আজ আলাপ হবে সমাস ও সমাসের রীতি নিয়ে। ‘সমাস’ কথাটির অর্থ সংক্ষেপণ, একাধিক পদের একপদীকরণ। অর্থের দিক থেকে মিল আছে এমন দুই বা ততোধিক শব্দ (বা পদ) মিলে একশব্দ হওয়ার প্রক্রিয়াকে ‘সমাস’ বলে। যেমন— বিলাত থেকে ফেরত – বিলাত- ফেরত / বিলাতফেরত; লেখা ও পড়া লেখাপড়া ইত্যাদি।
সমাস ও সমাসের রীতি
ভাষাবিদ্গণ নানাভাবে সমাসের সংজ্ঞার্থ নিরূপণ করেছেন। যেমন :
১. অর্থ-সম্মন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের একসঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি বড় শব্দ গঠনের প্রক্রিয়াকে সমাস বলে।
২. পরস্পর সম্মন্ধবিশিষ্ট একার্থবাচক একাধিক পদের একপদীভাবকে বলে সমাস।
৩. ‘পরস্পর সম্পর্কিত দুই বা তার বেশি শব্দ একসঙ্গে মিলে সমাস হয়।
৪. ‘পরস্পর অনয়যুক্ত দুই বা ততোধিক পদের (শব্দের নহে, কেননা, শব্দ অন্বিত হইলেই পদে পরিণত হইয়া যায়) মধ্যবর্তী অনুযাংশ (তাহা বিভক্তিও হইতে পারে, অন্য পদও হইতে পারে) লোপ করিয়া পদগুলিকে এক শব্দে (পদে নহে, কেননা, সমাসবদ্ধ পদের শেষে শব্দবিভক্তি যুক্ত হয়। পরিণত করার প্রক্রিয়ার নাম সমাস।
শব্দ গঠনের অন্যতম উপায় ‘সমাস’। বাক্যে শব্দের ব্যবহার সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে সমাসের সৃষ্টি। সমাস দ্বারা দুই বা ততোধিক পদের সমন্বয়ে নতুন অর্থবোধক শব্দ সৃষ্টি হয়। সমাস করার সময় যে কোনো দুই বা ততোধিক পদকে এক পদ করলেই তা সমাসগঠিত শব্দ হবে না।
যে সব পদ নিয়ে সমাস তৈরি হয় তাদের মধ্যে অর্থের মিল এবং পদগুলোর পরস্পরের মধ্যে সাক্ষাৎ সম্বন্ধ থাকতে হয়, যাতে করে পদগুলোর দ্বারা একটি বিশিষ্ট অর্থ প্রকাশ পায়। যেমন— ঘি মাখানো ভাত’; এই উদাহরণে ‘ঘি মাখানো ভাত’ কথাটিতে অর্থের দিক থেকে সামজস্য রয়েছে এবং একটি বিশিষ্ট অর্থ বোঝাচ্ছে, সেই অর্থ অক্ষুণ্ণ রেখে এই পদগুলোকে (ঘি মাখানো ভাত) মিলিয়ে একটি শব্দে পরিণত করা যায়— ‘থিতাত’; ‘ঘি মাখানো ভাত’- পদগুলোর যে অর্থ, ‘ঘিতাত’ এই একটি পদের সেই একই অর্থ। অর্থযুক্ত পদ নিয়েই সমাস গঠিত হয়।
সমাসের রীতি
সমাসের রীতি সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে। তবে খাঁটি বাংলা সমাসের দৃষ্টান্তও প্রচুর পাওয়া যায়। সেগুলোতে সংস্কৃতের নিয়ম খাটে না।
বাংলা ভাষায় বাংলা শব্দ ছাড়াও, অসংখ্য তৎসম (সংস্কৃত) শব্দ ব্যবহৃত হয়। আধুনিক বাংলাতে তৎসম-তৎসম শব্দ তো বটেই, তৎসম-বাংলায়, তৎসম বা বাংলা ও বিদেশিতেও সমাস হয়ে থাকে। যেমন—
বৃক্ষপত্র (বৃক্ষ + পত্র – তসমেতৎসমে), হাত-পা (বাংলায় বাংলায়), শ্বশুরবাড়ি (তৎসমে বাংলায়), পার্লামেন্ট- ভবন (বিদেশি সংস্কৃতে), হলঘর (বিদেশি-বাংলা), লাটবাহাদুর (বিদেশি–বিদেশি) ইত্যাদি।
অনেকে এ ধরনের মিশ্রণ পছন্দ করেন না, কিংবা এর বিপক্ষে। বিভিন্ন শ্রেণির পদের মধ্যে সমাস হলে অনেক সময় শ্রুতিকটু হয়। এরূপ বিভিন্ন শ্রেণির সমাসকে “মড়া- দাহ, শব পোড়া” সমাস বা ভাষা বলে ব্যঙ্গ করতেও দেখা গেছে। “সংস্কৃতে বহুপদ সমাসের প্রচলন আছে। যেমন – প্রবর-নৃপ-মুকুট-মণি-মরীচি-চয়-চর্চিত-চরণ–যুগল, এটি নয়টি পদের সমাস। বাংলায়- সাধারণত বেশি পদের সমাস হয় না। তবে সঙ্গীত-রচনায় কখনও কখনও বহুপদ সমাসের ব্যবহার দেখা যায়।
নীলস্যিজলধৌতচরণতল
অনিলবিকম্পিত শ্যামল অঞ্চল
অঘরচুম্মিতভাল হিমাচল
শুভ্রতুষারকিরীটিনী।
চলিত বাংলায় পদবহুল সমাস চলে না। তা চলিত বাংলার চলনবিরোধী। তবে অর্ধ-শতাব্দী প্রাচীন বা প্রেসকর্নার বা সবুজ-লাল-নীল পতাকা হাতে (ছেলেমেয়েরা)- এধনের প্রয়োগকে স্বাগত জানাতে বাধা নেই।

আরও দেখুন: