শ্বাসাঘাত বা ঝোঁক – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা” বিভাগের একটি পাঠ। শ্বাসাঘাত বা ঝোঁক ধ্বনির একটি বিশিষ্ট দিক। ‘কথা বলবার সময় শব্দের কোনো কোনো অক্ষরের উচ্চারণে বায়ু বিশেষ জোর বা বলের সঙ্গে নির্গত হয়, একে শ্বাসাঘাত, বন, প্রস্বন বা ঝোঁক বলে। বিশেষ অংশে গুরুত্ব দিতে হলে শ্বাসাঘাত প্রযুক্ত হয়। এই শ্বাসাঘাত শব্দের কোনো একটি অক্ষর বা syllable-কে নির্ভর করে থাকে। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট কোনো অক্ষরে শ্বাসবায়ু দ্রুতবেগে বের হয়। সাধারণভাবে দেখা যায়, বাংলা শব্দের প্রথমে এবং বাক্যস্থ শব্দগুচ্ছের শুরুতে এরূপ ঝোঁক বা বল দরকার হয়।
শ্বাসাঘাত বা ঝোঁক | ভাষা ও শিক্ষা
অবশ্য বাংলাদেশের উপভাষায় এরূপ ঝোঁকের নির্দিষ্ট কোনো স্থান নেই। ইংরেজি, রুশ, জার্মান প্রভৃতি ভাষার একটি বড় বৈশিষ্ট্য এই শ্বাসাঘাত। এ সমস্ত ভাষাতে লক্ষ করা যায়, শ্বাসাঘাতের স্থান পরিবর্তনে অর্থেরও পরিবর্তন ঘটে। যেমন, ইংরেজিতে /Con/tract = চুক্তি : বিশেষ্য, আর Contract = সংকুচিত করা। তেমনি Present উপস্থিত, Present/ উপহার দেওয়া। == বাংলা ভাষায় শ্বাসাঘাত নির্ভর করে মূলত অক্ষরের গঠনের ওপর। অক্ষরের প্রাণ স্বরধ্বনি। স্বরধ্বনি একটির বেশি থাকবে না। সমাজজীবনের মানদণ্ডই অবশ্য এক্ষেত্রে চূড়ান্ত।
’১. শ্বাসাঘাত বা ঝোঁক বিষয়টিকে বহুভাষাবিদ পণ্ডিত জ্যোতিভূষণ চাকী নিম্নরূপে ব্যাখ্যা করেছেন— ‘কথা বলতে গিয়ে আমরা একটা ধ্বনির প্রবাহ গড়ে তুলি, অবশ্য সে প্রবাহ হয়তো একটানা নয়, ক্ষণবিচ্ছিন্ন। কোনও কোনও ভাষায় এই উচ্চারিত শব্দধ্বনিতে স্বরের এক স্বরের একটা বিশেষ বা ‘বল’ বলি, ইংরেজিতে যেমন এই stress বা accent আছে, তও তেমনি আছে। তবে এই দুটি পড়ে, একে আমরা ‘শ্বাসাঘাত’ ভাষায় ঝোঁক বা accent-এর তফাত আছে।
ইংরেজিতে সাধারণত সহায়ক ক্রিয়া is-am-are preposition ও conjunction ছাড়া একাক্ষর noun, adjective এবং মূল verb-এ accent পড়বেই, দ্ব্যক্ষর বা ত্র্যক্ষর শব্দ হলে বিশেষ জায়গায় তার স্থান নির্দিষ্ট হয়ে আছে, বাক্যের যে কোনও জায়গায় তার অবস্থান হোক না কেন, accent ওই নির্দিষ্ট জায়গাতেই পড়বে। যেমন character, accomplish, account এই তিনটি শব্দের মধ্যে প্রথমটিতে প্রথম অক্ষরে, দ্বিতীয়টিতে দ্বিতীয় অক্ষরে এবং তৃতীয়টিতে দ্বিতীয় অক্ষরে accent পড়বে; বাক্যের মধ্যে যে কোনও জায়গায় এই শব্দগুলি থাকুক না কেন এদের accent-এর কোনও হেরফের হবে না।

আরও দেখুন: