সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি তার কবিতায় ভাষার শব্দসম্ভারকে খুবই সূক্ষ্ম ও গভীরভাবে ব্যবহার করেছেন। তাঁর কবিতা ছিল জীবন, সময়, মানবিক অনুভূতি ও প্রকৃতির একান্ত অভিজ্ঞতার প্রতিফলন। শব্দ তার কবিতায় শুধু মাত্র শব্দ ছিল না, বরং অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ, ভাবনার ছোঁয়া ও রূপকের এক শিল্পসৃষ্টিতে পরিণত হতো।
শব্দ কবিতা বলতে মূলত তাঁর সেইসব কবিতাগুলোকে বোঝায় যেখানে শব্দের সুর, ছন্দ, এবং অর্থ একত্রে মিলেমিশে এক অনন্য আবহ তৈরি করে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতায় শব্দের গঠন অত্যন্ত চেতনাপূর্ণ ও নিপুণ ছিল। তিনি সাধারণ কথায় যে গভীরতা ও অর্থ খুঁজে পেতেন, সেটিই তাঁর কবিতাকে শক্তিশালী করে তোলে। তাঁর কবিতায় শব্দের সৌন্দর্য যেমন ছিল, তেমনি ছিল সময়ের বিবর্তন ও মানুষের অন্তর্মুখী ভাবনার প্রতিফলন।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা আধুনিকতা ও রোমান্টিসিজমের মিশ্রণ। তিনি জীবনের সাধারণ দৃশ্য, প্রাকৃতিক উপাদান এবং মানুষের মনের জটিলতাকে শব্দের মাধ্যমে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। ‘শব্দ কবিতা’ তাঁর সৃজনশীলতার এক গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা বাংলা কবিতাকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছে।
সুনীলের কবিতায় শব্দ কখনো কেবল শব্দই থাকে না, বরং তা অনুভূতির গভীর স্তর স্পর্শ করে, পাঠককে ভাবায়, মুগ্ধ করে এবং জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে চিন্তা করতে বাধ্য করে। তাই তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে স্মরণীয়।

শব্দ কবিতা- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
বালি ঝুমকো, হলুদ নাভি, শূন্য হাস্য
রূপালি ফল, নীল মিছিল, চিড়িক চক্ষু…
চিড়িক না সুখ? চিড়িক শব্দে ঢ্যাঁড়া বসালুম
রূপালি ফল, না রূপালি উরুত? দ্রিদিম জ্যোৎস্না
লিখে ভয় হয়
দ্রিদিম না স্মৃতি? জ্যোৎস্না না জল? অথবা সাগর?
দ্রিতিম সাগর? ঠিক ঠিক ঠিক! নিরুপদ্রব। শূন্য হাস্য
কুনকি কাফেলা, হাতেম তামস, শালু পালু লুস
তামস? আবার ভুলের শব্দ, ভয়ের শব্দ, (কাটতে কলম
থর খর করে)
তামসের চেয়ে প্রগাঢ় আমার গরি মার কাছে শ্যন্য হাস্য
অথের এত বিভ্রমে বহু অশ্রুবিন্দু, কুলকুল জল…
কুলুকুলু বড় মধুর শব্দ, মধুর তোমার শব্দে শব্দ
মন্দিরে বাজে দ্রিদিম ঘন্টা, জ্যোৎস্না উধাও, তামস উধাও।।
আরও পড়ুন: