সন্ধি কেন বা সন্ধির উদ্দেশ্য | সন্ধি ও সন্ধি-গঠন | ভাষা ও শিক্ষা

সন্ধি কেন বা সন্ধির উদ্দেশ্য – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা” বিভাগের “সন্ধি ও সন্ধি-গঠন” বিষয়ের একটি পাঠ।  ধ্বনি-পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ‘সন্ধি’র একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। বর্ণমিলন বোঝাতে ইংরেজিতে liaison বা assimilation-এর মতো কিছু শব্দ থাকলেও পাশ্চাত্যের ধ্বনিতাত্ত্বিকেরা আমাদের ‘সন্ধি’ শব্দটিকে সাদরে গ্রহণ করেছেন।

সন্ধি কেন বা সন্ধির উদ্দেশ্য | সন্ধি ও সন্ধি-গঠন | ভাষা ও শিক্ষা

প্রখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ্ ব্লুমফিল্ডের ভাষায়, ‘This term like many technical terms of linguistics comes from the ancient Hindu grammarians. Literary it means putting together’. ব্লুমফিল্ড ‘সন্ধি’র তাৎপর্য সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন— ‘putting together’. ব্যুৎপত্তি ঠিক একই কথা বলে— সম্ + ধি (√ধা + ই), সম্ একসঙ্গে, ধি = ধরে রাখে যা। = বহু ভাষাতেই সন্ধি দেখা যায়। ইংরেজি : im + mortal = immortal; do + on = don ফরাসি : le + homme = 1’homme, si + il = s’il ফারসি : উ + অ = উত্; আরবি : আব্দ + আল্ + সালাম = আবদুস্সালাম । শুধু ধ্বনি-পরিবর্তনই নয়, ভাষার মাধুর্য বাড়াতেও সন্ধির একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করাই ভাষার অন্যতম কাজ। কতকগুলো ধ্বনি উচ্চারণ করেই মানুষ এ কাজ করে থাকে।

 

সন্ধি কেন বা সন্ধির উদ্দেশ্য | সন্ধি ও সন্ধি-গঠন | ভাষা ও শিক্ষা

 

এই ধ্বনিগুলো স্বাভাবিকভাবে উচ্চারণ করার সময় সে কখনো দ্রুত কখনো সোজা পথে অবলীলায় ধ্বনি সৃষ্টি করে থাকে। ফলে কখনো কখনো বড় বড় শব্দের ধ্বনিসমূহের কিছু অংশ স্বাভাবিকভাবেই বদলে যায়, কিছু-বা বাদ পড়ে যায়। কখনও আবার অতিরিক্ত ধ্বনিও এসে যায়— কারণ একটাই : উচ্চারণের সুবিধা। যেমন : ‘খা+আ = খাআ’– এই ‘খাআ’ বলতে হলে ‘খা’–র পর একটি খাঁটি স্বরধ্বনি ‘আ’ উচ্চারণ করতে হয়। কিন্তু এতে উচ্চারণে অসুবিধা হয়, কারণ “খা” বলার পর না থেমে ‘আ’ উচ্চারণ করা যায় না। অথচ ‘খাওয়া’ বললে জিহ্বা তথা বাগ্যন্ত্রগুলো বেশি সুবিধা পায়।

 

সন্ধি কেন বা সন্ধির উদ্দেশ্য | সন্ধি ও সন্ধি-গঠন | ভাষা ও শিক্ষা

 

আর এ-কারণে খা + ও + আ খাওয়া। সুতরাং ধ্বনি-পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সন্ধি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ফলে এর প্রভাব বানানেও পড়ে। যেমন : পুরস্কার পুরঃ + কার, নমস্কার = নমঃ + কার ইত্যাদি। অতএব = আমরা বলতে পারি সন্ধির উদ্দেশ্য হল- (ক) স্বাভাবিক উচ্চারণে সহজ প্রবণতা এবং (খ) ধ্বনিগত মাধুর্য সম্পাদন। এক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে যে, উচ্চারণের সুবিধা হলেও ধ্বনিগত মাধুর্য রক্ষিত না হলে সে ক্ষেত্রে সন্ধি করার নিয়ম নেই। যেমন : কচু + আদা + আলু ‘কচ্চাদালু’ হয় না।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment