সার্থক জনম মাগো জন্মেছি এই দেশে | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

সার্থক জনম মাগো জন্মেছি এই দেশে | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা , ভাবসম্প্রসারণ করার সময় সেই গভীর ভাবটুকু উদ্ধার করে সংহত বক্তব্যটিকে পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। সেই ভাব রূপক-প্রতীকের আড়ালে সংগুপ্ত থাকলে, প্রয়ােজনে যুক্তি, উপমা, উদাহরণ ইত্যাদির সাহায্যে বিশ্লেষণ করতে হবে।

সার্থক জনম মাগো জন্মেছি এই দেশে

দেশপ্রেম বা দেশের প্রতি ভালোবাসা মানুষের একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। গর্ভধারিণী জননীকে সন্তান যেমন ভালোবাসে, তেমনি দেশ-মাতৃকাকেও মানুষ জন্মলগ্ন থেকেই শ্রদ্ধা করতে ও ভালোবাসতে শেখে। দেশ যত ক্ষুদ্র বা যত দরিদ্রই হোক না কেন, প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের কাছে তার জন্মভূমি, তার দেশ সবার সেরা। যে কোনো ব্যক্তির সকল প্রাপ্তি তার স্বদেশের অবদান বলে স্বদেশের প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে তার ধন, জন, মান, এমনকী জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করতে দ্বিধা করে না। স্বদেশপ্রেম অকৃপণ, উদার এবং খাঁটি। তা জীবনের প্রতি প্রেমকেও ছাড়িয়ে যায়।  জন্মভূমির প্রতি মানুষের টান সহজাত। জন্মভূমির আলাে-বাতাস, গাছপালা, মাটি ও পরিবেশ মানুষের জীবনের জিয়নকাঠি। জন্মভূমি ধনসম্পদের আকর না হলেও মানুষ জন্মভূমিকে ভালােবাসে জীবনকে সার্থক মনে করে। আর শেষ ইচ্ছা হিসেবে জন্মভূমির মাটিতে চিরদ্রিায় শায়িত হতে চায় । ‘

 

সার্থক জনম মাগো জন্মেছি এই দেশে

 

জননী জন্মভূমি স্বর্গাদপী গরিয়সী। জননী জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। দুনিয়ায় জন্মভূমি-ই সবার চেয়ে অধিক প্রিয়। তার ভালোবাসায় জীবনও ধন্য। তার ধন, দৌলত, রূপ-ঐশ্বর্য থাক বা না থাক, তার কোলে জুড়ায়, মন স্বস্তি পায়, স্নিগ্ধ হয়। তাই জন্মভূমিকে ভালোবেসে জীবনকে সার্থক করে তোলাই হচ্ছে জীবনের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য। কবি লেখকেরা জন্মভূমিকে স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ বলে আখ্যায়িত করে গেছেন। জন্মভূমির বুকে স্বর্গের মত সুখ অনুভব করা যায়। অনেকেই জন্মভূমিকে জননীর সাথে তুলনা করেছেন। জননী আর জন্মভূমি একাকার হয়ে মিশে আছে। জননীকে যেমন আমরা ভালোবাসি, তার কাছে আমরা যেমন সুখ খুঁজে পাই, তেমনি জন্মভূমির কাছেও আমরা তেমন স্বর্গীয় সুখ অনুভব করি। সন্তানের কাছে মা যেমন আপনজন তেমনি জন্মভূমিও প্রত্যেক মানুষের কাছে অতি আপন।

জননীর কাছে যেমন সন্তান তার সমস্ত শান্তি খুঁজে পায়, তেমনি জন্মভূমির কাছে আমরা খুঁজে পেতে পারি অনাবিল আনন্দ এবং সুখ। তাই আমরা জননীর সাথে জন্মভূমিকেও স্বর্গের সাথে তুলনা করতে পারি। যে ভূমিতে মা সন্তান জন্ম দেয় তার কাছে সে ভূমিই তার জন্মভূমি। আর সেই জন্মভূমি বা মাতৃভূমি প্রত্যেকের কাছে অতি আপনজন। এ জন্মভূমির বুকেই তার বেড়ে উঠা, জন্মভূমির আলো, বাতাস সব কিছু গ্রহণ করে তার বেঁচে থাকা। আর এ জন্মভূমিকে মানুষ ভালো না বেসে থাকতে পারে না। মায়ের মতোই জন্মভূমিকে আমরা ভালোবেসে ধন্য হই। এ জন্মভূমিই মানুষের বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এ জন্মভূমির বুকে ফসল ফলায়। সেই ফসল মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফুল, ফল, গাছপালা সবকিছুই আমরা মার্তৃভূমির কাছ থেকেই পেয়ে থাকি। অর্থাৎ মানুষের বেঁচে থাকা, তার যাবতীয় কর্মকাণ্ড, সবকিছুই জন্মভূমির অবদান। তাই যার যার জন্মভূমি তার কাছে অতি আপন, অতিপ্রিয়। নিজের বাড়ির মতোই নিজের জন্মভূমি পরিচিত। এখানে সে স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে পারে, যা খুশী তাই করতে পারে। কিন্তু পরদেশে সেটা সম্ভব নয়। সেখানে প্রতি পদে পদে বাধা বিপত্তি আসে। তাই নিজের দেশকে ভালোবেসে মানুষ হাসি মুখে মৃত্যুবরণ করতে পারে।

 

সার্থক জনম মাগো জন্মেছি এই দেশে

 

যারা নিজের জন্মভূমিকে ভালোনা বেসে, অন্যের জন্মভূমি বা অন্য দেশকে ভালোবেসে সুখ খুঁজতে চায়, তারা প্রকৃত সুখ অর্জন করতে পা পারে না। এক পর্যায়ে তারা নিজের মাতৃভূমির কাছে ফিরে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে। কারণ নিজের দেশের বা নিজ জন্মভূমির সবকিছুই তার অতি প্রিয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তার কবিতায় নিজভূমিকে ভালোবেসে এভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন যে- তাই প্রত্যেকের নিজের দেশকে ভালোবেসে সার্থক হওয়া উচিত। আর জন্মভূমিকে ভালোবেসে যদি তার মৃত্যুও হয় তবুও সেই মৃত্যু স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবে আর এখানেই প্রকৃত সুখ ও সার্থকতা লুকায়িত রয়েছে।

আরও দেখুন:

Leave a Comment