শিশুশ্রম বন্ধের আবশ্যকতা তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন রচনা | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা

শিশুশ্রম বন্ধের আবশ্যকতা তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন রচনা | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা ,শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। আজকের শিশু বড় হয়ে আগামী দিনের কর্ণধার হবে। শিশুরাই পুরাতন ও জরাজীর্ণকে ভেঙে সবকিছুকে নতুন ও মজবুত করে গড়ে তুলবে। কিন্তু শিশুরা যদি উপযুক্তভাবে বিকশিত না হয়, তাহলে তাদের দ্বারা মহৎ কোনো কাজই সম্ভব হবে না। শিশুদের পরিপূর্ণ বিকশিত না হওয়ার পেছনে একটা বড় কারণ হল শিশুশ্রম। বর্তমান বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রম একটি গুরুতর ও জটিল সামাজিক সমস্যারূপে বিরাজ করছে।

শিশুশ্রম বন্ধের আবশ্যকতা তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন রচনা | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা

উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় সমাজে শিশুশ্রমের আধিক্য রাজনীতিবিদ, সমাজচিন্তাবিদ, আইনবিদ ও নীতিনির্ধারকদের ভাবিয়ে তুলেছে। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও শিশুশ্রম একটি জটিল ও ব্যাপকতর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী দেশের মোট শ্রমিকের শতকরা ১২ ভাগ শিশু শ্রমিক। শিশুর জীবন, তার পরিবার, সমাজ, দেশ এমনকী মানবজাতির জন্য শিশুশ্রমের প্রভাব শুভ ও কল্যাণকর নয়। তাই এ সমস্যা মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে এখনই সচেষ্ট হতে হবে। অন্যথায় বিপর্যস্ত মানবতার মধ্য দিয়ে আগামী প্রজন্মের সমাজজীবন নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর হয়ে উঠবে।

 

শিশুশ্রম বন্ধের আবশ্যকতা তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন রচনা | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা

 

জাতিসংঘ শিশু সনদে বর্ণিত সংজ্ঞানুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী সকলেই শিশু। এ সংজ্ঞানুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪৫ ভাগই শিশুর দলে রয়েছে। বেঁচে থাকার অধিকার, নিরাপত্তালাভের অধিকার এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অধিকার থেকে বঞ্চিত যে কোনো শিশুই শিশুশ্রমিক। আয় করার জন্য কাজ করতে গিয়ে শিশুরা তাদের বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী বিপদ, ঝুঁকি, শোষণ, বঞ্চনা ও আইনের জটিলতার সম্মুখীন হলে সেই কাজকে শিশুশ্রম বলা হয়। ১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) এবং ইউনিসেফ (UNICEF) পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে প্রায় ৩০১ ধরনের অর্থনৈতিক কাজে শিশুরা শ্রম দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে কুলি, হকার, রিকশাশ্রমিক, পতিতা, ফুল বিক্রেতা, টোকাই, ইট-পাথর ভাঙা, হোটেল শ্রমিক, বুননকর্মী, মাদক ঝালাই কারখানার শ্রমিক, বেডিং স্টোরের শ্রমিক ইত্যাদি। বাহক, বিড়িশ্রমিক,

শিশুশ্রম শিশুর জীবনে এক অমানবিক অধ্যায়। শিশুরা কর্মে নিয়োজিত হওয়ার পরিণাম হয়তো তাৎক্ষণিক লাভ, কিন্তু এর সুদূর প্রসারী প্রভাব রয়েছে। কেননা শিশুশ্রম শিশুর শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, মানসিক, সামাজিক ও নৈতিক জীবনকেও বিষিয়ে তোলে। শিশুশ্রম শিশুস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক।

 

শিশুশ্রম বন্ধের আবশ্যকতা তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন রচনা | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা

 

এতে তাদের স্বাস্থ্যহানি, অপুষ্টি, বিভিন্ন রোগ- ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া এমনকী নানা দুর্ঘটনাজনিত কারণে পঙ্গুত্বও বরণ করতে হয়। শিশু শ্রমিকেরা পরিবার এবং স্বাভাবিক সামাজিক পরিবেশ থেকে কর্ম সময়ে বিচ্ছিন্ন থাকে। এতে তাদের সামাজিকীকরণ ত্রুটিপূর্ণ ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এরূপ অবস্থায় তাদের ভবিষ্যতে বিভিন্ন বিচ্যুত আচরণ, অপরাধপ্রবণতা ও মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা- দেখা দেয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। এর ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও ভোগান্তি বাড়ে। শিশু শ্রমিকেরা প্রধানত দরিদ্র পরিবার থেকে আসে। এরা শ্রমদান কাজে নিয়োজিত হতে গিয়ে শিক্ষা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।

এর ফলে ভবিষ্যতে ত্রুটিপূর্ণ শ্রমশক্তি হিসেবে তারা গঠিত হয় এবং দরিদ্র অবস্থায় জীবনযাপনের সম্ভাবনা বাড়ে। শিশুশ্রম জাতীয় অর্থনীতিকে নানাভাবে সংকটাপন্ন করে। এতে বেকারত্ব সৃষ্টি হয় এবং অসম বণ্টন ব্যবস্থার প্রসার হয়। নিম্ন আয়ভুক্ত বা দরিদ্র পরিবারে শিশু শ্রমিকদের মাধ্যমে তাদের পারিবারিক আয় বৃদ্ধি পায় বলে বাবা-মা অধিক সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত হয়। পরিণামে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ফলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হয় । সুতরাং এসব অবস্থার প্রেক্ষিতে দেখা যায়, সমাজজীবনে ও জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিশুশ্রমের অনেক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তাই শিশুশ্রম বন্ধের আবশ্যকতা অনিবার্য। শিশুশ্রম প্রতিরোধ এবং শিশু অধিকার সংরক্ষণে বাংলাদেশের সংবিধানে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

 

শিশুশ্রম বন্ধের আবশ্যকতা তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন রচনা | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা

 

এছাড়া আইএলওর সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে শিশুশ্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আমাদের শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ ১৯৯০-এর সমর্থনকারি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শিশুশ্রম বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বদ্ধপরিকর। আমাদেরও উচিত হবে শিশুশ্রম বন্ধের আবশ্যকতা অনুধাবন করে শিশুশ্রমকে না বলা। শিশুদের সার্বিক উন্নয়ন ও সর্বাঙ্গীন বিকাশের লক্ষ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুষ্ঠু ও সুপরিকল্পিত কার্যক্রম গ্রহণ করে তার যথাযথ বাস্তবায়নের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে।

আরও দেখুন:

Leave a Comment