Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

সংবাদপত্র ও তার ভূমিকা | গণমাধ্যম | বাংলা রচনা সম্ভার

সংবাদপত্র ও তার ভূমিকা | গণমাধ্যম | বাংলা রচনা সম্ভার ,  ভূমিকা : সংবাদপত্র আধুনিক জীবনের অপরিহার্য সঙ্গী। গণতান্ত্রিক যে-কোনো দেশে তা সুস্থ গণতান্ত্রিক সমাজের দর্পণ। সমাজজীবনের দৈনন্দিন পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পৃক্ততায় এবং নিরন্তর তার বস্তুনিষ্ঠ উপস্থাপনায় সংবাদপত্র এখনো শক্তিশালী গণমাধ্যম। জনমতের প্রতিফলনে ও জনমত গ সংবাদপত্র পালন করে শক্তিশালী ভূমিকা। গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় বহু দল ও মতের ধারক-বাহক হিসেবে সংবাদপত্র সরকার ও জনগণের মধ্যে রচনা করে সেতুবন্ধন।

সংবাদপত্র ও তার ভূমিকা | গণমাধ্যম | বাংলা রচনা সম্ভার

সংবাদপত্র ও তার ভূমিকা

সংবাদপত্র আবির্ভাবের ইতিহাস : যুগের প্রয়োজনেই সংবাদপত্রের আবির্ভাব। কিন্তু একদিন যখন সংবাদপত্রের অস্তিত্ব ছিল না তখনও মানুষ খবরের জন্য উৎকণ্ঠিত হতো। তখনো পথের দুর্গমতাকে তুচ্ছ করে অজানাকে জানার আকাঙ্ক্ষা পূরণে পরিব্রাজকেরা বেরিয়ে পড়তেন বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে । ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করতেন প্রয়োজনীয় নানা তথ্য, নানা সংবাদ। যখন স্বদেশে ফিরতেন, তখন আত্মীয়- পরিজনেরা তাদের কাছে সেসব কাহিনী শোনার জন্য ভিড় জমাতেন। তারাও শোনাতেন পথের রোমাঞ্চকর বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা।

 

বাণিজ্য পসরা নিয়ে যারা দেশ দেশান্তরে পাড়ি দিতেন, তারাও ছিলেন এক অর্থে জীবন্ত সংবাদপত্র। বর্তমান সভ্যতায় সংবাদপত্রের যে অপরিহার্য ভূমিকা, তার প্রথম প্রকাশের গৌরব চীন দেশের। চীন দেশেই প্রথম কাগজ ও মুদ্রণ যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছিল। ভারতবর্ষে মোগল শাসনেও সরকারি প্রশাসনে হস্তলিখিত সংবাদপত্রের প্রচলন ছিল। সরকারি গণ্ডীর মধ্যেই তা ছিল সীমাবদ্ধ । ইউরোপেও প্রথম সংবাদপত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটল নবজাগরণের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ইতালিতে। সেখান থেকেই সংবাদপত্র অতি দ্রুত বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কারের ফলেই সংবাদপত্রের দ্রুত প্রসার সম্ভব হলো। উন্মোচিত হলো বর্তমান সভ্যতার এক নবদিগন্ত ভারতবর্ষেও অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে মুদ্রণযন্ত্রের প্রতিষ্ঠার ফলে ইংরেজিতে প্রকাশিত হলো প্রথম সংবাদপত্র।

হিকির ‘বেঙ্গল গেজেট’ই হলো সে প্রথম প্রকাশিত সংবাদপত্র। পরে ইন্ডিয়া গেজেট’, “ক্যালকাটা গেজেট”, “হরকরা’ প্রভৃতি ইংরেজি সংবাদপত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ইংরেজের হাতেই ভারতবর্ষে প্রথম সাংবাদিকতার ঐতিহ্য রচিত হয়েছিল। ১৮১৮ সালে ভারতবর্ষের সংবাদপত্র ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায়। ঐ সনেরই এপ্রিলে প্রথম বাংলা সাময়িক পত্র ‘দিগদর্শন’-এর আবির্ভাব ঘটেছিল। ১৮১৮ সালের ২৩ মে বাংলার সংস্কৃতির ইতিহাসে যে পত্রিকা আজও তুলনাহীন মর্যাদায় ভূষিত হয়ে আছে, সে পত্রিকাটির নাম সমাচার দর্পণ’। ‘সমাচার দর্পণ’ বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র বলে সাহিত্যের ইতিহাসে বিবেচিত। 

সংবাদপত্রের শ্রেণীবিভাগ : ধীরে ধীরে সংবাদপত্র হয়ে উঠল আধুনিক মানুষের ছোট-বড় নানা কৌতূহল চরিতার্থের অন্যতম অবলম্বন। স্বাভাবিক কারণেই সংবাদপত্রেরও ঘটল নানা রূপান্তর। শুধু বিষয় বৈচিত্রেই নয়, চরিত্র ধর্মেও এলো বিভিন্নতা দৈনিক, সাপ্তাহিক, অর্ধ-সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈ-মাসিক এমনি আরো কত শ্রেণীতে বিভক্ত হলো সংবাদপত্র। কোনো কোনো সংবাদপত্র দিনের সূচনা মুহূর্তেই আমাদের দুয়ারে এসে হাজির হয়। আবার দিনান্তেও কারো কারো ঘটে আত্মপ্রকাশ। সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণেও রয়েছে বিভিন্নতা। সংবাদপত্র কখনো সরকারের মুখপাত্র, কখনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কখনো তা বিশেষ সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত নিরপেক্ষও হতে পারে। অবশ্য নিরপেক্ষ সংবাদপত্রেরই জনপ্রিয়তা বেশি ।

সংবাদপত্রের গুরুত্ব : সংবাদপত্র বর্তমান সভ্যতার অপরিহার্য অঙ্গ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মানবভাগ্যে যখন দুর্দিন নেমে আসে, তখন সংবাদপত্রই সে দুঃসংবাদ গণদুয়ারে পৌছিয়ে দিয়ে ত্রাণকার্যকে করে ত্বরান্বিত। দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় অগ্নিপরিধি, মহাসাগরের দুস্তর ব্যবধান কিংবা গিরিকান্তার ও মরু-প্রান্তরে দুঃসাধ্য দুর্গমতাকে তুচ্ছ করে সে বিশ্ববার্তা সংগ্রহ করে আনে। রোগজর্ডর পৃথিবীর শিয়রে বসে সে একনিষ্ঠ সাধকের মতো অনুভব করে তার বক্ষস্পন্দন এবং পৃথিবীর মানুষের কানে পৌঁছে দেয় তার সকল সংবাদ। দূর করে মানুষের উৎকণ্ঠা ও ব্যাকুল সংবাদতৃষ্ণা।

বিশ্বের রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, আমোদ-প্রমোদ সকল-ক্ষেত্রেই সংবাদপত্রের অবাধ পদসঞ্চার। সংবাদপত্রের নির্ভীক ধিক্কারবাণী যখন ধ্বনিত হয়ে ওঠে, সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর লক্ষ্য কোটি মুখ কণ্ঠস্বরও প্রবল বিক্ষোভে সোচ্চার হয়ে ওঠে। শক্তিমদমত্ত অত্যাচারীর দল সে প্রবল গণবিক্ষোভের সম্মুখে দাঁড়াতে পারে না। তখন ভীত-সন্ত্রস্ত অত্যাচারীর দল নতিস্বীকার করে সেই জাগ্রত জনমতের কাছে। অন্যায়ের পরাভবে ন্যায়ের অম্লান মর্যাদা হয় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত। পরাজিত হয়। অত্যাচারী স্বৈরতন্ত্র, জয় হয় মানবতার । নির্ভীক সংবাদপত্রই সে কৃতিত্বের কারিগর ।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংবাদপত্রের ভূমিকা : সংবাদপত্র গণতন্ত্রের সদাজাগ্রত প্রহরী। বিচারপতির বিচারশালায় সে নিপীড়িত মানুষের পক্ষ সমর্থন করে। কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে, গণতন্ত্রের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হলে কিংবা গণতন্ত্রের পবিত্রতা কোনো কারণে কলুষিত হলে সংবাদপত্রের নির্ভীক কণ্ঠ সেখানে সোচ্চার হয়ে ওঠে। সংবাদপত্র তাই জনগণের পবিত্র গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণের সর্বদা দায়িত্বশীল অভিভাবক।

সংবাদপত্রের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভূমিকা : সংবাদপত্র দৈনন্দিন জীবনের নানা অপরিহার্য তথ্য প্রতিদিন আমাদের হাতে তুলে দেয়। পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তে ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যার মতো খবরাখবর সংবাদপত্র আমাদের জানিয়ে দেয়। এভাবে দেশ ও বিশ্ববাসীকে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়াতে সাহায্য করে। সংবাদপত্রে দুর্ঘটনার খবর পড়ে নিহত-আহতের সন্ধানে ছুটে যেতে পারে তাদের আত্মীয়-পরিজন। সাম্রাজ্যবাদী কিংবা আগ্রাসী তৎপরতা যখন সভ্যতাকে গ্রাস করে তখন সংবাদপত্র তার বিরুদ্ধে মানবতার জাগরণ ঘটায়।

পারমাণবিক যুদ্ধ কিংবা স্নায়ুযুদ্ধের ভয়াবহতায় পৃথিবীর ধ্বংস-আশঙ্কা দেখা দিলে শান্তির সপক্ষে নেয় সচেতন দায়বদ্ধ ভূমিকা। দেশে সামরিকতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র জনগণের টুটি চেপে ধরলে সংবাদপত্র তার বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভের পটভূমি রচনা করে । গণআন্দোলনের পক্ষে নেয় কার্যকর অবস্থান। যেখানেই মানবতার লাঞ্ছনা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিবেকের কণ্ঠরোধ, সেখানেই সংবাদপত্রের কণ্ঠস্বর নেয় প্রতিবাদী ভূমিকা ।

আধুনিক সংবাদপত্রের বিষয়-বিস্তার : আধুনিক সংবাদপত্র কেবল সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যম নয়। দেশ-বিদেশের রাজনীতি ও সামাজিক-অর্থনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রের সংবাদ পরিবেশন ছাড়াও এতে থাকে বিচিত্র তথ্য প্রতিবেদন। শিল্প-সাহিত্যের আলোচনা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা তথ্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও বিনোদন জগতের বিচিত্র কর্মধারা এখন সংবাদপত্রের আকর্ষণীয় বিষয় হয়ে উঠেছে। অর্থনীতি, ইতিহাস, ধর্ম, ভূগোল, দর্শন যে কোনো বিষয়ের খবরাখবর, প্রবন্ধ এখন সংবাদপত্রের আকর্ষণীয় বিষয় হয়ে উঠেছে।

অর্থনীতি, ইতিহাস, ধর্ম, ভূগোল, দর্শন যে কোনো বিষয়ের খবরাখবর, প্রবন্ধ এখন সংবাদপত্রের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে। শিশু-কিশোর ও ছাত্রছাত্রীদের জন্য থাকে আলাদা বিভাগ, আলাদা পাতা। মেয়েদের জন্য তো আলাদা পাতা থাকেই। এখন আমাদের দেশে পত্রিকার পাতায় আলাদাভাবে যোগ হয়েছে কোনো বিশেষ এলাকার জন্য সাপ্তাহিক আলাদা পাতা। দীর্ঘকাল ধরে জনমত ও জনজীবনের সমস্যাভিত্তিক চিঠিপত্রের কলাম ছিল পত্রিকার বিশেষ অঙ্গ। এখন কোনো কোনো বিশেষ বিশেষ ইস্যুতে পাঠকদের মতামত জরিপ করে তার প্রতিবেদন প্রকাশ করছে এবং ঐসব ইস্যুতে সরকার ও জাতির করণীয় সম্পর্কে আলোকপাতের চেষ্টা করছে। আসলে সংবাদপত্র এখন জনজীবনের প্রায় সব দিককেই তার আওতায় নিয়ে আসতে চাইছে।

বিশেষ করে স্যাটেলাইট টিভির প্রভাব ব্যাপক হয়ে পড়ায় তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য সংবাদপত্র নিত্যনতুন বিষয়কে ধারণ করছে। ফলে এখন সংবাদপত্র হয়ে উঠেছে দৈনন্দিন জীবনের নির্দেশিকা। ভাগ্য গণনা, পাত্র-পাত্রী নির্বাচন, চাকরির সন্ধান, অবসর বিনোদন, ব্যবসা-বাণিজ্য, হরতাল-ধর্মঘট, সভা-সমাবেশ, আলোচনা-সেমিনার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির নির্দেশিকা, পরীক্ষার তারিখ ও ফলাফল, বার্ষিকী কিংবা দিবস পালন, জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে, পুরস্কার ও সম্মাননা – কি থাকছে না সংবাদপত্রে? দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় সংবাদপত্র এখন আমাদের চলমান নির্দেশিকা ।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

সংবাদপত্র ও জনমত গঠন : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রকৃত ক্ষমতা থাকে জনগণের হাতে। ফলে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও ভূমিকা জাতীয় অগ্রগতির পক্ষে কতটা সহায়ক এবং কতটা জনস্বার্থের পরিপূরক তা নিয়ে জনগণের মধ্যে অনেক সময় দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ক্ষমতাসীনরা সবসময় তাদের পদক্ষেপকে জোর গলায় ইতিবাচক বলে প্রচার করে এবং বিরোধীরা তাকে একেবারেই প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু সংবাদপত্র উভয় পক্ষের মতামত, যুক্তি ও তথ্যনির্ভর আলোচনা প্রকাশ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নিজেদের অভিমত গঠন করতে পারে।

সংবাদপত্রের পাতায় জ্ঞানীগুণী ও বিশেষজ্ঞদের লেখা প্রবন্ধ ও অভিমত, কলাম লেখকদের তর্কবিতর্ক, যুক্তিপ্রদান ও যুক্তিখণ্ডন, পত্রিকার নিজস্ব সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় মতামত, জনমত গঠনে সাহায্য করে। আমাদের দেশে সাম্প্রতিককালে তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ইত্যাদি ইস্যুতে জনমত গঠনে সংবাদপত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অবশ্য কখনো কখনো কোনো কোনো সংবাদপত্র বিশেষ গোষ্ঠী বা দলীয় স্বার্থে জনমতকে তাদের পক্ষে টানার জন্য সংকীর্ণ উদ্দেশ্যপূর্ণ নানারকম প্রচারণার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে। কিন্তু পাঠক সমাজ সচেতন হলে শেষ পর্যন্ত এসব সংবাদপত্রের অপপ্রচারের চেষ্টা ও হীন উদ্দেশ্য সফল হতে পারে না।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় পরিপূরক ভূমিকা : সংবাদপত্র বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় পরিপূরক ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমভিত্তিক এবং পরীক্ষা-নির্ভর  সার্টিফিকেট প্রদানের শিক্ষায় শিক্ষার্থীর জ্ঞানের ক্ষেত্র সীমিত হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষা নোট ও গাইড-বই নির্ভর মুখস্থ বিদ্যায় পরিণত হয়েছে।

সংবাদপত্র এখন যেহেতু জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বক্ষেত্রকেই তার আওতায় এনেছে তার ফলে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত সংবাদপত্র পাঠে বহুমুখী জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পায়। এতে তাদের জ্ঞানের ক্ষেত্র যেমন সম্প্রসারিত ও বিকশিত হয় তেমনি বিষয়জ্ঞানের পাশাপাশি ভাষাজ্ঞানও বাড়ে। তাছাড়া দেশ ও জাতির সমস্যা, সংকট-সম্ভাবনা সম্পর্কে তাদের ধারণা বাড়ে। আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটে। তাদের শিক্ষা হয় সর্বতোমুখী।

অপকার : আধুনিক সভ্যতার জয়ের মুকুট পরিহিত সংবাদপত্র শিল্প সত্য ও ন্যায়ের নির্ভীক বিবেকবানদের হাতে পরিচালিত না হয়ে যদি স্বার্থানেষী অপশক্তির হাতে নিয়ন্ত্রিত হয় তবে তা সভ্যসমাজে বিপর্যয়ের কারণ হয়। কথিত আছে, সংবাদপত্র যেমন একটি জাতিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে তেমনি সুপ্রতিষ্ঠিত জাতিকেও ধ্বংস করতে পারে।

এজন্যই সাংবাদিকদের জাতির বিবেক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মিথ্যা সংবাদ প্রকাশে, প্রকাশিত প্রবন্ধ-গল্প-নাটকে অশ্লীলতার বহিঃপ্রকাশ জাতীয় মেরুদণ্ডকে ভেঙে দিতে পারে। বাণিজ্যিক কারণে সংবাদপত্র কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিল্পমুখী না হয়ে যান্ত্রিক সভ্যতার জোয়ারে তারুণ্যদীপ্ত সমাজকে নগ্নতাপূর্ণ বিজ্ঞাপন রাজ্যে নিক্ষিপ্ত করে চলেছে। মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে গোষ্ঠী, শ্রেণী ও দলীয় পর্যায় সৃষ্টি করছে সংঘাত-বিষাদের পাহাড়।

উপসংহার : বর্তমানে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, মানব উন্নয়ন এবং মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে সংবাদপত্রগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। শাসনব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্যেও সংবাদপত্র ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। উন্নততর জীবন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আগ্রহ সৃষ্টিতেও সংবাদপত্রের দায়িত্ব কম নয়। বর্তমানে স্যাটেলাইট যোগাযোগ প্রযুক্তির ফলে গণমাধ্যমে উন্নত দেশের একচেটিয়া আধিপত্য সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই অবস্থায় আমাদের দেশের সংবাদপত্রকে হতে হবে ঐতিহ্য-সচেতন, জাতীয় সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক।

 

আমাদের দেশে ব্যাপক নিরক্ষরতা, সমাজজীবনে পশ্চাৎপদতা ইত্যাদির প্রেক্ষাপটে সমাজজীবনে আধুনিক ধ্যান-ধারণা ও বিজ্ঞানমুখী চেতনার বিকাশে সংবাদপত্রের ভূমিকা হতে হবে কল্যাণমুখী। লুটেরা পুঁজি ও ক্ষমতার অপব্যবহার সমাজজীবনে যে সন্ত্রাস, ও অস্থিরতার জন্ম নিয়েছে, রাজনৈতিক অঙ্গনে যে বিভেদ ও জবরদস্তিমূলক মানসিকতার বিস্তার ঘটেছে, তার বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রামে এবং দেশে গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনাসম্পন্ন সুশীল সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে সংবাদপত্র সততা ও দায়বদ্ধতার পরিচয় দেবে—এটাই সবার কাম্য। জনস্বার্থ ও মানবতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থানই সংবাদপত্রকে সত্যিকার অর্থে জনগণের কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

 

আরও দেখুন:

Exit mobile version