সমস্যায় জর্জরিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা

সমস্যায় জর্জরিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা , ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালটি হাজারো সমস্যায় জর্জরিত। ফরিদপুরের বিপুল সংখ্যক মানুষের চিকিৎসার এটাই একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্র।

সমস্যায় জর্জরিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা

প্রতি বছর এ হাসপাতালের আউটডোরে শহর ও গ্রাম এলাকার কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার দরিদ্র জনসাধারণের চিকিৎসা হয়। প্রতিদিন ভোরেই আউটডোরে লাইন লেগে থাকে। এ হাসপাতালে প্রতিদিন ৪০/৪৫ জন রোগী ভর্তি হয় হয়। আউটডোরের রোগীদের অভিযোগ, সারাদিন প্রতীক্ষার পরেও শেষ পর্যন্ত তারা চিকিৎসা পায় না হাসপাতালটি সরেজমিনে দেখতে গিয়ে অনেক সমস্যা চোখে পড়েছে। ওয়ার্ডে ও করিডোরে কফ, থুথু ও পানের পিক এবং ড্রেনের সঙ্গে হাসপাতালের পায়খানার সংযোগ ঘটায় ময়লা আবর্জনায় সব একাকার। সর্বত্র দুর্গন্ধময় পরিবেশ বিরাজ করছে।

 

সমস্যায় জর্জরিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা

 

কলেরা ওয়ার্ডের দরজার পাশেই বড় একটি ডাস্টবিন। সারা হাসপাতাল জুড়ে তীব্র পানির সংকট। টয়লেটগুলো নিয়মিত পরিষ্কারের অভাবে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে আছে। বেডের রোগীদের চাদর ময়লা ও নোংরা, এমনকি কয়েকটি বেডে চাদরও নেই । হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে রোগী দেখার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তা একরকম অচল। সাতজন ডাক্তারের বসার কোনো জায়গা নেই। হাসপাতালের ইমার্জেন্সী ওয়ার্ডে আধুনিক বা উন্নতমানের মেশিন নেই, অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। প্যাথলজি বিভাগে একটি পুরোনো অনুবীক্ষণ যন্ত্র আছে, পরীক্ষা করার কোনো রি- এজেন্ট নেই।

একটি ফ্রিজ ও একটি এম্বুলেন্স ছিল, তা দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অ্যাম্বুলেন্সটিকে মাঝে মধ্যে মেরামত করা হয়। স্টেরিলাইজেশন মেশিন নষ্ট। অপারেশন থিয়েটারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। যেগুলো আছে সেগুলো বহুদিনের পুরোনো। ফলে বর্তমানে হাসপাতালে বড় কোনো অপারেশন করা সম্ভব নয়। হাসপাতালের ৭০ ভাগ কর্মচারীর কোনো আবাসিক সুবিধা নেই। নার্সদের থাকার কোনো জায়গা নেই। দেড়শ বেডের এ হাসপাতালে ৮টি ওয়ার্ড রয়েছে। এখানে মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, শিশু রোগ, কলেরা ইত্যাদি বিভাগ রয়েছে। এক্স-রে বিভাগটির অবস্থা খুবই খারাপ।

 

সমস্যায় জর্জরিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা

 

দুটি এক্স-রে মেশিনের মধ্যে একটি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। অন্যটি অনেক দিনের পুরোনো। প্রোটেকশনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় এক্স-রে বিভাগ থেকে রেডিয়েশন হ্যাজার্ড বলে ডাক্তাররা জানান। কোনো টেকনিশিয়ান নেই বললেই চলে। ডাক্তাররাই এক্স-রে মেশিন অপারেট করেন। হচ্ছে হাসপাতালে ২০ জন ডাক্তারের মধ্যে ১৩ জন আছেন। এঁরা বরিশাল থেকে এসে অফিস করেন। এ ১৩ জন ডাক্তারই হাসপাতালের আউটডোর, ইনডোর এবং ইমার্জেন্সীসহ সকল বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁরাই মর্গে পোস্টমর্টেম করেন। আবার আদালতে গিয়ে ময়না তদন্তের সাক্ষ্য তাঁদেরই দিতে হয়।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

একদা হাসপাতালটি ১৫ বেড় নিয়ে যাত্রা করেছিল। পরে তা ৩০ বেড, ৭০ বেড এবং সবশেষে ১৫০ বেডে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, হাসপাতালটির সুযোগ-সুবিধা তেমন বৃদ্ধি পায় নি হাসপাতাল চত্বরে এক রোগীর আত্মীয় প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সঙ্কট সম্পর্কে বলেন : ‘এহানে আসলে দেহার কেউ নাই। ডাক্তর-কর্মচারী সবাই কেবল নাই-নাই আর নাই বলে; ওষুধ নাই, ডাক্তার নাই, বেড নাই, পরীক্ষার যন্ত্রপাতি নাই— কেবল নাই আর নাই, চিকিৎসা করামু কেমনে?

এ সম্পর্কে হাসপাতালের সিভিল সার্জনের মতামত চাওয়া হলে তিনি বলেন : ‘বাইরে থেকে যা শোনা যায় প্রকৃতপক্ষে সবটুকু সত্য নয়— কিছু লোকবল, যন্ত্রপাতির অভাব আছে তা ঠিক। তবে দ্রুত এ সঙ্কট কাটিয়ে আমরা জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে পারবো। ‘ এমতাবস্থায় উপযুক্ত সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতীব জরুরি। অন্যথায় এলাকার চিকিৎসা ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়বে।

আরও দেখুন:

Leave a Comment