Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

শেষ পুরস্কার ছোট গল্প || রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

e0a6b6e0a787e0a6b7 e0 শেষ পুরস্কার ছোট গল্প || রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শেষ পুরস্কার – ছোট গল্পটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ছোট গল্পের সংকলন “গল্পগুচ্ছ” থেকে নেয়া। শেষ পুরস্কার গল্পটি বিশ্বভারতী পত্রিকার শ্রাবণ, ১৩৪৯ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।

 

শেষ পুরস্কার

খসড়া

সেদিন আই. এ. এবং ম্যাট্রিক ক্লাসের পুরস্কারবিতরণের উৎসব। বিমলা ব’লে এক ছাত্রী ছিল, সুন্দরী ব’লে তার খ্যাতি। তারই হাতে পুরস্কারের ভার। চার দিকে তার ভিড় জমেছে আর তার মনে অহংকার জমে উঠেছে খুব প্রচুর পরিমাণে। একটি মুখচোরা ভালোমানুষ ছেলে কোণে দাঁড়িয়ে ছিল। সাহস করে একটু কাছে এল যেই, দেখা গেল তার পায়ে হয়েছে ঘা, ময়লা কাপড়ের ব্যাণ্ডেজ জড়ানো। তাকে দেখে বিমলা নাক তুলে বললে, “ও এখানে কেন বাপু, ওর যাওয়া উচিত হাসপাতালে।”

 

 

ছেলেটি মন-মরা হয়ে আস্তে আস্তে চলে গেল। বাড়িতে গিয়ে তার স্কুলঘরের কোণে বসে কাঁদছে, জলখাবারের থালা হাতে তার দিদি এসে বললে, “ও কী হচ্ছে জগদীশ, কাঁদছিস কেন।”

তখন তার অপমানের কথা শুনে মৃণালিনী রাগে জ্বলে উঠল; বললে, “ওর বড়ো রূপের অহংকার, একদিন ঐ মেয়ে যদি তোর এই পায়ের তলায় এসে না বসে তা হলে আমার নাম মৃণালিনী নয়।”

এই গেল ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়। দিদি এখন ইন্‌স্পেক্‌ট্রেস্‌ অব স্কুল্‌স্‌। এসেছেন পরিদর্শন করতে। তিনি তাঁর ভাইয়ের এই দুঃখের কাহিনী মেয়েদের শোনালেন। শুনে মেয়েরা ছি ছি করে উঠল; বললে, কোনো মেয়ে কখনও এমন নিষ্ঠুর কাজ করতে পারে না—তা সে যত বড়ো রূপসীই হোক-না কেন।

মৃণালিনী মাসি বললেন, জগতে যা সত্য হওয়া উচিত নয়, তাও কখনও কখনও সত্য হয়।

আজ আবার পুরস্কারবিতরণের উৎসব। আরম্ভ হবার কিছু আগেই মৃণালিনী মাসি মেয়েদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আচ্ছা, সেদিন সেই-যে ভালোমানুষ ছেলেটিকে অপমান করে বিদায় করা হয়েছিল, সে আজ কী হলে তোমরা খুশি হও।”

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

কেউ বললে, কবি; কেউ বললে, বিপ্লবী; বাইরে থেকে নিয়মিত একটি মেয়ে বললে, হাইকোর্টের জজ।

ঘণ্টা বাজলো, সবাই প্রস্তুত হয়ে বসল। যিনি প্রাইজ দেবেন তিনি এসে প্রবেশ করলেন, জগদীশপ্রসাদ— হাইকোর্টের জজ। তিনি বসতেই সেই নিমন্ত্রিত মেয়ে যে মজঃফরপুরে মেয়েদের হাইস্কুলে তৃতীয় বর্গে অঙ্ক কষাত, সে এসে প্রণাম করে তাঁর পায়ে ফুলের মালা দিয়ে চন্দনের ফোঁটা লাগিয়ে দিলে। জগদীশপ্রসাদ শশব্যস্ত হয়ে বলে উঠলেন, “এ আবার কী রকমের সম্মান! ”

মাসি বললেন, “নতুন রকমের বলছ কেন— অতি পুরাতন। আমাদের দেশে দেবতাদের পূজো আরম্ভ হয় পায়ের দিক থেকে। আজ তোমার সেই পদের সম্মান করা হল।”

এইবার পরিচয়গুলো সমাপ্ত করা যাক। এই মেয়েটি এককালকার রূপসী ছাত্রী বিমলাদিদি, বোর্ডিং স্কুলের অহংকারের সামগ্রী ছিল। পিতার মৃত্যুর পরে আজ ক্লাস পড়াবার ভার নিয়েছে; আর এ দিক ও দিক থেকে কিছু টিউশনি করে কাজ চালায়। যে পা’কে একদিন সে ঘৃণা করেছিল সেই পা’কে অর্ঘ্য দেবর জন্য আজ তার বিশেষ করে নিমন্ত্রণ হয়েছে। মৃণালিনী মাসি— সেই সেদিনকার দিদি। আর সেই তার ভাই জগদীশপ্রসাদ, হাইকোর্টের জজ।

 

 

এটা গল্পের মতো শোনাচ্ছে, কিন্তু কখনও কখনও গল্পও সত্যি হয়। আর যে লোকটা এই ইতিহাসটা লিখছে সে হচ্ছে অবিনাশ, সেদিন সে লম্বা লম্বা পা ফেলে বড়ো বড়ো পরীক্ষা ডিঙিয়ে চলত— সেও উপস্থিত ছিল সেই প্রথমবারকার পুরস্কারের উৎসবে। সেদিন নানারকম খেলা হয়েছিল— হাইজাম্প্‌, লম্বা দৌড়, রশি-টানাটানি—তার মধ্যে এই অবিনাশ আবৃত্তি করেছিল রবিঠাকুরের ‘পঞ্চনদীর তীরে’। কবিতার ছন্দের জোর যত, তার গলায় ছিল জোর চার গুণ বেশি। সেই-ই সব চেয়ে বড়ো পুরস্কার পেয়েছিল। আজ সে জজের অনুগ্রহে সেরেস্তাদারের সেরেস্তায় হেড-কেরানির পদ পেয়েছে।

 

শেষ পুরস্কার ছোট গল্প বিশ্লেষণ ঃ

 

আরও দেখুন:

 

Exit mobile version