সমাজ জীবনে দুর্নীতি রচনা, অথবা, দুর্নীতি ও বাংলাদেশ [ Corruption in society ] অথবা, দুর্নীতি ও এর প্রতিকার – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

Table of Contents
সমাজ জীবনে দুর্নীতি রচনার ভূমিকা :
বিশাল এলাকা জুড়ে নানা জাতের অগণিত গাছপালা, লতাপাতার সমারোহ। মানুষ নিজের সুখ সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা বিধানের জন্যে গড়ে তুলেছে সমাজ, রাষ্ট্র। কোন সমাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্য চাই কতকগুলো নিয়ম কানুন। সমাজের সকল মানুষ যখন নিয়ম মেনে চলে তখন সে সমাজ হয়ে উঠে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধির আকর। কিন্তু বিধাতা মানুষকে দোষ-গুণে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের মধ্যে পাশাপাশি অবস্থান করছে প্রেম-ভালবাসা, স্নেহ-মমতা ও হিংসা-বিদ্বেষ। সুনীতি ও দুর্নীতি দুটোই মানুষের মধ্যে রয়েছে। দুর্নীতি যখন মাথাচারা দিয়ে উঠে তখনি মানুষ হয় অমানুষ। আর দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজ হয়ে যায় বসবাসের অযোগ্য।

মানব সমাজে দুর্নীতি:
নীতি ও দুর্নীতি আদিকাল থেকেই পাশাপাশি চলে আসছে। তবে দুর্নীতির প্রাদুর্ভাব যখন মারাত্মক আকার ধারণ করে তখন জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ কোনকালে, কোন দেশে ছিল না, হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে না। তবে এর মাত্রা সহাসীমার ভেতর রাখাই মানুষের কর্তব্য। সে সমাজে সুর্নীতির চেয়ে দুর্নীতির পরিমাণ বেশি সে সমাজের অগ্রগতি থেমে যায়। মানব সভ্যতা এগিয়ে এসছে সুর্নীতির কারণে। দুর্নীতি বারবার এর অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে।

অফিস আদালতে দুর্নীতি:
বাংলাদেশের অধিকাংশ অফিস-আদালত দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। ঘুম ব্যতীত কোথাও কোন কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হয় না। মাসের পর ফাইল আটকে রাখা হয় ঘুষের আশায়। দারোয়ানা থেকে বড়কর্তা পর্যন্ত ঘুষের রোগে আক্রান্ত। যেন ঘুষে তাদের অরুচি ধরে না। ঘুষ ব্যতীত কাজ করতে তাদের রুচিতে বাঁধে। যে কাজের জন্য সরকার তাদের বেতন দেয় সে কাজ তারা ঘুষ ছাড়া করেন না। অনেকের আবার সরাসরি ঘুষ চাইতে বিবেকে (!) বাধে। তাই তারা বিভিন্ন উপায়ে ঘুষ গ্রহণ করেন। এর ফলস্বরূপ শোষিত হয় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।

পড়াশুনায় দুর্নীতি :
দুর্নীতির নবসংযোজন হল কোচিং ব্যবসায়ী কিছু সংখ্যক দুর্নীতিবাজ শিক্ষকের মধ্যে। যারা শিক্ষক নামের কলঙ্ক, তারা ছাত্রদেরকে বিদ্যালয়ে সঠিকভাবে পাঠদান করেন না। ছাত্রদেরকে তাদের কাছে প্রাইভেট পড়তে বা কোচিং করতে বাধ্য করেন। প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষার কম নম্বর পাবার ভয় দেখান। তাছাড়া প্রকাশকদের নিকট থেকে টাকা খেয়ে নিম্ন মানের বই পাঠ্য করেন। ফলে অধিকাংশ ছাত্র এসএসসি ডিংগাইতে পারে না। তারা পয়সা খেয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে যুব সমাজের ভবিষ্যৎ।

ঋণ খেলাপী:
বহু শিল্পপতি ব্যাংক থেকে ভুয়া প্রজেক্টের নাম দিয়ে ঋণ গ্রহণ করেন এবং সেই ঋণ পরিশোধ করেন না। জামানতের ভুয়া কাগজপত্র প্রদর্শন করে তারা কোটি কোটি টাকা ঋণ হিসেবে হাতিয়ে নেয় এবং সরকারি আইনের শিথিলতার সুযোগে তারা এ ঋণ শোধ করেন না।

দুর্নীতির কুফল :
দুর্নীতি সমাজ, সভ্যতার শত্রু। দুর্নীতি মানবতা, মনুষ্যত্ববোধকে পিষ্ট করে। দুর্নীতি সমাজ জীবনের অগ্রগতির পথকে রুদ্ধ করে দেয়। যে জাতি দুর্নীতিগ্রস্ত সে জাতি কখনোই সামগ্রিকভাবে ধনে, জ্ঞানে, মানে, সম্মানে বড় হতে পারে না। দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যক্তিবিশেষ বা সমাজের, রাষ্ট্রের কতিপয় ব্যক্তি আর্থিকভাবে ফুলেফেপে উঠতে পারেন, কিন্তু সামগ্রিকভাবে সমাজের মারাত্মক ক্ষতি হয়। দুর্নীতির ফলে সত্য, সুন্দর, নিয়মের রাজত্ব ধ্বংস হয়। সমাজ জীবনের রঙ্গে রস্কে দেখা দেয় ক্ষয়। ফলে সমাজ জীবন স্থবির হয়ে পড়ে। দুর্নীতি জীবনকে কলুষিত করে, সত্যকে আড়াল করে, জ্ঞানকে রুদ্ধ করে, উন্নয়নের গতিকে মন্থর করে দেয়। বাংলাদেশে ব্যাপক হারে দুর্নীতি হচ্ছে বলেই এদেশের জাতীয় উন্নয়ন কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারছে না।

দুর্নীতি রোধের উপায় :
দুর্নীতি একটি মারাত্মক ব্যধি। এ থেকে রেহাই পাওয়া কঠিন কাজ। তবে দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনা একেবারে অসম্ভব কিছু নয়। দুর্নীতি দূরীকরণের জন্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। সরকারি দল দুর্নীতির মোহত্যাগ করতে পারলে প্রশাসনে এর শুভ প্রভাব পড়তে বাধ্য। আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি, আইনের কঠোর দৃষ্টান্তমূলক প্রয়োগ এবং গণসচেতনতাই পারে সমাজকে দুর্নীতি থেকে মুক্ত করতে।
উপসংহার :
দুর্নীতি এদেশের সমাজ জীবনকে রাহুর মত গ্রাম করেছে। তাই সমাজ জীবনের অগ্রগতি থেমে গেছে। তবে একথা ঠিক যে অধিকাংশ মানুষ এখনো সুন্দর জীবন-যাপন করতে চায়। দুর্নীতির যে হুজুগ উঠেছে তাতে তারা গা ভাসিয়ে দিয়েছেন ফলে এর ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। আর একথাও ঠিক যে অপকথা রটে বেশি, দুর্নীতিও হয়তো প্রচার পাচ্ছে বেশি। তবে শেষ পর্যন্ত বলতেই হবে যে, লাদেশ এখনও দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই কেবল এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভবপর।
আরও পড়ুন: