সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি – ভাব-সম্প্রসারণের একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আগ্রহীরা এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ভাষায় নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করবেন। সাধারণত ভাব সম্প্রসারণ করার জন্য প্রদত্ত কবিতার অংশ অথবা গদ্যের অংশ অতিসংক্ষিপ্ত হয়ে থাকে। আর এই ক্ষুদ্র অংশের মধ্যে লুকিয়ে থাকে সহস্ত্র ভাবের ইঙ্গিত। আর এইভাবে রিংগিত কে সম্প্রসারণ করার জন্য অবশ্যই সতর্কতার সাথে সেই মৌলিক বিষয় খুঁজে বের করতে হয় এবং এর মাধ্যমে ভাব সম্প্রসারণ করতে হয়।

সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি

মানুষ নিজেই তার নিজের জীবনের প্রকৃত রূপকার। প্রতিকূল শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে এগোতে হয় মানুষকে। তাতে জয়-পরাজয়ের আনন্দ-দুঃখ, উল্লাস-বেদনা আছে। কিন্তু কিছু পরাভূত ভাগ্যহত মানুষের ধারণা তাদের পরাভবের পেছনে আছে এমন এক অদৃশ্য অমোঘ দৈব শক্তি, যা তাদের বিড়ম্বিত ভাগ্যবিপর্যয়ের কারণ। এই অদৃশ্য শক্তিই ‘অদৃষ্ট’ বা ‘নিয়তি’ বলে অভিহিত। এ শক্তি নাকি মানুষের করায়ত্তের বাইরে, সাধ্যের অতীত, এর হাতে মানুষ ক্রীড়নক, মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত। বস্তুত যারা ভীরু, দুর্বল; যাদের আত্মবিশ্বাস কম, শুধু তারাই অদৃষ্টবাদী। মানুষ অধ্যবসায় ও একনিষ্ঠ শ্রমের দ্বারা তার নিজ ভাগ্যকে সার্থক করে তোলে। এ জগৎ সংসারে প্রতিটি মানুষের অগ্রযাত্রা নির্ভর করে তার সচেতন ও সক্রিয় কর্মপ্রয়াসের ওপর। কর্মজীবনে সফল

 

সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি

 

প্রতিটি মানুষই নিজেদের চেষ্টা, সাধনা ও শ্রমে রচনা করেছেন নিজেদের সৌভাগ্য। কিন্তু আজও কোন কোন বিপন্ন মানুষকে ভাগ্যের দোহাই দিয়ে নিশ্চেষ্ট হতে দেখা যায়। আজও বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কেউ কেউ নিজেকে সমর্পণ করে অদৃষ্টের অলীক হাতে। তাদের ধারণা এক অদৃশ্য দৈবশক্তি নেপথ্য থেকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে চালনা করে চলেছে। বস্তুত নিয়তি, দৈবশক্তি বা অদৃষ্ট মানুষের জীবনধারাকে নিয়ন্ত্রণ করে না। মানুষের কর্মধারাই গড়ে তোলে তার জীবনকে। অতীতের কর্মই তাকে ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, আর বর্তমানের কর্মের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই সে ভবিষ্যৎপানে এগুচ্ছে।

 

সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি

 

এটাই জগতের কর্মচক্র ও জীবনচক্রের গতি। যৌবনশক্তির দুর্বার গতিবেগে প্রাণচঞ্চল যারা, দুর্মর সংগ্রামের ক্ষুরধার পথে হাঁটাই তাদের ধর্ম। অদৃশ্য দৈবী শক্তিতে তারা বিশ্বাসী নয়, সংগ্রামে- সংঘাতের মধ্য দিয়ে জীবনের শ্রেষ্ঠ ফসলটি তুলে নেওয়াই তাদের লক্ষ্য। তাদের দৃঢ় প্রত্যয় হলো ভাগ্য মানুষকে চালিত করে না, মানুষই ভাগ্য গড়ে। কর্ম হল সুপ্রসন্ন সৌভাগ্যের জনক। অদৃষ্টের দোহাই দিয়ে কর্মবিমুখতা নিজের শক্তিমত্তার কাছ থেকে পলায়নী মনোবৃত্তির নামান্তর। কর্মবীর মানুষই সৌভাগ্যের স্বর্ণশীর্ষে হয় আসীন।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

অপরদিকে অদৃষ্টনির্ভর মানুষ তার নিশ্চেষ্ট আলস্যহেতু পদে পদে বরণ করে পরাজয়, জীবনভর তাকে হতাশায় নিরাশায় দীর্ঘশ্বাসের সেতু রচনা করতে হয়। এজন্য ভবিষ্যৎ জীবনকে সহজ ও সুন্দর, সুখ ও আনন্দময় করতে হলে মানুষকে বর্তমান মুহূর্তকে কাজে লাগাতে হয়। একনিষ্ঠ শ্রমে ও সাধনায় রচনা করতে হয় ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি। সে কাজ যদি ভালো হয় তবে তার ফলও হয় ভালো। কর্মমুখর অতীত রচনা করে সুন্দর বর্তমান ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ; কর্মহীন

অতীত জন্ম দেয় অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যতের। অতীত মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। অতীত নীরবে মানুষের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের ওপর তার প্রভাব রাখে। অতীতের ওপর ভিত্তি করেই মানুষের আগামী দিনের জীবন গড়ে ওঠে। অতীতের কৃতকর্ম, কর্মপ্রেরণা, অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে যায়। তাই জীবনের ব্যর্থতার দায় অদৃষ্টের ওপর চাপিয়ে হা-হুতাশ না করে প্রত্যেকেরই উচিত আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্মাণে সচেষ্ট ও ব্রতী হওয়া।

আরও দেখুন:

Leave a Comment