সমস্ত পাথর হলে মহামূল্য মণি | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা , ভাবসম্প্রসারণ কি তা বললে বোঝায়, কবি, সাহিত্যিক, মনীষীদের রচনা কিংবা হাজার বছর ধরে প্রচলিত প্রবাদ প্রবচনে নিহিত থাকে জীবনসত্য। এ-ধরনের গভীর ভাব বিশ্লেষণ করে তা সহজভাবে বুঝিয়ে দেওয়াকে বলে ভাবসম্প্রসারণ।
সমস্ত পাথর হলে মহামূল্য মণি / মণির কদর কিছু হত না কখনই
আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীতে পরস্পর বিপরীতধর্মী উপাদানসমূহের দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া সচল অস্তিত্ববান। সৃষ্টি-ধ্বংস, জন্ম-মৃত্যু, আলো-আঁধার, সুখ-দুঃখ এ সবই পরস্পর বিপরীতধর্মী হলেও একে অপরের পরিপূরক। নিরবচ্ছিন্ন সবকিছুর অস্তিত্বই মূল্যহীন ।
এ জগতে সাধারণ পাথর ও মহামূল্যবান পাথর উভয়ের সমাবেশ দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণ পাথরের পটভূমিতেই উদ্ভাসিত হয় মহামূল্যবান মণি-মুক্তার মহিমা। মণি-মুক্তা অতি মূল্যবান ধাতু যা সহজলভ্য নয়, আর এ কারণেই অন্যান্য সাধারণ পাথর থেকে এদের কদর বেশি। পৃথিবীর সকল পাথরই যদি মহামূল্যবান মণি হতো তাহলে মণি– মুক্তার গৌরব ম্লান হয়ে যেত।
তাই বলে সাধারণ পাথরের মূল্য যে নেই, তাও নয়। বস্তুত স্রষ্টার সৃষ্টিশীল সব কিছুই একে অপরের পরিপূরক। জীবনে আলো-আঁধার, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পাশাপাশি আছে বলেই জীবনের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য সহজে অনুধাবন করা যায়। আলোর রূপ ফুটিয়ে তোলার জন্যে যেমন অন্ধকার একান্ত প্রয়োজন, তেমনি দুঃখবেদনা ও অভাবের তীব্র জ্বালা আছে বলেই আমাদের জীবনে সুখ, আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্য এত কাম্য ।
পৃথিবীর সব বস্তুই মানুষ সমান গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে না। দৈনন্দিন জীবনে যেসব জিনিস অতি প্রয়োজনীয়, সেসব জিনিসের প্রতি সবাই গুরুত্ব প্রদান করে। সহজলভ্য বস্তুগুলো মানুষের কাছে কম গুরুত্ব বহন করে। যেমন-আলো, বাতাস, পানি প্রভৃতি ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। কিন্তু প্রকৃতিতে এসব প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় বলেই এসবের প্রতি মানুষের গুরুত্ব কম। মানুষের জীবন ধারণের জন্য এগুলো আবশ্যকীয় উপাদান হলেও মানুষ সাধারণত মনি-মুক্তা, সোনা-রূপাকে বেশি মূল্যবান হিসেবে গণ্য করে। কারণ প্রকৃতিতে আলো, বাতাস যেমন সহজে পাওয়া যায়, তেমনি মনি-মুক্তা খুজে পাওয়াটা ততোটা সহজ নয়।

অনেক শ্রম ও সাধনার বিনিময়ে সেগুলো অর্জিত হয়। আর এই দুর্লভ্যতাই মনি-মুক্তার মূল্যমানকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। একইভাবে মানবজীবনে কষ্টার্জিত বস্তুই সবচেয়ে বেশি দামি। অনায়াসে লব্ধ বস্তুর প্রতি মানুষের কোনো আকর্ষণ থাকে না এবং তা কখনোই কষ্টলব্ধ বস্তুর মূল্য বিন্দুমাত্র কমাতে পারে না। অনুরূপভাবে, জীবনে প্রত্যেক মানুষই যদি সফল ও সুখী হত তাহলে এসবের কোনো গুরুত্ব থাকত না। শিক্ষা: কষ্ট করে সাফল্য লাভ করতে হয় বলে, সফল মানুষের সংখ্যা কম। কিন্তু সহজেই যদি সাফল্য লাভ করা যেত, তাহলে সফল মানুষের সংখ্যা আরো বেশি হতো।
আরও দেখুন: