ষোল আনাই বৃথা | গল্প লিখন | ভাষা ও শিক্ষা

ষোল আনাই বৃথা | গল্প লিখন | ভাষা ও শিক্ষা ,রামনারায়ণ পণ্ডিতের নাম-ডাক খুব। সংস্কৃতে শুধু কাব্য-ব্যাকরণতীর্থই নন, ন্যায়শাস্ত্রেও অগাধ পাণ্ডিত্য। নিজের জ্ঞান-গরিমা ও পাণ্ডিত্য নিয়ে অহংকার তাঁর নাম-ডাকের চেয়ে আরো বেশি। উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে, কথাবার্তায় তাঁর সে-অহমিকা প্রকাশ হয়ে পড়ে।

 

ষোল আনাই বৃথা | গল্প লিখন | ভাষা ও শিক্ষা

 

ষোল আনাই বৃথা | গল্প লিখন | ভাষা ও শিক্ষা

সেবার ডাক এসেছিল ভিনগাঁয়ে। ঘোষেরা সম্পন্ন চাষী। পিতা পুলকেশের শ্রাদ্ধ উপলক্ষে বাড়িতে সুপণ্ডিত রামনারায়ণের পায়ের ধুলো চান তাঁরা। এত বড় বিদগ্ধ মানুষকে দিয়ে শ্রাদ্ধবাসরে পিতার পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম সম্পাদন কম ভাগ্যের কথা নয়। বহু ধরাধরি, অনুনয়-বিনয় করাতে পণ্ডিতমশায় রাজি হলেন।

কথামতো দুদিন বাদে রওয়ানা হলেন ঘোষদের বাড়ির দিকে। পথিমধ্যে খুরা-নদী পার হয়ে তবেই ঘোষদের বাড়ি ঘোষেরা অবশ্য নৌকার ব্যবস্থাও করে রেখেছিলেন। পণ্ডিতমশায় ঘাটে এলেই মাঝি সাদরে নৌকায় তুলে সযত্নে বসালেন তাকে। নৌকায় চড়ে ফুরফুরে দখিনা বাতাসে বেশ আরাম বোধ করেন তিনি।

 

ষোল আনাই বৃথা | গল্প লিখন | ভাষা ও শিক্ষা

নদীতে জোয়ার লেগেছে খানিক আগে। ঘোলা জলে স্রোতের ছোট ছোট ঘূর্ণি। স্রোতের অনুকূলে নৌকা ভাসিয়ে মাঝি হাল ধরে শক্ত হাতে। নৌকা হেলেদুলে এগোতে থাকে। আবর্তের মাঝে পড়লে দোলনি আরো বাড়ে। তখন পণ্ডিতের কেমন যেন ভয় করে। তিনি বলেন, সাবধানে চল্ মাঝি। তোর নৌকায় কে উঠেছে জানিস্ ।

মাঝি অকপটে বলে, কী করে জানবো কত্তা। ঘোষ কত্তারা কইলে একজন নোক আনতি হবে, বিকেলে গিয়ে ওপারের ঘাটে পিতিখ্যে করবি। পিতিখ্যে নয় প্রতীক্ষা, নোক নয় বল্ লোক, ধমকের স্বরে কর্কশ গলায় বলে ওঠেন পণ্ডিত মশায়। কত বড় পণ্ডিত মানুষ আমি। কাকে কী বলতে হয় কিছুই জানিস না দেখছি। কতদূর লেখাপড়া করেছিস ? লেখাপড়া। মাঝি হাসে, গরিব মাঝির ছেলে আমরা। নেখাপড়া শিখবো কী করে কত্তা। কথাগুলো সাজিয়ে বলার চেষ্টা করে মাঝি।

পণ্ডিত এবার মাথাটা উপরে-নীচে দু-বার ঝুঁকে নিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন, এক্কেবারে নীরেট মূর্খ রয়ে গেছিস বলেই তোর এই দুর্গতি। দেখছি তোর জীবনের আট আনাই গেছে এই খুরা নদীর জলে। কথাটা বলেই পণ্ডিত রাজ্য জয়ের হাসি হাসলেন।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

মাঝি শুষ্ক গলায় ঘাড় নেড়ে বলে, হ্যাঁ কত্তা, আট আনা কেন, বারো আনাই গেছে। মাঝির বুক থেকে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে নদীর বাতাসের সঙ্গে মুহূর্তেই মিশে যায়। নৌকা মাঝনদীতে এসে পড়ে। কথা বলতে বলতে খেয়াল ছিল না কখন পশ্চিম আকাশের কোণে কালবৈশাখীর মেঘ জমাট বেঁধে প্রলয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। যে-কোনো মুর্তে ঝড়-ঝঞ্ঝা খ্যাপা ধৈত্যের মতোন এসে আছড়ে পড়তে পারে। পণ্ডিত শঙ্কিত হয়ে পড়েন।

মাঝি শুধায়, সাঁতার জানেন কত্তা ? পণ্ডিতের মুখ ভয়ে কালো হয়ে যায়। অস্পষ্ট কণ্ঠে মাথা নেড়ে বলেন, না। মাঝি এবার হো হো করে অট্টহাস্যে ফেটে পড়ে। বলে, আমাদের জীবনের এখনো কিছু জলে যেতে বাকি আছে, কিন্তু পণ্ডিত, তোমার জীবনের ষোল আনাই বৃথা।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment