শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ করি শির | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা , ভাবসম্প্রসারণ কথাটির অর্থ কবিতা বা গদ্যের অন্তর্নিহিত তৎপর্যকে ব্যাখ্যা করা, বিস্তারিত করে লেখা, বিশ্লেষণ করা। ঐশ্বর্যমণ্ডিত কোনাে কবিতার চরণে কিংবা গদ্যাংশের সীমিত পরিসরে বীজধর্মী কোনাে বক্তব্য ব্যাপক ভাবব্যঞ্জনা লাভ করে। সেই ভাববীজটিকে উনােচিত করার কাজটিকে বলা হয় ভাবসম্প্রসারণ।
শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ করি শির, / লিখে রেখো, এক ফোঁটা দিলেম শিশির।
যাঁরা প্রকৃত দানশীল ও পরোপকারী তাঁরা কখনো তাঁদের দান ও উপকারের ‘হিসেব রাখেন না। দেশ ও দশের মঙ্গলের জন্যে তাঁরা নিবেদিত। কিন্তু মানব সমাজে এমন অনেক লোক আছে যারা কখনো যদি উপকারীর সামান্যতম উপকার করতে পারে, তবে তা অতিরঞ্জিত করে প্রচার করার প্রয়াসে তারা ব্যস্ত হয়ে ওঠে। অথচ তারা এ কথাটি বুঝতে চেষ্টা করে না যে, অজস্র উপকারের ঋণ স্বীকার না করে কিঞ্চিৎ উপকার করেই সগৌরবে প্রচারের যে চেষ্টা তা নিতান্তই হাস্যকর। দিঘির জলেই শৈবালের জন্ম। সেই জলকে অবলম্বন করেই শৈবাল বেঁচে থাকে।
অথচ রাতের শিশির বিন্দু যখন শৈবালের ডগায় বসে শেষে গড়িয়ে পড়ে দিঘির বুকে, তখন শৈবাল সদম্ভে তার উপকারের কথা জানিয়ে দিয়ে হীনম্মন্যতার পরিচয় দেয়। * বাস্তবেও মানব-সমাজে এমন অনেক হীন চরিত্রের লোক দেখা যায় যারা প্রায়ই অন্যের উপকারের কথা অস্বীকার
করে, আর কাউকে বিন্দুমাত্র উপকার করতে পারলে তা শতমুখে প্রচার করার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ ধরায় কিছু লােক আছে, যারা উপকারীর উপকার স্বীকার করে না। বরং তারা সামান্য উপকার করতে পারলেই দম্ভভরে তা প্রচার করে বেড়ায়। দিঘির অগাধ জলরাশিতে শৈবালের অবস্থান। এই শৈবালের উপর জমেছে ভােরের শিশির। শিশিরের ক্ষুদ্র ফোঁটা গড়িয়ে পড়েছে দিঘির অগাধ জলে। এই সামান্য শিশির-ফোটাকে শৈবাল দিঘির প্রতি তার মহৎ দান বলে গণ্য করছে। অথচ দিঘির বিশাল জলরাশির কাছে এক ফোঁটা শিশির অতি তুচ্ছ। দিঘির জলেই যার অস্তিত্ব, সেই দিঘির প্রতি শৈবালের এমন দম্ভোক্তি সত্যি হীনম্মন্যতার পরিচায়ক।

শৈবালের মতাে মানবসমাজেও এমন অনেক অকৃতজ্ঞ লােক আছে, যারা পরের দয়াদাক্ষিণ্য দুহাতে গ্রহণ করে কিন্তু সামান্য উপকার করতে পারলেই মনে করে আমি মহৎ কিছু করে ফেলেছি। প্রকৃতপক্ষে যিনি মহৎ,এবং যথার্থ পরােপকারী তিনি অপরের উপকার করে কখনাে দম্ভ প্রকাশ করেন না। নিছক আত্মপ্রচারের জন্য নয়, বরং নিঃস্বার্থভাবেই তিনি পরের উপকার করেন।
এজন্য তার মনে কোনাে অহংকার জন্ম নেয় না। অহংকার জন্ম নিলে মহতেরা মহৎ কাজ করতেন না। প্রতিদানের প্রত্যাশা নয়, মানবকল্যাণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে পরের উপকার করাই মহৎপ্রাণ ব্যক্তির কাজ। সুতরাং উপকারভােগীদের উচিত উপকারকারীর কথা স্মরণ রাখা।
আরও দেখুন: