শরৎচন্দ্র কবিতা – এই কবিতাটি বিখ্যাত কবি “কাজী নজরুল ইসলাম” অন্যতম জনপ্রিয় এবং বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক “শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়” নিয়ে লিখেছেন। কাজী নজরুল ইসলাম (২৪ মে১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৯৭৬; ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ – ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) বিংশ শতাব্দীর প্রধান বাঙালি কবি ও সঙ্গীতকার। তার মাত্র ২৩ বৎসরের সাহিত্যিক জীবনে সৃষ্টির যে প্রাচুর্য তা তুলনারহিত। সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি।
শরৎচন্দ্র কবিতা – কাজী নজরুল ইসলাম
নব ঋত্বিক নবযুগের!
নমস্কার! নমস্কার!
আলোকে তোমার পেনু আভাস
নওরোজের নব উষার!
তুমি গো বেদনা-সুন্দরের
দর্দ্-ই-দিল্, নীল মানিক,
তোমার তিক্ত কণ্ঠে গো
ধ্বনিল সাম বেদনা-ঋক।
হে উদীচী উষা চির-রাতের,
নরলোকের হে নারায়ণ!
মানুষ পারায়ে দেখিলে দিল্ –
মন্দিরের দেব-আসন।
শিল্পী ও কবি আজ দেদার
ফুলবনের গাইছে গান,
আশমানি-মউ স্বপনে গো
সাথে তাদের করনি পান।
নিঙারিয়া ধুলা মাটির রস
পিইলে শিব নীল আসব,
দুঃখ কাঁটায় ক্ষত হিয়ার
তুমি তাপস শোনাও স্তব।
স্বর্গভ্রষ্ট প্রাণধারায়
তব জটায় দিলে গো ঠাঁই,
মৃত সাগরের এই সে দেশ
পেয়েছে প্রাণ আজিকে তাই।
পায়ে দলি পাপ সংস্কার
খুলিলে বীর স্বর্গদ্বার,
শুনাইলে বাণী, ‘নহে মানব –
গাহি গো গান মানবতার।
মনুষ্যত্ব পাপী তাপীর
হয় না লয়, রয় গোপন,
প্রেমের জাদু-স্পর্শে সে
লভে অমর নব জীবন!’
নির্মমতায় নর-পশুর
হায় গো যার চোখের জল
বুকে জমে হল হিম-পাষাণ,
হল হৃদয় নীল গরল ;
প্রখর তোমার তপ-প্রভায়
বুকের হিম গিরি-তুষার –
গলিয়া নামিল প্রাণের ঢল,
হল নিখিল মুক্ত-দ্বার।
শুভ্র হল গো পাপ-মলিন
শুচি তোমার সমব্যথায়,
পাঁকের ঊর্ধ্বে ফুটিল ফুল
শঙ্কাহীন নগ্নতায়!
শাস্ত্র-শকুন নীতি-ন্যাকার
রুচি-শিবার হট্টরোল
ভাগাড়ে শ্মশানে উঠিল ঘোর,
কাঁদে সমাজ চর্মলোল!
ঊর্ধ্বে যতই কাদা ছিটায়
হিংসুকের নোংরা কর
সে কাদা আসিয়া পড়ে সদাই
তাদেরই হীন মুখের পর!
চাঁদে কলঙ্ক দেখে যারা
জ্যোৎস্না তার দেখেনি, হায়!
ক্ষমা করিয়াছ তুমি, তাদের
লজ্জাহীন বিজ্ঞতায়!
আজ যবে সেই পেচক-দল
শুনি তোমার করে স্তব,
সেই তো তোমার শ্রেষ্ঠ জয়,
নিন্দুকের শঙ্খ-রব!
ধর্মের নামে যুধিষ্ঠির
‘ইতি গজের’ করুক ভান!
সব্যসাচী গো, ধরো ধনুক –
হানো প্রখর অগ্নিবাণ!
‘পথের দাবি’র অসম্মান
হে দুর্জয়, করো গো ক্ষয়!
দেখাও স্বর্গ তব বিভায়
এই ধুলার ঊর্ধ্বে নয়!
দেখিছ কঠোর বর্তমান,
নয় তোমার ভাব-বিলাস,
তুমি মানুষের বেদনা-ঘায়
পাওনি গো ফুল-সুবাস।
তোমার সৃষ্টি মৃত্যুহীন
নব ধরার জীবন-বেদ,
করনি মানুষে অবিশ্বাস
দেখিয়া পাপ পঙ্ক ক্লেদ।
পুষ্পবিলাস নয় তোমার
পাওনি তাই পুষ্প-হার,
বেদনা-আসনে বসায়ে আজ
করে নিখিল পূজা তোমার!
অসীম আকাশে বাঁধনি ঘর
হে ধরণির নীল দুলাল!
তব সাম-গান ধুলামাটির
রবে অমর নিত্যকাল!
হয়তো আসিবে মহাপ্রলয়
এ দুনিয়ার দুঃখ-দিন
সব যাবে শুধু রবে তোমার
অশ্রুজল অন্তহীন।
অথবা যেদিন পূর্ণতায়
সুন্দরের হবে বিকাশ,
সেদিনও কাঁদিয়া ফিরিবে এই
তব দুখের দীর্ঘশ্বাস।
মানুষের কবি! যদি মাটির
এই মানুষ বাঁচিয়া রয় –
রবে প্রিয় হয়ে হৃদি-ব্যাথায়,
সর্বলোক গাহিবে জয়!
শরৎচন্দ্র কবিতা এর ইতিহাস ঃ
মহত্তম কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘শরৎচন্দ্র’ নামাঙ্কিত কবিতা ১৩৩৪ আশ্বিনের নওরোজে প্রকাশ করেন। পাদটীকায় বলা হয়: “স্বনামধন্য ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ে দ্বিপঞ্চাশৎ বর্ষ জন্মোৎসব উপলক্ষে রচিত।” রচনার স্থান ও তারিখ: কৃষ্ণনগর, ২৯ ভাদ্র, ১৩৩৪। শরৎচন্দ্রের মৃত্যুর পর কবিতাটি ১৩৪৪ মাঘের বুলবুলে পুনর্মুদ্রিত হয়। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ১৪৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আরও একবার ফিরে দেখা বাংলা সাহিত্যজগতের দুই খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং কাজী নজরুল ইসলামের পারস্পরিক সম্পর্ককে। জীবদ্দশায় একাধিকবার তাঁদের সাক্ষাৎ হয়। তাঁদের মধ্যে যে পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক ছিল, তা সত্যিই শিক্ষণীয়।
শরৎচন্দ্র কবিতা আবৃত্তি ঃ