সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা – ভাব-সম্প্রসারণ করবো আজ। কবি-সাহিত্যিকদের রচনায় অনেক সময় ভাব-সংহত বাক্য বা চরণ থাকে, যার মিত-অবয়বে লুক্কায়িত থাকে জীবন ও জগৎ সম্পর্কিত গূঢ় কথা, নিহিত থাকে ভূয়োদর্শনের শক্তি। নির্ভুল উক্তি ও প্রবাদ প্রবচনের ব্যবহারে ভাব সম্প্রসারণ হয়ে ওঠে সৌন্দর্যময়।

 

সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা, আশা তার একমাত্র ভেলা

পার্থিব জগতের দুঃখ-সঙ্কুল জীবনে মানুষ প্রতিনিয়ত বিপর্যস্ত। কিন্তু তারপরও আশায় বুক বেঁধে মানুষ বেঁচে থাকে। আশাই জীবন। আশা আছে বলেই মানুষ বেঁচে আছে এবং বেঁচে থাকতে চায়। মানুষের জীবনের চলার পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। সে পথ নানা বাধা-বিঘ্নে ভরা। সমস্যাসঙ্কুল সংসারের প্রতিকূল পরিবেশে আশার ওপর নির্ভর করেই মানবজীবনের দিনগুলো অতিবাহিত হয়। সাগরে যেমন অসংখ্য তরঙ্গ উঠে বিক্ষুব্ধ করে রাখে তার বুক, তখন জলযান পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে তেমনি সংসাররূপ দুঃখ-সাগরে এ ধরনের অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা মানুষকে গ্রাস করতে চায়। সেই উত্তাল দুঃখের সাগর মানুষ অতিক্রম করে আশার তরণী ভাসিয়ে।

মানুষ যেমন ভেলা ভাসিয়ে উত্তাল তরঙ্গ পাড়ি দেয় তেমনি সংসার-সাগরেও সঙ্কট উত্তরণের জন্য কোনো অবলম্বনকে আশ্রয় করতে হয়। আর এই অবলম্বন হলো মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা। আজকের দিনের সমস্যা ও দুঃখের দিনগুলো আগামী দিন থাকবে না, আগামী দিনগুলো ভালো হবে, বয়ে আনবে কল্যাণ, এই আশাতেই মানুষ স্বাভাবিকভাবে দুঃখ-কষ্টকে মেনে নেয়— সুখের আশায়। বস্তুত আশা না থাকলে মানুষ তলিয়ে যেত দুঃখের সমুদ্রে—‘আশার দুয়ারে প্রতিটি মানুষই অতিথি’। তাই মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন হলো আশা, আশাই মানুষকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিতে প্রেরণা জোগায়।

 

 

বর্তমানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে যে জীবন, তার মধ্যে প্রেরণা জোগায় ভবিষ্যতের আশা। আশা মানুষকে দেয় পথ চলার প্রেরণা, দেয় সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির আশ্বাস। এই আশা এমনই যে তা পূরণ হবার পরেও লুপ্ত হয়ে যায় না, বরং অন্য কোনো ধরনের নতুন আশায় রূপান্তরিত হয়ে আবারও মানবমনকে অধিকার করে, এ হল এক অফুরান শক্তির উৎস। ‘আশাকে ত্যাগ করলেও সে ফিরে ফিরে আসে।’

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

আর আসে বলেই নিরুদ্বিগ্নভাবে চলছে পৃথিবী, গঠিত হচ্ছে নতুন নতুন সমাজ ব্যবস্থা, অট্টালিকা, সম্ভব হচ্ছে নতুন নতুন উদ্ভাবন। আশা আছে বলেই শত প্রতিকূলতার মধ্যেও মানুষ বিশ্বজগৎকে শতভাবে অক্লান্ত পরিশ্রমে ঢেলে সাজাচ্ছে, সাজাবেও।জীবনের সংক্ষিপ্ত পরিসরে মানুষ জানে না কখন তার জীবনের দুঃখ শেষ হবে। জানে না বলেই আশায় আশায় তার জীবন কেটে যায়। সহস্র দুঃখ-বেদনা আর প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মানুষ রুখে দাঁড়ায়, বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে আশার ভেলায় ভর করে।

Leave a Comment