি কবিতা নিয়ে বিস্তারিতঃ

বি ঠাকুরের অজর কবিতার কথা শুরুতেই বলেছি। পরের চরণে নজরুলের কথা বলেছেন, যিনি সৃষ্টির স্বাক্ষরে মহান পুরুষ। এরপর আমাদের স্বাধীনতার প্রথম ধাপ- ভাষা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত মিনার, শ্লোগান মুখর মিছিল, ফসলের মাঠ, কৃষকের হাসি, কিশোর-কিশোরী, যুবক, মুক্তিযোদ্ধার, ছাত্রদের, সাধারণ মানুষ, বাবা, মা, বোন, বন্ধু, গৃহিণী, খোকা, খুকির অনাবিল আনন্দ আর প্রকৃতির রূপময়তা এবং সবশেষে কবির নিজের আনন্দ। এই যে আনন্দের বন্যা ছড়িয়ে দিয়ে, উপমা-রূপক ও ছন্দ দিয়ে আমাদের স্বাধীনতাকে বর্ণনা করলেন- তা শামসুর রাহমান পেরেছেন।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

যতবারই আমরা মার্চের স্বাধীনতায় উপনীত হবো, ততবারই কবি শামসুর রাহমানের তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা তুমি কবিতা দুটো পাঠ করবো। শাণিত হবে আমাদের চেতনা, স্মরণ হবে মহান মুক্তিযুদ্ধ, দেশকে ভালোবাসার প্রাণ জেগে উঠবে।

 

স্বাধীনতা তুমি কবিতা আবৃত্তিঃ

 

 

Exit mobile version