‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতাটি বাংলাদেশের শিক্ষা পাঠ্যক্রমে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য রচনা। এটি নিম্নলিখিত পর্যায়ে পাঠ্যসূচির অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত:
মাদ্রাসা বোর্ড: দাখিল শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্রের সাহিত্যপাঠ বইয়ে অন্তর্ভুক্ত।
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট: বাংলা (৬৫৭১১) কোর্সের অংশ।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি: বাংলা সাহিত্য অনুচ্ছেদে গুরুত্বপূর্ণ কবিতা হিসেবে বিবেচিত।
চাকরি প্রস্তুতি ও বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্যও এই কবিতাটি পাঠ ও বিশ্লেষণ অত্যন্ত উপযোগী।
এই কবিতাটি বাংলা ভাষা ও স্বাধীনতা চেতনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত একটি আবেগময় ও প্রেরণাদায়ী রচনা, যা পাঠকদের মধ্যে দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ এবং সাংস্কৃতিক গৌরবের বোধ জাগিয়ে তোলে।
Table of Contents
সাহসী জননী বাংলা কবিতা
তোদের অসুর নৃত্য … ঠা ঠা হাসি … ফিরিয়ে দিয়েছি
তোদের রক্তাক্ত হাত মুচড়ে দিয়েছি নয় মাসে
চির কবিতার দেশ …. ভেবেছিলি অস্ত্রে মাত হবে
বাঙালি অনার্য জাতি, খর্বদেহ … ভাত খায়, ভীতু
কিন্তু কী ঘটল শেষে, কে দেখাল মহা প্রতিরোধ
অ আ ক খ বর্ণমালা পথে পথে তেপান্তরে ঘুরে
উদ্বাস্তু আশ্রয়হীন …. পোড়াগ্রাম … মাতৃ অপমানে
কার রক্ত ছুঁয়ে শেষে হয়ে গেল ঘৃণার কার্তুজ।
সাহসী জননী বাংলা, বুকে চাপা মৃতের আগুন
রাত জাগে পাহারায় … বুড়িগঙ্গা পদ্মা নদীতীর
ডাকাত পড়েছে গ্রামে, মধ্যরাতে হানাদার আসে
ভাই বোন কে ঘুমায় ? জাগে, নীলকমলেরা জাগে।
গ্রেনেড উঠেছে হাতে… কবিতার হাতে রাইফেল
এবার বাঘের থাবা, ভোজ হবে আজ প্রতিশোধে
যার সঙ্গে যে রকম, সেরকম খেলবে বাঙালি
খেলেছি, মেরেছি সুখে… কান কেটে দিয়েছি তোদের।
এসেছি আবার ফিরে … রাতজাগা নির্বাসন শেষে
এসেছি জননী বঙ্গে স্বাধীনতা উড়িয়ে উড়িয়ে…
সাহসী জননী বাংলা কবিতার মূলভাব:
সাহসী জননী বাংলা কবিতায় কবি বাঙালির সংগ্রামী ঐতিহ্যকে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশকে ধ্বংসের শেষ পর্যায়ে দাঁড় করিয়েছিল পাকিস্তানি শত্রুবাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে জয়লাভ করা বাঙালিকে কবি বাংলা জননীর সাহসী সন্তান রূপে আখ্যায়িত করেছেন। সাহসী জননী বাংলা কবিতায় কবি এদেশের মানুষের মনে কাব্যময় স্নিগ্ধতার সঙ্গে সাহসের ইস্পাতদৃঢ়তার দিকটি তুলে ধরেছেন। যা দ্বারা বাঙালি খুব সহজেই শত্রুর আসুরিক আচরণ, বিকট উল্লাস, নৃশংসতাকে স্বল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিহত করতে পারে। বাঙালিকে যে ভীরু ও ভেতাে বলে খাটো করা হয় তা মােটেও যুক্তিসংগত নয়। কারণ বাঙালি অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহসী জাতি। বাঙালির সুদীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রতিফলিত হয়েছে আলােচ্য কবিতায়। এগুলাের মধ্য দিয়ে কবি বাঙালির সংগ্রামী চেতনাকে একদিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, অন্যদিকে সেই চেতনায় নতুন করে প্রদীপ্ত হওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।

সাহসী জননী বাংলা কবিতার বিস্তারিত :
সাহসী জননী বাংলা — সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
কবিতা পরিচিতি:
কবি কামাল চৌধুরীর ‘খুলি ও সাগর দৃশ্য’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতাটি তার কবিতা সংগ্রহ থেকে সংকলিত। এখানে বাঙালির সাহসিকতা, আত্মত্যাগ, আর শৌর্যের মহিমায় স্বাধীনতা অর্জনের কথা বর্ণিত হয়েছে। কবিতায় বলা হয়েছে, যাদের “ভীতু” ও “ভেতো” বলে অবজ্ঞা করা হয়েছিল, তারাই স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে নাম লিখিয়েছে।
এই কবিতায় বাঙালির সংগ্রামী ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের রক্তস্নাত অধ্যায়, ও আত্মত্যাগের কথা কাব্যময়ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। কবি বাংলা জননীকে সাহসের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন।
সৃজনশীল প্রশ্ন ১:
উদ্ধৃত অংশ:
“যখন হানাদারবধ সংগীতে
ঘৃণার প্রবল মন্ত্রে জাগ্রত
স্বদেশের তরুণ হাতে
নিত্য বেজেছে অবিরাম
মেশিনগান, মর্টার গ্রেনেড।”
ক. মধ্যরাতে কারা এসেছিল?
উত্তর: পাকিস্তানি হানাদাররা মধ্যরাতে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে হানা দিয়েছিল।
খ. বর্ণমালা পথে পথে তেপান্তরে ঘুরেছিল কেন?
উত্তর: বাঙালি জাতির ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতীক বর্ণমালা পাক হানাদারদের ঘৃণায় পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছে, কিন্তু দমে যায়নি; বরং প্রতিশোধের কার্তুজে রূপান্তরিত হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের অনুভব ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার অনুভবের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ – ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: এখানে বাঙালির প্রতিরোধের ভাষা অস্ত্রে রূপ নিয়েছে — মেশিনগান, মর্টার, গ্রেনেডের মতো। এ চেতনা ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার যুদ্ধপ্রবণ ও আত্মমর্যাদাবান বাঙালির প্রতিচ্ছবি।
ঘ. উদ্দীপকের ভাবনা ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার সামগ্রিক পরিচয় নয় – মূল্যায়ন করো।
উত্তর: উদ্দীপকটি কবিতার একটি দিক অর্থাৎ অস্ত্রধারী প্রতিরোধকে ফুটিয়ে তুলেছে। কিন্তু ‘সাহসী জননী বাংলা’ কেবল প্রতিরোধ নয়; এটি কবিতার দেশ, সাহস, আত্মত্যাগ, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সম্মিলিত চেতনার প্রকাশ।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২:
উদ্ধৃত অংশ:
“লক্ষ লক্ষ হা-ঘরে দুর্গত
ঘৃণ্য যম-দূত-সেনা এড়িয়ে সীমান্তপারে ছোটে…”
ক. মুক্তিযুদ্ধকালে কোটি বাঙালি দীর্ঘ নয় মাস কোন প্রতিবেশী রাষ্ট্রে নির্বাসিত জীবন যাপনে বাধ্য হয়?
উত্তর: ভারত।
খ. ‘তোদের রক্তাক্ত হাত মুচড়ে দিয়েছি নয় মাসে’ – কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিরা হানাদারদের নিষ্ঠুরতা ও দখলদারিত্বের প্রতিরোধ করে পরাজিত করেছে।
গ. উদ্দীপকে প্রথম পাঁচ চরণে ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: এই অংশে শরণার্থী সংকট, যন্ত্রণাময় বাস্তবতা এবং যুদ্ধের ভয়াবহতার চিত্র রয়েছে, যা কবিতার বাস্তববাদী ও বেদনা মিশ্রিত দেশপ্রেমের অনুরণন।
ঘ. উদ্দীপকের শেষ বাক্যটি ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার মূলভাবকেই তুলে ধরেছে – ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: “বাংলাদেশ অনন্ত অক্ষত মূর্তি জাগে”—এই চরণে জাতির বিজয় ও চিরন্তন চেতনার প্রকাশ আছে, যা সাহসী জননী বাংলার মূল বার্তা।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩:
উদ্ধৃত অংশ:
“একবার মরে ভুলে গেছে আজ মৃত্যুর ভয় তারা।
শাবাশ বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়;
জ্বলে-পুড়ে-মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়।”
ক. কার্তুজ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: গোলাবারুদের সংমিশ্রণে প্রস্তুত একটি বিস্ফোরক বস্তু যা বন্দুক বা রাইফেলে ব্যবহৃত হয়।
খ. “এসেছি আবার ফিরে…… রাতজাগা নির্বাসন শেষে”—চরণটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: দীর্ঘ সংগ্রাম ও কষ্টের পর বাংলার বিজয়ী সন্তানেরা আবার নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছে।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: দুটোতেই যুদ্ধের সাহস, আত্মত্যাগ এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা ফুটে উঠেছে।
ঘ. উদ্দীপকের ভাবনা ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার সামগ্রিক পরিচয় নয় – মূল্যায়ন করো।
উত্তর: এখানে সাহসিকতা থাকলেও, কবিতার সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক দিক অনুপস্থিত।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪:
ক. ‘কার্তুজ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: গুলির খোল বা বুলেটের পাত্র, যা বন্দুক বা রাইফেলে ব্যবহৃত হয়।
খ. সাহসী জননী বাংলার বুকে চাপা মৃতের আগুন কেন?
উত্তর: বাঙালিরা বাহ্যিকভাবে শান্ত হলেও অন্তরে ছিল জ্বলন্ত প্রতিবাদের আগুন।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার বৈসাদৃশ্য তুলে ধরো।
উত্তর: উদ্দীপকটি ঔপনিবেশিক যুগের বিপ্লবী সংগ্রাম নিয়ে, আর কবিতা স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত।
ঘ. ‘উদ্দীপকের প্রকাশিত চেতনাই ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার মূলভাব’ – উক্তিটির যথার্থতা বিচার করো।
উত্তর: আংশিক যথার্থ। উভয় ক্ষেত্রে সংগ্রামী চেতনা প্রকাশ পেলেও, কবিতার দেশপ্রেম, ভাষাচেতনা ও মমত্ববোধ উদ্দীপকে অনুপস্থিত।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৫:
উদ্ধৃত অংশ:
“জয় বাংলা বাংলার জয়
হবে হবে হবে, হবে নিশ্চয়…”
ক. বাঙালিরা হানাদারদের কী কেটে দিয়েছে?
উত্তর: বাঙালিরা হানাদারদের রক্তাক্ত হাত মুচড়ে দিয়েছে।
খ. জাগে, নীলকমলেরা জাগে – কেন?
উত্তর: দেশের বিপদের সময় সাহসী তরুণেরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জেগে ওঠে।
গ. উদ্দীপকের শেষ চরণের ভাবটি ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার সাথে কীভাবে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কবিতায় কাব্যিক আবেগ ও সংগ্রামের ইতিহাস জোরালোভাবে রয়েছে, কিন্তু উদ্দীপকের চরণটি একটি মাত্র আবেগময় প্রত্যয় প্রকাশ করে।
ঘ. “হবে হবে হবে, হবে নিশ্চয়”—এমন প্রত্যয়ের কারণ ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: এই প্রত্যয়ের উৎস মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়। কবিতায় এই বিজয়ের চেতনা সাহস ও আত্মবিশ্বাসের মূলে রয়েছে।